
আয়েল ক্লাস থ্রিতে পড়ে। লেখাপড়ায় খুব মনোযোগী সে। আজ স্কুল থেকে এসে গোসল করে নিল। দুপুরের খাবার খেয়ে কিছু হোমওয়ার্ক ছিল, সেগুলো সেরে নিল। তারপর ঘুম। বিকেলে ঘুম থেকে উঠে একটু খেলাধুলা ও হাঁটাহাঁটি। সন্ধ্যা হতেই পড়ার টেবিলে ফিরল সে। আয়েল পড়ছে। এই সময় দেখা দিল একটা মশা। খুব বিরক্ত করছে। ভোঁ ভোঁ করে চোখের সামনে ঘুরছে। উড়ে গিয়ে নাকের ওপর বসছে। আয়েল তাড়িয়ে দিয়ে যেই পড়তে শুরু করবে, অমনি পাজি মশাটা ওর কানে গিয়ে বসে ভোঁ ভোঁ শুরু করল। ভারি মুশকিল তো!
আয়েলের মনে পড়ল পড়ার টেবিলের পাশেই মশার স্প্রে আছে। বাবা দিয়ে বলেছিলেন, সব সময় স্প্রে ব্যবহার করতে। মশার কামড়ে ডেঙ্গু জ্বর হতে পারে। খুব সতর্ক হতে হবে।
আয়েল স্প্রেটা হাতে নিতেই মশাটা বলে উঠল, আমি এডিস মশা। তুমি আমার কথা না শুনে স্প্রে করবে না কিন্তু।
আয়েল ভয়ার্ত স্বরে জিজ্ঞেস করল, কী কথা বলো?
মশা বলল, আমি এডিস মশা জন্ম হয়েছি তোমার কারণেই। এখন তুমিই আমাকে মারতে চাচ্ছো?
আয়েল বিরক্তিবোধ করল। নাকটা খরগোশের কানের মতো খাড়া করে বলল, কী, আমার কারণেই তোমার জন্ম?
হ্যাঁ, তোমার কারণেই— মশা চেঁচিয়ে উঠল। আবার বলল, তিন দিন ধরে তুমি একটা বাটিতে ময়লা পানি জমিয়ে রেখেছ। সেই পানিতেই তো আমি জন্মেছি। তোমার ভাগ্য ভালো যে, আমি এখনো কামড় বসাইনি।
আয়েল ইতিউতি তাকিয়ে বলল, কোথায়, কোথায় সে বাটি?
তোমার পড়ার টেবিলের নিচে। একটু নুয়েই দেখো না। বলল মশা।
আয়েল এবার নুয়ে দেখে সত্যিই পড়ার টেবিলের নিচে একটা বাটি। সেখানে পানি আছে। পানি থেকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। একঝাঁক মশা বাটির ওপর উড়াউড়ি করছে। কী বিশ্রী অবস্থা।
আয়েলের মনে পড়ল। তিন দিন আগে মা বাটিতে করে একটা ডিম আর কলা দিয়েছিলেন। ডিম কলা খেয়ে বাটিতেই হাত ধুয়েছিল সে। পানিটা ফেলে না দিয়ে পড়ার টেবিলের নিচে রেখে দিয়েছিল পরে ফেলবে ভেবে। কিন্তু আয়েল বেমালুম ভুলে গেছে। ও দৌড়ে পানিটা ফেলে দিয়ে এল। লজ্জানত হয়ে আয়েল বলল, ধন্যবাদ মশা ভাইয়া, আমাকে সতর্ক করার জন্য।
মশা বলল, আমাকে ধন্যবাদ দিলে হবে না। তোমার আঙিনা তোমাকেই পরিষ্কার রাখতে হবে।
আচ্ছা, কী কী করলে মশা জন্ম নেবে না।—জানতে চাইল আয়েল।
মশা বলল, আমরা মশারা তো তোমাদের অবহেলা, অসচেতনতা, অপরিষ্কার, অপরিচ্ছন্নতার কারণেই জন্ম নিই এবং তোমাদের কামড়াই। তবে কিছু কাজ কাজ করলে তোমরা আমাদের থেকে রক্ষা পাবে।
কী কাজ? —উদগ্রীব হয়ে উঠল আয়েল।
মশা বলল, সামনে বৃষ্টির সিজন। এ সময় কোথাও পানি জমতে দেওয়া যাবে না। বাড়ির ছাদে বা উঠানে বৃষ্টির পানি জমে থাকলে দ্রুত তা সরিয়ে ফেলতে হবে। কোনো পাত্রে পানি যেন জমে না থাকে। পানি জমতে পারে এমন পাত্র উল্টিয়ে রাখতে হবে। কারণ, জমে থাকা পানিতে আমরা ডিম পারি। ওটাই আমাদের জন্ম নেওয়ার স্থান।
তারপর! —আকুতি আয়েলের। তর যেন সইছে না। সব মনোযোগ এখন মশার দিকে।
বলছি, বলছি। সর্বদা চারপাশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। ফুলের টব, ভাঙা হাঁড়িপাতিল, গাড়ির পরিত্যক্ত টায়ার, ছোট বড় কৌটা, নারিকেল বা ডাবের খোসা, রেফ্রিজারেটর এবং এসির নিচে যাতে পানি জমে না থাকে সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।
মশা আরও বলল, আর হ্যাঁ, ঘুমাবার সময় অবশ্যই মশারি টাঙাতে হবে। জানালাতে মশা প্রতিরোধক নেট ব্যবহার করতে হবে। মশা নিধনের ওষুধ, কয়েল বা স্প্রে ব্যবহার করতে হবে। তবেই তুমি মশার জন্ম রুখতে পারবে। করতে পারবে ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া, চিকুনগুনিয়া প্রতিরোধ। নিজে বাঁচতে পারবে। বাঁচাতে পারবে অন্যকেও।