পেঁয়াজের বীজ চাষ করে সফল ঠাকুরগাঁওয়ের মোয়াজ্জেম । খবরের কাগজ
ঢাকা ২৬ বৈশাখ ১৪৩১, বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪

পেঁয়াজের বীজ চাষ করে সফল ঠাকুরগাঁওয়ের মোয়াজ্জেম

প্রকাশ: ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০১:২৩ পিএম
পেঁয়াজের বীজ চাষ করে সফল ঠাকুরগাঁওয়ের মোয়াজ্জেম
মোয়াজ্জেম হোসেনের খেতে হাতের স্পর্শেই কৃত্রিমভাবে পেঁয়াজবীজের পরাগায়ন হচ্ছে। ছবি: খবরের কাগজ

কালো সোনা নামে পরিচিত পেঁয়াজ বীজ চাষ করে লাখপতি ঠাকুরগাঁওয়ের মোয়াজ্জেম হোসেন। এক সময়ের বেকার  মোয়াজ্জেম এখন হয়েছেন অন্যের অনুপ্রেরণা। তার উৎপাদিত পেঁয়াজের বীজের চাহিদা থাকায় সেটি সরবরাহ হচ্ছে দেশের বিভিন্ন জেলায়।

ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার চাড়োল গ্রামের মোয়াজ্জেম হোসেন গত বছর ৩৩ বিঘা জমিতে পেঁয়াজের বীজ চাষ করে লাভ করেছিলেন প্রায় ১০ লাখ টাকা। এ বছর চাষের পরিমাণ বাড়িয়ে  ৪৩ বিঘা জমিতে পেঁয়াজের বীজ চাষ করেছেন। আবহাওয়া কিছুটা বৈরী থাকলেও এ বছর ১৫ লাখ টাকা মুনাফার আশা করছেন তিনি।

মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, ‘আমি একজন প্রান্তিক কৃষক। আমার বাবা কৃষি কাজ করতেন। কৃষি কাজ লাভজনক হওয়ায় আমি কৃষি কাজে ঝুঁকেছি। আমরা সবাই চাকরির পেছনে ছুটি। কৃষিতেও যে ভালো কিছু করা যায় বা আধুনিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ করে যে ভাগ্যের পরিবর্তন করা যায় আমি তার উদাহরণ। এক সময় আমার কিছুই ছিল না। পেঁয়াজের বীজ চাষ করে এখন আমি লাখপতি। নিজের টাকায় জমি কিনেছি। ব্যবসার পরিধি বাড়ানোর চেষ্টা করছি। আমি এখন সচ্ছল।’ 

ঠাকুরগাঁওয়ের মাটি ও আবহাওয়া পেঁয়াজের বীজ উৎপাদনের জন্য উপযোগী হওয়ায় এ চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন জেলার অন্য  কৃষকরাও।  উন্নতমানের বীজ হওয়ায় স্থানীয় বাজারে তার উৎপাদিত পেঁয়াজ বীজের চাহিদা বাড়ছে। উপকারী পোকা কমে যাওয়ায় হাতের স্পর্শেই কৃত্রিমভাবে পরাগায়ন ঘটানোর জন্য তার খেতে কাজ করছেন এলাকার অনেকেই। এতে করে অনেক মানুষের কর্মসংস্থানও সৃষ্টি হয়েছে। 

মোয়াজ্জেমের জমিতে কাজ করা শ্রমিক ফখরুল আলম বলেন, ‘মোয়াজ্জেমের জমিতে হাতের স্পর্শে কৃত্রিমভাবে পরাগায়ন ঘটানোর কাজ করি। আগে বেকার ছিলাম এখন আমার কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে। এখান থেকে যা আয় হয় তা দিয়ে আমার সংসার খুব ভালোভাবে চলে যায়। শুধু আমি নয় এখানে আমার মতো আরও অনেক মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে।’ 

কলেজছাত্রী হাফিসা বলেন, ‘আমি পড়াশোনা করার পাশাপাশি পেঁয়াজ বীজের খেতে কাজ করি। যা আয় হয় তা দিয়ে আমার পড়াশোনার খরচ চালানোর পাশাপাশি সংসারেও কিছু দিতে পারি।’ 

মোয়াজ্জেমের পেঁয়াজের বীজের খেত দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে এলাকার অনেক কৃষক বীজ আবাদ শুরু করেছেন। কৃষক মফিদুল ইসলাম বলেন, ‘আগে আমার খেতে আমি অন্য ফসল আবাদ করতাম। মোয়াজ্জেম ভাইয়ের পেঁয়াজের বীজ আবাদ করা দেখে এবং লাভের কথা শুনে তার পরামর্শে আমি প্রায় ১০ বিঘা জমিতে পেঁয়াজের বীজ চাষ করেছি। ভালো ফলন পেয়েছি; আশা করছি ভালো দাম পাব। 

ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের জেলা প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা মোছাম্মৎ শামীমা নাজনিন জানান, ভালোমানের পেঁয়াজ বীজ উৎপাদনে কৃষকদের সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে। অন্য ফসলের চেয়ে পেঁয়াজের বীজ চাষ করে বেশি লাভবান হওয়া যায়। এ বছর ঠাকুরগাঁওয়ে ১০২ মেট্রিক টন পেঁয়াজের বীজ উৎপাদিত হবে বলে আশা করছি। যার মূল্য প্রায় ১০ থেকে ১২ কোটি টাকা। 

এ বছর  জেলায় ১১৪ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের বীজ চাষ হয়েছে। এ পেঁয়াজ বীজ উৎপাদনের মাধ্যমে দেশে পেঁয়াজের যে ঘাটতি রয়েছে সে ঘাটতি  পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে পোশাকশিল্প গুরুত্বপূর্ণ খাত: নানক

প্রকাশ: ০৮ মে ২০২৪, ০৪:০০ পিএম
দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে পোশাকশিল্প গুরুত্বপূর্ণ খাত: নানক
ছবি: সংগৃহীত

বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেছেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য পোশাকশিল্প একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ খাত। আমি নিশ্চিত যে, তৈরি পোশাকশিল্পের অবদানের মাধ্যমে বাংলাদেশ খুব শিগগিরই একটি উন্নত দেশে উন্নীত হবে।

বাংলাদেশ ডেনিম এক্সপোর সমাপনী অনুষ্ঠানে গত মঙ্গলবার প্রধান অতিথির বক্তব্যে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত নেদারল্যান্ডেসের রাষ্ট্রদূত মিস্ ইরমা ভন দুরিন, বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সাবেক সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান, বর্তমান সভাপতি এস এম মান্নান (কচি), সহসভাপতি আব্দুল্লাহ হিল রাকিব এবং এইচঅ্যান্ডএমের আঞ্চলিক প্রধান (বাংলাদেশ, পাকিস্তান, ইথিওপিয়া) জিয়াউর রহমান। অনুষ্ঠান সঞ্চলনা করেন ডেনিম এক্সপার্ট লিমিটেডের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং বিজিএমইএর পরিচালক মো. মহিউদ্দিন রুবেল।

এ সময় বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘আমরা এখন যে অবকাঠামোগত উন্নয়ন দেখতে পাচ্ছি, আমি গর্বের সঙ্গে বলতে পারি যে এর বেশির ভাগেই পোশাক খাতের উল্লেখযোগ্য অবদান রয়েছে। আমি অত্যন্ত আশাবাদী যে, সরকারের সহায়তায় তৈরি পোশাক শিল্প আরও এগিয়ে যাবে।’

বিজিএমইএর সভাপতি এস এম মান্নান (কচি) বলেন, ‘আমরা এখন পোশাকশিল্পে অটোমেশনকে অন্তর্ভুক্ত করছি এবং বিশ্ব বাজারে আমাদের শেয়ার বৃদ্ধির জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। আমরা ব্যবসাকে টেকসই করার জন্য নিরন্তর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আগামী দিনগুলোতে আরও বেশি মূল্য সংযোজন করতে পারব বলে আমরা আশাবাদী।’

এর আগে গত সোম ও মঙ্গলবার ঢাকার ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরাতে দুই দিনব্যাপী এই আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীর আয়োজন করে বাংলাদেশ অ্যাপারেল এক্সচেঞ্জ। প্রদর্শনীতে বাংলাদেশসহ ১১টি দেশের ৬০টিরও বেশি প্রতিষ্ঠান ডেনিম শিল্পে ব্যবহৃত অত্যাধুনিক প্রযুক্তি, যন্ত্রপাতি, বৈচিত্র্যময় ও উদ্ভাবনী ডেনিম পণ্য প্রদর্শন করেছে।

ইসমাঈল/

উৎপাদন সক্ষমতা বাড়াতে নতুন বিনিয়োগে রহিম টেক্সটাইল

প্রকাশ: ০৯ মে ২০২৪, ০১:০৭ পিএম
উৎপাদন সক্ষমতা বাড়াতে নতুন বিনিয়োগে রহিম টেক্সটাইল
গাজীপুরের রহিম টেক্সটাইল মিলস লিমিডেটের কারখানা। ছবি: খবরের কাগজ

ব্যবসা সম্প্রসারণ এবং উৎপাদন সক্ষমতা বৃদ্ধি উদ্যোগ গ্রহণ করেছে দেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি রহিম টেক্সটাইল মিলস লিমিটেড। এজন্য প্রতিষ্ঠানটি নতুন করে বিনিয়োগ করবে ১৩ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। নতুন বিনিয়োগের পর প্রতিষ্ঠানটির বার্ষিক রাজস্ব বৃদ্ধি পাবে প্রায় ২৪ শতাংশ। এতে লোকসানে থাকা প্রতিষ্ঠানটি মুনাফায় ফিরে আসবে বলে আশা করছে প্রতিষ্ঠানটির কর্তৃপক্ষ।

প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে নতুন বিনিয়োগের অংশ হিসেবে সর্বশেষ প্রযুক্তির যন্ত্রপাতি স্থাপন করা হবে। নতুন বিনিয়োগের অর্থায়ন করা হবে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে। একই সঙ্গে আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং অন্যান্য উৎস থেকেও অর্থের সংস্থান করবে প্রতিষ্ঠানটি।

রহিম টেক্সটাইল মিলসের কোম্পানি সেক্রেটারি মোহাম্মদ কামরুজ্জামান খবরের কাগজকে বলেন, সময়ে সঙ্গে তাল মিলিয়ে প্রতিষ্ঠানটিকে আধুনিকায়ন করতে নতুন বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে পরিচালনা পর্ষদ। নতুন বিনিয়োগের মাধ্যমে তাদের প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন ক্ষমতা যেমন বাড়বে। তেমনি বাড়বে রাজস্ব।

তথ্যে দেখা যায়, রহিম টেক্সটাইল মিলস লিমিটেড মূলত নিউ এশিয়া গ্রুপের একটি প্রতিষ্ঠান। বার্ষিক ২৪ শতাংশ রাজস্ব বৃদ্ধির পরিকল্পনা নিয়ে ক্ষমতা বাড়ানোর পরিকল্পনা গ্রহণ করা হচ্ছে। তথ্যে দেখা, নতুন বিনিয়োগের অংশ হিসেবে অবকাঠামো নির্মাণ, যন্ত্রাংশ স্থাপন এবং আনুষঙ্গিক কাজের জন্য প্রতিষ্ঠানটি ১৩ কোটি ৭৩ লাখ টাকা বিনিয়োগ করবে।

আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০২২-২৩ অর্থবছরে টেক্সটাইল মিলস লিমিটেডের লোকসান হয়েছিল ১২ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। এজন্য প্রতিষ্ঠানটি এ সময় বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ দিতে ব্যর্থ হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে কাঁচামালের দাম বৃদ্ধি, গ্যাসসংকট, গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি এবং ডলারের বিনিময় বৃদ্ধি ব্যবসায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।

চলতি অর্থবছরের আর্থিক প্রতিবেদনে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটি প্রথম ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) মুনাফায় ফিরে এসেছে। এ সময় প্রতিষ্ঠানটির লাভ হয়েছে ৬০ লাখ টাকা। এক বছর আগে একই সময়ে মোট লোকসান ছিল ৮ কোটি ৬১ লাখ টাকা।

চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) ৩৬ লাখ ৩৪ হাজার টাকা লাভ করেছে। এক বছর আগে একই সময়ে প্রাতষ্ঠানটির লোকসান হয়েছিল ৪ কোটি ১৫ লাখ টাকা।

প্রতিষ্ঠানটির মুনাফা বৃদ্ধির জন্য বাজারজাতকরণে খরচ হ্রাস, মৌলিক কাঁচামালের মূল্য হ্রাস, একই সঙ্গে পূর্ববর্তী সময়ের তুলনায় প্রশাসনিক ও অন্যান্য ব্যয় হ্রাস পাওয়ার কারণে লাভবান হতে সহায়তা করেছে বলে জানানো হয়েছে।

তথ্যে দেখা যায়, রহিম টেক্সটাইল মিলের বর্তমান উৎপাদন ক্ষমতা বার্ষিক তিন কোটি ইয়ার্ড (৩০০ লাখ গজ) ডাইং, প্রিন্টিং এবং ফিনিশিং। নতুন যন্ত্রপাতি স্থাপনের পর প্রতিবছর ১৯ লাখ ৪৪ হাজার গজ উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। সক্ষমতা বৃদ্ধির পর ৩১ লাখ ৫০ হাজার শঙ্কুর সেলাই থ্রেড, ৪৫ লাখ পিস ড্র কর্ড, ২৫২ লাখ ইয়ার্ডের ইলাস্টিক টুইল। ৪৫ লাখ গজের টেপ, ৭ লাখ ২০ হাজার গজের জ্যাকার্ড টেপ এবং বছরে ৩০০ লাখ পিস হিট সিল উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে।

এতে প্রতিষ্ঠানটির পণ্য বিক্রয় থেকে রাজস্ব বৃদ্ধি পাবে প্রায় ২৪ শতাংশ। এতে প্রতিষ্ঠানটির মুনাফা প্রত্যাশা অনুযায়ী বৃদ্ধি পাবে বলে জানানো হয়েছে। নতুন যন্ত্রপাতি স্থাপনের পর পণ্যের গুণগত মান বৃদ্ধি পাবে। এতে এসব পণ্য আগের তুলনায় বেশি দামে বিক্রি করা যাবে।

রহিম টেক্সটাইল মিলস টেক্সটাইল খাতের শতভাগ রপ্তানিমুখী শিল্প। প্রতিষ্ঠানটি রং, মুদ্রণ এবং কাপড় ফিনিশিংয়ের কাজ করে থাকে।

১৯৮৮ সালে তালিকাভুক্ত রহিম টেক্সটাইলের অনুমোদিত মূলধন ৫০ কোটি টাকা। পরিশোধিত মূলধন ৯ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। রিজার্ভে রয়েছে ২৬ কোটি ৪১ লাখ টাকা। মোট শেয়ার সংখ্যা ৯৪ লাখ ৫৯ হাজার ৬৮৩। এর ৭১ দশমিক ১৭ শতাংশ কোম্পানিটির উদ্যোক্তা-পরিচালক, ৫ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী ও বাকি ২৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ শেয়ার সাধারণ বিনিয়োগকারীর হাতে রয়েছে।

সৌদি আরামকোর নিট মুনাফা ২ হাজার ৭২৭ কোটি ডলার

প্রকাশ: ০৯ মে ২০২৪, ০১:০২ পিএম
সৌদি আরামকোর নিট মুনাফা ২ হাজার ৭২৭ কোটি ডলার
সৌদি আরবের পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশের হাওয়াইয়াহতে হাওয়াইয়াহ ন্যাচরাল গ্যাস লিকুইডস রিকভারি প্ল্যান্ট। ছবি: সংগৃহীত

চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে (প্রান্তিকে) এনার্জি জায়ান্ট সৌদি আরামকো ২ হাজার ৭২৭ কোটি (২৭ দশমিক ২৭ বিলিয়ন) ডলারের নিট মুনাফা করেছে। সে হিসাবে কোম্পানিটির নিট মুনাফা আগের প্রান্তিকের (অক্টোবর-ডিসেম্বর) তুলনায় ২ দশমিক ০৪ শতাংশ বেড়েছে। খবর আরব নিউজের।

কোম্পানির বিবৃতি অনুসারে, মার্চ মাসের শেষে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন তেল কোম্পানিটির (আরামকো) তিন মাসে মোট রাজস্ব আয় ছিল ১০৭ দশমিক ২১ বিলিয়ন ডিলার। এই সময়ের মধ্যে কোম্পানিটির মোট পরিচালন আয় ৫৮ দশমিক ৮৮ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে।

সৌদি আরামকোর সভাপতি ও প্রধান নির্বাহী (সিইও) আমিন নাসের বলেছেন, ‘আমাদের প্রথম প্রান্তিকের অর্জন আরামকোর স্থিতি ও শক্তিকে প্রতিফলিত করে। এটি অর্থনীতি, শিল্প এবং বিশ্বব্যাপী মানুষের কাছে জ্বালানির একটি প্রধান সরবরাহকারী হিসেবে আমাদের অবস্থানকে শক্তিশালী করে।’

এদিকে আগের বছরের প্রথম প্রান্তিকের তুলনায় ২০২৪ সালের মার্চ মাসের শেষে তাদাউলের (সৌদি আরবের শেয়ারবাজার) তালিকাভুক্ত কোম্পানিটির নিট মুনাফা ১৪ দশমিক ৪৪ শতাংশ কমেছে।

সৌদি আরবভিত্তিক সংবাদমাধ্যমটির খবরে বলা হয়, নিট আয় কম হওয়া সত্ত্বেও, আরামকো বছরের প্রথম তিন মাসের জন্য ২০ দশমিক ৩০ বিলিয়ন ডলার মৌলিক লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে এবং দ্বিতীয় প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) ১০ দশমিক ৮০ বিলিয়ন ডলারের চতুর্থ পারফরম্যান্স-লিঙ্কড লভ্যাংশ বিতরণ করবে বলে আশা করছে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, কোম্পানিটি ২০২৪ সালে ১২৪ দশমিক ৩০ বিলিয়ন ডলারের মোট লভ্যাংশ ঘোষণা করবে বলে আশা করছে। এর মধ্যে রয়েছে ৮১ দশমিক ২০ বিলিয়ন ডলারের মৌলিক লভ্যাংশ এবং ৪৩ দশমিক ১০ বিলিয়ন ডলারের একটি পারফরম্যান্স-লিঙ্কড লভ্যাংশ।

নাসের জানিয়েছেন, সৌদি আরামকো প্রথম প্রান্তিকে তাদের গ্যাস ব্যবসায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছে। তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের দীর্ঘমেয়াদি কৌশলও চালিয়ে যাচ্ছি এবং প্রথম প্রান্তিকে আমাদের গ্যাস ব্যবসা সম্প্রসারণ এবং আমাদের শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ধারাবাহিকভাবে মূল্য প্রদানের ওপর আমাদের লক্ষ্য ঠিক রেখে বিশ্বব্যাপী সমন্বিত ডাউনস্ট্রিম ভ্যালু চেইন বৃদ্ধিতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছি।

আরব নিউজ জানায়, ফেব্রুয়ারিতে এনার্জি জায়ান্টটি সৌদি আরবের জাফুরাহ ফিল্ডে অতিরিক্ত ১৫ ট্রিলিয়ন ঘনফুট স্ট্যান্ডার্ড এবং ২ বিলিয়ন ব্যারেল ঘনীভূত গ্যাস আবিষ্কার করেছে।

বিবৃতিতে এ ছাড়া উল্লেখ করা হয়েছে, ফাদিলি গ্যাস প্ল্যান্টের সম্প্রসারণের জন্য ৭ দশমিক ৭০ বিলিয়ন ডলার মূল্যের প্রকৌশল, সংগ্রহ ও নির্মাণ চুক্তি করেছে সৌদি আরামকো। এই চুক্তির লক্ষ্য হলো প্রতিদিন ১ দশমিক ৫০ বিলিয়ন স্ট্যান্ডার্ড কিউবিক ফুট গ্যাস প্রক্রিয়াকরণ ক্ষমতা বৃদ্ধি করা।

এর বাইরে ২০২৩ সালের তৃতীয় প্রান্তিকে চিলির খুচরা বিক্রেতা এসম্যাক্সের শতভাগ ইক্যুইটি অংশীদারত্ব অধিগ্রহণ করেছে আরামকো। এই অধিগ্রহণ কোম্পানির ডাউনস্ট্রিম কার্যক্রম সম্প্রসারণের প্রচেষ্টাকে শক্তিশালী করেছে।

নাসের বলেন, ‘ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে, আমি আশা করি আমাদের পোর্টফোলিও বিকশিত হতে থাকবে। কারণ আমরা জ্বালানি পরিবর্তনে একটি অবদান রাখার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছি, যা জলবায়ু চ্যালেঞ্জের সমাধান দেবে। একই সঙ্গে এটি সাশ্রয়ী, নির্ভরযোগ্য ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি সরবরাহের প্রয়োজনীয়তাকে স্বীকৃতি দেয়।’

বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, সৌদি আরামকো সাশ্রয়ী ও নির্ভরযোগ্য জ্বালানির জন্য বিশ্বের ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে সাহায্য করতে অত্যন্ত ভালো অবস্থানে রয়েছে। দেশটি এ বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে বলেছে, তেল ও গ্যাসসহ বিশ্বব্যাপী জ্বালানি মিশ্রণে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

এ ছাড়া কোম্পানিটি আরও উল্লেখ করেছে যে, চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে তারা মোট ১ কোটি ২৪ লাখ ব্যারেল তেলের সমতুল্য হাইড্রোকার্বন উৎপাদনের সক্ষমতা অর্জন করেছে।

টেকসই উন্নয়নের প্রতি আরামকোর প্রতিশ্রুতি তুলে ধরে এনার্জি জায়ান্টটি ঘোষণা করেছে যে, ২০৩০ সালের মধ্যে ১২ গিগাওয়াট পর্যন্ত সৌর ফটোভোলটাইক এবং বায়ু প্রকল্পে বিনিয়োগের লক্ষ্যে নবায়নযোগ্য জ্বালানির উৎসগুলোর ব্যবহার বাড়ানোর ইচ্ছা রয়েছে তাদের।

দিনাজপুরে ভুট্টা চাষ: ভালো দাম পাওয়ায় খুশি কৃষক

প্রকাশ: ০৯ মে ২০২৪, ১২:৫৬ পিএম
দিনাজপুরে ভুট্টা চাষ: ভালো দাম পাওয়ায় খুশি কৃষক
জমি থেকে ভুট্টা সংগ্রহ করে শুকানোর জন্য স্তুপ করে রাখা হয়েছে। ছবি: সংগৃহীত

দিনাজপুরের ১৩টি উপজেলায় ভুট্টা মাড়াইয়ের কাজ চলছে। বাম্পার ফলন ও ভালো দাম পাওয়ায় খুশি কৃষকরা।


দিনাজপুর কৃষি অধিদপ্তর উপপরিচালক মো. নুরুজ্জামান মিয়া জানান, ১৫ দিন আগে জেলায় ভুট্টা কাটা ও মাড়াই শুরু হয়েছে। কৃষকদের সুবিধার জন্য জেলা কৃষি বিভাগ কৃষকদের ভর্তুকি মূল্যে কম্বাইন হারভেস্টার মেশিন দিয়েছে। এতে কৃষকরা স্বল্প সময়ের মধ্যে ভুট্টা মাড়াই কাজ শেষ করতে পারছেন। আগামী ১৫ জুনের মধ্যে জেলার উৎপাদিতে ভুট্টা মাড়াই করে কৃষকরা ঘরে তুলতে পারবেন।

ঘোড়াঘাট উপজেলার কৃষক সোলাইমান আলী জানান, এ বছর ২ একর জমিতে ভুট্টা চাষ করেছেন। ফলন ভালো হয়েছে, ভুট্টা মাড়াই করে কাঁচা ভুট্টা জমি থেকেই ৩০ থেকে ৩২ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন। পাইকাররা জমি থেকে কাঁচা ভুট্টা কিনে তাদের চাতালে শুকাচ্ছেন। পাইকাররা শুকনো ভুট্টা ৩৫ থেকে ৩৮ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন।

ভুট্টা ব্যবসায়ী মোজাম্মেল হক জানান, প্রতি বছর শুকনো ভুট্টা মজুত করেন। মৌসুম শেষ হলে দুই থেকে তিন মাসের মধ্যেই ভুট্টার কেজি ৮ থেকে ১০ টাকা বেড়ে যায়। তখন তিনি বিক্রি করেন। মোজাম্মেল হক বলেন, ‘অনেক কৃষক তাদের উৎপাদিত ভুট্টা শুকিয়ে মজুত করে রাখেন। বাজারে চাহিদা ও দাম বাড়লে ভুট্টা বিক্রি করেন। এভাবে ভুট্টা মজুত রেখে ব্যবসায়ী ও কৃষক উভয়ে প্রতি বছর লাভবান হচ্ছেন। ফলে প্রতি বছর জেলায় ভুট্টার চাষ বেড়েই চলছে। ভুট্টা একটি লাভজনক ফসল হওয়ায় কৃষকদের ভুট্টা চাষে আগ্রহ বাড়ছে।’

জেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে জেলায় ৭৪ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। তবে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ৭৮ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষ হয়েছে। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৪ হাজার ১০০ হেক্টর বেশি।

বিরল উপজেলার ফরাক্কাবাঁধ গ্রামের ভুট্টাচাষি নাজমুল ইসলাম জানান, প্রথমে ভুট্টা চাষের জমিতে ২০ কেজি পটাস, ২৫ কেজি ফসফেট, ১০ কেজি জিপ সার, ১ কেজি বরন, ১ কেজি দানাদার ও ১ কেজি সালফার মাটির সঙ্গে মিশিয়ে জমি তৈরি করেন চাষিরা। পরে বিঘাপ্রতি ৩ কেজি ভুট্টার বীজ রোপণ করেন। এক মাসের মাথায় আইল বেঁধে বিঘাপ্রতি ২৫ কেজি ইউরিয়া, ২০ কেজি ডেপ ও ২ কেজি থিওভিট ছিটিয়ে খেতে পানি সেচ দেন তারা। বীজ রোপণের ৯০ থেকে ১০০ দিনের মধ্যে ভুট্টা কাটা-মাড়াই করে থাকেন কৃষকরা। ভুট্টার বীজ রোপণ থেকে কাটা-মাড়াই পর্যন্ত বিঘাপ্রতি কৃষকের খরচ হয় ১০ হাজার থেকে ১২ হাজার টাকা। ভালো ফলন হলে প্রতি বিঘায় ৪০ থেকে ৫০ মণ ভুট্টা উৎপাদন হয়। সূত্র বাসস

খুলনা উপকূলে তরমুজ চাষে চাঙ্গা কৃষি অর্থনীতি

প্রকাশ: ০৯ মে ২০২৪, ১২:৫২ পিএম
খুলনা উপকূলে তরমুজ চাষে চাঙ্গা কৃষি অর্থনীতি
খুলনার বটিয়াঘাটার সুখদাড়া বিলে তরমুজ খেতে কাজ করছেন চাষিরা। ছবি: খবরের কাগজ

বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে জলাবদ্ধতায় জমিতে পলি পড়ে উপকূলের ভূ-প্রকৃতিতে পরিবর্তন এসেছে। চিংড়ি চাষ বন্ধ হওয়ায় চাষের জমিতে লবণাক্ততাও কিছুটা কমতে শুরু করেছে। ফলে বেলে-দোআঁশ মাটিতে তরমুজ চাষে বদলে গেছে এখানকার কৃষি অর্থনীতি। কয়েক বছর আগেও লবণাক্ততায় এক ফসলি আমন ধানের পর সারা বছর বিঘার পর বিঘা জমি পতিত পড়ে থাকত। সেই বিরান ভূমিতে এখন সুখের বাতাস বইছে।

কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, খুলনার উপকূলীয় দাকোপ, কয়রা, পাইকগাছা ও বটিয়াঘাটা উপজেলায় এ বছর ১২ হাজার ৯৬৫ হেক্টর জমিতে তরমুজ আবাদ হয়েছে। হেক্টরপ্রতি ফলন হয়েছে ৩৫ টন। উৎপাদিত তরমুজ বিক্রি করে খরচ বাদে প্রতি হেক্টরে লাভ থাকছে প্রায় ৫ লাখ টাকা।

এক ফসলি আমনের পর লবণাক্ত জমিতে এতদিন ফসল না হওয়ায় কৃষকদের দিন কাটত দুশ্চিন্তায়। কিন্তু পতিত জমিতে তরমুজ চাষ সেই চিত্র বদলে দিয়েছে। এখন তরমুজের মাঠে তপ্ত রোদ উপেক্ষা করে স্বপ্নের বীজ বুনছেন চাষিরা।

সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রতিদিন ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ট্রাক-পিকআপ নিয়ে তরমুজ কিনতে খুলনার প্রত্যন্ত এলাকায় আসছেন বেপারিরা। তরমুজের খেত দেখেশুনে বিঘা হিসাবে ১ লাখ থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা দর নির্ধারণ করা হচ্ছে। বড় আকারের ভালো তরমুজ হলে বিঘাপ্রতি দাম পাওয়া যাচ্ছে ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত। সকালেই কৃষকরা মাঠের কাজে লেগে যান। কেউ মাঠে তরমুজ কাটছেন, কেউ তা ঝুড়ি বা বস্তায় ভরে ট্রাকে তুলছেন। আবার কেউ ট্রাকে তরমুজ সাজিয়ে রাখছেন। তরমুজ বিক্রির নগদ টাকা হাতে পেয়ে প্রখর রোদ আর ভ্যাপসা গরমের মাঝেও খুশির ঝিলিক প্রত্যন্ত উপকূলের চাষিদের মুখে।

বটিয়াঘাটা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবু বকর সিদ্দিক জানান, সময়মতো বৃষ্টি না হওয়ায় এবার পানির সংকটে এখানে কৃষিতে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। তার পরও এবার বটিয়াঘাটায় ২ হাজার ১৬০ হেক্টর জমিতে তরমুজ আবাদ হয়েছে। প্রত্যেক কৃষকই তরমুজ বিক্রি করে ভালো দাম পেয়েছেন। বটিয়াঘাটার সুখদাড়া গ্রামের চাষি তিমির বিশ্বাস জানান, আগে এখানকার জমি ফেলানো থাকত। আমনের পর আর কোনো ফসল হতো না। কিন্তু তরমুজ চাষে কৃষকদের ভাগ্য বদলেছে। বাজারে ভালো দাম পাওয়া যাচ্ছে। কৃষকদের পাশাপাশি যারা তরমুজ খেতে শ্রমিক হিসেবে কাজ করেছেন তাদের জীবন-জীবিকায়ও পরিবর্তন এসেছে।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, খুলনায় উৎপাদিত তরমুজের ৭০ শতাংশ হয় দাকোপ ‍উপজেলায়। এ বছর দাকোপের সিটিবুনিয়া, বটবুনিয়া বিল, তিলডাঙ্গা, পানখালী, কামারখোলা, চুনকুড়ি ও তালতলা বিলে ৫ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে তরমুজের আবাদ হয়েছে। তরমুজের চাষ পদ্ধতি নিয়ে বিভিন্ন সভা, লিফলেট বিতরণ, রোগবালাই নির্ণয়, প্রতিকার নিয়ে কাজ করছেন কৃষি কর্মকর্তারা।

সেচের পানিসংকট: উপকূলীয় এলাকায় সেচের পানিসংকট কৃষিকাজে বড় চ্যালেঞ্জ। শুষ্ক মৌসুমে অধিকাংশ নদী-খালের পানি লবণাক্ত হওয়ায় তরমুজ খেতে সেচ দিতে সমস্যা হয়। চলতি বছর বৃষ্টি না হওয়ায় এই ভোগান্তি আরও বেড়েছে। তবে ক্লাইমেট স্মার্ট টেকনোলজিতে মিনি পুকুর প্রযুক্তি জমিতে সেচ দিতে সহায়তা করেছে। এই পদ্ধতিতে জমির এক প্রান্তে ছোট পুকুর খনন করে সেখানে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করা হয়। শুষ্ক মৌসুমে এই পানি স্বল্প চাহিদাসম্পন্ন ফসলের সেচকাজে ব্যবহার করা হয়।

প্রকল্প কর্মকর্তা ফজলুল হক মনি বলেন, বটিয়াঘাটা, দাকোপ, কয়রায় সেচের পানির অভাব রয়েছে। সেচের অভাবে এখানে বিগত দিনে ফসল নষ্ট হতো। এখন মিনি পুকুর প্রযুক্তিতে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করে সেখান থেকে জমিতে সেচ দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া মাটির ওপর হালকা পলিথিন দিয়ে গাছপালার গোড়া, সবজি খেত ঢেকে দিয়ে পলি মালচিং পদ্ধতিতে চাষাবাদের ফলে জমিতে ৫ ভাগের ১ ভাগ পানি সেচের প্রয়োজন হয়। এসব পদ্ধতিতে উৎপাদন বেড়েছে। কৃষকদের জীবন-জীবিকার পরিবর্তন এসেছে।

তরমুজ চাষি তিমির বিশ্বাস বলেন, সময়মতো সেচ দেওয়া গেলে শতভাগ পতিত জমি তরমুজ চাষের আওতায় আনা যাবে। এরই মধ্যে প্রকল্প কর্মকর্তারা সুখদাড়া বিলে পুরোনো চারটি মিনি পুকুরের পাশাপাশি আরও ২০টি নতুন মিনি পুকুর খননের কাজ শুরু করেছেন।

নারীদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি: দাকোপের সিটিবুনিয়া, বটবুনিয়া বিল ও বটিয়াঘাটা সুখদাড়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, অসংখ্য নারী সকাল থেকে তরমুজের খেতে কাজ করছেন। ভোরে স্বামী-সন্তানদের পাশাপাশি তারাও খেতে পানি ও নিড়ানি দিচ্ছেন, আগাছা পরিষ্কার করছেন। সার ও কীটনাশক দিতে সহায়তা করছেন। আবার অনেক নারী দিনমজুর হিসেবে খেতে কাজ করছেন। নারী শ্রমিক করুণা মণ্ডল বলেন, তরমুজের তিন মাসে কেউ ঘরে বসে থাকে না। তরমুজ চাষে, বিশেষ করে নারী শ্রমিকের ব্যাপক কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে।

পরিবর্তন গ্রামীণ অর্থনীতিতে: তরমুজ বিপণন ঘিরে গ্রামের যোগাযোগব্যবস্থার উন্নতি হয়েছে। জেলা শহর থেকে প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত পিচ ঢালা রাস্তায় ট্রাক-পিকআপ চলাচল করছে। কৃষক খেত থেকেই সরাসরি তরমুজ বিক্রি করছেন। যেখানে আগে এক বিঘা জমি থেকে সারা বছরে ৩০ হাজার টাকা পাওয়া যেত না, এখন সেখানে তরমুজ চাষে তিন মাসেই বিঘাপ্রতি ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা লাভ হচ্ছে। ফলে পরিবর্তন এসেছে গ্রামীণ অর্থনীতিতে। ছেলেমেয়ের পড়াশোনা, বাড়ির অবকাঠামো উন্নয়নসহ দুবেলা-দুমুঠো খেতে পারছেন উপকূলের মানুষ।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কাজী জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, উপকূলের বিরান ভূমি এখন সবুজে ভরে গেছে। প্রতিবছরই তরমুজ চাষের আওতায় চাষের জমি বাড়ছে। তরমুজ চাষে কৃষি অর্থনীতিতে নতুন সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। তরমুজ চাষে নতুনভাবে ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখছেন এখানকার মানুষ।