সৌদি আরবের একটি বিরাট অংশ দখল করে আছে নারীদের ফ্যাশন পোশাক। গত পাঁচ বছরে এটি সৌদির দ্রুত বর্ধনশীল খুচরা বিক্রয়ের খাত হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সেই সঙ্গে দেশের সমগ্র খুচরা বাজারের এক-চতুর্থাংশ দখল করছে ফ্যাশন খাতটি। এ কারণে এই খাতের বিপুল সম্ভাবনা দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। সাম্প্রতিক একটি বাজার গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে। গবেষণাটি পরিচালনা করেছে বৈশ্বিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান রেডসিয়ার।
গবেষণা অনুযায়ী, সৌদি আরবের ফ্যাশনশিল্পের বাজার ২০৩০ সালের মধ্যে ৫৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের (২০০ বিলিয়ন সৌদি রিয়াল) বেশি হবে এবং খাতের ভবিষ্যৎ প্রবৃদ্ধির জন্য ডি২সি (ডাইরেক্ট-টু-কনজ্যুমার) ব্র্যান্ডগুলো একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ হিসেবে আবির্ভূত হবে। নারীদের ক্রমবর্ধমান কর্মক্ষমতা, পোশাকের পশ্চিমাকরণ, সামাজিক মিডিয়ার প্রভাব বৃদ্ধি এবং অনলাইন শপিং প্ল্যাটফর্মগুলোর সংখ্যা বেড়ে যাওয়া ইত্যাদি কারণগুলো সৌদি আরবের ফ্যাশন পোশাক সেগমেন্টের অভূতপূর্ব প্রবৃদ্ধির প্রধান চালিকাশক্তি।
গবেষণায় রেডসিয়ার বলছে, একদল তরুণ ও প্রযুক্তি সচেতন জনগোষ্ঠী, যাদের কাছে অতিরিক্ত ব্যয় করার জন্য পর্যাপ্ত আয়ের উৎস রয়েছে, তারা সুবিধা ও ব্যক্তিগত চাহিদার কারণে অনলাইন ফ্যাশনের প্রবৃদ্ধিতে একটা বড় ভূমিকা রাখছে।
ফ্যাশনশিল্পের বিকাশের নেতৃত্বে অনলাইন প্রতিষ্ঠানগুলো
শিল্প বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, অ্যামাজন, শেইন, টেমু, সান অ্যান্ড স্যান্ড স্পোর্টস, নুন ও নামশিসহ বিশ্বব্যাপী ও আঞ্চলিক বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর নেতৃত্বে বেশ কয়েকটি খুচরা বিক্রেতা ও অনলাইন কোম্পানির উত্থান সৌদি আরবের বাজারে নারী ফ্যাশন পোশাকের বৃদ্ধিতে নেতৃত্ব দিয়েছে।
সেনোমি রিটেইল, সেন্টারপয়েন্ট, মধ্যপ্রাচ্যের বিলাসবহুল অনলাইন রিটেইলার ওউনাস, তুর্কি ফ্যাশন পোশাক প্রধান ট্রেন্ডিওল এবং ফ্যাশন ও জুতার প্রধান কোম্পানি আলশায়া গ্রুপ সৌদির দ্রুত বর্ধমান ফ্যাশন পোশাক সেগমেন্টের অন্যতম প্রধান প্রতিযোগী। দেশের অর্থনীতিকে বৈচিত্র্যময় করার জন্য সৌদি সরকারের তেলবহির্ভূত খাত বাড়ানোর উদ্দেশ্যে সম্প্রতি গ্রহীত নীতিগুলো এবং ফ্যাশন কোম্পানিগুলোর প্রবেশ বাজারের প্রবৃদ্ধিকে সহজ করেছে।
সৌদি আরবের শ্রমশক্তিতে নারীর অংশগ্রহণ, পশ্চিমা পোশাকের প্রবণতা এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও অনলাইন শপিংয়ের প্রভাবের ফলে ফ্যাশনশিল্প পরিবর্তিত হচ্ছে।
নীতি বাস্তবায়ন, বিভিন্ন নন-অয়েল খাতসহ রিটেল খাতে বহু বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ সৌদি আরবের অর্থনীতিকে ২০৩০ সালের মধ্যে ১ দশমিক ৪৬ ট্রিলিয়ন ডলারে (৫ দশমিক ৫০ ট্রিলিয়ন সৌদি রিয়ালের) পৌঁছাতে ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
রেডসিয়ার গবেষণায় দেখা গেছে, অনলাইন রিটেল সৌদি আরবের বাজারে ফ্যাশন পণ্যের প্রসারে প্রধান ভূমিকা পালন করছে। ২০২০ সালের তুলনায় এটি পাঁচগুণ বেড়ে দেশটির সামগ্রিক ফ্যাশন রিটেল বাজারের ২০ শতাংশ অবদান রাখছে। এ ছাড়া অনলাইন বিক্রয় সেগমেন্টের সামগ্রিক প্রবৃদ্ধিতে ৯০ শতাংশ অবদান রেখেছে বলে ধারণা করা হয়।
দুবাইভিত্তিক রেডসিয়ার স্ট্র্যাটেজি কনসালট্যান্টসের পার্টনার সন্দীপ গানেডিওয়ালা বলেন, সৌদি আরবে ফ্যাশনের একটি প্রধান চালিকাশক্তি হয়ে উঠেছে অনলাইন, এই খাত থেকে ৯০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি এসেছে। সন্দীপ গানেডিওয়ালা বলেন, শেইন ও ওমনি-চ্যানেল ফ্যাশন বিশেষজ্ঞদের মতো অনলাইন ফ্যাশন কেন্দ্রিক খেলোয়াড়রা প্রতিযোগিতামূলক দামে বহু পণ্য সরবরাহ করে, যার ফলে এই উচ্চমাত্রার প্রবৃদ্ধি অর্জন করা সম্ভব হয়েছে।
রেডসিয়ার মতে, সামনের দিনগুলোতে সৌদি ফ্যাশনশিল্পটি ২০০ বিলিয়ন সৌদি রিয়ালের (৫৩ দশমিক ৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার) মার্কেটে রূপান্তরিত হবে, যেখানে ভবিষ্যৎ প্রবৃদ্ধির জন্য অনলাইন একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ হয়ে উঠবে।
ডি২সি ব্র্যান্ডগুলোর প্রাধান্য বাড়বে
গবেষণাটি বলছে, যদিও ই-টেইলিং (অনলাইন খুচরা বিক্রি) বিশেষজ্ঞ ও ওমনি-চ্যানেলগুলো (একই কোম্পানির পণ্য বিক্রির বিভিন্ন প্ল্যাটফর্ম) বর্তমানে ফ্যাশন পোশাক সেগমেন্টকে প্রাধান্য দিচ্ছে। স্থানীয় প্রবণতা ও চাহিদার বিভিন্নতা বাড়ার ফলে ভবিষ্যতে স্থানীয় ডি২সি ব্র্যান্ডগুলোর জন্য উর্বর ক্ষেত্র তৈরি হবে। সেই সঙ্গে ভবিষ্যতে নারীদের সব ধরনের কাজে যোগ দেওয়ার জন্য আরও বেশি অফিশিয়াল আউটওয়্যারের প্রয়োজন হবে, এটি আরও বেশি স্থানীয় ডি২সি ব্র্যান্ডের চাহিদা বাড়াবে বলেও গবেষণায় উঠে এসেছে।
সৌদির ক্রেতাদের একটি উল্লেখযোগ্য সংখ্যা তথা ৪৫ শতাংশ ট্রেন্ডি। তবে তারা সহজ ফ্যাশন পছন্দ করে। গাড়ি চালানোর জন্য আরামদায়ক পোশাক, জুতা এবং এক্সেসরিজের প্রয়োজন হয়, যার ফলে ট্রেন্ডি এবং স্টাইলিশ পোশাকের চাহিদা বাড়ছে। একই সঙ্গে, খেলাধুলায় নারীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ স্পোর্টসওয়্যারের চাহিদা বাড়াবে বলে গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে।
রেডসিয়ার মতে, আবায়াকে একটি আধুনিক ও উচ্চমানের পোশাক হিসেবে পুনর্বিবেচনা করা হচ্ছে, যা দেশটিতে দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়া ফ্যাশন ট্রেন্ডে অবদান রাখছে। প্রতিষ্ঠানটির বিশেষজ্ঞরা জানান, চুল ও মাথার সাজসজ্জার বাজারও ব্যাপকভাবে প্রসারিত হচ্ছে। কারণ দেশটিকে এখন আর নারীদের জন্য মাথা ঢাকা বাধ্যতামূলক নয়। গবেষণাটি বলেছে, সৌদি আরবের প্রায় ৬০ শতাংশ ক্রেতা নতুন স্থানীয় ব্র্যান্ডের জিনিসই কিনতে চেষ্টা করেন এবং ৫৫ শতাংশ মানুষ বিভিন্নতা খুঁজছেন, যার ফলে স্থানীয় ডি২সি ব্র্যান্ডগুলোর জন্য সুযোগ তৈরি হয়েছে। রেডসিয়ার আরও বলেছে, সৌদির ক্রেতাদের একটি উল্লেখযোগ্য সংখ্যা অর্থাৎ ৪৫ শতাংশই ট্রেন্ডি কিন্তু মার্জিত ফ্যাশন পছন্দ করতে চায়।
গানেদিওয়ালা বলেন, ল্যান্ডমার্ক ও কামাল ওসমান জামজুমের (কেওজে) মতো বাজারের প্রতিযোগীরা সফলভাবে স্থানীয় ফ্যাশন ব্র্যান্ড তৈরি করে এবং সেগুলোকে সরাসরি অফলাইনে গ্রাহকদের কাছে নিয়ে গেছে।
রেডসিয়ারের জ্যেষ্ঠ নির্বাহী বলেন, সৌদির গ্রাহকরা তাদের কেনাকাটায় খুব ডিজিটাল হয়ে উঠছে এবং তাদের মধ্যে ৬০ শতাংশ নতুন স্থানীয় ফ্যাশন ব্র্যান্ড কেনার চেষ্টা করছে। আমরা আশা করি ভবিষ্যতে স্থানীয় অনলাইনভিত্তিক সরাসরি গ্রাহক পর্যায়ে (ডি২সি) ব্র্যান্ডগুলো ফ্যাশন খাতকে আরও এগিয়ে নেবে।
বর্তমানে ই-টেইলিং বিশেষজ্ঞরা সৌদি আরবে ফ্যাশন রিটেইল বাজারের নেতৃত্ব দিচ্ছে, যা মোট বিক্রির ৫০ শতাংশ অবদান রাখছে। এরপরেই ওমনি-চ্যানেলগুলোর অবদান ৩০ শতাংশ বলে গবেষণায় উঠে এসেছে। [অ্যারাবিয়ান বিজনেসের প্রতিবেদন থেকে অনুবাদ করেছেন ইসমাঈল হোসাইন সোহেল]