
ট্রাম্প ক্ষমতায় এসেই তার বিশ্ব বাণিজ্যযুদ্ধ শুরুর যে নিশানা সামনে এনেছেন, তা বিশ্ব অর্থনীতিকে নতুন করে গভীর সংকটে ফেলতে পারে। ট্রাম্পের নির্বাচনি প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে বাড়তি শুল্ক আরোপের নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বিশ্ব অর্থনীতিতে। এতে মূল্যস্ফীতিতে আরও আঘাতের শঙ্কা রয়েছে। এদিকে এশিয়ার শেয়ারবাজারে ট্রাম্পের শুল্কের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। ইউরোপের শেয়ারবাজারেও এর প্রভাব দেখা গেছে। কানাডা, মেক্সিকো ও চীনের ওপর শুল্ক আরোপের পর ট্রাম্প ইউরোপীয় ইউনিয়নের ওপর শুল্ক আরোপ করবেন বলে জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ‘অবশ্যই’ এ কাজ করবে।
শুল্ক আরোপ করা প্রসঙ্গে ট্রাম্প বিভিন্ন কারণ দেখাচ্ছেন। সেসব কারণের মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে ফেনটানিল ও অন্যান্য মাদকের প্রবাহ বেড়ে যাওয়া, সীমান্ত নিরাপত্তা ইস্যু ইত্যাদি। চীন, মেক্সিকো ও কানাডা দৃঢ়ভাবেই ট্রাম্পের চাপিয়ে দেওয়া শুল্কের বিরোধিতা করেছে। কানাডা ও মেক্সিকো জানিয়েছে যে, তারাও যুক্তরাষ্ট্রের ওপর পাল্টা শুল্ক আরোপের কথা ভাবছে। তবে নিজ দেশে রিপাবলিকান পার্টির নেতাদের সমর্থন পাচ্ছেন ট্রাম্প। কংগ্রেসওম্যান মারজোরি টেইলর গ্রিনও ট্রাম্পের এ পদক্ষেপকে সমর্থন জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, শুল্ক আমাদের রাষ্ট্রীয় স্বার্থ রক্ষার জন্য প্রমাণিত ও শক্তিশালী উৎস। শুল্কনীতির বড় প্রভাব পড়বে জার্মানির ওপরও। চীনের পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপের কড়া জবাব দিয়েছে চীন। দেশটি যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের ওপর পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছে। এমনকি তদন্ত শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সার্চ জায়ান্ট গুগলের বিরুদ্ধেও। এ ছাড়া আরও দুই মার্কিন প্রতিষ্ঠানকে বিশেষ তালিকার আওতায় এনেছে দেশটি। চীনের ওপর ১০ শতাংশ যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপের বিপরীতে বেইজিংয়ের কড়া জবাবের পর অর্থনীতিবিদদের আশঙ্কা বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে বিশ্বের সবচেয়ে বড় এই দুই দেশের মধ্যে কি বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু হচ্ছে?
যুক্তরাষ্ট্র শুধু চীনের ওপর নয়, কানাডা ও মেক্সিকোর পণ্যের ওপরও শুল্ক আরোপ করেছিল। জবাবে তারাও পাল্টা শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছিল। কানাডার জনসাধারণ যুক্তরাষ্ট্রের এ পদক্ষেপের প্রতিবাদে যুক্তরাষ্ট্রের কিছু কিছু পণ্য বয়কট করতেও শুরু করে। পরে দেশটি জানায়, আপাতত ৩০ দিনের জন্য শুল্ক আরোপ স্থগিত করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন পণ্যের ওপর চীন পাল্টা শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেওয়ায় বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতি বাড়বে। অর্থনীতিবিদদের মতে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পণ্যের ওপর ট্রাম্প প্রশাসনের শুল্ক আরোপের ফলে স্বল্প মেয়াদে রপ্তানিতে কিছু সুবিধার আশঙ্কা তৈরি হলেও দীর্ঘ মেয়াদে সংকটে পড়তে পারে বাংলাদেশ।
বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতির প্রভাব থেকে তখন বাংলাদেশও মুক্ত থাকতে পারবে না। যা দেশের বিদ্যমান উচ্চ মূল্যস্ফীতিকে আরও উসকে দেবে। বিদ্যমান অর্থনীতির যে সংকট তা আরও গভীর হবে বলে শঙ্কা প্রকাশ করছেন বিশ্লেষকরা। বৈশ্বিক বাণিজ্যযুদ্ধের যাত্রাকালে বাংলাদেশও তখন রক্ষা পাবে না। শুল্ক আরোপের ফলে আমদানিতে ব্যয় বাড়বে। যে কারণে সংকট আরও গভীরে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বৈদেশিক বাণিজ্যের তথ্যমতে, বাংলাদেশ প্রতিবছর গড়ে ৫ হাজার কোটি মার্কিন ডলারের বেশি পণ্য রপ্তানি করছে। অপরদিকে বিদেশ থেকে পণ্য আমদানি করছে ৬ থেকে সাড়ে ৬ হাজার কোটি ডলারের।
দেশের অর্থনীতি যাতে দীর্ঘ মেয়াদে সমস্যায় না পড়ে, সে জন্য সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। বিশ্বব্যাপী বাণিজ্যনীতিতে যে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে তা পুরো অর্থনীতিকে মন্থর করে দিতে পারে। সে জন্য দেশের অর্থনীতিকে সুরক্ষা দিতে হলে সরকারের অভ্যন্তরীণ প্রস্তুতি বাড়াতে হবে। বৈশ্বিক সংকটে উচ্চ মূল্যস্ফীতির অবসান হোক, সেটাই প্রত্যাশা।