ঢাকা ৮ চৈত্র ১৪৩১, শনিবার, ২২ মার্চ ২০২৫
English

ট্রাম্পের বাণিজ্যযুদ্ধ  বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতির অবসান হোক

প্রকাশ: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:৫৮ পিএম
ট্রাম্পের বাণিজ্যযুদ্ধ 
বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতির অবসান হোক

ট্রাম্প ক্ষমতায় এসেই তার বিশ্ব বাণিজ্যযুদ্ধ শুরুর যে নিশানা সামনে এনেছেন, তা বিশ্ব অর্থনীতিকে নতুন করে গভীর সংকটে ফেলতে পারে। ট্রাম্পের নির্বাচনি প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে বাড়তি শুল্ক আরোপের নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বিশ্ব অর্থনীতিতে। এতে মূল্যস্ফীতিতে আরও আঘাতের শঙ্কা রয়েছে। এদিকে এশিয়ার শেয়ারবাজারে ট্রাম্পের শুল্কের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। ইউরোপের শেয়ারবাজারেও এর প্রভাব দেখা গেছে। কানাডা, মেক্সিকো ও চীনের ওপর শুল্ক আরোপের পর ট্রাম্প ইউরোপীয় ইউনিয়নের ওপর শুল্ক আরোপ করবেন বলে জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ‘অবশ্যই’ এ কাজ করবে।

 শুল্ক আরোপ করা প্রসঙ্গে ট্রাম্প বিভিন্ন কারণ দেখাচ্ছেন। সেসব কারণের মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে ফেনটানিল ও অন্যান্য মাদকের প্রবাহ বেড়ে যাওয়া, সীমান্ত নিরাপত্তা ইস্যু ইত্যাদি। চীন, মেক্সিকো ও কানাডা দৃঢ়ভাবেই ট্রাম্পের চাপিয়ে দেওয়া শুল্কের বিরোধিতা করেছে। কানাডা ও মেক্সিকো জানিয়েছে যে, তারাও যুক্তরাষ্ট্রের ওপর পাল্টা শুল্ক আরোপের কথা ভাবছে। তবে নিজ দেশে রিপাবলিকান পার্টির নেতাদের সমর্থন পাচ্ছেন ট্রাম্প। কংগ্রেসওম্যান মারজোরি টেইলর গ্রিনও ট্রাম্পের এ পদক্ষেপকে সমর্থন জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, শুল্ক আমাদের রাষ্ট্রীয় স্বার্থ রক্ষার জন্য প্রমাণিত ও শক্তিশালী উৎস। শুল্কনীতির বড় প্রভাব পড়বে জার্মানির ওপরও। চীনের পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপের কড়া জবাব দিয়েছে চীন। দেশটি যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের ওপর পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছে। এমনকি তদন্ত শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সার্চ জায়ান্ট গুগলের বিরুদ্ধেও। এ ছাড়া আরও দুই মার্কিন প্রতিষ্ঠানকে বিশেষ তালিকার আওতায় এনেছে দেশটি। চীনের ওপর ১০ শতাংশ যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপের বিপরীতে বেইজিংয়ের কড়া জবাবের পর অর্থনীতিবিদদের আশঙ্কা বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে বিশ্বের সবচেয়ে বড় এই দুই দেশের মধ্যে কি বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু হচ্ছে? 

যুক্তরাষ্ট্র শুধু চীনের ওপর নয়, কানাডা ও মেক্সিকোর পণ্যের ওপরও শুল্ক আরোপ করেছিল। জবাবে তারাও পাল্টা শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছিল। কানাডার জনসাধারণ যুক্তরাষ্ট্রের এ পদক্ষেপের প্রতিবাদে যুক্তরাষ্ট্রের কিছু কিছু পণ্য বয়কট করতেও শুরু করে। পরে দেশটি জানায়, আপাতত ৩০ দিনের জন্য শুল্ক আরোপ স্থগিত করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন পণ্যের ওপর চীন পাল্টা শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেওয়ায় বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতি বাড়বে। অর্থনীতিবিদদের মতে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পণ্যের ওপর ট্রাম্প প্রশাসনের শুল্ক আরোপের ফলে স্বল্প মেয়াদে রপ্তানিতে কিছু সুবিধার আশঙ্কা তৈরি হলেও দীর্ঘ মেয়াদে সংকটে পড়তে পারে বাংলাদেশ।

 বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতির প্রভাব থেকে তখন বাংলাদেশও মুক্ত থাকতে পারবে না। যা দেশের বিদ্যমান উচ্চ মূল্যস্ফীতিকে আরও উসকে দেবে। বিদ্যমান অর্থনীতির যে সংকট তা আরও গভীর হবে বলে শঙ্কা প্রকাশ করছেন বিশ্লেষকরা। বৈশ্বিক বাণিজ্যযুদ্ধের যাত্রাকালে বাংলাদেশও তখন রক্ষা পাবে না। শুল্ক আরোপের ফলে আমদানিতে ব্যয় বাড়বে। যে কারণে সংকট আরও গভীরে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বৈদেশিক বাণিজ্যের তথ্যমতে, বাংলাদেশ প্রতিবছর গড়ে ৫ হাজার কোটি মার্কিন ডলারের বেশি পণ্য রপ্তানি করছে। অপরদিকে বিদেশ থেকে পণ্য আমদানি করছে ৬ থেকে সাড়ে ৬ হাজার কোটি ডলারের। 

দেশের অর্থনীতি যাতে দীর্ঘ মেয়াদে সমস্যায় না পড়ে, সে জন্য সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। বিশ্বব্যাপী বাণিজ্যনীতিতে যে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে তা পুরো অর্থনীতিকে মন্থর করে দিতে পারে। সে জন্য দেশের অর্থনীতিকে সুরক্ষা দিতে হলে সরকারের অভ্যন্তরীণ প্রস্তুতি বাড়াতে হবে। বৈশ্বিক সংকটে উচ্চ মূল্যস্ফীতির অবসান হোক, সেটাই প্রত্যাশা।

 

রেলের টিকিটসংকট  ঈদযাত্রায় ভোগান্তি এড়াতে পদক্ষেপ নিন

প্রকাশ: ২১ মার্চ ২০২৫, ০৩:৩৫ পিএম
রেলের টিকিটসংকট 
ঈদযাত্রায় ভোগান্তি এড়াতে পদক্ষেপ নিন

সড়কপথে দীর্ঘ যানজট ও ভোগান্তি এড়াতে মানুষ রেল ভ্রমণের সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন। বিশেষ করে ঈদের সময় মানুষ এদিকেই বেশি আগ্রহ দেখান। কিন্তু সমস্যা দেখা দেয় রেলের টিকিট সংগ্রহ নিয়ে। অনলাইনে টিকিট কাটতে গিয়ে যাত্রীরা তাদের কাঙ্ক্ষিত টিকিট পাচ্ছেন না বলে গণমাধ্যমে অভিযোগ এসেছে। রেলওয়ে সূত্র জানিয়েছে, ৭১ শতাংশ যাত্রী অনলাইনে টিকিট কাটছেন। বাকি ২৯ শতাংশ যাত্রীর টিকিট এখনো স্টেশন থেকে কাটতে হয়। সেখানে স্টেশনমাস্টার ও রেলের অন্য কর্মচারীরা টিকিট বুকিং দিয়ে রাখছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

 টিকিট কেন পাওয়া যাচ্ছে না, এ বিষয়ে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ব্যাখ্যা দিয়েছে, তারা বলছে, প্রতি মিনিটে প্রায় ৯ লাখ মানুষ সার্ভারে টিকিট পেতে হিট করছেন। প্রতিদিন চাহিদা ১ লাখ টিকিটের, আর রেলওয়ে দিতে পারছে মাত্র ১ হাজার টিকিট। সার্ভারে যে আগে সব তথ্য আর ওটিপি কোড সাবমিট করতে পারবেন তিনি টিকিট পাবেন। এখানে একটি প্রতিযোগিতা লেগেই থাকে। এখানে কালোবাজারিও রয়েছে। একজন ব্যক্তি সার্ভার থেকে সর্বোচ্চ চারটি টিকিট কাটতে পারেন। তিনি সেই টিকিটগুলো অফলাইনে বেশি দামে বিক্রি করে দিচ্ছেন। এতেই মূলত সংকট তৈরি হচ্ছে। এ ছাড়া স্বল্প দূরত্বের স্টেশনে যেতেও মোবাইল ওটিপি কোড বাধ্যতামূলক করেছে রেলওয়ে। এ ক্ষেত্রে ওটিপি কোড আসতে সময় লেগেছে দেড় থেকে দুই মিনিট। এতে যাত্রীরাও কাউন্টার থেকে টিকিট নিতে নিরুৎসাহিত হচ্ছেন। 

আগামী ৩১ মার্চ পবিত্র ঈদুল ফিতরের দিন ধরে বিশেষ ব্যবস্থাপনায় আন্তনগর ট্রেনের আসনের টিকিট অগ্রিম বিক্রি করছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। ঈদের রেলযাত্রার প্রতারণা এড়াতে নির্ধারিত অ্যাপ (রেলসেবা) অথবা সরাসরি কাউন্টার থেকে টিকিট কেনার পরামর্শ দিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ বলছে, গত ১৪ মার্চ থেকে ঈদযাত্রার ট্রেনগুলোর টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে। বিপুল চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে কিছু অসাধু ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান টিকিট কালোবাজারি করতে পারে। ক্ষেত্রবিশেষে বিভিন্ন আইডি থেকে কেনা টিকিট বেআইনিভাবে বিভিন্ন মাধ্যমে বিক্রির চেষ্টা করতে পারে। এতে যাত্রী সাধারণের হয়রানিও প্রতারণার শিকার হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। 

আইডিধারী ব্যক্তি ও টিকিটে উল্লিখিত সহযাত্রী ব্যতীত অন্য কেউ ভ্রমণ করতে পারবেন না বলে জানিয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। যদি কোনো ব্যক্তি নিজের আইডি ছাড়া অন্য কারও আইডি ব্যবহার করে কেনা টিকিটে ভ্রমণ করেন, তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানা গেছে। এবারের ঈদযাত্রা ২৪ থেকে ৩০ মার্চ পর্যন্ত বিশেষ ব্যবস্থাপনার ট্রেন চলবে। টিকিট সংগ্রহের ক্ষেত্রে একটি আইডি থেকে সর্বোচ্চ একবার চারটি টিকিট কেনা যাবে। এ ক্ষেত্রে আইডিধারী ব্যক্তির পাশাপাশি সহযাত্রীদের নামও ইনপুট দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। যে ব্যক্তির আইডি ব্যবহার করে টিকিট কেনা হবে, ওই ব্যক্তির সংশ্লিষ্ট মোবাইল ফোন ও আইডিধারী ব্যক্তির ফটোসংবলিত আইডি কার্ডসহ তাকে ভ্রমণ করতে হবে। 

প্রতি ঈদে বিপুলসংখ্যক মানুষকে শিকড়ের টানে দেশে ফিরতে হয়। কিন্তু সমস্যা দেখা দেয় টিকিট কাটতে গিয়ে। সমস্যা সড়ক পরিবহনেও যেমন রয়েছে, তেমনি রেলের টিকিট সংগ্রহ নিয়েও ভোগান্তি হয় যাত্রীদের। যাত্রীর তুলনায় আসনসংখ্যা কম হওয়ায় চাহিদা অনুযায়ী কাঙ্ক্ষিত টিকিট পাওয়া যায় না। তাই যাত্রীদের ভোগান্তি এড়াতে সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। রেলওয়ের টিকিটব্যবস্থা আরও আধুনিক, যুগোপযোগী ও গতিশীল করতে এ ব্যাপারে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে।

 

গাজায় ইসরায়েলি নৃশংসতা যুদ্ধবিরতির মধ্যে হত্যাযজ্ঞের তীব্র নিন্দা জানাই

প্রকাশ: ২০ মার্চ ২০২৫, ০৫:১৯ পিএম
গাজায় ইসরায়েলি নৃশংসতা
যুদ্ধবিরতির মধ্যে হত্যাযজ্ঞের তীব্র নিন্দা জানাই

মধ্যরাত পেরিয়ে গেছে। সবাই গভীর ঘুমে। কেউ কেউ সাহরির প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এমন সময় একের পর শুরু হয় বোমা হামলা। চারদিকে আতঙ্ক আর রক্তাক্ত মানুষের আর্তচিৎকার, ছোটাছুটি। গাজা উপত্যকায় আবার রক্ত ঝরল।

গত সোমবারের ঘটনা এটি। খবরের কাগজে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে ওই দিন মধ্যরাতের পর আকস্মিকভাবে শুরু হয় এই নারকীয় হত্যাযজ্ঞ। গাজার দক্ষিণের খান ইউনিস ও রাফা, উত্তরের গাজা নগর এবং মধ্যাঞ্চলের দেইর আর-বালাসহ গাজার প্রায় সব জায়গায় ইসরায়েল কুড়িটিরও বেশি যুদ্ধবিমান ও ড্রোন দিয়ে হামলা চালায়। এক রাতেই প্রাণ হারান ৪০০ জনেরও বেশি মানুষ। এদের মধ্যে ছিলেন নারী, শিশু ও বয়োবৃদ্ধরা। আহত হয়েছেন সাড়ে পাঁচ শর মতো মানুষ। কোনো কোনো ক্ষেত্রে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে পুরো পরিবার। ইসরায়েলি আক্রমণে ২৩ লাখ জনবসতিপূর্ণ গাজা এভাবেই পরিণত হয় বিপজ্জনক রণক্ষেত্রে। ইসরায়েলের প্রতিপক্ষ গাজার হামাস বলেছে, ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভঙ্গ করে এই বর্বরতম হামলা চালিয়ে ‘বিশ্বাসঘাতকতা’ করেছে। ইসরায়েল অবশ্য বলেছে তারা চুক্তি ভঙ্গ করেনি। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, ইসরায়েল হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে।

প্রায় ১৫ মাস ধরে গাজার ৪৮ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হওয়ার পর গত ১৯ জানুয়ারি ইসরায়েল-হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয়। এর মেয়াদ শেষ হয়েছে ২ মার্চ। মূল চুক্তিতে বলা ছিল, প্রথম ধাপের যুদ্ধবিরতি চলাকালে দ্বিতীয় ধাপের আলোচনা হবে। যদি এর মধ্যে দ্বিতীয় ধাপের যুদ্ধবিরতির শর্ত নিয়ে সমঝোতা না হয়, তাহলে প্রথম ধাপের যুদ্ধবিরতি চলবে। এই যুদ্ধবিরতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের জিম্মিবিষয়ক দূত অ্যাডাম বোয়েহলারও একটি সমঝোতা প্রস্তাব উত্থাপন করেছিলেন। সেই প্রস্তাবে বলা হয়েছিল, হামাস ইসরায়েলি-আমেরিকান জিম্মি মুক্তি দেবে এবং চারটি লাশ ফেরত দেবে। হামাস এতে রাজি হয়েছিল। তারা ধরে নিয়েছিল এর মধ্য দিয়ে যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় ধাপ শুরু হবে। কিন্তু ইসরায়েল বোয়েহলারের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে। নতুন করে তারা দ্বিতীয় ধাপের চুক্তি করেনি আর প্রথম ধাপের চুক্তি ভঙ্গ করে গাজায় আক্রমণ চালিয়েছে। হামলা চালানোর আগে ওয়াশিংটনের কাছ থেকে ইসরায়েল অনুমতিও নিয়েছে। এই হামলার দায় তাই ওয়াশিংটনেরও।

আমরা মনে করি, ইসরায়েল যা করেছে তা জঘন্যতম অপরাধ। তারা রাতের আঁধারে ঘুমন্ত মানুষের ওপর হামলা চালিয়ে হত্যা করেছে। শুধু এবারই নয়, দিনের পর দিন দখলদার ইসরায়েলি বাহিনী এটি করে আসছে। শুধু গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত ৪৮ হাজার ৫৭৭ জন ফিলিস্তিনি তাদের হাতে প্রাণ হারিয়েছে। এদের মধ্যে ১৭ হাজার ৫০০ ছিল শিশু। এসব হত্যা নিঃসন্দেহে মানবতার বিরুদ্ধে গুরুতর অপরাধ। ইসরায়েলের এই বর্বরোচিত আক্রমণের নিন্দা জানিয়েছে পৃথিবীর বহু দেশ। আগেও বিশ্ববাসী ছিল এর বিরুদ্ধে সোচ্চার। 

খোদ যুক্তরাষ্ট্রে দিনের পর দিন প্রতিবাদী মিছিল ও সমাবেশ করেছে সে দেশের বিবেকবান সচেতন মানুষ। নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশ সরকারসহ দেশের সাধারণ মানুষ। এবারও আমরা এই হামলার তীব্র নিন্দা জানাই। নিন্দা জানাই ইসরায়েলের। শুধু নিন্দা নয়, বিশ্ববাসী ও জাতিসংঘকে জরুরি ভিত্তিতে এই হামলার বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। সেই প্রেক্ষাপটে এই মুহূর্তে যা করণীয় তা হলো, অবিলম্বে হামলা বন্ধ করে যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বাড়াতে হবে। তবে এ সমস্যার সবচেয়ে ভালো সমাধান হচ্ছে রাজনৈতিক সমাধান। বহু বছর ধরে সেই চেষ্টা চলছে, কিন্তু সফলতা আসেনি। এখন আবার সেই উদ্যোগ গ্রহণ করাটা সময়ের দাবি। জাতিসংঘের উদ্যোগে সেটি হতে পারে। পরাশক্তিসহ উভয় পক্ষকে সঙ্গে নিয়ে জাতিসংঘ সমস্যা সমাধানের গ্রহণযোগ্য একটা উপায় বের করতে পারে। সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের প্রতি আহ্বান জানাই, কোনো অবস্থাতেই গাজায় যাতে আর একবিন্দু রক্ত না ঝরে, সেই ব্যবস্থা গ্রহণ করুন।

উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপে মানুষ নিয়ন্ত্রণে চাই কার্যকর পদক্ষেপ

প্রকাশ: ১৯ মার্চ ২০২৫, ০৮:৩০ পিএম
উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপে মানুষ
নিয়ন্ত্রণে চাই কার্যকর পদক্ষেপ

উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপে সাধারণ মানুষ অনেকটাই দিশেহারা। কয়েক বছর ধরে দেশের অর্থনীতি মন্থর হয়ে আছে। অর্থনীতির এই নাজুক অবস্থায় কেউ সঞ্চয়পত্র ভেঙে খাচ্ছেন, কেউ শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করা শেয়ার লোকসানে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। আড়াই বছর ধরে দেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতি বিদ্যমান রয়েছে। এতে স্বল্প আয়ের মানুষের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এ কথা স্বীকার করতেই হবে, এত সমস্যার মধ্যেও আমাদের অগ্রগতি হয়েছে। মোট দেশজ উৎপাদন জিডিপির প্রবৃদ্ধি বেড়েছে। মাথাপিছু আয়ও বেড়েছে। অর্থনীতিবিদরা বলেছেন, মুষ্টিমেয় মানুষের হাতে এখন বিপুল অর্থ। বৃহত্তর জনগোষ্ঠী নিঃস্ব থেকে নিঃস্ব হচ্ছে। অর্থাৎ একদিকে আমাদের উন্নয়ন হচ্ছে, অন্যদিকে বৈষম্য বাড়ছে ভয়াবহভাবে। এতে সমাজে অস্থিরতা বাড়ছে। সম্প্রতি বিবিএসের পরিসংখ্যান বলছে, মূল্যস্ফীতির চাপ কিছুটা কমতে শুরু করেছে। এটি আশার কথা। জানুয়ারি মাসের তুলনায় ফেব্রুয়ারিতে মূল্যস্ফীতি কমেছে। বিবিএসের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ফেব্রুয়ারিতে সার্বিকভাবে গড় মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৩২ শতাংশ এবং খাদ্য মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ২৪ শতাংশ।

স্বল্প আয় ও দরিদ্র মানুষকে স্বস্তি দিতে সরকার চাল, ভোজ্যতেলসহ নিত্যপণ্যের ওপর শুল্ক কমিয়েছে। কিন্তু শুল্ক কমালেও দাম কমেনি বরং আরও বেড়েছে। শুল্ককরের সুবিধাও মধ্যস্বত্বভোগীদের পকেটে চলে গেছে। খেজুর, সয়াবিন তেলসহ সব পণ্যের পর্যাপ্ত আমদানির পরও পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। এনবিআরের সাবেক সদস্যের মতে, অতীত অভিজ্ঞতা থেকে দেখা গেছে, শুল্ককর কমিয়ে বাজার স্থিতিশীল করা যায়নি। বরং মাঝখান থেকে সরকারের রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে। সে জন্য বাজার নিয়ন্ত্রণে তদারকিব্যবস্থা আরও জোরদার করার পরামর্শ দেন তিনি।

সাধারণ মানুষ সবচেয়ে বেশি অর্থ জমা রাখে ব্যাংকে, তারপর নিরাপত্তা ও অধিক মুনাফার আশায় সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করে। কিন্তু সুদ বেশি হওয়ার পরও সঞ্চয়পত্র কেনা কমিয়ে দিয়েছে মানুষ। এমনকি সঞ্চয়পত্র ভেঙে ফেলার প্রবণতাও লক্ষণীয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত তিন মাসে ২৫ হাজার ৬৯ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র ভেঙেছেন গ্রাহকরা। অন্যদিকে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথমার্ধে সঞ্চয়পত্র কেনার হার ২৭ শতাংশ কমেছে। সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমে যাওয়া ও ভাঙার হার বেড়ে যাওয়ার পেছনে বেশ কিছু কারণ রয়েছে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা। তারা বলছেন, উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষের ব্যয় বেড়েছে। সেই হারে আয় বাড়ছে না, সে জন্য অনেকেই সঞ্চয়পত্র ভাঙতে বাধ্য হচ্ছেন। এ ছাড়া দেশের রাজনীতি, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিসহ সবকিছু একটা অস্থিরতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এ রকম অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানোর অবস্থায় নেই। বিনিয়োগের পরিবেশও তেমনটা আশাব্যঞ্জক নয়, দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগে উৎসাহ হারাচ্ছেন দেশের চলমান পরিস্থিতির কারণে। এ অবস্থায় দেশে কর্মসংস্থানেও ভাটা পড়েছে, এর ফলে আয়ও বাড়ছে না।

সাবেক সচিব গোলাম রহমান খবরের কাগজকে বলেন, ‘সরকার বলছে, মূল্যস্ফীতি আগামী কয়েক মাসের মধ্যে ৭-৮ শতাংশে নেমে আসবে। কিন্তু আমি মনে করি, আগামী এক বছরের মধ্যে ওই পর্যায়ে কমার সম্ভাবনা নেই। উৎপাদনব্যবস্থায় এখনো শৃঙ্খলা ফিরে আসেনি। চাঁদাবাজি, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি, আমাদের উচিত ব্যবসার পরিবেশ তৈরি করা। যাতে কেউ ইচ্ছা করলেও দাম বাড়াতে না পারে।’

গত কয়েক বছরে দেশের মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। এরই মধ্যে দেশে বড় ধরনের রাজনৈতিক পটপরিবর্তন হয়েছে। গত সরকারও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এর ফল হিসেবে এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে গড় মূল্যস্ফীতি আগের তুলনায় কমেছে। দরিদ্র ও স্বল্প আয়ের মানুষকে স্বস্তি দিতে সরকার কিছু কিছু পণ্যের আমদানি ও সরবরাহ বাড়িয়েছে, তার পরও রোজায় সেসব পণ্য ভোক্তাকে কিনতে হচ্ছে চড়া দামে। যদিও এ ক্ষেত্রে শুল্ককর অব্যাহতি দেওয়ায় পুরো মধ্যস্বত্বভোগী ও সিন্ডিকেটের কবজায় রয়েছে। এ অবস্থায় বাজার তদারকিব্যবস্থা শক্তিশালী করতে সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। যাতে করে উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হয়।

নতুন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ মানসম্পন্ন করে গড়ে তুলুন

প্রকাশ: ১৮ মার্চ ২০২৫, ০২:১৫ পিএম
নতুন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ
মানসম্পন্ন করে গড়ে তুলুন

বাংলাদেশে শিক্ষার নানা স্তরে নৈরাজ্য চলছে দীর্ঘদিন ধরে। নতুন করে এতে যুক্ত হয়েছে সাত কলেজকেন্দ্রিক সংকট। এই কলেজগুলোর শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবিতে বিভিন্ন সময়ে আন্দোলন করেছেন। বিশেষ করে অন্তর্বর্তী সরকার প্রতিষ্ঠার পর বিক্ষোভ-অবরোধের মতো কর্মসূচি নিয়ে তারা রাজপথে নেমে এসেছেন। এতে পুরো ঢাকা মহানগরী যান চলাচলের দিক থেকে অচল হয়ে যায়। জনজীবন স্থবির হয়ে পড়ে। কলেজগুলোর এই আন্দোলনের মুখে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) গত ১৬ মার্চ সাত কলেজকে নিয়ে ‘ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি’ নামে আলাদা বিশ্ববিদ্যালয় করার প্রস্তাব দিয়েছে।

সরকারের এই উদ্যোগের মধ্য দিয়ে সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয় করার যে দাবি ছিল, আপাতত তার সুরাহা হলো। তবে শুধু একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হলেই হবে না, যে লক্ষ্যে নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তা যথাযথভাবে পূরণ করতে হবে।এ প্রসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক অধিকার আন্দোলনের মহান নেতা মার্টিন লুথার কিং জুনিয়রের একটা কথা স্মরণ করছি। তিনি বলেছিলেন, প্রজ্ঞা, বুদ্ধিমত্তা ও চরিত্র গঠনের সঙ্গে সঙ্গে একজন শিক্ষার্থী যাতে গভীর ও সমালোচনামূলকভাবে চিন্তা করতে শেখে, সেটাই হচ্ছে উচ্চশিক্ষার লক্ষ্য। উচ্চশিক্ষা তাই শুধু জ্ঞান অর্জনের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না। পরিপূর্ণ বোধসম্পন্ন মানুষ হিসেবে শিক্ষার্থীদের গড়ে তোলে। এখন কথা হলো, নতুন যে এক বা একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি উঠেছে তার প্রয়োজন কতটুকু?
বিদ্যমান পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার যৌক্তিকতা কতটুকু তা নিয়ে গতকাল খবরের কাগজে একটি বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। প্রতিবেদনের তথ্য অনুসারে, স্বাধীনতা-পূর্ব বাংলাদেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ছিল ৬টি; এখন সেই সংখ্যা ৫৫। এর বাইরে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় তো আছেই। অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী খবরের কাগজকে বলেছেন, উচ্চশিক্ষার প্রধান সমস্যা হচ্ছে শিক্ষক সমস্যা। 

কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ভালো শিক্ষক পাওয়া যায় না। উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে প্রথমেই গুরুত্ব দেওয়া উচিত মানসম্পন্ন শিক্ষার ওপর, নতুন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ওপর নয়। বৈশ্বিক মানদণ্ডের দিক থেকেও দেখা যাচ্ছে, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অবস্থান তলানিতে। কিউএস র‌্যাঙ্কিং ও টাইমস হায়ার এডুকেশন র‌্যাঙ্কিং-এ ৫০০-এর মধ্যে, এমনকি এশিয়ার ১০০-এর মধ্যেও নেই দেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়। শিক্ষার বৈশ্বিক নানা সূচকে পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ। ফলে মান বৃদ্ধির ওপর শিক্ষাবিদরা গত প্রায় দুই দশক ধরে গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলে আসছেন। তাদের কথায়, সংখ্যা বৃদ্ধি যেটুকু হওয়া প্রয়োজন সেটুকু হয়ে গেছে। বরং প্রয়োজনের চেয়ে বেশি বেড়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা। কিন্তু মান বজায় রাখা যায়নি, ক্রমশ তা নিম্নমুখী হয়েছে। মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ। 

এ জন্য প্রথমেই যা করা দরকার তা হচ্ছে, বর্তমানে যেসব কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় আছে সেই সব প্রতিষ্ঠানের সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো। মানসম্পন্ন ডিগ্রিধারী দক্ষ শিক্ষকের সংকট দূর করতে হবে। অবহেলিত গবেষণার খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি করাও জরুরি। এ ছাড়া শিক্ষক, কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের আবাসন সংকট দূর করতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। 
বলা হবে বিশ্ববিদ্যালয়, অথচ সেই প্রতিষ্ঠানে উচ্চমাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাদানের ব্যবস্থা থাকবে; তারও কোনো একাডেমিক যৌক্তিক কারণ থাকতে পারে না। বিশ্ববিদ্যালয় হলে সেখানে শুধু গ্র্যাজুয়েশন, মাস্টার্স ও উচ্চতর শিক্ষার ব্যবস্থা থাকাই বাঞ্ছনীয়। মিশ্র ব্যবস্থায় একবার একজন শিক্ষক শিক্ষার একেবারে উঁচু স্তরে পড়াবেন, আবার তিনি নেমে আসবেন অনেক নিচু স্তরে; এভাবে শিক্ষাদান করাটা বিজ্ঞানসম্মত নয় বলে শিক্ষা বিশেষজ্ঞরা অভিমত প্রকাশ করেছেন।

 আমরাও মনে করি, ইতোমধ্যে যেসব সরকারি কলেজে অনার্স ও মাস্টার্স চালু রয়েছে, সেই সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের উল্লিখিত সংকটগুলো আগে দূর করা প্রয়োজন। নতুন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে যদি সংকট মোকাবিলা করা সম্ভব হয়, তাহলে তা দোষের নয়। সাত কলেজে অনেক শিক্ষার্থী। তাদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে একটি ভালো মানের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হোক, যাতে আগামীতে শিক্ষার্থীদের আর মাঠে নামতে না হয়। সরকারের এই উদ্যোগ দ্রুত বাস্তবায়ন করা হবে, এটাই প্রত্যাশা।  

 

সংলাপে জাতিসংঘের সহায়তার প্রস্তাব  রাজনৈতিক দলের মতামতকে গুরুত্ব দিন

প্রকাশ: ১৭ মার্চ ২০২৫, ০২:৫৮ পিএম
সংলাপে জাতিসংঘের সহায়তার প্রস্তাব 
রাজনৈতিক দলের মতামতকে গুরুত্ব দিন

অ্যান্তোনিও গুতেরেসের সঙ্গে গোলটেবিল বৈঠক করেছেন বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর নেতা এবং সংস্কার কমিশনের প্রধানরা। বৈঠকে জাতীয় নির্বাচনের আগে দীর্ঘমেয়াদি সংস্কার নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থান তুলে ধরেন। অন্তর্বর্তী সরকারের চলমান সংস্কার প্রক্রিয়া সম্পর্কে জাতিসংঘ মহাসচিব এই বৈঠকের মাধ্যমে অবহিত হয়েছেন। বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণ প্রত্যাশা করে সংস্কার বাস্তবায়নে সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব। কাজটি দেশের রাজনৈতিক দল ও সরকারকেই করতে হবে বলে তিনি জানান। এ ছাড়া জাতিসংঘ মহাসচিব ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার ওপরও গুরুত্বারোপ করেছেন। 

বৈঠকে পাঁচটি সংস্কার কমিশনের প্রধানরা তাদের নিজ নিজ সংস্কার প্রতিবেদনের সংক্ষিপ্ত সার তুলে ধরেন। এরপর রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধিরা তাদের বক্তব্য উপস্থাপন করেন। কোনো কোনো রাজনৈতিক দল লিখিত বক্তব্য জমা দেয়। অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্র সংস্কারে ১৫টি কমিশন গঠন করেছে। ছয়টি কমিশনের দেওয়া সংস্কারের সুপারিশ নিয়ে সরকার এবং রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে। অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া সব দল সংস্কারকে সমর্থন করলেও পদ্ধতি এবং সময়সীমা নিয়ে ভিন্নমত রয়েছে। বৈঠকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সংস্কার দ্রুত শেষ করে নির্বাচন করার কথা জাতিসংঘ মহাসচিবকে বলেছেন। অন্যদিকে মৌলিক সংস্কারের ভিত্তি এই সরকারের সময়ে তৈরি করতে হবে উল্লেখ করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। গণপরিষদের মাধ্যমে সংস্কার করতে হবে অন্যথায় সংবিধান সংস্কার টেকসই হবে না। বৈঠকে জামায়াতে ইসলামী জানিয়েছে, তারা টেকসই গণতন্ত্র ও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। 

জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, সংস্কার প্রয়োজনীয়। জাতিসংঘ এতে পাশে থাকবে। সংস্কার কীভাবে, কতটুকু হবে, তা জনগণ ও রাজনৈতিক দলগুলোকে একমত হয়ে ঠিক করতে হবে। তিনি আরও বলেছেন, বাংলাদেশ সংস্কার ও গণতান্ত্রিক অভিযাত্রার গুরুত্বপূর্ণ পর্বে রয়েছে। দেশটির এ সন্ধিক্ষণে শান্তি সংলাপ ও ঐকমত্য সহায়তার জন্য জাতিসংঘ প্রস্তুত রয়েছে; টেকসই ও ন্যায়সংগত ভবিষ্যৎ গড়ার লক্ষ্যে বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে কাজ করবে। দেশের মানুষ তাদের অবিচল অংশীদার হিসেবে জাতিসংঘের ওপর নির্ভর করতে পারে। জাতিসংঘ মহাসচিব একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন এবং দেশের প্রকৃত রূপান্তরের জন্য সংস্কার প্রক্রিয়ার প্রশংসা করেন। 

প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে সংস্কার প্রক্রিয়ার প্রতি জাতিসংঘের পূর্ণ প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন বলে এক সংবাদ সম্মেলনে অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন জানান। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর জনমনে এক ধরনের প্রত্যাশা তৈরি হয়েছিল। এই প্রত্যাশার আলোকে অন্তর্বর্তী সরকার সংস্কারের কাজ শুরু করে। দেশের ভেঙে পড়া সব গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে গতিশীল করার অভিপ্রায়ে সংস্কার কমিশনও গঠন করেছে। 

জাতিসংঘ মহাসচিব রাজনৈতিক দল ও সংস্কার কমিশনের প্রধানদের নিয়ে আলোচনায় বসেন। এ দেশের গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির ধারা অব্যাহত রাখতে জাতীয় সংলাপের ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি। দেশের বৃহত্তর স্বার্থে রাজনৈতিক দল ও সরকারকে এই সংলাপ প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখতে হবে। বৈষম্যহীন ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত দেশ গড়ার প্রত্যয়ে একটি সফল সংলাপের মাধ্যমে উদার গণতান্ত্রিক পথে হাঁটবে দেশ, এটিই প্রত্যাশা।