
দেশে চাহিদার তুলনায় বেশি পেঁয়াজ উৎপাদন হচ্ছে। তারপরও ভরা মৌসুমে প্রতিনিয়ত দাম বাড়ছে। কৃষি বিপণন অধিদপ্তর বলছে, যৌক্তিক পর্যায়ে দেশি পেঁয়াজের পাইকারি দাম ৩৪ থেকে ৫০ টাকা কেজি। কয়েক হাত ঘুরে খুচরা পর্যায়ে তা ৬০ টাকা ছাড়িয়েছে। পেঁয়াজের বাজারের বর্তমান পরিস্থিতি ও দাম বাড়ার কারণ ইত্যাদি বিষয় জানতে খবরের কাগজ কথা বলেছে শ্যামবাজার কৃষিপণ্য আড়ত বণিক সমিতির সহ-সভাপতি, শ্যামবাজার পেঁয়াজ সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও মেসার্স মিতা এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী হাজি মো. আব্দুল মাজেদের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জাহাঙ্গীর আলম।
খবরের কাগজ: ভরা মৌসুমেও বেড়ে যাচ্ছে পেঁয়াজের দাম। এর কারণ কি?
মো. আব্দুল মাজেদ: কৃষকের হালি (নতুন) পেঁয়াজ উঠে গেছে। দাম কমবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু ভারত সরকার ৩১ মার্চের পর আইপি (আমদানি অনুমতিপত্র) দেওয়া বন্ধ রেখেছে। বর্তমানে ব্যাংকও এলসি খুলছে না। এ সুযোগে বিভিন্ন মোকামে (হাট) বড় বড় পেঁয়াজ ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে ইচ্ছামতো বাড়াচ্ছে পেঁয়াজের দাম। তাদের বেঁধে দেওয়া দামে ঢাকার আড়তে বিক্রি করতে হচ্ছে পেঁয়াজ। কয়েক হাত বদল হয়ে ভোক্তাদের বেশি দামে কিনতে হচ্ছে।
খবরের কাগজ: সিন্ডিকেটে কারা জড়িত?
মো. আব্দুল মাজেদ: কারা সিন্ডিকেটে জড়িত সরকার জানে। পাবনা, কুষ্টিয়া, ফরিদপুরসহ কয়েকটা মোকামের বড় ব্যবসায়ীরা এ কাজটা করছেন। মধ্যস্বত্বভোগী বা ব্যাপারীরা পেঁয়াজ কিনে ঢাকায় এনে বেশি দামে বিক্রি করছেন। তারা আমাদের শুধু কেজিপ্রতি ১ টাকা কমিশন দেন। এর বেশি আমাদের কিছু থাকে না। সেটা থেকে দোকান ভাড়া, কর্মচারী খরচ দিয়ে চলতে হয়। এক বস্তায় ৫৫ থেকে ৬৫ কেজি পেঁয়াজ থাকে।
খবরের কাগজ: চাহিদার তুলনায় উৎপাদন বেশি হওয়ার পরও পেঁয়াজের দাম বাড়ছে কেন?
মো. আব্দুল মাজেদ: দেখেন, কৃষক উৎপাদনের পর তারা পেঁয়াজ ধরে রাখতে পারেন না। তা ছাড়া এবার যে পেঁয়াজ হয়েছে সেটা ভারতের হাইব্রিড পেঁয়াজ। সেটা কৃষকরা ধরে রাখতে পারেন না। বিভিন্ন মোকামের ব্যাপারীরা কিনে মাচা করে রাখছেন। তারা সুযোগ বুঝে বেশি দামে বিক্রি করছেন।
খবরের কাগজ: সরকার কি করলে দেশে কমতে পারে পেঁয়াজের দাম।
মো. আব্দুল মাজেদ: দেশে প্রচুর হালি (নতুন) পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে। ভারতেও পেঁয়াজের দাম কম। কিন্তু সরকার পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি (আইপি) বন্ধ রেখেছে। তা খুলে দিতে হবে। তা না হলে দাম আরও বেড়ে যাবে। ভারত থেকে পেঁয়াজ এলে শ্যামবাজারে ৩২ থেকে ৩৫ টাকায় নেমে আসবে। খুচরা বাজারে তা ৩৫ থেকে ৪০ টাকায় পাওয়া যাবে। এ ছাড়া আমদানি পর্যায়েও সিন্ডিকেট রয়েছে। বন্দরেই ব্যাপারীরা কিনে তারা বেশি দামে ঢাকাতে বিক্রি করে। তাই বন্দরে পেঁয়াজ কেনাবেচা বন্ধ করতে হবে। যারা এলসি করে তারা সরাসরি ঢাকাতে পেঁয়াজ পাঠালে কম দামে আমরা পেতে পারি। এর ফলে ভোক্তারাও কম দামে পাবেন পেঁয়াজ।
খবরের কাগজ: কৃষি বিপণন অধিদপ্তর সার, বীজ, শ্রমিকের মজুরিসহ সবকিছু বিবেচনা করে পাইকারি পর্যায়ে দেশি পেঁয়াজের যৌক্তিক মূল্য ৩৪ থেকে ৫০ টাকা কেজি বিক্রি করার ঘোষণা করেছে। কিন্তু বাজারে তার কোনো প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না। তা ৫০ টাকার ওপরে। কারণ কি?
মো. আব্দুল মাজেদ: পেঁয়াজের রেট দিয়ে কাজ হবে না। আমরাও চাই ভোক্তারা যাতে কম দামে পেঁয়াজ খেতে পারেন। কারণ বেশি দামে বিক্রি হলেও তো সেই লাভ আমরা পাই না। মোকামে সিন্ডিকেট করে লুটে নিচ্ছে বাড়তি দাম। কাজেই সরকারকে ধরতে হবে। আরও তৎপর হতে হবে।
খবরের কাগজ: বেশি দাম নেওয়ায় সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন বাজারে তো অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। জাতীয় ভোক্তা অধিদপ্তর জরিমানা করছে। তারপরও বাড়ছে দাম। কারণ কি?
মো. আব্দুল মাজেদ: দেখেন, যারা সিন্ডিকেট করছে তারা কাউকে মানে না। এ জন্যই দাম কমে না। জরিমানা করা হলেও সেই টাকা জনগণের কাছ থেকে তারা তুলে নিচ্ছে। এ জন্যই বিভিন্ন অজুহাতে বাড়ছে দাম। কৃষকের উৎপাদন খরচ ২৫ থেকে ২৮ টাকা। সেই পেঁয়াজ বিভিন্ন হাত ঘুরে ভোক্তাদের ৬০ টাকায় কিনতে হচ্ছে।
খবরের কাগজ: বর্তমানে শ্যামবাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ কেমন হচ্ছে?
মো. আব্দুল মজিদ: আগে দিনে ৫০ থেকে ৬০ গাড়ি পেঁয়াজ আসত। এক গাড়িতে ১৫ টন থাকে। ১ টনে ১ হাজার কেজি। বর্তমানে কমে গেছে। ১০ থেকে ১৫ গাড়ি আসছে। সরবরাহ কমে যাওয়ায় দাম বাড়ছে। এর প্রভাবে বিভিন্ন বাজারে খুচরা পর্যায়ে দাম বাড়ছে।
খবরের কাগজ: আপনাকে ধন্যবাদ।
মো. আব্দুল মজিদ: আপনাকেও ধন্যবাদ।