প্রয়াত পোপ ফ্রান্সিসের নির্বাচিত ‘গডস ইনফ্লুয়েন্সার’ খ্যাত কার্লো অ্যাকুতিস মরণোত্তর ‘সেন্ট’ বা সিদ্ধ পুরুষের সম্মাননা দেওয়া হবে আগামী রবিবার (২৭ এপ্রিল)।
কাউকে সেন্ট ঘোষণা করতে গেলে তার মধ্যে অন্তত দুটি অলৌকিক বা ঐশ্বরিক ক্ষমতা থাকার প্রয়োজন। এটা পরীক্ষার পর খোদ পোপ এই স্বীকৃতি দেন। সেই অনু্যায়ী শনিবার (২৬ এপ্রিল) তাকে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সেন্ট করার কথা ছিল খোদ পোপের। কিন্তু তার আকস্মিক প্রয়াণে অনুষ্ঠানটি একদিন পিছিয়ে দেওয়া হয়।
ইতালীয় বংশজাত ব্রিটিশ ১৫ বছরের কিশোর কার্লো ‘গডস ইনফ্লুয়েন্সার’ নামেই বিখ্যাত। ২০২৪ সালে তাকে মরণোত্তর সেন্ট মর্যাদা দিতে নির্বাচিত করেন প্রয়াত পোপ ফ্রান্সিস।
২০০৬ সালে লিউকেমিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় কার্লোর। এরপর প্রতিদিন কয়েক হাজার খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী ভক্ত ইতালির আসসিসি শহরে অ্যাকুতিসের সমাধি দেখতে যান। গেল বছর প্রায় ১০ লক্ষ ভক্ত তার সমাধিতে ফুল দিয়ে আসেন।
কি এমন অলৌকিক বা ঐশ্বরিক ক্ষমতা আছে কার্লো অ্যাকুতিসের যার জন্য তাকে খোদ পোপ সেন্ট মর্যাদা দিতে নির্বাচিত করেন?
১) কোস্টারিকার এক তরুণী বাইসাইকেল দুর্ঘটনায় মাথায় গুরুতর আঘাত পান। বলা হয়, ঐশ্বরিক ক্ষমতায় তাকে প্রায় মৃত্যুর মুখ থেকে বাঁচিয়ে আনেন কার্লো। দুর্ঘটনার পর চিকিৎসকরা ভ্যালেরিয়া ভালভার্দে নামে ২১ বছরের ওই তরুণীর বাড়ির লোককে জানিয়ে দেন তিনি আর বাঁচবেন না বা বাঁচার আশা নেই। এই অবস্থায় তরুণীর মা আসিসিতে গিয়ে ঈশ্বরের আশীর্বাদধন্য অ্যাকুতিসের সমাধিতে গিয়ে প্রার্থনা করেন। এর পর থেকেই মেয়ের অবস্থার উন্নতি হতে শুরু করে। ধীরে ধীরে তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে ওঠেন।
পরিবারের দাবি, যেদিন অ্যাকুতিসের সমাধিতে প্রার্থনা করেছিলেন মৃত্যুশয্যায় থাকা মেয়ের মা, সেদিনই নিজে থেকে শ্বাসপ্রশ্বাস নিতে শুরু করেন তিনি। পরে সিটিস্ক্যান করে ধরা পড়ে তার মস্তিষ্কে যে রক্তক্ষরণ হয়, তা পুরোপুরি সেরে গেছে!
২) এর আগে কার্লো অ্যাকুতিসের প্রথম অলৌকিক ক্ষমতা ধরা পড়ে ব্রাজিলের এক নাবালক ম্যাথিউজের রোগ নিরাময়ের মধ্য দিয়ে। ছেলেটির জন্ম থেকে প্যাংক্রিয়াসের সমস্যা ছিল। যা দিনদিন বাড়তে থাকলে সে প্রায় মৃত্যুমুখে চলে আসে। সেবারও চিকিৎসকরা জানান, তার স্বাস্থ্যের অবস্থা চিকিৎসার বাইরে চলে গেছে।
এরপর ছেলেটির মা গির্জার দ্বারস্থ হন। গির্জার এক সাধু কার্লোর কাছে সাত বছরের ওই ছেলের জীবন প্রার্থনা করেন এবং তারপরে অ্যাকুতিসের একটি টি-শার্ট ম্যাথিউজের শরীরে বুলিয়ে দেওয়া হয়। তারপর থেকেই ক্রমেই সুস্থ হতে শুরু করে ওই নাবালক এবং পরে পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়ে যায়।
এরপর থেকেই দিকে দিকে প্রচার হতে থাকে কার্লো অ্যাকুতিসের অলৌকিক বা ঐশ্বরিক ক্ষমতা আছে।
কে এই কার্লো অ্যাকুতিস?
১৯৯১ সালের মে মাসে লন্ডনে জন্মগ্রহণ করে কার্লো। ধনী ইতালীয় পরিবারে জন্মানো অ্যাকুতিস বড় হন ইতালির মিলানে। জন্ম থেকেই তার মধ্যে এক অদ্ভুত খ্রিষ্টভাব দেখা দেয়। মাত্র সাত বছর বয়সে প্রথম তার ঈশ্বরপ্রাপ্ত হয় বলে দাবি করা হয়। সে প্রায় প্রতিদিনই গির্জার প্রার্থনায় যেতো। এবং ঘণ্টার পর ঘণ্টা ঈশ্বরের প্রার্থনায় মগ্ন থাকত। এ সত্ত্বেও কার্লো আর পাঁচটা বাচ্চার মতোই ঘুরতে-বেড়াতে, ভিডিও গেম খেলতে এবং বন্ধুদের সঙ্গে হাসি-ঠাট্টাও করত।
মাত্র ১৫ বছর বয়সে ২০০৬ সালের অক্টোবরে প্রাণচঞ্চল এই কিশোরের রক্তে ক্যানসার ধরা পড়ে। এবং মাত্র ১০ দিনের মধ্যে উত্তর ইতালির একটি হাসপাতালে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করে কার্লো। তার ইচ্ছা অনুযায়ী সেন্ট ফ্রান্সিসের নিজের শহর আসসিসিতে সমাহিত করা হয়। সুত্র: দ্য গার্ডিয়ান এবং উইকিমিডিয়া
দিনা/অমিয়/