পৃথিবীতে সাতটি মহাদেশ আছে। বইপত্রের মাধ্যমে আমরা এমনটাই জেনেছি। কিন্তু যদি বলা হয় পৃথিবীতে আসলে মহাদেশ ছিল আটটি! শুনতে অবাক লাগলেও ব্যাপারটি কিন্তু সত্যই।
এ যেন এক রূপকথার গল্প। আজ থেকে ৮ কোটি ৩০ লাখ বছর আগে এক অতিমহাদেশ ছিল এই পৃথিবীতে। সেই অতিকায় স্থলভাগ একসময় ভেঙে যায়। টুকরো টুকরো হয়ে তৈরি হয় নতুন মহাদেশ। সেই সময় তৈরি হয়েছিল জিল্যান্ডিয়া।
বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে দেখেছেন, এই অষ্টম মহাদেশের বয়স কম করে ১০০ কোটি বছর। তবে প্রাকৃতিক কারণে একটা সময়ে পানির নিচে চলে যায় এই মহাদেশ। জেগে থাকে শুধু ছিটেফোঁটা কিছু দ্বীপ। তারই একটি বর্তমানে নিউজিল্যান্ড। একই আকৃতির আরও কিছু দ্বীপ রয়েছে চারপাশে। কিন্তু সেসব ওই মহাদেশের কেবল ৬ শতাংশ। বাকি ৯৪ শতাংশ ডুবে আছে সমুদ্রের পানির নিচে। জিল্যান্ডিয়ার আয়তন ৪ দশমিক ৯ মিলিয়ন বর্গ কিলোমিটার। আকারে ভারতীয় উপমহাদেশের প্রায় সমান এবং ইউরোপের অর্ধেক।
১৬৪২ সালে এই মহাদেশের কথা বলেছিলেন এক ডাচ নাবিক। তারপর ২০১৭ সালে ভূতত্ত্ববিদরা জিল্যান্ডিয়া আবিষ্কার করেন। এরপর কেটে যায় আরও কয়েক বছর। অবশেষে জিল্যান্ডিয়ার সীমারেখাও আঁকেন বিজ্ঞানীরা। প্রায় ৫০ লাখ বর্গ কিলোমিটারজুড়ে বিস্তৃত এই মহাদেশে। যার আরেক নাম ‘তে রিউয়া মাউয়ি’। লাখ লাখ বছর ধরে লোকচক্ষুর আড়ালেই ছিল এটি। এর সিংহভাগই পানির নিচে থাকায় এর মানচিত্র তৈরি করা বেশ কঠিন ছিল। এ ছাড়া এতে পাহাড়, পর্বত, উপত্যকা এমনকি আগ্নেয়গিরিও রয়েছে, যা নিউজিল্যান্ডের কাছেই প্রশান্ত মহাসাগরের তলদেশে অবস্থিত।
ভূতাত্ত্বিক দিক থেকে অস্ট্রেলিয়া এবং অ্যান্টার্কটিকা থেকে একদমই আলাদা এই জিল্যান্ডিয়া মহাদেশ। ‘জিওলজিক্যাল সোসাইটি অব আমেরিকা’য় প্রকাশিত একটি আর্টিকেলের তথ্য অনুযায়ী জিল্যান্ডিয়া ও অস্ট্রেলিয়া মহাদেশ ১৩ কোটি বছর আগে বিচ্ছিন্ন হয়েছিল অ্যান্টার্কটিকা থেকে। আর ৬ থেকে ৮ কোটি বছর আগে জিল্যান্ডিয়া বিচ্ছিন্ন হয় অস্ট্রেলিয়া মহাদেশ থেকেও। এরপর এটি ক্রমে পানিতে নিমজ্জিত হতে থাকে।
জিল্যান্ডিয়া আকৃতিতে এত সরু কেন, কেনই বা এটা সাগরে তলিয়ে গিয়েছিল- এ প্রশ্ন অনেকে করলেও, জিল্যান্ডিয়া আসলে কখনো পানির ওপরে ছিল কি না এগুলো এখনো ভূতত্ত্ববিদদের কাছে রহস্য হয়েই রয়েছে।
ভূতত্ত্ববিদদের একটি গবেষক দল ২০ বছর ধরে কাজ করেছেন যার নেতৃত্ব দিয়েছেন নিক মর্টিমার নামে এক বিজ্ঞানী। সম্প্রতি বিশ্বের অষ্টম মহাদেশের মানচিত্র তৈরির কাজ শেষ হয়েছে।
গবেষকদের মতে মহাদেশকে একসময় সুপারকন্টিনেন্ট গন্ডোয়ানার সঙ্গে যুক্ত ছিল। গন্ডোয়ানার মূলত বর্তমান অ্যান্টার্কটিকা, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আমেরিকা ও আফ্রিকা মহাদেশ নিয়ে গঠিত ছিল। প্রায় ৮৫ মিলিয়ন বছর আগে টেকটনিক ফোর্সের কারণে জিল্যান্ডিয়া গন্ডোয়ানার কাছ থেকে দূরে সরে আসতে শুরু করে। টেকটনিক ফোর্স এমন একটি শক্তি যা ভূতত্ত্বের নানা রকম পরিবর্তন করতে সক্ষম। এই টেকটনিক ফোর্সটি জিল্যান্ডিয়াকে ধীরে ধীরে পানির নিচে নিমজ্জিত করে এবং দীর্ঘদিন ধরে তা পানির নিচে অবস্থান করছে।
সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফি, উইকিপিডিয়া
কলি