শফি পৌষের শেষের দিকে ঝালকাঠি বেড়াতে এসেছে। ঝালকাঠি ওর দাদুবাড়ি। শফির পরিবার চট্টগ্রামের হালিশহরে থাকে। বছরে তার দুবার দাদুবাড়িতে আসা হয়। গত কোরবানিতে পরিবারের সঙ্গে এসেছিল, কিন্তু এবার ও একা। জীবনানন্দ দাশের ‘ধানসিঁড়ি’ কবিতায় ও মুগ্ধ। ঝালকাঠি এলেই ওর ধানসিঁড়ি কবিতার কথা খুব মনে পড়ে আর বিড়বিড় করে কবিতাটি আওড়ায়। ওর দাদুবাড়ি ধানসিঁড়ি নদীর তীরে নয়, বরং বিষখালী নদীতীরবর্তী এলাকায়। নদীটি ঝালকাঠি ও বরগুনা জেলার সীমানা নির্ধারণের জন্য বেশ পরিচিত।
দাদুবাড়িতে এলেই সে একবার হলেও বিষখালী নদীতে গোসল করবেই। প্রতিবারই ভাবে, আমি যদি জীবনানন্দ দাশের মতো বিষখালী নিয়ে একটি কবিতা লিখতে পারতাম, অথবা কোনো গল্প! শফি এবার চট্টগ্রাম থেকে আসার সময় নিজস্ব ডায়েরি নিয়ে এসেছে। আর বাসা থেকে বের হওয়ার সময় পণ করেছে, বিষখালী নদী নিয়ে লেখার। যেমন পণ তেমন কাজ। দাদুবাড়ি আসার দুই দিন পরই শফি ছুটে গেল বিষখালী নদীর তীরে। সঙ্গে ছিল ওর স্কুলজীবনের এক বন্ধু। দুজনে নদীর তীরে চুপচাপ বসে পড়ল। কারও মুখে কোনো কথা নেই। শফি লেখার ধ্যানে মগ্ন হলো। কিন্তু সে লেখার বিষয় নির্ধারণ করতে পারছিল না। কী লিখবে, কবিতা নাকি গল্প! কিছুক্ষণ ভাবার পর শফি গল্পের একটি আকৃতি দাঁড় করিয়েছে। তখনই শফির বন্ধু বলে উঠল: ‘কীরে লিখিস না কেন’?
শফি তার বন্ধুর দিকে তাকাল আর কেটে গেল ধ্যান। ভুলে গেল গল্পের আকৃতি! শফি কিছুক্ষণ তার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে থাকল। কিছুই বলল না। আবার সে লেখার ধ্যানে নিজেকে মগ্ন করে বিষখালী নদীকে আকৃতি দান করল কবিতায়। তবে অদৃশ্য শব্দ আর রূপের সৌন্দর্যে নদীর ঢেউয়ে মিশে যায় তার কবিতা। শফি তার বন্ধুর চোখ চেপে ধরে বলল ‘বন্ধু, তুই চোখ খুলিস না।
আমি হয়তো জীবনানন্দ দাশের মতো নদী নিয়ে কবিতা লিখতে পারব না। তবে হাজারও কবিতা লিখব রূপবতী কন্যাকে নিয়ে। যার নূপুরের আওয়াজ আমাকে ভুলিয়ে দিয়েছে বিষখালী নদীর গর্জন। যার রূপসৌন্দর্য তুচ্ছ এই বিষখালী নদীর দুই তীরের কাছে। আগে আমার দুচোখ হারিয়ে যেত বিষখালী নদীর তীরে আর এখন আমি হারিয়ে যাচ্ছি সুন্দরীর রূপের সমুদ্রে’।
শফির এমন বুলি আওড়ানোর মাঝেই কোথায় যেন হারিয়ে গেল সুন্দরী! শফি তার বন্ধুর চোখ ছেড়ে দিয়ে সামনে এগিয়ে গেল। কিন্তু না! তাকে আর চোখের নাগালে পেল না। শফি হতে পারল না কবি, পেল না খুঁজে সুন্দরী রমণী!
নাজিরপুর, পিরোজপুর
কলি