আমরা পৃথিবীর অনেক দ্বীপের কথা জানলেও ‘খরগোশের দ্বীপ’ বলে যে একটা দ্বীপ আছে সেটা কি জানি? একজাপানের কথায়, খরগোশময় দ্বীপ। যতদূর চোখ যায়, শুধু খরগোশ আর খরগোশ! যদি কখনো ভুলেও সেখানে চলে যান, তাহলে অনায়াসে আপনি হারিয়ে যেতে পারেন এসব খরগোশের মাঝে। জাপানে ওকুনোশিমা নামে একটি দ্বীপ আছে, যা খরগোশের জন্য বিখ্যাত। স্থানীয় ভাষায় একে বলা হয় উসাগি শিমা, যার অর্থ খরগোশের দ্বীপ (rabbit island)।
দ্বীপটির ইতিহাস
ইতিহাস বলছে, রুশ-জাপান যুদ্ধের পূর্ব পর্যন্ত ওকুনোশিমা দ্বীপটি ছিল কৃষিভূমি। যুদ্ধ চলাকালে নিরাপত্তা বাড়াতে জাপান এ দ্বীপে নির্মাণ করে ১০টি দুর্গ। আর তখন থেকে দ্বীপটি ব্যবহৃত হতে থাকে সামরিক কাজে। অবশ্য দ্বীপটির অন্ধকারাচ্ছন্ন একটি ইতিহাসও রয়েছে। ১৯২৫ সালে জাপান সব ধরনের রাসায়নিক অস্ত্রের ব্যবহার বন্ধে জেনেভা চুক্তিতে স্বাক্ষর করলেও চীনের সঙ্গে যুদ্ধ অবশ্যম্ভাবী হওয়ায় জাপানের উন্নত রাসায়নিক অস্ত্রের জন্য তাদের সামরিক বাহিনীর প্রকৌশল ও গবেষণা বিভাগ এমন একটি জায়গা খুঁজছিল যেখানে গোপনে রাসায়নিক অস্ত্রের গবেষণা ও প্রয়োগকেন্দ্র গড়ে তোলা যায়। ওকুনোশিমা দ্বীপটি ছিল এজন্য আদর্শ একটি স্থান।
কারণ টোকিও শহর থেকে দ্বীপটি ছিল অনেক দূরে এবং আশপাশে কোনো জনবসতি ছিল না। কেন্দ্রটির নির্মাণকাজ চলে ১৯২৭ থেকে ১৯২৯ সাল পর্যন্ত। এরপর অতি গোপনে এখানে চলে ক্ষতিকারক গ্যাসের পরীক্ষা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষদিকে ১৯৪৫ সালে মিত্রশক্তি দ্বীপটি দখল করে নেয় এবং রাসায়নিক কারখানাগুলোর সন্ধান পায়। এরপর তারা সব বিষাক্ত গ্যাস নষ্ট করে ফেলে। যুদ্ধে এ দ্বীপে উৎপন্ন গ্যাসের ব্যবহারে প্রায় ৮০ হাজার মানুষ মারা যায়। ১৯৮৮ সালে এখানে একটি জাদুঘর বানানো হয়, যেখানে ওই সময় রাসায়নিক অস্ত্র তৈরিতে ব্যবহৃত বিভিন্ন সরঞ্জাম রাখা আছে। জাদুঘরে দেখতে পাবেন রাসায়নিক গ্যাসের সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন ঐতিহাসিক জিনিসপত্র।
ওকুনোশিমা দ্বীপে কীভাবে এত খরগোশ এল তা নিয়ে একাধিক মতবাদ প্রচলিত আছে। তবে সবচেয়ে বিশ্বাসযোগ্য মতবাদটি হলো, দ্বীপের গ্যাস কারখানার গবেষণা কাজে ব্যবহৃত হতো খরগোশ। গবেষণামূলক কাজে তখনকার সময় ইঁদুর এবং খরগোশের ওপর বিষাক্ত গ্যাসের প্রয়োগ করা হতো। আবার অনেক সময় ঘোড়ার ওপরও প্রয়োগ হতো।
যখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় মিত্রবাহিনী দ্বীপের দখল নেয়, তখন খরগোশগুলোকে দ্বীপে ছেড়ে দেয়। আবার অনেকের মতে, খরগোশগুলো কারখানা বন্ধ হওয়ার পর দ্বীপের ভেতরে পালিয়ে যায়। সেই পালিয়ে যাওয়া খরগোশ থেকেই আজ দ্বীপভর্তি খরগোশ। আরেকটি মতবাদ হলো, ১৯৭১ সালে দ্বীপটিতে ঘুরতে আসা স্কুলের শিক্ষার্থীরা বাচ্চা কয়েকটি খরগোশ ছেড়ে দেয় দ্বীপে। সেখান থেকেই এত খরগোশের জন্ম। যে কারণেই দ্বীপটিতে খরগোশ আসুক না কেন, বর্তমানে তাদের সংখ্যা এক হাজারের বেশি।
পর্যটকরা প্রচুর পরিমাণে খাবার সরবরাহ করে, তাই খরগোশগুলো এ দ্বীপে নির্দ্বিধায় ঘুরে বেড়ায়। খরগোশের যেহেতু প্রজনন ক্ষমতা বেশি এবং দ্বীপে কোনো শিকারি প্রাণী নেই, তাই তারা অনিয়ন্ত্রিত হারে বংশবিস্তার করতে পারছে। সম্প্রতি ওকুনোশিমা দ্বীপে পর্যটকদের কুকুর-বিড়াল নিয়ে প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছে জাপান সরকার। এ দ্বীপের খরগোশগুলোর সুরক্ষায় কাজ করছে জাপানের বন্যপ্রাণী অধিদপ্তর।
যেভাবে যাবেন
সমুদ্র পরিবেষ্টন করে রাখা ওকুনোশিমা দ্বীপ হিরোশিমা প্রিফেকচারের তাকেহারা শহর থেকে ২ মাইল দূরে অবস্থিত। দ্বীপটির আয়তন ৪ দশমিক ৩ বর্গ কিলোমিটার। হিরোশিমা থেকে ওকুনোশিমায় ফেরিতে যাওয়া সম্ভব। মাত্র ১৫ মিনিটে পর্যটকরা সেখানে পৌঁছাতে পারেন। খরগোশের পাশাপাশি দ্বীপটিতে পর্যটকদের রয়েছে সূর্যাস্ত উপভোগের জন্য অসাধারণ জায়গা।
কলি