বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) রাষ্ট্রদূত ও হেড অব ডেলিগেশন মাইকেল মিলার বলেছেন, তারা সবাই বুঝতে পেরেছেন যে, রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান দীর্ঘায়িত করা ‘রাজনৈতিক’ এবং ‘পুরো কক্সবাজার’ নীতি এগিয়ে নিতে ঢাকার সঙ্গে কাজ করা উচিত। খবর ইউএনবির।
সম্প্রতি কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আমরা সবাই, বাংলাদেশ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন প্রত্যাবাসন দেখতে চাই এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রোহিঙ্গারা নিজেরাও তা চায়। তবে নিরাপদ, টেকসই, স্বেচ্ছায় ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনের শর্ত বর্তমানে বিদ্যমান নেই।’
রাষ্ট্রদূত বলেন, “এরই মধ্যে পুনরুদ্ধারের সক্ষমতা বৃদ্ধি করার জন্য আরও কাজ করার অনুমতি দেওয়ার প্রতিক্রিয়ার একটি ‘বিবর্তন’ প্রয়োজন।”
তার মতে, এর অর্থ হলো শক্ত আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণের অনুমতি দেওয়ার বিষয়টি যথাযথ বিবেচনা করা, যা দাতাদের তহবিলকে দীর্ঘস্থায়ী করবে এবং যার জন্য বর্তমানে একাধিক প্রাথমিক প্রস্তাবনাকে পরীক্ষা করা হচ্ছে।
রাষ্ট্রদূত আর্ল রবার্ট মিলার বলেন, ‘এর অর্থ হওয়া উচিত শরণার্থীদের জন্য কীভাবে বৃহত্তর পুরুদ্ধারের সক্ষমতা বাড়ানো যায় তা অন্বেষণ করা এবং ডিজিটাল শিক্ষার উন্মুক্তকর করা, যাতে মায়ানমারের ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীকে যুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য নিয়োগ, অপরাধ এবং শোষণকে এড়ানো যায়।’ তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দিতে গিয়ে বাংলাদেশ যে বোঝা বহন করছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন তা স্বীকার করে।’
কক্সবাজার ও ভাসানচরে ১৩ লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিচ্ছে বাংলাদেশ। ২০২৪ সালে ইইউ রোহিঙ্গাদের তাৎক্ষণিক সহায়তার জন্য মানবিক তহবিলে ৪৩ মিলিয়ন ইউরো এবং পরবর্তী তিন বছরের জন্য উন্নয়ন তহবিলে আরও ৩৫ মিলিয়ন ইউরো বরাদ্দ করেছে।
রাষ্ট্রদূত মিলার বলেন, ‘আমরা শরণার্থী ও স্থানীয় জনগোষ্ঠী উভয়কেই সহায়তা দিচ্ছি। এ কারণেই আমি অক্টোবরে কক্সবাজার গিয়েছিলাম মাঠপর্যায়ের পরিস্থিতি বুঝতে, বাঙালি (বাংলাদেশি) ও রোহিঙ্গাদের কথা শুনতে এবং আমাদের অর্থায়নের সর্বোচ্চ প্রভাব ও স্থায়িত্ব কীভাবে সর্বোচ্চ করা যায় তা বিবেচনা করতে।’ তিনি বলেন, ‘নিরাপত্তা নাকি নিরাপত্তাহীনতা, আশ্রয়শিবিরগুলোতে তাদের কথা শোনাও ছিল একটি বিষয়।’ তিনি আরও বলেন, “ক্যাম্পের বাইরে এবং শিবিরগুলোর ভেতরে একটি স্থানীয় গতিশীল অর্থনীতির উন্নয়নে আমরা কাজ করেছি এবং অব্যাহত রেখেছি। আমি কেবল আমাদের সহযোগিতার বিষয়ে ইতিবাচক কথা শুনেছি, যা আমার বোধকে আরও দৃঢ় করেছে যে ‘পুরো কক্সবাজার’ নীতি বাস্তবায়নের জন্য আমাদের ঢাকার সঙ্গে কাজ করা উচিত।”
এদিকে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস সম্প্রতি রোহিঙ্গা ইস্যুতে একটি অল স্টেকহোল্ডার্স ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স আয়োজনের প্রস্তাব দিয়েছেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মোহাম্মদ রফিকুল আলম বলেন, ‘এটি এরই মধ্যে ব্যাপক আন্তর্জাতিক সমর্থন পেয়েছে।’ তিনি আশা প্রকাশ করেন, উচ্চপর্যায়ের এই সম্মেলন মায়ানমারে রোহিঙ্গাদের টেকসই প্রত্যাবাসন ও প্রত্যাবসানের জন্য একটি বাস্তবসম্মত কাঠামোর ওপর রাজনৈতিক ঐকমত্য গড়ে তুলবে।
রফিকুল আলম বলেন, সংকটের মূল কারণগুলো মোকাবিলা এবং বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবিলায় একটি সময়োপযোগী ও সমন্বিত কাঠামো প্রণয়নেও এই পরিকল্পনা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। তিনি আরও বলেন, রোহিঙ্গা পরিস্থিতির কারণে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির প্রভাব কমানো এবং আর্থসামাজিক, পরিবেশগত ও নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার বিষয়েও সম্মেলনে গুরুত্বারোপ করা হবে। মুখপাত্র বলেন, ‘আমরা আশা করি, এই সমস্যা সমাধানে আন্তর্জাতিক অঙ্গীকার বৃদ্ধি, সমন্বিত মানবিক ও উন্নয়ন-প্রক্রিয়া জোরদার করা এবং রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধের জবাবদিহিতে সহায়তা করার বিষয়গুলো উত্থাপিত হবে।’
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস রোহিঙ্গা সংকটের টেকসই সমাধান এবং রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মায়ানমারে ‘নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ’ প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন আহ্বানসহ রোহিঙ্গা সংকটের প্রতি জরুরি মনোযোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘রাখাইন রাজ্য (মায়ানমার) বা গাজায় যারা অব্যাহতভাবে নিপীড়ন, উৎখাত ও চরম মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার হচ্ছে, আমরা তাদের উপেক্ষা করতে পারি না। এ ক্ষেত্রে কোনো ব্যক্তি, তাদের সংখ্যা বা পরিচয় বিবেচ্য নয়।’