
প্রাপ্ত বয়স্ক নারী-পুরুষের ওপর পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা ফরজ। নামাজ ইসলামের স্তম্ভ। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘ইসলামের বুনিয়াদ পাঁচটি বিষয়ের ওপর প্রতিষ্ঠিত। এক. আল্লাহকে এক বলে বিশ্বাস করা। দুই. নামাজ কায়েম করা। তিন. জাকাত আদায় করা। চার. রমজানের রোজা পালন করা। পাঁচ. হজ করা।’ (বুখারি, হাদিস: ৬)
মহান আল্লাহ সর্বাবস্থায় নামাজের প্রতি যত্নবান হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। এরশাদ হচ্ছে, ‘সব নামাজের প্রতি যত্নবান হও; বিশেষ করে মধ্যবর্তী নামাজের ব্যাপারে। আর আল্লাহর সামনে একান্ত আদবের সঙ্গে দাঁড়াও। তোমরা যদি (শত্রুর) ভয় করো, তবে দাঁড়িয়ে বা আরোহী অবস্থায় (নামাজ পড়ে নাও)। এরপর তোমরা যখন নিরাপদ অবস্থা লাভ করো, তখন আল্লাহর জিকির সেভাবে করো, যেভাবে তিনি তোমাদের শিক্ষা দিয়েছেন, যা সম্পর্কে তোমরা অনবগত ছিলে।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ২৩৮-২৩৯)
জামাতে নামাজ আদায় করার তাগিদ দিয়ে আল্লাহ বলেন, ‘রুকুকারীদের সঙ্গে রুকু করো।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ৪৩)
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘জামাতে নামাজ পড়লে একাকী নামাজের তুলনায় সাতাশ গুণ বেশি সওয়াব পাওয়া যায়।’ (বুখারি, হাদিস: ৬১৯)
জামাতের সঙ্গে নামাজ আদায়ের প্রথম ধাপ হলো কাতার সোজা রেখে দাঁড়ানো। এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কাতার মাঝে খালি রেখে দাঁড়ানো যাবে না। সামনের কাতার খালি রেখে পেছনের কাতারে দাঁড়ানো মাকরুহে তাহরিমি (মাকরুহে তাহরিমি— হারাম নয়; তবে হারামের কাছাকাছি পর্যায়ের নিন্দিত। এটি পরিত্যাজ্য)। হাদিসে কাতার সোজা করা এবং খালি জায়গা পূরণ করে দাঁড়ানোর ব্যাপারে অত্যধিক গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। পাশপাশি সামনে খালি রেখে পেছনে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে কঠিন ধমকি এসেছে। আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা কাতার সোজা করো। পরস্পর কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়াও। খালি জায়গা পূরণ করো এবং (কাতার পূরণ ও সোজা করার ক্ষেত্রে) তোমাদের ভাইদের হাতে তোমরা নরম হয়ে যাও। আর শয়তানের জন্য জায়গা খালি রেখ না। যারা বিচ্ছিন্ন কাতার মিলিয়ে নেবে বা যুক্ত করবে আল্লাহ তাদের (তাঁর রহমতের সঙ্গে) মিলিয়ে নেবেন। আর যারা কাতার বিচ্ছিন্ন করবে আল্লাহ তাদের (তাঁর রহমত থেকে) বিচ্ছিন্ন করে দেবেন।’ (আবু দাউদ, হাদিস: ৬৬৬)
সুতরাং সামনের কাতার খালি রেখে পেছনের কাতারে দাঁড়ানো বা মসজিদের ভেতর জায়গা ফাঁকা রেখে মসজিদের বারান্দা থেকে জামাতের অনুসরণ করা মাকরুহ। অবশ্য কাজটি মাকরুহ হলেও নামাজ হয়ে যায়। (মুসান্নাফে আব্দুর রাজজাক, ২৪৬৭; আলমুহিতুল বুরহানি, খণ্ড: ২, পৃষ্ঠা: ১৯৫)
জাবির ইবনে সামুরাহ (রা.) বলেন, ‘একদিন রাসুলুল্লাহ (সা.) বেরিয়ে এসে আমাদের বললেন, ফেরেশতারা যেভাবে তাদের পালনকর্তার সামনে সারিবদ্ধ হন তোমরা কেন সেভাবে সারিবদ্ধ হও না? আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসুল, ফেরেশতারা কীভাবে তাদের পালনকর্তার সামনে সারিবদ্ধ হন? রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, তারা (প্রথমে) সামনের কাতারগুলো পূরণ করেন এবং শীসাঢালা প্রাচীরের মতো ফাঁক-ফোকর বন্ধ করে কাতারে দাঁড়ান।’ (মুসলিম, হাদিস: ৪৩০)
লেখক: আলেম, গবেষক ও সাংবাদিক