বরগুনার তালতলীর সুলিজ খালের ওপর প্রায় ৩০ বছর আগে একটি সেতু নির্মাণ করা হয়। উদ্বোধনের পর থেকে সাধারণ মানুষের চলাচল থাকলেও ব্রিজের রক্ষণাবেক্ষণ ও সংস্কারে কর্তৃপক্ষের কোনো নজর ছিল না। গত আট বছর আগে থেকে একটু একটু করে সেতুটি ভাঙতে থাকে। পিলারের বেশির ভাগ অংশেই পড়ে যায় মরিচা! শেষ পর্যন্ত ব্রিজটি ভেঙে খালে পড়ে যায়। এতে দুর্ভোগে পড়েন ১০ গ্রামের অন্তত দশ হাজার মানুষ। বিশেষ করে শিক্ষার্থী ও নারীরা পড়েছেন বিপাকে। দুই কিলোমিটার পথ ঘুরে তাদের গন্তব্যে পৌঁছতে হচ্ছে।
জনপ্রতিনিধিসহ স্থানীয়রা জানান, নিয়মিত সংস্কার করা হলে ব্রিজটি ভেঙে পড়ত না। এ অঞ্চলের মানুষের দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে হলেও শিগগিরই এখানে একটি ব্রিজ নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন তারা। সংশ্লিষ্ট বিভাগের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, দ্রুত দরপত্র আহ্বানের মাধ্যমে ব্রিজটির কাজ শুরু করা হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রায় ৩০ বছর আগে উপজেলার সোনাকাটা ইউনিয়নের কবিরাজপাড়া এলাকার বেন্টার সুলিজ খালের ওপর স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) সেতুটি নির্মাণ করে। এই সেতু দিয়ে নিশানবাড়িয়া, সওদাগরপাড়া, বারোঘর বাজার, চেয়ারম্যান বাজার, কুয়াকাটা, লাউপাড়া, তাঁতিপাড়া, ফকিরহাট, তালতলীসহ ১০ গ্রামের অন্তত দশ হাজার মানুষ চলাচল করেন। একই সঙ্গে তালুকদারপাড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়, হরিণখোলা আলিয়া মাদরাসাসহ চারটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সহস্রাধিক শিক্ষার্থী আসা-যাওয়া করে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বর্তমানে সেতুটি ভেঙে পড়ায় জনসাধারণ ও স্কুল-মাদরাসার শিক্ষার্থীদের চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। বিকল্প হিসেবে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরের পথ ঘুরে তাদের যাতায়াত করতে হচ্ছে। এতে ভোগান্তি বাড়ার পাশাপাশি ব্যাহত হচ্ছে চার প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া। তাই দ্রুত নতুন একটি সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন তারা।
স্থানীয় বাসিন্দা মো. নাঈম বলেন, ‘সেতুটি ভেঙে খালে পড়ে যাওয়ায় এখন আমাদের বিকল্প পথ হিসেবে প্রায় দুই কিলোমিটার রাস্তা ঘুরে যাতায়াত করতে হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি কষ্টে আছেন নারী ও স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা। এ অঞ্চলের দশ গ্রামের মানুষের কথা চিন্তা করে হলেও এখানে দ্রুত একটি নতুন ব্রিজ বানানো প্রয়োজন। এই পথ দিয়ে প্রতিদিন অন্তত দশ হাজার মানুষ যাতায়াত করেন।’
ওই এলাকার আরেক বাসিন্দা মো. শাহাদাত বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে ব্রিজটি রুগ্ন অবস্থায় পড়ে ছিল। তখন কেউ এদিকে নজর দেননি। এখন এটি ভেঙে পানিতে ডুবে আছে। দ্রুত এ সংকটের সমাধান প্রয়োজন।’
নিয়মিত সংস্কার না করায় ব্রিজটির আজ এমন দশা উল্লেখ করে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য নুরজাহান বেগম খবরের কাগজকে বলেন, ‘৩০ বছর আগে সেতুটি নির্মাণ করা। তবে গত আট বছর আগে থেকে একটু একটু করে এটি ভাঙতে শুরু করে। সেতুর পিলারগুলো অনেক আগে থেকে ক্ষয়ে যেতে থাকে। নিয়মিত সংস্কার করা হলে আজ এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো না।’
সোনাকাটা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ফরাজী মো. ইউনুচ বলেন, ‘এখানে দ্রুত একটি নতুন সেতু স্থাপন করা প্রয়োজন। এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে।’
এলজিইডি তালতলী উপজেলার প্রকৌশলী সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। আশা করছি, নতুন সেতু বানানোর জন্য শিগগিরই দরপত্র আহ্বানের কাজ শুরু হবে।’
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বরগুনায় ১৯৯৭-৯৮ অর্থবছরে ৩০০টি সেতু নির্মাণ করা হয়। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) আওতায় হালকা যান চলাচলের জন্য লোহার বিমের ওপর কংক্রিটের ঢালাই দিয়ে সেতুগুলো বানানো হয়। প্রকল্পের অধীনে নির্মিত এসব সেতুর ২৬৬টিই এখন চলাচলের অনুপযোগী। কোথাও কোথাও স্থানীয়রা বাঁশ, কাঠ দিয়ে কোনোরকমে চলাচল করলেও এসব সেতুতে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। ২০০৫ সালে প্রকল্পটি বন্ধ হয়ে গেছে। এরপর থেকে এসব সেতুর আর রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়নি।