ঢাকা ৩০ ভাদ্র ১৪৩১, শনিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪

নোয়াখালীতে ওসিসহ ৭ পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা

প্রকাশ: ১৫ আগস্ট ২০২৪, ১২:২৪ এএম
নোয়াখালীতে ওসিসহ ৭ পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা
সুধারাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর জাহেদুল হক রনি। ছবি: সংগৃহীত

নোয়াখালীর সুধারাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর জাহেদুল হক রনিসহ সাত পুলিশের বিরুদ্ধে হেফাজতে নিয়ে মারধর ও টাকা দাবির মামলা দায়ের করেছেন এক আইনজীবী।

বুধবার (১৪ আগস্ট) অ্যাডভোকেট মিনারুল ইসলাম মিনার (৩৫) বাদি হয়ে জেলা ও দায়রা জজ ফজলে এলাহী ভুইয়ার আদালতে মামলাটি দায়ের করেন।

মামলার আসামিরা হলেন- সুধারাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর জাহেদুল হক রনি, পরিদর্শক (তদন্ত) মো. মিজানুর রহমান পাঠান, উপ-পরিদর্শক (এসআই) অপু বড়ুয়া, মো. কামাল হোসেন, সহকারি উপ-পরিদর্শক (এএসআই) আবু তালেব, কনস্টেবল মো. রাসেল ও থানার মুন্সি রুবেল বড়ুয়া।

বাদির আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. জসিম উদ্দিন মামলা দায়েরের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, 'চিফ জুড়িসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট অথবা তার কোনো অধনস্থন ম্যাজিস্ট্রেট দ্বারা অনুসন্ধান করে আগামি ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের আদেশ দেওয়া হয়েছে।'

মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, গত ফেব্রুয়ারি মাসে তানজিনা আক্তার তানিয়া নামে ৭ বছরের এক শিশুকে মামলার এফআইআর-এ অন্তর্ভুক্ত করায় আমার মৌখিক আবেদনের ভিত্তিতে সুধারাম থানার ওসি মীর জাহেদুল হক রনিকে শোকজ করে আদালত। সেই বিরোধের জেরে ওসি আমার উপর ক্ষুব্ধ ছিলেন। গত গত ১৯ জুলাই বিকেলে আমার মামা আবদুল করিম মুক্তকে আটক করে সুধারাম থানা পুলিশ। খবর পেয়ে তাকে থানায় দেখতে গেলে ওসির নেতৃত্বে আসামিরা থানার একটি কক্ষে আটক করে মারধর করে। 

পরে খবর পেয়ে আমার আত্মীয়-স্বজন আমাকে থানা থেকে ছাড়াতে গেলে এসআইদের মাধ্যমে দুইলাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন ওসি মীর জাহেদুল হক রনি ও পরিদর্শক মিজানুর রহমান পাঠান। দাবিকৃত টাকা না পেয়ে পরদিন ২০ জুলাই আমাকে কোটাসংস্কার আন্দোলনে ছাত্র বিক্ষোভ দমাতে দায়ের করা বিশেষ ক্ষমতাসহ বিস্ফোরক আইনের মামলায় আমাকে আদালতে চালান দেওয়া হয়। এসময় আমার বিরুদ্ধে রিমান্ডের আবেদন করার ভয় দেখিয়ে তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মো. কামাল হোসেন ২০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেন।

এদিকে মামলায় উল্লেখিত ঘটনা সম্পূর্ণ অসত্য বলে দাবি করেন ওসি মীর জাহেদুল হক রনি। তিনি বলেন, বিভিন্ন সময় আইনজীবী মিনারুল ইসলাম মিনারের অন্যায় তদবীর না রাখায় তিনি আমার উপর ক্ষুব্ধ ছিলেন। পুলিশ যথাযথ নিয়মে আসামি গ্রেপ্তার ও আদালতে প্রেরণ করে। এখানেও তার কোনো ব্যর্তয় ঘটেনি।

ইকবাল হোসেন মজনু/এমএ/

মূল হামলাকারীরা অধরা নিরাপত্তা নিশ্চিত না হলে কাজে ফিরবেন না চিকিৎসকরা

প্রকাশ: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:০৮ এএম
নিরাপত্তা নিশ্চিত না হলে কাজে ফিরবেন না চিকিৎসকরা
কক্সবাজার সদর হাসপাতালে এক রোগীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে চিকিৎসক ও ওয়ার্ডকর্মীদের ওপর হামলা-ভাঙচুরের ঘটনায় স্থবির চিকিৎসাসেবা। সংগৃহীত

কক্সবাজার সদর হাসপাতালে এক রোগীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে চিকিৎসক ও ওয়ার্ডকর্মীদের ওপর হামলা-ভাঙচুরের ঘটনায় মামলা করা হয়েছে। ঘটনার ২৪ ঘণ্টার পরেও মূল হামলাকারী আসিফ হাসনাত জিহাদ ও আবু জিদানকে আটক করতে পারেনি পুলিশ।

গত বুধবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে মামলাটি করেন হামলার শিকার কক্সবাজার ২৫০ শয্যা জেলা সদর হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. সজীব কাজী। মামলায় অজ্ঞাতনামা ২০ থেকে ২৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। হামলার ঘটনায় এখন পর্যন্ত চারজনকে আটক করা হয়। সেখান থেকে দুজনের সম্পৃক্ততা নিশ্চিত হওয়ায় তাদের আসামি হিসেবে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। অপর দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছে পুলিশ। 

হাসপাতালের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, রোগীর মৃত্যুর পর জিহাদ, তামিম, তাহসিন ও জিদান সিসিইউতে প্রবেশ করে প্রথমে চিকিৎসকের কক্ষ ভাঙচুর চালায়। পরে চিকিৎসক সজীবকে মারধর করতে থাকেন। একপর্যায়ে তাকে টেনেহিঁচড়ে চারতলা থেকে নিচে নামিয়ে মারধর করতে থাকেন। পরে তাদের সঙ্গে যোগ দেন বাকিরা। এ সময় হাসপাতালে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে অন্য চিকিৎসকরা এগিয়ে এসে তাকে উদ্ধার করেন।
 
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হামলাকারীরা হলেন কক্সবাজার পৌরসভার ২নং ওয়ার্ডের নতুন বাহারছড়া এলাকার তাহসিন মোহাম্মদ রেজা, তামিম মোহাম্মদ রেজা, আসিফ হাসনাত জিহাদ ও আবু জিদান। তাদের মধ্যে জিহাদ, জিদান ও তাহসিন ছাত্রদলের কর্মী। তাদের ছাত্রদলের বিভিন্ন মিছিল-মিটিংয়ে সক্রিয় থাকতে দেখা গেছে। এ ছাড়া তামিম শিবিরের সমর্থক বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। 

কক্সবাজার সদর মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. মছিউর রহমান বলেন, ‘সব আসামিকে শনাক্ত করা গেছে। তাদের দুজনকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে। বাকি দুজনকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।’ 

মামলায় আসামিদের নাম কেন উল্লেখ নেই জানতে চাইলে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মং টিন ঞো বলেন,  ‘সিসিটিভি ফুটেজ দেখে অপরাধী শনাক্ত করলেও তাদের পরিচয় আমরা নিশ্চিত হতে পারেনি। তবে পুলিশ বিষয়টি খতিয়ে দেখছে। আমরা তাদের সহযোগিত করছি। মূল আসামিরা গ্রেপ্তার  না হওয়া পর্যন্ত কোনো চিকিৎসক কাজে ফিরবে না।’

হামলাকারীরা রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠনের কর্মী হওয়ায় কোনো চাপে ছিলেন কি না জানতে চাইলে তত্ত্বাবধায়ক বলেন, ‘কে কোন রাজনৈতিক দলের কর্মী বা নেতা, তা আমার দেখার বিষয় না। জড়িত কাউকে বাদ দেওয়ার সুযোগ নেই। এ ছাড়া সরকারি সম্পত্তি নষ্টের দায়ে হামলাকারীদের বিরুদ্ধে আরও একটি মামলা করা হবে।’ 

কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মুহাম্মদ রহমত উল্লাহ জানান, চিকিৎসকের ওপর হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় অজ্ঞাতনামা ২০ থেকে ২৫ জনকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে। পুলিশ এ ঘটনায় জড়িত সবার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিচ্ছে। চিকিৎসকদের নিরাপত্তায় সর্বোচ্চ ভূমিকা রাখবে পুলিশ। ইতোমধ্যে হাসপাতালে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
এদিকে চিকিৎসক ও ওয়ার্ডকর্মীদের ওপর হামলা-ভাঙচুরের ঘটনায় চিকিৎসাসেবা বন্ধ রয়েছে। জরুরি সেবা চালু থাকলেও তা চলছে খুব সীমিত। এতে রোগীরা বিপাকে পড়েছে।

কাজ শেষ না হওয়ায় বিপাকে হাজারও মানুষ

প্রকাশ: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:০৩ এএম
কাজ শেষ না হওয়ায় বিপাকে হাজারও মানুষ
চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় বাজালিয়া-শীলঘাটা সড়কের সুয়ালক খালের ওপর সেতুটির সংস্কারকাজ চলছে। যাতায়াতের জন্য তৈরি বিকল্প কাঠের সেতুটিও ভেঙে গেছে। খবরের কাগজ

চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার বাজালিয়া-শীলঘাটা সড়কের সুয়ালক খালের ওপর সেতুটির সংস্কারকাজ ৯ মাসেও শেষ হয়নি। যাতায়াতের জন্য বিকল্প হিসেবে একটি কাঠের সেতু তৈরি করা হয়। কিন্তু চার মাস আগে সেটিও ভেঙে গেছে। এরপর থেকে চন্দনাইশ ও পুরানগড় ইউনিয়নের বাসিন্দাদের ঝুঁকি নিয়ে নৌকা দিয়ে পার হতে হচ্ছে। এতে বিপাকে পড়েছেন অসুস্থ রোগী, শিশু ও বৃদ্ধরা বেশি।

স্থানীয়রা জানান, চলতি বছরের শুরুতেই বিকল্প কাঠের সেতুটি নড়বড়ে হয়ে যায়। স্থানীয়দের চাপের মুখে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ঢিলেঢালাভাবে মেরামত করে কোনোরকম দায় সারে।  তবে মেরামতের কিছুদিন যেতে না যেতেই সেতুটি পাহাড়ি ঢলে আবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তখন থেকে প্রায় তিন মাস পার হয়ে গেলেও এখনো পর্যন্ত কাঠের সেতুটি মেরামত করা হয়নি। 

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বিকল্প কাঠের সেতুটির জায়গায় বেইলি ব্রিজ নির্মাণ করা হবে। সেজন্য অর্থ বরাদ্দ পেতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করা হয়েছে। 

গত বছরের আগস্টে সাতকানিয়ায় ভয়াবহ বন্যা ও পাহাড়ি ঢলে সেতুটির দক্ষিণ পাশের পিলারটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। একই বছরের নভেম্বর মাসে সেতুটির সংস্কারকাজ শুরু হয়। ১ কোটি ৮৭ লাখ টাকা বরাদ্দে কাজটি পায় চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স নূর সিন্ডিকেট। ২০২৩ সালের মধ্যেই কাজটি শেষ করার কথা ছিল। অথচ ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে এসেও কাজের তেমন কোনো অগ্রগতি নেই। 

চন্দনাইশ উপজেলার ধোপাছড়ি ইউনিয়নের বাসিন্দা মোজাম্মেল হক বলেন, ‘আমি প্রায়ই এই দিক দিয়ে যাতায়াত করি। জরুরি প্রয়োজনে মানুষ ঝুঁকি নিয়ে নৌকায় পারাপার হচ্ছে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব মূল সেতুটি সংস্কার করা প্রয়োজন। এ ছাড়া আপাতত চলাচলের জন্য কাঠের সেতুটি মেরামতের জোর দাবি জানাচ্ছি।’

শীলঘাটা গ্রামের বাসিন্দা সনজিৎ বড়ুয়া বলেন, ‘কাঠের সেতুটি ভেঙে যাওয়ায় আমাদের গ্রামের মানুষের যাতায়াতে সমস্যা দেখা দিয়েছে। ছেলেমেয়েরা ঝুঁকি নিয়ে নৌকায় পার হয়ে স্কুল-কলেজে যাচ্ছে। হাট-বাজারে যাতায়াতসহ সব কিছুতেই স্থবিরতা নেমে এসেছে।’ 

আলী আকবর নামে অপর এক বাসিন্দা বলেন, ‘আমাদের এলাকার বাসিন্দারা উপজেলা, জেলা ও হাটবাজারে যাতায়াতে এই সেতুটি ব্যবহার করে থাকেন। সেতুটি ভেসে যাওয়ায় মানুষের যাতায়াত ও শাকসবজি বাজারজাতকরণে অতিরিক্ত সময় ও অর্থ দুটোই নষ্ট হচ্ছে। এ ছাড়া আমাদের এলাকায় কোনো হাসপাতালও নেই। মুমূর্ষু রোগী ও অন্তঃসত্ত্বা নারীদের যাতায়াতে দুর্ভোগ দেখা দিয়েছে। ভেসে যাওয়া কাঠের সেতুটি মেরামতের মাধ্যমে যাতায়াতের উপযোগী করে দেওয়া হলে ভোগান্তি অনেকটা লাঘব হবে।’

ঠিকাদার মো. দিদারুল ইসলাম জানান, ভারী বর্ষণের ফলে সৃষ্ট পাহাড়ি ঢলে খালটিতে অনেক বেশি পানি হয়েছে। এতে সেতুর দক্ষিণ পাশের পিলারটি পানিতে ডুবে গেছে। তাই আপাতত কাজ বন্ধ রয়েছে। বৃষ্টিপাত ও খালের পানি কমে গেলে সেতুর সংস্কারকাজ শুরু করা হবে।

সাতকানিয়া উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) কর্মকর্তা সবুজ কুমার দে খবরের কাগজকে বলেন, ‘বিকল্প সেতুটি বারবার যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেজন্য আমরা স্টিলের বেইলি ব্রিজ নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়েছি। তবে এখনো বরাদ্দ পাইনি। বরাদ্দ পেলে কাজ শুরু করা হবে।’

বঙ্গোপসাগরে ৭ ট্রলারডুবি, উদ্ধার ৩০, হতাহতের শংকা

প্রকাশ: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯:৫৯ এএম
আপডেট: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:০০ এএম
বঙ্গোপসাগরে ৭ ট্রলারডুবি, উদ্ধার ৩০, হতাহতের শংকা
উত্তাল বঙ্গোপসাগরে ডুবে গেছে মাছ ধরার ৭ ট্রলার। ছবি: সংগৃহীত

নোয়াখালীর বিচ্ছিন্ন দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ায় বৈরি আবহাওয়ায় বঙ্গোপসাগরে ঝড়ের কবলে পড়ে ৭টি মাছ ধরার ট্রলার ডুবে গেছে। ট্রলারগুলো থেকে ৩০জন মাঝি-মাল্লা ও জেলেকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় কতজন নিখোঁজ রয়েছে তার সঠিক পরিসংখ্যান না দিতে পারলেও একাধিক হতাহতের আশংকা করছে ট্রলার মালিকরা।

শুক্রবার (১৩ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় বঙ্গোপসাগরের একাধিক এলাকায় ট্রলার ডুবির ঘটনা ঘটে। 

হাতিয়ার বোট মালিক নিশান মিয়া খবরের কাগজকে বলেন, ‘গত কয়েকদিনে মাছ ধরার জন্য উপজেলার বিভিন্ন ঘাট থেকে গভীর সাগরে যায় অনেকগুলো ট্রলার। শুক্রবার সকাল থেকে বৈরি আবহাওয়ার কারনে সারাদিনব্যাপী বিভিন্ন ঘাটে ফিরতে শুরু করে ট্রলারগুলো। সন্ধ্যায় ঘাটে ফেরার সময় ঝড়ো বাতাস ও প্রচন্ড ঢেউয়ের কবলে পড়ে বাবর মাঝির একটি, জান মিয়া মাঝির একটি, দেলোয়ার মাঝির একটি, হেলাল উদ্দিন মাঝির একটি, শহীদ মাঝির একটি, মেহরাজ মাঝির একটি ও ইউনুছ মাঝির একটি মাছ ধরার ট্রলার ডুবে যায়। এ সময় পাশ্ববর্তী ট্রলারগুলোর সহযোগিতায় ডুবে যাওয়া ট্রলার থেকে প্রায় ৩০জন মাঝি-মাল্লাকে উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় একাধিক হতাহতের আশংকা করা হচ্ছে।’

হাতিয়ার থানা পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মনিরুজ্জামান খবরের কাগজকে বলেন, ট্রলার ডুবির বিষয়ে আমাদের কেউ অবগত করেনি।

কোস্টগার্ড হাতিয়ার স্টেশন অফিসার সার্জেন্ট হেলাল উদ্দিন খবরের কাগজকে বলেন, ‘সন্ধ্যার আগে সূর্যমুখি এলাকায় একটি বোট ডুবে যাওয়ার খবর মাঝিরা আমাদের দেয়। খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বের হলে পরবর্তীতে তারা জানায় ওই বোট থেকে ১৮ জেলেকে অন্য বোটের মাধ্যমে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। তবে বোটটি ঢেউয়ের কবলে পড়ে ডুবে গেছে। বাকি ট্রলারগুলোর বিষয়ে আমরা খবর নিচ্ছি।’

এ বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মিল্টন চাকমা বলেন, ‘বিভিন্ন ঘাট থেকে মোবাইলে লোক জন ট্রলার ডুবির ঘটনা জানাচ্ছেন। আমরাও খোঁজ খবর নিচ্ছি। কোন ঘাটে কতটি ট্রলার ডুবির ঘটনা ঘটেছে। জেলেদের অবস্থা কি তা আরও পরে নিশ্চিত হওয়া যাবে। ইতিমধ্যে নৌপুলিশ ও কোষ্টগার্ড এর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে।’

হানিফ উদ্দিন/ইসরাত চৈতী/

১৮ বছর ধরে চলছে কার্যক্রম বিনামূল্যে সাঁতার শেখান ফরিদুল

প্রকাশ: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯:৫০ এএম
বিনামূল্যে সাঁতার শেখান ফরিদুল
ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের ধরে ধরে সাঁতার শেখাচ্ছেন ফরিদুল হক। মাগুরার হোসেন শহিদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের পুকুর থেকে তোলা। খবরের কাগজ

বন্ধুর মেয়ে কলেজে পড়া অবস্থায় পানিতে ডুবে মারা যায়। বিষয়টি খুব পীড়া দেয় শিক্ষক ফরিদুল হককে। সেই থেকে চিন্তা করেন সাঁতার না জানা মানুষকে কীভাবে সাঁতার শেখানো যায়। তখন থেকে আজ প্রায় ১৮ বছর ধরে বাচ্চাদের সাঁতার শেখাচ্ছেন মাগুরার হোসেন শহিদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের ক্রীড়া শিক্ষক ফরিদুল হক। এখন পর্যন্ত প্রায় ১ হাজার ছেলেমেয়েকে সাঁতার শিখিয়েছেন এই শিক্ষক। তবে তার এই সাঁতার শেখানোর জন্য কারও কাছ থেকে টাকা নেন না। প্রতিদিন সকাল সাড়ে ৬ থেকে ৭ পর্যন্ত তার কাছে সাঁতার শেখানোর জন্য অভিভাবকরা তাদের ছেলেমেয়েদের নিয়ে আসেন। 

তার কাছে সাঁতার শিখতে আসা ছেলেমেয়েরা ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যেই সাঁতার শিখে যায়। শুধু শীতের মৌসুমে সাঁতার শেখানো বন্ধ রাখেন তিনি। তবে সাঁতার শেখাতে গিয়ে পুকুরসংকটের কারণে নানা বিড়ম্বনায় পড়তে হয় তাকে। জেলা শহরে পর্যাপ্ত পুকুর ও সুইমিংপুল না থাকায় মাগুরা হোসেন শহিদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের পুকুরটি তার একমাত্র সাঁতার শেখানোর স্থান। তবে সম্প্রতি এই পুকুরটি কচুরিপানা ও ময়লা আবর্জনায় নিমজ্জিত হওয়ায় সেখানে সাঁতার শেখাতে গিয়ে বিপাকে পড়ছেন এই শিক্ষক। পুকুরের পানি দুর্গন্ধ থাকায় অনেক অভিভাবকই তাদের বাচ্চাদের নিয়ে আসতে চাচ্ছেন না সেখানে। 

সম্প্রতি সরেজমিনে সোহরাওয়ার্দী কলেজের পুকুরে সকাল সাড়ে ৬টায় গিয়ে দেখা যায়, প্রায় ২০ জন ছোট ছোট ছেলেমেয়েকে ধরে ধরে সাঁতার শেখাচ্ছেন। দুর্গন্ধের জন্য অভিভাবকরা নাকে রুমাল দিয়ে রেখেছেন।

অভিভাবক দীপ্তি রানি কর বলেন, ‘শহরের বাচ্চারা সাঁতার জানে কম। তাই আমার বাচ্চাকে সাঁতার শেখার জন্য নিয়ে এসেছি। তবে এখানে পুকুরের পরিবেশ খুবই খারাপ। পানি অত্যন্ত নোংরা। সেখান থেকে পচা দুর্গন্ধ আসছে। আর এই পচা পানিতে সাঁতার শিখতে গিয়ে বাচ্চার গায়ে চুলকানিসহ নানা সমস্যা দেখা দিচ্ছে। অনেক বাচ্চা পচা পানি খেয়ে ফেলার কারণে পেটেও সমস্যা দেখা দিচ্ছে। এটি যদি সংস্কার করে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয়, তা হলে বাচ্চাদের সাঁতার শেখতে সুবিধা হয়।’

সাঁতার শিখতে আসা শেলী সুলতানা রাইসা বলেন, ‘পুকুরের পানি অনেক নোংরা থাকায় আমাদের সাঁতার কাটতে অনেক অসুবিধা হচ্ছে। ময়লাগুলো সরিয়ে পুকুর পরিষ্কার করে দিলে আমাদের সাঁতার কাটতে সুবিধা হয়।’ অপর শিক্ষার্থী জাকোয়ান কবির বলেন, ‘পুকুরটি অনেক বড় হলোও পদ্মপাতা ও কচুরিপানায় ভরে গিয়েছে। ফলে এই পাতাগুলো পচে পুকুরের পানি দূষিত হয়ে গিয়েছে। সেটা আমাদের শরীরে লেগে চুলকানিসহ নানা সমস্যা হচ্ছে।’

সাঁতার প্রশিক্ষক শিক্ষক ফরিদুল হক বলেন, ‘সাঁতার না জানার কারণে ২০ বছর আগে আমার বন্ধুর মেয়ে কলেজে পড়া অবস্থায় পুকুরের পানিতে ডুবে মারা যায়। বন্ধুর মেয়ের মৃত্যুর বিষয়টি আমাকে তখন খুব কষ্ট দিয়েছিল। এ ছাড়া একটা হিসাবে আমি দেখেছি, আমাদের দেশে প্রতিবছর গড়ে ১৩ থেকে ১৪ হাজার মানুষ পানিতে পড়ে মারা যায়। তখন আমি চিন্তা করি কীভাবে সবাইকে সাঁতার শেখানো যায়। সেই থেকে আজ প্রায় ১৮ বছর ছেলেমেয়েদের বিনামূল্যে সাঁতার শেখাচ্ছি। এখন পর্যন্ত আমার কাছ থেকে প্রায় ১ হাজারের ওপরে ছেলেমেয়ে সাঁতার শিখেছে।’

টেকসই বেড়িবাঁধ চান স্থানীয়রা

প্রকাশ: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯:৩৮ এএম
টেকসই বেড়িবাঁধ চান স্থানীয়রা
পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার পানপট্টি ইউনিয়নের লঞ্চঘাট এলাকায় নদীভাঙনের চিত্র। খবরের কাগজ

উপকূলের মানুষের কাছে আতঙ্কের নাম নদীভাঙন। প্রতিবছর বর্ষায় পটুয়াখালীর গলাচিপায় নদীভাঙনে রাস্তাঘাট, হাট-বাজার, স্কুল-কলেজ, মসজিদ, মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নদীতে বিলীন হয় যাচ্ছে। এ ছাড়া উপজেলায় ভাঙন আতঙ্কে রয়েছে হাজার হাজার পরিবার। ভাঙন রোধে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের উদ্যোগ নেবে অন্তবর্তী সরকার, এমনটাই দাবি স্থানীয়দের।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতিবছর বর্ষায় নদীভাঙনের কারণে জেলার গলাচিপার পানপট্টি এলাকার রাস্তাঘাট, হাট-বাজার নদীতে বিলীন হচ্ছে। ভাঙনের কারণে কৃষিজমি ও বসতভিটা হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছে শত শত পরিবার। ধনীরা অন্য জায়গায় জমি কিনে ভিটা ছাড়লেও নিম্নবিত্তরা সব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়ছেন। ভাঙনের কারণে এলাকায় মানচিত্র থেকে প্রতিদিনই কমছে গ্রামের সীমানা।

গলাচিপা উপজেলার পানপট্টি ইউনিয়নের বাসিন্দা রফিক সরদার বলেন, ‘আমরা সব সময় আতঙ্কে থাকি। বর্তমান সরকারের কাছে দাবি জানাই, দ্রুত ব্লক দিয়ে শক্তপোক্তভাবে এখানে একটি বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হোক।’

পানপট্টি লঞ্চঘাট এলাকার চায়ের দোকানি নুরুল হাসান বলেন, ‘প্রতিবছর ঝড়-বন্যা হলে এখানে নদীভাঙন শুরু হয়। ভাঙন থেকে দোকানঘর বাঁচাতে গত পাঁচ বছর ধরে সেটি ভেঙে সরিয়ে আবার নতুন করে গড়তে হচ্ছে। এ রকম চলতে থাকলে ব্যবসা করে পরিবার নিয়ে কী খেয়ে বাঁচব?’

সরেজমিনে দেখা গেছে, পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলা সড়কপথ বিচ্ছিন্ন একটি উপজেলা। রাঙ্গাবালী উপজেলা থেকে গলাচিপার পানপট্টি হয়ে জেলা শহরে যেতে হয়। যাতায়াতে ব্যবহৃত হয় লঞ্চ, ট্রলার বা স্পিডবোট।

রাঙ্গাবালী থেকে ট্রলারে আসা যাত্রী সিদ্দিক মাঝি বলেন, ‘নদীভাঙনের কারণে পানপট্টি লঞ্চঘাটের অবস্থা বেহাল হয়ে আছে। আমরা রাঙ্গাবালী থেকে এসে পানপট্টি লঞ্চঘাট নামলেও, এই ঘাট দিয়ে সড়কে উঠতে খুব কষ্ট হয়।’

এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফ হোসেন বলেন, ‘ভাঙনকবলিত এলাকা ইতোমধ্যে পরিদর্শন করেছি। ওখানে আমাদের প্রাথমিক জরিপ সম্পন্ন হয়েছে। এ বিষয়ে একটি প্রকল্পও অনুমোদন হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে দরপত্র আহ্বানের মাধ্যমে কাজ শুরু হবে।

এদিকে নদীভাঙনে শুধু পানপট্টি নয়, এর মতো উপজেলার বদনাতলী, ডাকুয়া ও আমখোলা ইউনিয়নে রাস্তাঘাট, হাট-বাজার, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নদীতে বিলীন হচ্ছে বলে জানান স্থানীয়রা।