ছাত্র-জনতার তীব্র গণ-আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশ ছাড়ার পর কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের বেশির ভাগ কাউন্সিলর আত্মগোপনে চলে গেছেন। সেই সঙ্গে হদিস মিলছে না মেয়র তাহসিন বাহার সূচনারও। কোথায় আছেন তিনি, এ তথ্য কারও কাছে নেই। তবে আত্মগোপনে থাকা কুমিল্লা সিটির কাউন্সিলরদের মধ্যে অনেকেই ভারতে পাড়ি জমিয়েছেন বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। তাদের সঙ্গে দেশ ছেড়েছেন অনেক আওয়ামী লীগ নেতাও।
জানা গেছে, গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগের দিন দুপুর পর্যন্ত সিটি মেয়র তাহসিন বাহার সূচনার নেতৃত্বে কুমিল্লার মোড়ে মোড়ে ছাত্র-জনতার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করেছিলেন ওয়ার্ড কাউন্সিলর এবং আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। কিন্তু দুপুরের পর যখন বিভিন্ন সূত্রে খবর আসতে থাকে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করছেন- তখন গা বাঁচাতে নেতা-কর্মীরা আত্মগোপনে চলে যেতে থাকেন।
বিশ্বস্ত একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে, ৫ আগস্ট বেলা তিনটা থেকে ৫টার মধ্যে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের চারজন কাউন্সিলরসহ আওয়ামী লীগের অন্তত শতাধিক নেতা-কর্মী ভারতে পাড়ি জমিয়েছেন। তাদের মধ্যে ২ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর গাজী গোলাম সারোয়ার শিপন, ৩ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর সরকার মাহমুদ জাবেদ, ২৬ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবদুস সাত্তার, ২৭ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবুল হাসানসহ আরও কয়েকজন কাউন্সিলর ভারতে চলে গেছেন বলে জানা গেছে। বিশেষ বিশেষ সময়ে তারা সীমান্তবর্তী এলাকায় এসে বাংলাদেশি একটি মোবাইল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে স্বজনদের সঙ্গে কথা বলছেন বলেও নিশ্চিত হওয়া গেছে। তবে ৫ আগস্ট দুপুর পর্যন্ত মেয়র তাহসিন বাহার সূচনা কুমিল্লায় থাকলেও এখন তিনি কোথায় আছেন সে বিষয়ে কিছুই জানা যায়নি।
মেয়রের আত্মগোপনে থাকা নিয়ে নগরজুড়ে নানা মুখরোচক আলোচনা হচ্ছে। কেউ বলছেন, তিনি কোনো বাহিনীর হেফাজতে আছেন। কেউবা বলছেন আশপাশেই কোনো অপরিচিত কর্মীর বাসায় গা-ঢাকা দিয়ে আছেন। কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, ৫ আগস্ট বিকেল ৫টার দিকে একটি বাহিনীর গাড়িতে ৩/৪ জন নারীকে বসিয়ে রানীর দিঘির পাড়ের দিকে যেতে দেখা গেছে। জনতা তখন ওই বাহিনীকে অভিনন্দন জানাচ্ছিল। কিন্তু এই নারীরা কারা সেটা বোঝা যায়নি। তবে প্রত্যক্ষদর্শীদের ধারণা, ওই নারীদের মধ্যে কুমিল্লার মেয়র সূচনাও আছে। তবে তাকে আটক বা হেফাজতে রাখার বিষয়ে কোনো বাহিনীর পক্ষ থেকে কিছুই জানানো হয়নি।
এদিকে শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর কুমিল্লা সিটি মেয়রসহ অধিকাংশ কাউন্সিলর আত্মগোপনে চলে যাওয়ায় নাগরিক কার্যক্রম ভেঙে পড়েছে। ২৭টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের পুরুষ ও সংরক্ষিত নারী মিলিয়ে মোট ৩৬ জন কাউন্সিলর রয়েছেন। তাদের দুই/তৃতীয়াংশই আওয়ামী ঘরানার। ৫ আগস্টের পর থেকে তারাই মূলত পালিয়েছেন। তাদের ওয়ার্ডেই সেবা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।
এ বিষয়ে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের ২৪ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মুহিব্বুর রহমান তুহিন বলেন, ‘প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের কারণে অনেকেই আত্মগোপনে চলে গেছেন। তারা মূলত আওয়ামী লীগের সমর্থনে কাউন্সিলর হয়েছিলেন। বাকি ১০/১১ জন নিজ নিজ ওয়ার্ডেই আছেন। আমার ওয়ার্ডে নাগরিক সেবা কার্যক্রম স্বাভাবিক আছে। মেয়রের অনুপস্থিতিতে এখন পর্যন্ত কোনো সমস্যা তৈরি হয়নি। দেখা যাক শেষ পর্যন্ত কী হয়।’