
বাবা-মায়ের সঙ্গে জাপানে বেড়াতে এসেছে রাফা। এখানে ওর বড় মামা থাকেন। রাফা মামাকে জাপানি মামা বলে ডাকে। এখানে এসে রাফা অনেক খুশি। ওকে পেয়ে সাফাও খুশি। সাফা হলো রাফার মামাতো বোন।
সাফা স্কুলে যাচ্ছে। স্কুলটা কাছে। তাই একাই হেঁটে স্কুলে যায় সাফা।
সাফা বলল, ‘চলো রাফা, আমাদের স্কুল থেকে ঘুরে আসি। খুব মজা হবে।’
রাফা রাজি হয়ে গেল। দুই বোন স্কুলে যাচ্ছে।
স্কুলে ঢোকার সময় হেডস্যার ডাকলেন। বললেন, ‘সাফা, তোমার সঙ্গে কে?’
সাফা বলল, ‘ওর নাম রাফা। বাংলাদেশ থেকে এসেছে। আমার বোন।’
স্যার বললেন, ‘তাহলে তো রাফা আমাদের অতিথি।’
তারপর স্যার রাফার হাতে একটি ফুল দিয়ে স্বাগত জানালেন। রাফা খুব খুশি হলো।
স্কুলে ঢুকে রাফা অবাক! ওর বয়সী সব শিক্ষার্থী মাঠ পরিষ্কার করছে। শিক্ষকরাও ওদের সঙ্গে কাজ করছেন। কেউ কেউ ফুটবল খেলছে। মাঠের চারপাশে বাগান। সেই বাগান রঙিন রঙিন ফুল ফুটে আছে। কেউ আবার ফুল গাছে পানি দিচ্ছে। সাফাও কাজে লেগে গেল।
তখন রাফা ভাবল, তারও কিছু করা উচিত। কিন্তু কী করবে?
একটু পর ঘণ্টা বাজল, টুন টুন টুন। সবাই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হয়ে ক্লাসে ঢুকল। স্যার এসে বললেন, ‘ওর নাম রাফা। বাংলাদেশ থেকে এসেছে। রাফা আজ আমাদের অতিথি।’
স্যারের কথা শেষে সবাই উঠে দাঁড়াল। ওরা বলল, ‘স্বাগতম রাফা।’
রাফা দাঁড়িয়ে বলল, ‘তোমাদের ধন্যবাদ।’
স্কুলে এসে রাফার খুব আনন্দ হচ্ছে। কেউ চকলেট উপহার দিচ্ছে। কেউ দিচ্ছে পুতুল। কেউ আবার গল্পের বই দিচ্ছে। সবার ব্যবহারে ও বারবার চমকে যাচ্ছে।
তাই ওকে এমন কিছু করতে হবে যা দেখে সবাই চমকে যাবে। বাংলাদেশকে চিনবে। কিন্তু কী করবে রাফা?
স্কুলটা রাফার বেশ ভালো লেগেছে। ক্লাসে বসে ঘুমালেও কেউ কিছু বলছে না। এটাই নাকি নিয়ম!
কেউ চিপস খাচ্ছে। কেউ চকলেট খাচ্ছে। খাওয়া শেষে প্যাকেটগুলো ডাস্টবিনে ফেলে আসছে।
স্কুলের সব শিক্ষার্থী বড় হলরুমে বসে আছে। স্যাররাও ওদের সঙ্গে বসে আছেন। এখন বিশেষ ক্লাস হবে। সেখানে যে খুশি অংশ নিতে পারবে।
বিশেষ ক্লাসে অনেকেই অংশ নিচ্ছে। স্যার নাম ধরে ডাকলে একজন করে উঠে যাচ্ছে। কেউ গান গাইছে। কেউ কবিতা আবৃত্তি করছে। কেউ নাচ করছে। কেউ কৌতুক বলছে। আর সবাই করতালি দিয়ে উৎসাহ দিচ্ছে।
একজন গিয়ে সাদা বোর্ডে একটি ছবি আঁকল। চারপাশে সাদা, মাঝখানে লাল বৃত্ত। এটা জাপানের পতাকা। সবাই উঠে দাঁড়িয়ে পতাকাকে সম্মান জানাল।
এবার স্যার রাফাকে ডাকলেন। রাফা কী করবে বুঝতে পারছে না। ভয়ে ভয়ে এগিয়ে যায় স্টেজে। পেছনে সাদা বোর্ডে লাল বৃত্তের জাপানি পতাকা।
রাফা টেবিল থেকে সবুজ রং নিল। লাল বৃত্তের চারপাশ সবুজে রাঙিয়ে দিল। সঙ্গে সঙ্গে ভিড় থেকে উঠে দাঁড়াল সাফা। ওর দিকে তাকিয়ে আছে সবাই। কেউ কিছু বুঝতে পারে না।
সাফা চিৎকার করে বলল, ‘ওটা আমার দেশের পতাকা। আমি বাংলাদেশকে ভালোবাসি।’
তখন সবাই উঠে দাঁড়াল। সম্মান জানাল বাংলাদেশের পতাকাকে।
সাদা বোর্ডে আঁকা পতাকাতে চুমু দিল রাফা। ওর মুখে ও কপালে লাল-সবুজ পতাকার রং লেগে গেছে। রাফা খুব খুব খুশি।