
রিয়ানা ওর বড় মামাকে ডাকে বুড়ো মামা। বুড়ো মামা ওকে একটি ড্রয়িং খাতা কিনে দিয়েছেন, আর দিয়েছেন রং পেন্সিল। আজ রিয়ানা মহাখুশি!
কিন্তু ড্রয়িং খাতায় তো কিছু আঁকতে হবে! কী আঁকা যায়? কী আঁকা যায়? রিয়ানা ছুটে যায় বুড়ো মামার কাছে।
বারান্দায় চেয়ারে বসে আছেন বুড়ো মামা। চোখে চশমা, মাথায় কোঁকড়া চুল আর হাতে বই। মনোযোগ দিয়ে বই পড়ছেন তিনি।
রিয়ানা বলল, ‘বুড়ো মামা, ড্রয়িং খাতায় আমি কী আঁকব?’
মামা চেয়ারে বসে ভাবলেন। বইটা রেখে দাঁড়িয়ে ভাবলেন। মাথায় হাত দিয়ে ভাবলেন। ভ্রু কুঁচকে ভাবলেন। চশমাটা খুলে হাতে নিয়ে ঘোরালেন কয়েকবার। তারপর মামা বললেন, ‘একটা পরী আঁকো, তোমার মতো একটা পরী।’
রিয়ানা দৌড়ে ঘরের ভেতরে গেল আবার। পড়ার টেবিলে বসল। পেন্সিল নিল হাতে। তারপর পরী আঁকতে শুরু করল।
রিয়ানা ড্রয়িং খাতায় একটি পরী এঁকেছে। রং করেছে রং পেন্সিল দিয়ে। কিন্তু পরীকে ঠিক পরী মনে হচ্ছে না! মনে হচ্ছে পরীটার কিছু একটা নেই! কিন্তু কী নেই?
খাতার পরীটা তখনই বলল, ‘ও মা, তুমি আমার ডানা আঁকোনি কেন? ডানা ছাড়া কি পরী হয়?’
হ্যাঁ, তাইতো! পরীর ডানা আঁকা হয়নি! এত ভারি অন্যায়! রিয়ানা পরীর দুটো ডানা এঁকে দিল।
কিন্তু তারপর কি হলো জানো? শুনলে তোমরাও অবাক হবে!
তারপর রঙিন পরীটা আর খাতায় থাকল না! উড়ে এসে রিয়ানার পাশে বসল! রিয়ানা অবাক! ড্রয়িং খাতার পরী কীভাবে ওর পাশে এসে বসল!
রিয়ানাকে আরও অবাক করে দিয়ে পরীটা বলল, ‘আমাদের দেশে যাবে তুমি?’
রিয়ানা বলল, ‘সে হয় নাকি? আমার তো ডানা নেই! আমি কীভাবে তোমাদের দেশে যাব?’
পরীটা আরও কাছে এসে বসল। তারপর রিয়ানার পিঠে হাত বুলিয়ে দিল একবার। সঙ্গে সঙ্গে দুটি ডানা গজাল! রিয়ানা আরও অবাক হয়ে গেল, চোখ দুটি বড় হয়ে গেল তার।
আয়নার সামনে দাঁড়াল রিয়ানা। বুড়ো মামা তো ঠিকই বলেছিলেন-ওকে সত্যিই পরী পরী লাগছে!
পরীটা কিছুটা তাড়া দিয়ে বলল, ‘তাহলে আর দেরি কেন? চলো, পরীর দেশ ঘুরে আসি।’
পরীর কথায় মাথা নাড়াল রিয়ানা।
রিয়ানা উড়ছে। রঙিন পরীটাও উড়ছে। ওরা মেঘের ওপর দিয়ে উড়ে যাচ্ছে। কয়েকটি মেঘ এসে ওর ডানা ভিজিয়ে দিল।
উড়তে উড়তে পরীর দেশে চলে এল ওরা। পরীর দেশের চারদিকে রঙিন পাতার গাছ। রঙিন রঙিন ফুল। সেখানে খেলা করছে ছোট্ট ছোট্ট পরী। রিয়ানাও খেলতে শুরু করল তাদের সঙ্গে।
তখন সেখানে এলেন একজন পরী। চোখে চশমা তার। বয়স কিছুটা বেশি। এসেই বললেন, ‘অনেক খেলা হয়েছে, এবার সবাই পড়তে যাও।’
চশমা পরা পরীর কথা শুনে সবাই খেলা বন্ধ করল। তারপর চলে গেল পড়তে।
রঙিন পরীটা এসে রিয়ানার কানে কানে বলল, ‘দেখলে তো, এখানে সবাই পড়ার সময় পড়ে, খেলার সময় খেলে। আর বড়দের কথা মেনে চলে।’