দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর অভ্যন্তরীণ নানা সংকট মোকাবিলা করে তৃণমূলকে গুছিয়ে আনার লক্ষ্য নিয়ে মাঠে নামছে জাতীয় পার্টি (জাপা)। ক্ষোভ-অসন্তোষ দূর করে দলের তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের চাঙা করে সাংগঠনিক কাঠামো মজবুত করতে সক্রিয় হচ্ছেন দলের শীর্ষ নেতারা।
শনিবার (২৭ এপ্রিল) সকালে ঢাকার কাকরাইলে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে দেশের সব জেলা ইউনিটের শীর্ষ নেতাদের পাশাপাশি অঙ্গ সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের নিয়ে বর্ধিত সভার আয়োজন করেছে জাতীয় পার্টি। বিরোধীদলীয় নেতা ও জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের সভাপতিত্বে এই সভায় দলের মহাসচিব, কো-চেয়ারম্যান, প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সংসদ সদস্যরা উপস্থিত থাকবেন।
জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ও কেন্দ্রীয় কমিটির শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাপার ভরাডুবির কারণ নিয়ে খোলামেলা আলোচনা হবে এই সভায়। তৃণমূলের নেতাদের অনেকে অভিযোগ করে আসছেন, নির্বাচনের পরে তারা দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না। তৃণমূলে দলের সাংগঠনিক কাঠামো ভঙ্গুর হয়ে পড়ছে। এমন পরিস্থিতি থেকে দলকে উত্তরণের পথ খুঁজতে শীর্ষ নেতারা মুখোমুখি হচ্ছেন তৃণমূলের।
জাপার সংসদ সদস্য ও প্রেসিডিয়াম সদস্য হাফিজ উদ্দিন আহমেদ গতকাল শুক্রবার খবরের কাগজকে বলেন, ‘সারা দেশের জেলা কমিটির নেতাদের নিয়ে বর্ধিত সভা ডেকেছেন চেয়ারম্যান-মহাসচিব। তৃণমূলের নেতারা তাদের অভাব-অভিযোগসহ নানা দাবি তুলে ধরবেন সভায়। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরে তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে মিলিত হচ্ছি আমরা। দলের জন্যএই সভা গুরুত্বপূর্ণ ।’
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরে তুমুল গৃহবিবাদে ষষ্ঠ দফায় ভাঙে জাতীয় পার্টি। দলের প্রবীণ নেতা রওশন এরশাদের নেতৃত্বে গঠিত হয় জাতীয় পার্টির আরেকটি অংশ, যারা নিজেদের আসল জাতীয় পার্টি বলে দাবি করছে। নির্বাচনকালীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে আঁতাত, আসন বণ্টন, তৃণমূলের প্রার্থীদের অসহযোগিতা করার অভিযোগ এনে জাপার শীর্ষ নেতাদের অনেকে জি এম কাদের শিবির ছেড়ে গেছেন। পরে তৃণমূলের অনেক নেতাও রওশন শিবিরে ভিড়ে যান। এতে দলের সাংগঠনিক কাঠামোতে অস্থিতিশীল যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তা সমাধান করতে আজকের সভার আয়োজনটি করা হচ্ছে।
আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে জাতীয় পার্টি অংশগ্রহণ করার ঘোষণা দিলেও দলীয় ফরম বিক্রির কার্যক্রমে তেমন সাড়া নেই বলে জানা গেছে। গতকাল বিকেল পর্যন্ত ৯টি ফরম বিক্রির কথা জানা যায় দলটির দপ্তর বিভাগ থেকে। আওয়ামী লীগের প্রভাবে উপজেলা নির্বাচনের মাঠে জাপা নেতারা আদৌ টিকে থাকতে পারবেন কি না, এ নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। আজকের সভায় উপজেলা নির্বাচন নিয়েও দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য দেবেন জি এম কাদের।
জাপা এখন ক্রীতদাস, ভবিষ্যৎ অন্ধকার: কাজী ফিরোজ রশীদ
দেশের রাজনীতিতে জাতীয় পার্টির প্রভাব ক্রমেই কমে আসায় দলটি মানুষের আস্থা হারাতে বসেছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় পার্টির (রওশন) নির্বাহী চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশীদ। গতকাল বিজয়নগরের একটি হোটেলে সংবাদ সম্মেলন করে রওশন এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি।
সংবাদ সম্মেলনে কাজী ফিরোজ রশিদ বলেন, ‘আগে জাতীয় পার্টিকে বলা হতো গৃহপালিত বিরোধী দল। আর এখন বলা হয় ক্রীতদাস। এ পার্টির ভবিষ্যৎ অন্ধকার। জাতীয় পার্টির ওপর মানুষের আস্থা নেই। তারপরও আমরা চেষ্টা করছি এ পার্টিকে কীভাবে গুছিয়ে রাখা যায়।’
দেশের চলমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের সমালোচনায় জাপার এ শীর্ষ নেতা বলেন, ‘আগামীতে দুটি মার্কা ছাড়া অন্য মার্কা খুঁজে পাওয়া যাবে না। আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, হাসানুল হক ইনু, রাশেদ খান মেননও নিজেদের মার্কা বাদ দিয়ে নৌকায় উঠেছেন। তারপরও অনেককে ডুবে যেতে হয়েছে। নির্বাচন এখন নির্বাচনে নেই। একটি দলের মধ্যেই নির্বাচন হয়।’
এর আগে জাতীয় পার্টির একাংশের মহাসচিব কাজী মামুনুর রশীদ জানান, শনিবারের পূর্বনির্ধারিত পরিচিতি সভা স্থগিত করেছেন তারা। শনিবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে এ সভা আহ্বান করেছিল দলটি। তিনি জানান, তাদের দল পাঁচ দিনব্যাপী প্রতিদিন ১০টি স্পটে তীব্র দাবদাহে অতিষ্ঠ ভ্রাম্যমাণ ও অসহায় রিকশাচালক এবং দিনমজুরদের পানি ও খাবার স্যালাইন বিতরণ করবে।