ইসলাম পর্দার বিধান দিয়েছে নারীকে সম্মানের স্থানে অধিষ্ঠিত করা, তাদের সতীত্বের হেফাজত এবং ব্যভিচারমুক্ত সমাজ গঠনে উদ্বুদ্ধ করতে। এই বিধান মানা মুসলমানদের জন্য ফরজ। এটি পরিত্যাগের কোনো সুযোগ নেই। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে নবি, আপনি মুমিন (পুরুষদের) বলে দিন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নিচু করে এবং লজ্জাস্থানের হেফাজত করে, এটা তাদের জন্য অধিকতর পবিত্র। তারা যা কিছু করে আল্লাহ সে বিষয়ে অবগত। এবং ঈমানদার নারীদের বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি এবং তাদের লজ্জাস্থানের হেফাজত করে। তারা যেন যা সাধারণত প্রকাশমান; তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে। তাদের গ্রীবা ও বক্ষদেশ যেন মাথার কাপড় দিয়ে আবৃত করে।’ (সুরা নুর, আয়াত: ৩০-৩১)। এই আয়াত দিয়ে প্রমাণিত হয়, পর্দার বিধান সরাসরি আল্লাহর পক্ষ থেকে এসেছে এবং পবিত্র কোরআনে একাধিক জায়গায় এ সম্পর্কে সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে।
রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর স্ত্রীরা আল্লাহর এই বিধান পালনের মাধ্যমে সমাজে এক অনন্য উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। কোরআনে নবির স্ত্রীদের বা উম্মুল মুমিনদের পর্দা নিয়ে কয়েকটি আয়াত রয়েছে। আল্লাহ বলেন, ‘হে নবি, আপনি আপনার স্ত্রীদের, কন্যাদের ও মুমিন নারীদের বলুন, তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দংশ নিজেদের ওপর টেনে দেয়। এতে তাদের চেনা সহজ হবে। ফলে তাদের উত্ত্যক্ত করা হবে না। আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ (সুরা আহজাব, আয়াত: ৫৯) । দুঃখজনক যে, ইসলাম ধর্মের অনুসারী হয়েও অনেকে এই বিধান সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য করে; যা কাম্য নয়।
আরও পড়ুন : স্বপ্নে জাহান্নাম দেখলে কী হয়?
বহুকাল ধরে প্রচলিত আছে, পর্দা হচ্ছে নারীর রক্ষাকবচ। কেননা একজন নারী পর্দার মাধ্যমে যেভাবে নিজেকে আবৃত করে; এর মাধ্যমে সমাজে সে শঙ্কামুক্তভাবে চলাফেরা করতে পারে। কেননা বখাটে ছেলেরা বোরকাবিহীন নারীকে উত্ত্যক্ত করলেও একজন পর্দানশীন নারীর দিকে স্বভাবত খারাপ দৃষ্টিতে তাকায় না। তবে লক্ষণীয় যে, পর্দার নামে শরীর দেখা যায় বা শরীরের অঙ্গপ্রতঙ্গ বাহ্যিকভাবে বোঝা যায় এবং পর-পুরুষকে দৃষ্টি আকর্ষণ করে, এমন পোশাক পরা হারাম। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘জাহান্নামবাসী দুই প্রকার মানুষ, আমি যাদের (এ পর্যন্ত) দেখিনি। একদল মানুষ, যাদের সঙ্গে গরুর লেজের মতো চাবুক থাকবে, তা দ্বারা তারা লোকজনকে মারবে এবং একদল স্ত্রী লোক, যারা কাপড় পরিহিত উলঙ্গ, যারা অন্যদের আকর্ষণকারী ও আকৃষ্ট, তাদের মাথার চুলের অবস্থা উটের হেলে পড়া কুঁজের মতো। ওরা জান্নাতে যেতে পারবে না, এমনকি এর সুগন্ধিও পাবে না। অথচ এত এত দূর থেকে এর সুঘ্রাণ পাওয়া যায়।’ (মুসলিম, হাদিস: ৫৪৭৫)
বর্তমানে এই মুসলিমপ্রধান দেশে অনেককে পর্দা ও বোরকার বিরোধিতা করতে দেখা যায়। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে, সমকালীন সময়ে শিক্ষাব্যবস্থাকে আধুনিকায়ন তথা বহির্বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার নামে পাশ্চাত্যের অন্ধ অনুকরণ ও অনুসরণ করা হচ্ছে। যা একটি মুসলিমপ্রধান দেশে কখনোই কাম্য নয়; বরং এ দেশের শিক্ষাব্যবস্থা হওয়া উচিত অশ্লীলতামুক্ত ও ইসলাম অনুমোদিত পন্থায়। যেখানে একজন ব্যক্তি শৈশব থেকেই কোরআন-সুন্নাহর জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমে নিজেকে খোদাভীরু হিসেবে গড়ে তুলতে পারবে।
পর্দাহীনতা মানুষকে ব্যভিচারের দিকে নিয়ে যায়। ব্যভিচার হারাম। ব্যভিচারকারীদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের ভয়ংকর আজাব। আল্লাহ বলেন, ‘আর তোমরা ব্যভিচারের কাছেও যেও না। নিশ্চয়ই এটা অশ্লীল কাজ এবং মন্দ পথ।’ (সুরা বনি ইসরাইল, আয়াত: ৩২)
আরও পড়ুন : কখন তায়াম্মুম করতে হয়?
আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার নামে কেউ যদি ইসলামি জ্ঞানার্জনে অবহেলা করে, পাশ্চাত্যের অনুসরণ করে এবং আল্লাহর বিধান পালনে বাধা দেয়, তার জন্য রয়েছে কঠোর শাস্তি। আল্লাহ বলেন, ‘যারা মুমিনদের মধ্যে অশ্লীলতার প্রসার কামনা করে, তাদের জন্য রয়েছে দুনিয়া ও আখেরাতে মর্মন্তুদ শাস্তি। আল্লাহ জানেন, তোমরা জানো না।’ (সুরা নুর, আয়াত: ১৯)
পর্দা ইসলামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিধান। এটি মানা ফরজ। এ সম্পর্কে সবাইকে যেমন সচেষ্ট হতে হবে, তেমন এই বিধান পালনে একজন মুসলিম হিসেবে অন্যদের উৎসাহিত করতে হবে।
লেখক: খণ্ডকালীন শিক্ষক, আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম