
চট্টগ্রাম মহানগরের অলিগলি থেকে লাভের আশায় কোরবানির পশুর চামড়া সংগ্রহ করেছিলেন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। সরকার এবার চামড়ার দাম বাড়ানোর কারণে লাভের মুখ দেখবেন- এমনটাই ভেবেছিলেন তারা। কিন্তু কেনা দামেও চামড়া বিক্রি করতে না পেরে সে আশা এখন গুড়েবালি। শেষমেষ চামড়ার ঠাঁই হয় ময়লার ভাগাড়ে।
রবিবার (৮ জুন) সকাল থেকে চট্টগ্রাম মহানগরের চৌমুহনী, দেওয়ানহাট, পতেঙ্গা, আতুরার ডিপো-সহ নগরের বিভিন্ন এলাকার ময়লার ডাস্টবিনে মিলছে কোরবানি পশুর চামড়া। ন্যায্য দাম না পেয়ে ক্ষোভে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা রাস্তার পাশে বা ডাস্টবিনে রেখে যান চামড়া। রবিবার সকাল থেকে রাস্তায় পড়ে থাকা চামড়া ট্রাক দিয়ে সরিয়ে নেয় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন।
এর আগে করোনা মহামারির বছর ২০২০ সালেও এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। ওই বছর ধস নেমেছিল চামড়ার বাজারে। ন্যায্যদাম না পেয়ে নদী-খাল বা ভাগাড়ে অনেক চামড়া ফেলে দিয়েছিলেন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। তার পরের বছর অর্থাৎ ২০২১ সালেও ওই অবস্থার খুব বেশি উন্নতি হয়নি। চলতি বছর সরকার চামড়ার ভাল দাম নির্ধারণ করে দিলেও প্রকৃত দাম না পাওয়ায় এবারও চামড়ার ঠাঁই হলো ভাগাড়ে। পাশাপাশি আড়তদারদের সিন্ডিকেটকেই দুষছেন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা।
নগরের আতুরার ডিপো এলাকায় কথা হয় মৌসুমি ব্যবসায়ী মো. শামিমের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমি রাঙ্গুনিয়া থেকে গতকাল ও আজ রবিবার সকাল পর্যন্ত ৩২০টি চামড়া সংগ্রহ করে বিক্রি করতে আতুরার ডিপোতে এনেছি। দুপুর গড়িয়ে বিকাল হলো, আড়তদারদের পেছন পেছন ঘুরেছি। কেউ চামড়ার দাম ৫০ টাকাও দিতে চাইছে না। আমার নাস্তা খরচের টাকাটাও উঠছে না। তাই লোকসান দিয়ে বিক্রি করেছি।
আরেক মৌসুমি ব্যবসায়ী মো. শফিক বলেন, সরকার এবার চামড়ার ভাল দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে। কিন্তু আড়তদাররা সিন্ডিকেট করে ভাল দাম দিয়ে চামড়া কিনছে না। তারা চামড়া নিতে চায় ৫০-১০০ টাকা দরে। অথচ মৌসুমী ব্যবসায়ীদের গাড়ি ভাড়া, নাস্তা খরচ, মজুরি খরচ আছে। আমি ৩০টি চামড়া এনেছি আড়তদারের কাছে বিক্রি করতে। প্রতিটি চামড়া আমার কেনা পড়েছে ২৫০ টাকা। আড়তদার দাম বলছে ৬০ টাকা। অনেকে এতিমখানা, মাদরাসা থেকে চামড়া এনে বিক্রি করতে পারছে না। পাশাপাশি আড়তদাররা ছাগলের চামড়া কিনছেই না। তাই কেউ চামড়া লোকসানে বিক্রি করছে, কেউ মাটিতে পুঁতে ফেলছে, আবার কেউবা ডাস্টবিনে ফেলে দিচ্ছে।
তবে আড়তদাররা বলছেন, চামড়া ঠিকঠাক সংরক্ষণ না করায় ন্যায্যদাম দেওয়া যাচ্ছে না।
বৃহত্তর চট্টগ্রাম কাঁচা চামড়া আড়তদার ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সাবেক সভাপতি মো. মুসলিম উদ্দিন বলেন, চামড়া সংগ্রহ করার পর লবণ দিতে হয়। তাহলে ভাল দাম পাওয়া যায়। কিন্তু মৌসুমি ব্যবসায়ীরা তা না করে চামড়া নষ্ট করে ফেলেন। আবার অনেকে না বুঝে বেশি দাম দিয়ে চামড়া কিনে আনেন। অনেক মৌসুমি ব্যবসায়ী বাড়তি দাম ধরে রেখেছিলেন। অথচ আমরা কিন্তু ৬০০-৭০০ টাকায়ও চামড়া কিনেছি।
কোরবানির ঈদে পশুর চামড়া সংগ্রহের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। এবার ঢাকায় লবণযুক্ত প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়া ৬০ থেকে ৬৫ টাকা, ঢাকার বাইরে লবণযুক্ত প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়ার দাম ৫৫ থেকে ৬০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। এছাড়া সারা দেশে লবণযুক্ত খাসির চামড়া প্রতি বর্গফুট ২২ থেকে ২৭ টাকা দরে বিক্রি হবে ট্যানারিতে। আর বকরির চামড়ার প্রতি বর্গফুটের দাম ২০ থেকে ২২ টাকা নির্ধারণ করা হয়।
২০২২ সালে সাড়ে তিন লাখ, ২০২৩ সালে চার লাখ, ২০২৪ সালে সাড়ে চার লাখ পিস চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত হয়েছিল। এবারও সাড়ে চার লাখ চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছেন আড়তদাররা। এবার লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী চামড়া সংগ্রহ করার আশা করছেন তারা।
তবে চামড়া সংগ্রহে লক্ষ্যমাত্রার হার বাড়লেও কমছে আড়তদারের সংখ্যা। চট্টগ্রাম মহানগরের আতুরার ডিপো এলাকায় চামড়ার আড়তগুলো অবস্থিত।
চট্টগ্রামের কাঁচা চামড়া আড়তদার সমিতির তথ্যমতে, এই সমিতির সদস্যভুক্ত ১১২ জন আড়তদার রয়েছে। সদস্যভুক্ত থাকলেও ২০২২ সালে এই ব্যবসায় জড়িত ছিলেন ৪৫ জন। বর্তমানে চামড়া আড়তদারের সংখ্যা আরও কমে ৩০ জনে ঠেকেছ। তারাই এখন চট্টগ্রামের চামড়ার বাজার নিয়ন্ত্রণ করছেন।
অমিয়/