দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখতে ইফতারে বহুল ব্যবহৃত ২৯টি পণ্যের দাম সরকার নির্ধারণ করে দিয়েছে। কিন্তু রাজশাহীর বাজারে এই নির্দেশনার কোনো প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না। এ বিষয়ে ব্যবসায়ীরা বলছেন, পাইকারি বাজারে দাম কমেনি। আর ক্রেতারা বলছেন, দ্রুত সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।
রাজশাহীর মাস্টারপাড়া কাঁচাবাজারে বাজার করতে এসেছেন মাসুদ রানা। তিনি বলেন, সরকার সব দাম কমিয়ে দিয়েছে। কিন্তু এগুলোর কোনো প্রভাব বাজারে পড়েনি। আগে বাজারে দাম কমলে সেটির প্রভাব পড়ত না। এখনো পড়েনি। তবে দাম বাড়লে সেটি আবশ্যই বেড়ে যেত। আমরা সাধারণ মানুষ। অল্প আয় করি। এভাবে যদি দাম বেড়ে যায় তো আমার হিমশিম খাচ্ছি।
সিরাজুল ইসলাম নামে আরেক ক্রেতা বলেন, ‘সরকার যদি বাজার মনিটরিং করে, তবে খুব দ্রুতই দাম আমাদের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে চলে আসবে। এ জন্য মনিটরিং বাড়াতে হবে।’
ফল বিক্রেতা মিজানুর রহমান বলেন, আমরা যে দামে কিনছি সেই অনুপাতেই বিক্রি করছি। শুক্রবার পেয়ারা কিনেছি ৭০ টাকায়। এরপর সেটি ৭৫ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি করেছি। শনিবার ৬০ টাকা কেজি কিনেছি ৬৫ টাকায় বিক্রি করছি।
সাহেব বাজারে মাংস ব্যবসায়ী জামাল উদ্দিন বলেন, ‘গরু কিনতে যে টাকা লাগে সেই অনুপাতে আমরা বিক্রি করছি। এতে ১০ টাকা লাভ হলেই যথেষ্ট। এখানে গরুর দামতো বাড়তি, আমরা কী করব?’ সরকারের বেঁধে দেওয়া দামে বিক্রি করা সম্ভব নয়।’
সার্বিক বিষয়ে জানতে রাজশাহী জেলা বাজার মনিটরিং কর্মকর্তা আফ্রিন হোসেনের সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। ফলে তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
সরেজমিনে রাজশাহীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, খুচরা বাজারে ছোলা প্রতি কেজি ৯৮ টাকায় বিক্রি করার নির্দেশনা দেওয়া হয়। কিন্তু গতকাল শনিবার সকাল থেকে রাজশাহীর বাজারে ছোলা বিক্রি হচ্ছে ১১০ থেকে ১১৫ টাকা দরে। এদিকে, বাজারে প্রতি কেজি গরুর মাংসের সর্বোচ্চ খুচরা দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৬৬৪ টাকা। এ ছাড়া ছাগলের মাংসের দাম ১ হাজার ৩ টাকা। তবে বাজারে বিক্রি হচ্ছে গরুর মাংস ৭৫০ টাকা কেজি। খাসির মাংস ১০৫০ থেকে ১১০০ টাকায়।
সরকার নির্ধারিত মাছের মধ্যে চাষের পাঙাশ মাছের খুচরা দাম ১৮১ টাকা ও কাতলা মাছের দাম সর্বোচ্চ ৩৫৪ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে এসব মাছের কোনোটিই নির্ধারিত দামে বিক্রি হচ্ছে না। প্রতি কেজি পাঙাশ মাছ বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ টাকায়। কাতল মাছ বিক্রি হচ্ছে ৪৫০ থেকে ৫৫০ টাকা কেজি দরে।
এ ছাড়া, সরকার নির্ধারিত দামে ব্রয়লার মুরগি ১৭৫ টাকা ও সোনালি মুরগি ২৬২ টাকা দরে কিনতে পারবেন ক্রেতারা। তবে বাস্তবে এই দামে কোনো কিছুই মেলেনি। ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা কেজি। আর সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩১০ থেকে ৩২০ টাকা কেজি। এ ছাড়া প্রতি পিস ডিমের দাম সর্বোচ্চ সাড়ে ১০ টাকা নির্ধারিত করা হলেও বাজারে মিলছে ১০৮ টাকা ডজন।
অন্যদিকে, সবজির মধ্যে বাঁধাকপি ও ফুলকপি ৩০ টাকা, প্রতি কেজি বেগুন ও সিম ৫০ টাকা ও আলু সাড়ে ২৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ ছাড়া প্রতি কেজি টমেটো ৪০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ২৪ টাকা খুচরা মূল্য বেঁধে দিয়েছে সরকার। তবে বাজারে বাঁধাকপি ও ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে ৪০-৪৫ টাকায়, বেগুন ও সিম বিক্রি হচ্ছে ৬০-৭০ টাকায়, টমেটো বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা কেজি। মিষ্টি কুমড়া বিক্রি হচ্ছে ৩৫ টাকা কেজি।
অন্যদিকে, বাজারে প্রতি কেজি জাহেদী খেজুর ১৫৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে রাজশাহী বাজারে সর্বনিম্ন খেজুর বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ টাকা থেকে ৪৫০ টাকা কেজি। এ ছাড়া সাগর কলার হালি খুচরায় ৩০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে সেটিও বিক্রি হচ্ছে ৩৬ থেকে ৪০ টাকা হালিতে। এ ছাড়া চিড়ার খুচরা দাম ৬০ টাকা, বেসন ১২১ টাকা বেঁধে দিয়েছে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর। তবে চিড়া বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা আর বেসন বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৮০ টাকা দরে।