
দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিয়ে সংস্কার কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। সে অনুযায়ী সংস্কার কমিশনও গঠন করা হয়েছে। জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস বাংলাদেশ সফরে এসে সরকারের উদ্যোগ নেওয়া এই সংস্কার কর্মসূচির প্রতি পূর্ণ সমর্থন ব্যক্ত করেছেন। গত শুক্রবার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে তার কার্যালয়ে তিনি এক বৈঠকে মিলিত হন। প্রধান উপদেষ্টা গুতেরেসকে জানান, রাজনৈতিক দলগুলো যদি সংক্ষিপ্ত সংস্কার প্যাকেজ নিয়ে একমত হয়, তবে নির্বাচন আগামী ডিসেম্বরেই হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি এও জানান, রাজনৈতিক দলগুলো যদি বৃহৎ সংস্কার প্যাকেজ গ্রহণ করে, সে ক্ষেত্রে নির্বাচন আগামী বছরের জুনে অনুষ্ঠিত হবে। যদিও দেশের বর্তমান অবস্থা খুব একটা ভালো নেই। নারী, শিশু ধর্ষণ ও সামাজিক অপরাধসমূহ মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এখনো ভেতরে ভেতরে গুছিয়ে উঠতে পারেনি। অপরাধীদের হাতে থানা লুটের অস্ত্র এখনো রয়ে গেছে।
আগামী নির্বাচন সামনে রেখে দল পুনর্গঠন-প্রক্রিয়া নিয়ে কাজ করছে রাজনৈতিক দলগুলো। ইতোমধ্যে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) নামে একটি নতুন রাজনৈতিক দল আত্মপ্রকাশ করেছে। দল গোছানো ও নিবন্ধনের শর্ত পূরণে মনোযোগ দিয়েছেন এর নীতিনির্ধারকরা। সরকারের সংস্কার ইস্যুতে জাতিসংঘের মতো আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন থাকলেও এ ক্ষেত্রে দেশের ভেতরে রাজনৈতিক দলগুলোর পূর্ণ সমর্থন থাকা খুবই প্রয়োজন। সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের স্বার্থে দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মতামতকে প্রাধান্য দিতে হবে। সংস্কার ভাবনায় রাজনৈতিক দলগুলো কী চায়, সেটিও রাজনৈতিক দলগুলোকে পরিষ্কার করতে হবে। প্রধান উপদেষ্টা নিজেও সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিতের ব্যাপারে অনেকটাই আশাবাদী। এ জন্য স্থিতিশীলতার স্বার্থে রাজনৈতিক দলগুলোর জাতীয় ঐকমত্য দরকার।
প্রধান উপদেষ্টা জাতিসংঘের মহাসচিব গুতেরেসকে দেশের চলমান সংস্কার-প্রক্রিয়া নিয়ে অবহিত করেছেন। তিনি বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকার ছয়টি সংস্কার কমিশনের রিপোর্টের বিষয়ে ইতোমধ্যে প্রায় ১০টি রাজনৈতিক দল তাদের মতামত জমা দিয়েছে। দলগুলো কমিশনের সুপারিশগুলোর সঙ্গে একমত হলে জুলাই সনদে স্বাক্ষর করবে; যা দেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণের পাশাপাশি রাজনৈতিক, বিচারিক, নির্বাচনসংক্রান্ত, প্রশাসনিক, দুর্নীতি দমন এবং পুলিশ সংস্কারের একটি রূপরেখা হবে। ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকে জাতিসংঘ মহাসচিব ড. ইউনূসকে বলেন, 'আমি সংস্কার কর্মসূচির প্রতি আমাদের সম্পূর্ণ প্রতিশ্রুতি প্রকাশ করতে চাই।' তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, বাংলাদেশের এই সংস্কার-প্রক্রিয়া একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন এবং দেশের একটি বাস্তব রূপান্তর নিশ্চিত করবে। যদিও সংস্কার-প্রক্রিয়াটি জটিল হতে পারে। অর্থাৎ অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার পদক্ষেপে পাশে থাকবে জাতিসংঘ।
দেশের চলমান পরিস্থিতিতে জাতিসংঘ মহাসচিবের আগমন সংকট নিরসনে বড় ভূমিকা রাখবে। অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার ও নির্বাচন-প্রক্রিয়া নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে তিনি স্পষ্ট ধারণা পেয়েছেন। এ ক্ষেত্রে তিনি পূর্ণ সমর্থনও ব্যক্ত করেছেন। এ ছাড়া তিনি রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তায় বিশ্ববাসীকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন। যা খুবই ইতিবাচক। আশা করছি, অন্তর্বর্তী সরকার দেশের স্থিতিশীলতার স্বার্থে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামতকে প্রাধান্য দিয়ে একটি জাতীয় ঐকমত্য সৃষ্টি করতে সক্ষম হবে।