ঢাকা ৫ বৈশাখ ১৪৩২, শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৫
English
শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৫, ৫ বৈশাখ ১৪৩২

সংস্কারে সমর্থন জাতিসংঘের স্থিতিশীলতার স্বার্থে জাতীয় ঐকমত্য প্রয়োজন

প্রকাশ: ১৬ মার্চ ২০২৫, ০৩:৩৯ পিএম
আপডেট: ১৬ মার্চ ২০২৫, ০৩:৪১ পিএম
স্থিতিশীলতার স্বার্থে জাতীয় ঐকমত্য প্রয়োজন

দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিয়ে সংস্কার কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। সে অনুযায়ী সংস্কার কমিশনও গঠন করা হয়েছে। জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস বাংলাদেশ সফরে এসে সরকারের উদ্যোগ নেওয়া এই সংস্কার কর্মসূচির প্রতি পূর্ণ সমর্থন ব্যক্ত করেছেন। গত শুক্রবার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে তার কার্যালয়ে তিনি এক বৈঠকে মিলিত হন। প্রধান উপদেষ্টা গুতেরেসকে জানান, রাজনৈতিক দলগুলো যদি সংক্ষিপ্ত সংস্কার প্যাকেজ নিয়ে একমত হয়, তবে নির্বাচন আগামী ডিসেম্বরেই হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি এও জানান, রাজনৈতিক দলগুলো যদি বৃহৎ সংস্কার প্যাকেজ গ্রহণ করে, সে ক্ষেত্রে নির্বাচন আগামী বছরের জুনে অনুষ্ঠিত হবে। যদিও দেশের বর্তমান অবস্থা খুব একটা ভালো নেই। নারী, শিশু ধর্ষণ ও সামাজিক অপরাধসমূহ মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এখনো ভেতরে ভেতরে গুছিয়ে উঠতে পারেনি। অপরাধীদের হাতে থানা লুটের অস্ত্র এখনো রয়ে গেছে। 

আগামী নির্বাচন সামনে রেখে দল পুনর্গঠন-প্রক্রিয়া নিয়ে কাজ করছে রাজনৈতিক দলগুলো। ইতোমধ্যে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) নামে একটি নতুন রাজনৈতিক দল আত্মপ্রকাশ করেছে। দল গোছানো ও নিবন্ধনের শর্ত পূরণে মনোযোগ দিয়েছেন এর নীতিনির্ধারকরা। সরকারের সংস্কার ইস্যুতে জাতিসংঘের মতো আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন থাকলেও এ ক্ষেত্রে দেশের ভেতরে রাজনৈতিক দলগুলোর পূর্ণ সমর্থন থাকা খুবই প্রয়োজন। সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের স্বার্থে দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মতামতকে প্রাধান্য দিতে হবে। সংস্কার ভাবনায় রাজনৈতিক দলগুলো কী চায়, সেটিও রাজনৈতিক দলগুলোকে পরিষ্কার করতে হবে। প্রধান উপদেষ্টা নিজেও সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিতের ব্যাপারে অনেকটাই আশাবাদী। এ জন্য স্থিতিশীলতার স্বার্থে রাজনৈতিক দলগুলোর জাতীয় ঐকমত্য দরকার। 

প্রধান উপদেষ্টা জাতিসংঘের মহাসচিব গুতেরেসকে দেশের চলমান সংস্কার-প্রক্রিয়া নিয়ে অবহিত করেছেন। তিনি বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকার ছয়টি সংস্কার কমিশনের রিপোর্টের বিষয়ে ইতোমধ্যে প্রায় ১০টি রাজনৈতিক দল তাদের মতামত জমা দিয়েছে। দলগুলো কমিশনের সুপারিশগুলোর সঙ্গে একমত হলে জুলাই সনদে স্বাক্ষর করবে; যা দেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণের পাশাপাশি রাজনৈতিক, বিচারিক, নির্বাচনসংক্রান্ত, প্রশাসনিক, দুর্নীতি দমন এবং পুলিশ সংস্কারের একটি রূপরেখা হবে। ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকে জাতিসংঘ মহাসচিব ড. ইউনূসকে বলেন, 'আমি সংস্কার কর্মসূচির প্রতি আমাদের সম্পূর্ণ প্রতিশ্রুতি প্রকাশ করতে চাই।' তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, বাংলাদেশের এই সংস্কার-প্রক্রিয়া একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন এবং দেশের একটি বাস্তব রূপান্তর নিশ্চিত করবে। যদিও সংস্কার-প্রক্রিয়াটি জটিল হতে পারে। অর্থাৎ অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার পদক্ষেপে পাশে থাকবে জাতিসংঘ।

দেশের চলমান পরিস্থিতিতে জাতিসংঘ মহাসচিবের আগমন সংকট নিরসনে বড় ভূমিকা রাখবে। অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার ও নির্বাচন-প্রক্রিয়া নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে তিনি স্পষ্ট ধারণা পেয়েছেন। এ ক্ষেত্রে তিনি পূর্ণ সমর্থনও ব্যক্ত করেছেন। এ ছাড়া তিনি রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তায় বিশ্ববাসীকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন। যা খুবই ইতিবাচক। আশা করছি, অন্তর্বর্তী সরকার দেশের স্থিতিশীলতার স্বার্থে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামতকে প্রাধান্য দিয়ে একটি জাতীয় ঐকমত্য সৃষ্টি করতে সক্ষম হবে।

গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি শিল্প খাতের অস্থিরতা দূর করুন

প্রকাশ: ১৭ এপ্রিল ২০২৫, ০৪:১৫ পিএম
গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি
শিল্প খাতের অস্থিরতা দূর করুন

গত রবিবার গ্যাসের নতুন দাম ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। দেশের শিল্প খাতে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাসের সরবরাহ নিশ্চিত করার কথা থাকলেও নতুন করে দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্তে এ খাত এখন কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। এতে ব্যবসা-বাণিজ্য-বিনিয়োগ সব ক্ষেত্রেই খরচ বহুগুণ বাড়বে। এমনিতেই বছরখানেক ধরে ডলারসংকটের ফাঁদে আটকে আছে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য। কিছুদিন ধরে ভোক্তা ও ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের তীব্র আপত্তির পরও বাড়ানো হলো গ্যাসের দাম। নতুন শিল্পের ক্ষেত্রে এই দাম বেড়েছে ৩৩ শতাংশ। ফলে শিল্পে প্রতি ইউনিটে ১০ টাকা বাড়তি দিতে হবে। পুরোনো শিল্পগ্রাহকদেরও কিছু ক্ষেত্রে নতুন দাম পরিশোধ করতে হবে। অনুমোদিত লোডের বাইরে অতিরিক্ত ব্যবহারে দিতে হবে বাড়তি এই দাম। যারা গ্যাস সংযোগের প্রতিশ্রুতি পেয়েছেন, তাদের অনুমোদিত লোডের ৫০ শতাংশ পর্যন্ত আগের দাম দিতে হবে। এর বেশি ব্যবহারে দিতে হবে বাড়তি দাম। 

দাম বাড়ানোয় সরকার কত টাকা বাড়তি আয় করবে তা জানে না কমিশন। শিল্প খাতের সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, এই সিদ্ধান্ত ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’। দাম বাড়ানোয় নতুন শিল্প-বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত হবে। খরচ বাড়ার আশঙ্কায় পুরোনো শিল্পেও আশানুরূপ বিনিয়োগ বাড়বে না।  বিশ্লেষকরা মনে করেন, গ্যাসের দাম বাড়ানোয় গোটা শিল্প খাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে, যা অর্থনীতির গতি কমাবে।

গ্যাসের এমন মূল্যবৃদ্ধি বিনিয়োগের পরিবেশকেও ক্ষতিগ্রস্ত করবে। নতুন শিল্প স্থাপনের সম্ভাবনা কমবে এবং বিদ্যমান বিনিয়োগকারীদের ব্যবসা পরিচালনায় বাধা সৃষ্টি করবে। রপ্তানিমুখী শিল্প খাত ক্ষতিগ্রস্ত হবে সবচেয়ে বেশি। কারণ এ খাতগুলো মূলত গ্যাসনির্ভর। ছোট ও মাঝারি শিল্প বেশি ক্ষতির মুখে পড়বে। বৈশ্বিক বাজারে বাংলাদেশের প্রতিযোগিতামূলক অবস্থানকে দুর্বল করে তুলবে।

গ্যাসের দাম বাড়ানোয় শিল্প ও ব্যবসাসংশ্লিষ্ট সবাই অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছেন। কর্মসংস্থান ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য নতুন নতুন শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা দরকার। কিন্তু গ্যাসের দাম বৃদ্ধির ফলে বর্তমানে সচল অনেক শিল্পপ্রতিষ্ঠান অচল হয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। পরিস্থিতি এমন দাঁড়াতে পারে যে, কেউ আর হয়তো নতুন শিল্প প্রতিষ্ঠায় আগ্রহী হতে চাইবে না।

বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন ঘোষিত গ্যাসের নতুন মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সংগঠন ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তাদের মতে, নতুন গ্রাহক, প্রতিশ্রুত গ্রাহক ও বিদ্যমান গ্রাহকদের জন্য আলাদাভাবে গ্যাসের এই মূল্যবৃদ্ধি গ্রহণযোগ্য নয়। 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশ সরকার যখন দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে, তখন গ্যাসের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত শিল্প স্থাপনে বিনিয়োগকারীদের নিরুৎসাহিত করবে। ভবিষ্যতের বিনিয়োগকেও ঝুঁকির মধ্যে ফেলবে। সরকার যখন ইনভেস্টমেন্ট সামিটের মতো ইতিবাচক পদক্ষেপের মাধ্যমে বিনিয়োগ এবং কর্মসংস্থান বৃদ্ধির কথা ভাবছে, তখন গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি তাতে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। গ্যাসের দাম বাড়ার কারণে পণ্যমূল্যও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এতে ভোক্তারা মূল্যবৃদ্ধির বাড়তি চাপে পড়তে পারে।

অর্থনীতিকে গতিশীল রাখা, নতুন শিল্পকারখানা স্থাপন এবং শিল্প খাতকে সচল রাখার স্বার্থে গ্যাসের দাম কমানোর কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি। আশা করছি, সরকার গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করে দেখবে।

পরিবার ও সমাজে নৃশংসতা বাড়ছে  নৈতিক মূল্যবোধের চর্চা বাড়াতে হবে

প্রকাশ: ১৬ এপ্রিল ২০২৫, ০২:১৪ পিএম
পরিবার ও সমাজে নৃশংসতা বাড়ছে 
নৈতিক মূল্যবোধের চর্চা বাড়াতে হবে

সম্প্রতি দেশে আকস্মিকভাবে বেড়েছে অপরাধমূলক ঘটনা। লোভ-লালসা, নারী ও সম্পত্তি নিয়ে বিরোধসহ বিভিন্ন নৃশংস ঘটনা ঘটেই চলেছে। আকস্মিকভাবে পারিবারিক ও সামাজিক হত্যাকাণ্ড বেড়ে যাওয়ার পেছনে বেশ কিছু কারণও রয়েছে বলে মনে করছেন অপরাধ বিশ্লেষকরা। এসব হত্যাকাণ্ড আগেও ঘটেছে, এখনো ঘটছে, ভবিষ্যতেও ঘটবে। তবে উদ্বেগজনক হারে বেড়ে যাওয়াটা সমাজের জন্য ভালো কোনো বার্তা নয়। এমনিতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এখনো স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরেনি। তা ছাড়া অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিও চোখে পড়ছে না। সবকিছু মিলিয়ে মানুষের মধ্যে অপরাধপ্রবণতা বাড়ছে। এসব অপরাধ বাড়ছে পারিবারিক কলহের জেরে। সন্তান খুন করছে জন্মদাতা বাবাকে। স্বামীর হাতে স্ত্রী খুন হচ্ছে অথবা স্ত্রীর হাতে স্বামী।

 গত কয়েক দিনে এ ধরনের বেশ কিছু পারিবারিক নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটেছে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায়। আইনশৃঙ্খলার দুর্বলতা বা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির অভাব এসব ঘটনা বৃদ্ধির জন্য কোনোভাবে দায়ী কি না, জানতে চাইলে সাবেক আইজিপি মোহাম্মদ নুরুল হুদা বলেন, এর কিছুটা প্রভাব হয়তো পড়ে। কিন্তু সেটিই প্রধান বা অন্যতম কারণ নয়। এর সঙ্গে পারিবারিক ও সামাজিকব্যবস্থা, বিশেষ করে প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনার অভাব, পারিবারিক শিক্ষার অভাব, সাংসারিক অভাব-অনটনসহ নানা ধরনের বিষয় থেকে চিন্তাভাবনার পরিবর্তন ঘটে থাকে। সেখান থেকেই হিংস্রতা-নৃশংসতা বেশি ঘটে। হঠাৎ করেই মানুষের মনোজগতের পরিবর্তন ঘটেছে। আর এই পরিবর্তন বেশির ভাগই নেতিবাচক। কামনা-বাসনা, চাহিদা অতিমাত্রায় পোষণ করছে মানুষ। এর সবকিছুই যে পূর্ণ হবে তা নয়। এর কোনোটির ব্যত্যয় দেখা দিলে ভয়ানক কোনো ঘটনা ঘটিয়ে ফেলছে তারা। ইন্টারনেটভিত্তিক গেম আসক্তিতেও ভুগছে অনেকে। এটি ক্রমাগত অপরাধের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। গত ২২ মার্চ রাতে চুয়াডাঙ্গায় নামাজরত বাবাকে কুপিয়ে হত্যা করে ছেলে। কারণ, গেমে আসক্ত ছেলের হাত থেকে মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়েছে। এ জাতীয় বেশ কিছু ঘটনা সম্প্রতি সমাজ ও পরিবারে উদ্বেগ বাড়িয়েছে বলে জানিয়েছেন বিশ্লেষকরা। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ড. তৌহিদুল হক খবরের কাগজকে বলেন, নানা পারিপার্শ্বিকতায় বর্তমানে সমাজ ও পরিবারে এক ধরনের অস্থিরতা বিরাজ করছে। মানুষের ধৈর্য কমে গেছে। মানবিক মূল্যবোধ কমে গেছে। অন্যদিকে বেড়েছে লোভ আর হিংসা। এসব কারণে একশ্রেণির মানুষ অনেক কিছুই সহজে মেনে নিতে পারেন না। ফলে ঘটছে হত্যার মতো নৃশংস সব ঘটনা। এ জাতীয় ঘটনা শুধু আইন বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে ঠেকানো সম্ভব নয়। এর জন্য সামাজিক, পারিবারিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধের সঠিক চর্চাও খুব জরুরি।

এমন পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে পরিবার ও সমাজের দায় রয়েছে। ধর্মীয় নৈতিকতার শিক্ষা, সামাজিক ও পারিবারিক শিক্ষার চর্চা বাড়াতে হবে। সন্তানদের মানসিক বিকাশে কাউন্সেলিং করা জরুরি, যা উন্নত দেশগুলোতে হয়ে থাকে। সন্তানদের খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। পারিবারিক বন্ধন মজবুত করতে পারস্পরিক সম্মানবোধ থাকতে হবে। সেই সঙ্গে মতপ্রকাশের স্বাধীনতাও থাকতে হবে। পারিবারিক ও সামাজিক এমন নৃশংস অপরাধের বিরুদ্ধে সামাজিক সচেতনতা বাড়াতে পদক্ষেপ নিতে হবে। এ বিষয়গুলো নিশ্চিত করা গেলে নৃশংসতা অনেকটাই কমে আসবে। সর্বোপরি নৈতিক মূল্যবোধের চর্চা বাড়িয়ে এসব অপরাধের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।

বাংলা নববর্ষ ১৪৩২ সর্বজনীন সংহতির বোধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার দিন

প্রকাশ: ১৫ এপ্রিল ২০২৫, ১১:৩৭ এএম
বাংলা নববর্ষ ১৪৩২
সর্বজনীন সংহতির বোধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার দিন

বর্ষপরিক্রমায় আবার এসেছে নতুন বছর। আজ সেই নতুন বছরের প্রথম দিন। রবীন্দ্রনাথের একটা গান আছে, ‘এসো, এসো হে বৈশাখ।’ এই যে আবাহন, এর ভেতর দিয়েই আমাদের প্রাণের আর্তিটুকু বোঝা যায়। জীবন ও প্রাণের এই আবাহন-গীতে বাঙ্ময় হয়ে উঠেছে নতুন দিনটি। নতুন বছরে ব্যর্থ প্রাণের আবর্জনা থেকে মুক্ত হওয়াই হোক আমাদের লক্ষ্য।

আজ দেশের ক্রান্তিলগ্নে চতুর্দিকে পরিব্যাপ্ত হয়ে আছে সামাজিক জরা। আমরা ব্যক্তিগত, রাষ্ট্রীয় ও বৈশ্বিকভাবে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছি নানান সংকটে। নতুন বছর এই মালিন্য থেকে আমাদের মুক্তি দেবে, এ রকম প্রত্যাশা থেকেই রবীন্দ্রবাণীতে উচ্চারিত হয়েছে, ‘তাপস নিশ্বাস বায়ে মুমূর্ষুরে দাও উড়ায়ে।’ আমাদের সম্মিলিত প্রাণের দাবি এতেই নিহিত রয়েছে। যা কিছু জীর্ণ, যা কিছু ব্যর্থ, তাতে প্রাণ সঞ্চার করতে হবে। বাংলা নববর্ষের প্রথম দিনটি সেই আর্তি নিয়েই উপস্থিত হয়েছে। 

বাংলা নববর্ষ বাঙালির সর্বজনীন জাতীয় উৎসব, অসাম্প্রদায়িক উৎসব। পয়লা বৈশাখ বাঙালির সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক আত্মপরিচয়ের উদযাপন এবং উপলব্ধির উৎসব। ১৫৫৬ সালে মুঘল সম্রাট আকবরের আদেশে তার রাজস্ব কর্মকর্তা ফতেহ উল্লাহ সিরাজী ‘সৌর সন’ এবং আরবি ‘হিজরি’ অব্দের ওপর ভিত্তি করে নতুন বাংলা সন তৈরি করেন। ঐতিহাসিকদের মতে, আকবরের রাজ্যাভিষেকের সূচনাবর্ষ থেকে বঙ্গাব্দের গণনা শুরু হয়। সেই হিসাবে বঙ্গাব্দের রয়েছে মিলিত ঐতিহ্য, যা  সর্বজনীন। জাতি-ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে এই দিনটি আমরা সবাই পালন করে থাকি। পয়লা বৈশাখ তাই একটি তারিখমাত্র নয়; জাতিগত ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিতে উদ্বোধিত হওয়ার দিন। এই দিনে আমাদের জাতিসত্তার বিষয়টিও আমরা নতুন করে স্মরণ করতে পারি।

পাকিস্তানি শাসনপর্বে বাঙালির সংস্কৃতিকে যখন মুছে দেওয়ার চেষ্টা হয়, তখনই ছায়ানট রমনার বটমূলে এই পরিচয়কে সামনে নিয়ে আসে। পয়লা বৈশাখ উদযাপনের মধ্য দিয়েই সাংস্কৃতিক উজ্জীবনের ধারাবাহিকতায় ‘বাঙালি’ আত্মপরিচয়ের প্রতিষ্ঠা ঘটে; পরে যা বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ফলে বাংলা নববর্ষকে ঘিরে কোনো বিতর্ক গ্রহণযোগ্য হতে পারে না; অনাকাঙ্ক্ষিত কোনো ঘটনাও নয়। 

সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় উৎসবমুখর পরিবেশে ও সাড়ম্বরে বাংলা নববর্ষ উদযাপনের নির্দেশনা পাঠিয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হবে ‘নববর্ষ আনন্দ শোভাযাত্রা’। ইউনেসকোর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হিসেবে এটি ইতোপূর্বে ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ শিরোনামে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। সমতলের পাশাপাশি পার্বত্য অঞ্চলেও বৈসু, সাংগ্রাই বা বিজু নামে নববর্ষ উদযাপিত হবে। নিরাপত্তার ব্যবস্থাও গ্রহণ করেছে সরকার। 

আমরা আশা করছি, এভাবে আজ আনন্দমুখর পরিবেশে সবার মানসলোকে দেশগত ঐক্যের যে সুর ধ্বনিত হবে, আসন্ন দিনগুলোতে তা বাংলাদেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নেবে। দূর হয়ে যাবে সর্বব্যাপী দুর্নীতি, উদগ্র প্রদর্শনপ্রিয়তা, আত্মঘাতী হানাহানি, অন্তঃসারশূন্য কলহ, অনাকাঙ্ক্ষিত বিভাজন। 
দেশ এখন ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। এ সময়ে আরোপিত মঙ্গলভাবনা নয়, অন্তর থেকে জাগ্রত হোক আত্মশক্তির সংহতি। দেশের প্রতিটি সচেতন ও সুচেতন মানুষের এই হোক প্রত্যয়দীপ্ত ক্রমমুক্তির শপথ।
নববর্ষ উপলক্ষে লেখক, পাঠক, শুভানুধ্যায়ী সবাইকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।

তীব্র হচ্ছে বৈশ্বিক বাণিজ্যযুদ্ধ  ব্যবসা সহজীকরণে কার্যকর পদক্ষেপ নিন

প্রকাশ: ১৩ এপ্রিল ২০২৫, ০৩:৪৮ পিএম
তীব্র হচ্ছে বৈশ্বিক বাণিজ্যযুদ্ধ 
ব্যবসা সহজীকরণে কার্যকর পদক্ষেপ নিন

যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের বাণিজ্যযুদ্ধের কারণে বৈশ্বিক বাজারে তৈরি হয়েছে অস্থিরতা। পাল্টাপাল্টি শুল্ক আরোপের মাধ্যমে একে অপরকে ঘায়েল করার লড়াইয়ে নেমেছে বিশ্বের বৃহত্তর দুই অর্থনীতির দেশ চীন ও আমেরিকা। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চীনা পণ্যের ওপর ১৪৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের পর যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের ওপর শুল্ক বাড়িয়ে ১২৫ শতাংশ করেছে বেইজিং। চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের এমন বাণিজ্যযুদ্ধ বাংলাদেশসহ প্রতিযোগী দেশগুলোর সামনে নতুন সুযোগ নিয়ে আসতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। অন্য দেশগুলোর ওপর আরোপ করা পাল্টা শুল্ক ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করলেও বিশ্ববাণিজ্যের বড় প্রতিদ্বন্দ্বী চীনের ওপর শুল্ক বাড়িয়ে কোণঠাসা করতে তৎপর ডোনাল্ড ট্রাম্প। এরই প্রেক্ষিতে শুল্কযুদ্ধের আবহে প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করতে কৌশলী হয়েছে বেইজিং।
 
চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টাপাল্টি শুল্ক আরোপের মধ্যে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য কেন্দ্র (আইটিসি) জানিয়েছে, চলমান শুল্কযুদ্ধে বৈশ্বিক বাণিজ্য ৩ থেকে ৭ শতাংশ কমে যেতে পারে। বৈশ্বিক জিডিপি কমতে পারে শূন্য দশমিক ৭ শতাংশ। পাল্টাপাল্টি শুল্ক আরোপ উন্নয়নশীল দেশগুলোর অর্থনীতির জন্য মারাত্মক হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বিশ্বের বৃহত্তম দুই দেশের এই বাণিজ্যযুদ্ধ বিশ্বজুড়ে ভয়াবহ অবস্থায় ফেলে দিয়েছে। এর প্রভাবে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ ও এশিয়ার পুঁজিবাজারগুলোর সূচকে পতন শুরু হয়েছে। পতনশীল বাজারে বিনিয়োগকারী ও বেশির ভাগ কোম্পানি মুনাফা হারাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের পাল্টাপাল্টি শুল্ক আরোপের প্রবণতা পণ্যের চাহিদা কমিয়ে দাম বাড়িয়ে দেবে। 

এ ছাড়া ডলারের দাম ৩ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে চলে গেছে। অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তায় স্বর্ণের দাম সর্বকালের সর্বোচ্চ পর্যায়ে উঠে গেছে। বাণিজ্যযুদ্ধের এমন এক পরিস্থিতিতে জাতিসংঘের বাণিজ্য সংস্থার পরিচালক রেবেকা গ্রিনস্প্যান বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, পাল্টাপাল্টি শুল্ক আরোপ উন্নয়নশীল দেশগুলোর ওপর ‘বিপর্যয়কর প্রভাব’ ফেলতে পারে, যার কারণে দেশগুলো বিদেশি সহায়তা বন্ধের চেয়ে বড় ধাক্কা খেতে পারে।

নতুন শুল্কনীতি ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। পাল্টা শুল্ক স্থগিত করায় বাংলাদেশসহ ৭৫টি দেশ সুবিধা পাচ্ছে। বাংলাদেশের অর্থনীতিবিদ ও রপ্তানিকারকরা বলছেন, উচ্চ শুল্কের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে অধিকাংশ পণ্যে চীনের প্রতিযোগিতার সক্ষমতা থাকবে না। ফলে চীন থেকে যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতাপ্রতিষ্ঠান ক্রয়াদেশ সরাবে। সঙ্গে বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ স্থানান্তরিত হবে। যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের বাণিজ্যযুদ্ধের কারণে বৈশ্বিক বাজারে মন্দাভাব থাকবে এতে করে স্বল্প মেয়াদে পণ্যের চাহিদা কমে যেতে পারে। তবে মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদে বাংলাদেশের জন্য সোনালি সময় আসবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

 বাংলাদেশের দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ লাগবে চীনের ব্যবসা নিতে হলে। এ জন্য ব্যবসা সহজীকরণের উপায় খুঁজে বের করতে হবে। সরকারকে এ ক্ষেত্রে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। বিনিয়োগ নেওয়ার ক্ষেত্রগুলোতে যেমন বিশেষায়িত পোশাক, কৃত্রিম তন্তু, ইলেকট্রনিকস, জুতা, খেলনাসামগ্রীর উৎপাদনে অগ্রাধিকার দেওয়া দরকার। তবে তার আগে পাল্টা শুল্ক থেকে রেয়াত পেতে কূটনৈতিক কৌশলের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলাপ-আলোচনায় গুরুত্ব দিতে হবে।

বিনিয়োগ সম্মেলনের তাৎপর্য  অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করুন

প্রকাশ: ১৩ এপ্রিল ২০২৫, ১১:১৪ এএম
বিনিয়োগ সম্মেলনের তাৎপর্য 
অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করুন

দেশে বেশ কিছুদিন ধরে চলছে বিনিয়োগ খরা। এ সমস্যা দূর করতে অন্তর্বর্তী সরকার জোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। গত ৭ এপ্রিল শুরু হওয়া চার দিনের বাংলাদেশ বিনিয়োগ সম্মেলন এই প্রচেষ্টারই অংশ। বাংলাদেশ বিনিয়োগ বোর্ডের (বিডা) আয়োজনে চার দিনব্যাপী বাংলাদেশ বিনিয়োগ সম্মেলন-২০২৫ গত বৃহস্পতিবার শেষ হয়েছে। দেশের ইতিহাসে এবারই প্রথম যুক্তরাষ্ট্র, চীন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, নেদারল্যান্ডস, জার্মানিসহ ৪০টি দেশের সাড়ে ৪০০ খ্যাতনামা বিনিয়োগকারী এতে অংশ নেন। পাশাপাশি দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়িক নির্বাহী এবং নীতিনির্ধারকরাও এতে অংশ নেন। এরই মধ্যে বিভিন্ন দেশের বিখ্যাত বিনিয়োগকারী কোম্পানির শীর্ষ নীতিনির্ধারকরা বাংলাদেশে বিনিয়োগের ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। 

কেউ কেউ একধাপ এগিয়ে বিনিয়োগ চুক্তি এবং সমঝোতা স্মারক সই করেছেন। দেশের ক্রমবর্ধমান বিনিয়োগের সুযোগ এবং অর্থনৈতিক সংস্কার তুলে ধরা হয় এই সম্মেলনের মাধ্যমে। বাংলাদেশে বিনিয়োগের সম্ভাবনা, জুলাই বিপ্লবের পর অর্থনৈতিক সংস্কারকে তুলে ধরা এবং টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের পাইপলাইন তৈরির লক্ষ্যে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন বাংলাদেশে ব্যবসা এবং বিনিয়োগের সম্ভাবনা নিয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। সম্মেলনে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যবসার জন্য সেরা জায়গা।’ গত মঙ্গলবার ঢাকার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করেছে ইয়াংওয়ান করপোরেশনের চেয়ারম্যান কিহাক সাংয়ের নেতৃত্বে কোরিয়ার বিনিয়োগকারীদের একটি প্রতিনিধিদল। দক্ষিণ কোরিয়ার বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ করতে প্রস্তুত রয়েছেন। 

বাংলাদেশ বিনিয়োগ সম্মেলন ২০২৫-এ বাংলাদেশে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা নানা চ্যালেঞ্জের কথা বলেছেন। তারা বলছেন, এ দেশের দুর্নীতি, সরকারি সেবা অপর্যাপ্ত, আর্থিক খাতে প্রবেশে বাধা, বিদ্যুতের সমস্যা এবং উচ্চ করহারের সমস্যা রয়েছে। বিনিয়োগ বাড়াতে কাজ করছে এমন বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানকে ঢেলে সাজানো খুবই জরুরি। স্থানীয় বিনিয়োগকারীরাও সম্মেলন নিয়ে অনেকটা আশাবাদী। তারা বলছেন, দেশে অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিত না হলে সম্মেলনের সুফল আসবে না। অর্থনীতির বিশ্লেষকরা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে বিনিয়োগের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়েছে, এগুলো দূর করতে হবে, তবেই বিদেশি বিনিয়োগ বাড়বে। বিনিয়োগ সম্মেলনে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অংশ নিয়েছিল বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপি। বিভিন্ন প্যানেল আলোচনায় দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরা তাদের কাছে নানা বিষয়ে প্রশ্ন রেখেছেন। দলগুলো তাদের পরিকল্পনা তুলে ধরেছে। 

বিনিয়োগ সম্মেলনের মাধ্যমে দেশে বিনিয়োগ কেন কম হচ্ছে এবং কীভাবে ব্যবসায়ীরা এ দেশে আরও বিনিয়োগে উৎসাহী হতে পারেন, সে ব্যাপারে আলোচনার সুযোগ তৈরি হবে। বাংলাদেশের মতো দেশের জন্য বিদেশি বিনিয়োগের কোনো বিকল্প নেই। তরুণ প্রজন্মের সার্বিক কর্মসংস্থানের জন্য এ ধরনের সম্মেলনের প্রয়োজনীয়তাও অস্বীকার্য। যত বিদেশি বাংলাদেশের ব্যাপারে উৎসাহ প্রকাশ করবেন, দেশের জন্য তত বেশি মঙ্গল। দেশে দীর্ঘদিনের মন্দার মধ্যে ইনভেস্টমেন্ট সামিট-২০২৫ কিছুটা আশার বার্তা বয়ে এনেছে। এটি বিনিয়োগ পরিবেশকে আধুনিক ও বিনিয়োগবান্ধব করার একটি সুযোগ তৈরি করতে পারে। পাশাপাশি স্থানীয় উদ্যোক্তাদের জন্য এটি বিদেশি অংশীদারত্ব ও প্রযুক্তি স্থানান্তরে সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে। এর পূর্ণাঙ্গ সুবিধা পেতে হলে নীতিগত ধারাবাহিকতা এবং অবকাঠামোগত দুর্বলতাগুলো দূর করতে পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। 

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান খবরের কাগজকে বলেন, অনেক দিন ধরে দেশে বিনিয়োগ হয়েও হচ্ছে না। বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর দেশে বিনিয়োগ বাড়াতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ হলো এবারের বিনিয়োগ সম্মেলন। এ সম্মেলনে দেশের বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সেতুবন্ধ রচনা হবে। বিনিয়োগের অন্যতম বাধা জ্বালানিসংকট দূর করতে হবে। রাজস্ব, মুদ্রা, আমদানি, রপ্তানি নীতিসহায়তা বিনিয়োগবান্ধব করতে হবে। তবেই এসব সম্মেলনের সুফল পাওয়া যাবে। 
বিনিয়োগ সম্মেলন দেশে বিনিয়োগ বাড়াতে সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ।

 বাংলাদেশের বিনিয়োগ পরিবেশ নিয়ে যে নেতিবাচক ধারণা রয়েছে, তা থেকে বিনিয়োগকারীকে নতুন ধারণা দিতে সম্মেলনের আয়োজকদের আপ্রাণ চেষ্টা ছিল। এই উদ্যোগটির সফলতা নির্ভর করবে দেশে বিনিয়োগের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টির মাধ্যমে। সে জন্য সরকারকে বিনিয়োগের প্রতিবন্ধকতা দূর করতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ানোর পাশাপাশি স্থানীয় বিনিয়োগ বাড়াতেও পদক্ষেপ নিতে হবে।