ঠাকুরগাঁওয়ে পাপোশ বানিয়ে স্বাবলম্বী হয়েছেন নারী উদ্যোক্তা সামসাদ আক্তার। কঠোর পরিশ্রমে পাল্টে গেছে তার জীবনচিত্র। একদম জিরো থেকে হিরো বনে গেছেন। এলাকার বেকার নারীদের তিনি এখন আইডল। করেছেন ৪০০ শ্রমিকের কর্মসংস্থান।
ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার বিশ্রামপুর গ্রামের বাসিন্দা সামসাদ আক্তার। স্বাবলম্বী হওয়ার প্রত্যাশায় ২০০৮ সালে বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ড (বিআরডিবি) বালিয়াডাঙ্গী ঠাকুরগাঁও থেকে প্রশিক্ষণ ও ঋণ নিয়ে ৬টি মেশিন ও কিছু সুতা কিনে স্বামীর সহযোগিতায় পাপোশ তৈরির কারখানা দিয়ে কাজ শুরু করেন।
বিআরডিবি থেকে মাত্র ১০ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে তৈরি করা সে কারখানা থেকে বর্তমানে তিনি কোটিপতি। নিজে স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি সামসাদ আক্তার এলাকার অনেক বেকার যুবক ও নারীদের কর্মসংস্থান করেছেন।
মো. হযরত আলীর সঙ্গে বিয়ে হওয়ার পর থেকেই সামসাদ আক্তারের সংসারে লেগে ছিল অভাব অনটন। খেয়ে না খেয়ে কোনোরকমে দিনাতিপাত করতেন তারা। সংসারে কীভাবে অভাব থেকে মুক্ত হওয়া যায় এবং স্বামীর পাশাপাশি বাড়তি কিছু করে আয় করা যায় সেই চিন্তায় মগ্ন থাকতেন তিনি। এরপরে তিনি সিদ্ধান্ত নেন একটি পাপোশ তৈরির কারখানা দেবেন। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ীই নেন প্রশিক্ষণ। এ ছাড়া বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ড থেকে ঋণ নেন তিনি। এরপর সেই ঋণের টাকা দিয়ে শুরু করেন পাপোশ তৈরির কারখানার কাজ। তিনি বাড়িতে থেকে পাপোশ তৈরি করার কাজকর্ম দেখাশোনা করতেন আর স্বামী তা বাজারে বিক্রি করতে সাহায্য করতেন। এভাবেই ধীরে ধীরে তাদের ব্যবসার পরিধি বাড়তে থাকে। ছয়টি মেশিন দিয়ে শুরু করা পাপোশ কারখানায় বর্তমানে রয়েছে ৩০০টি মেশিন। তার কারখানাটিতে এখন শুধু পাপোশ নয়, তৈরি হচ্ছে ফ্লোরম্যাট, শতরঞ্জি, কার্পেট, ওয়ালম্যাট, ট্যাপেস্টিক ও টেবিলম্যাট। তার তৈরি এসব পণ্য এখন যাচ্ছে আড়ং, আরএফএলসহ বিভিন্ন ব্র্যান্ড শপে। শুধু তাই নয়, এসব পণ্য যাচ্ছে দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশের মাটিতেও। তার স্বপ্ন কারখানাটি একদিন গড়ে উঠবে আধুনিক হিসেবে। আরও অনেক মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি হবে।
সামসাদ আক্তার বলেন, ‘একটা সময় খুব কষ্টে দিনযাপন করেছি। ব্যবসা শুরু করার চিন্তা মাথায় ছিল, কিন্তু মূলধন ছিল না। সেই সময় আমাদের পাশে এসে দাঁড়ায় বিআরডিবি। বিআরডিবির কারণে আজ আমরা স্বাবলম্বী। একটা সময় অর্ধাহারে-অনাহারে দিনযাপন করতাম, এখন আমরা কোটিপতি। সব খরচ বাদ দিয়ে প্রতি মাসে দুই লাখ টাকা আয় করি।’
বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার পল্লী উন্নয়ন অফিসার খলিলুর রহমান বলেন, ‘আমরা তাকে প্রশিক্ষণ এবং ঋণ দিয়েছি। এ ছাড়া তার পণ্য বাজারজাতকরণে সহযোগিতা করেছি।’