
দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এখনো পরিপূর্ণভাবে স্থিতিশীল হতে পারেনি। এরই মধ্যে চার সংস্কার কমিশন তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, এখন সব দলের সঙ্গে আলোচনা করে গণ-অভ্যুত্থানের সনদ তৈরি করা হবে। আর সেই সনদের ভিত্তিতে হবে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন। এদিকে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র চূড়ান্ত করার লক্ষ্যে রাজনৈতিক দল ও অন্য অংশীজনদের সঙ্গে গত বৃহস্পতিবার একটি সর্বদলীয় বৈঠক করেছে অন্তবর্তী সরকার। ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ‘ঐক্যবদ্ধভাবে দিতে না পারলে ঘোষণাপত্রের দরকার নেই।’
ন্যূনতম প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে চলতি বছরেই নির্বাচন চায় বিএনপি। এ ক্ষেত্রে অনেকটাই কৌশলী অবস্থান নিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। দলটি আগে ব্যাপকভিত্তিক সংস্কার ও পরে নির্বাচনের কথা বলছে। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান দায়িত্ব হলো যৌক্তিক সময়ের মধ্যে নির্বাচন দেওয়া। নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য যেসব সংস্কার প্রয়োজন, সেগুলো চিহ্নিত করে শুধু অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে বাস্তবায়ন করতে হবে। একই সঙ্গে ভোটের জন্য প্রস্তুতি, ভোটার তালিকা তৈরিসহ নির্বাচনের একটা রোডম্যাপ দেওয়াই হবে অন্তর্বর্তী সরকারের বড় চ্যালেঞ্জ। সংস্কার কমিশনে বিএনপি তাদের মতামত দিয়েছে। এই মতামতের ওপর ভিত্তি করে প্রধান উপদেষ্টা সব রাজনৈতিক দল ও অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা করে কী কী সংস্কার করা যায়, সে ব্যাপারে ঐকমত্য সৃষ্টি করতে পারেন। যেসব বিষয়ে ঐকমত্য হবে সেগুলো সংস্কার হবে। এখানে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি সংস্কার চিহ্নিত করে বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন। রাজনীতিতে আলোচনা, এখন সংস্কার হোক আর যা-ই হোক, বিএনপির সমর্থন বা সমঝোতা ছাড়া সরকারের কোনো কাজই সহজ হবে না। পর্যবেক্ষকদের মতে, সব দলের সঙ্গে সমন্বয় করে নির্বিঘ্নে একটি নির্বাচন করে নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের সামনে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে।
তথ্যমতে, সরকার ও বিএনপিসহ তার মিত্র দলগুলোর মধ্যে দূরত্বের মূল কারণ হলো নির্বাচনের সুস্পষ্ট দিনক্ষণ ঘোষণা না করা। এ ছাড়া নির্বাচনের আগে রাষ্ট্র বিনির্মাণে ঠিক কতটা সংস্কার হবে, সে বিষয়ে সুস্পষ্ট ধারণা না দেওয়া। এতে সন্দেহ ও অবিশ্বাসের সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। এ ছাড়া সংবিধান সংস্কার প্রশ্নে গণতন্ত্র মঞ্চেও অনৈক্যের সুর। এই ইস্যুতে জোট থেকে বেরিয়ে যেতে চাইছে গণসংহতি আন্দোলন ও রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন। দল দুটির প্রস্তাব- নির্বাচনের মাধ্যমে গণপরিষদ গঠন করতে হবে এবং সংবিধান পুনর্লিখন করতে হবে। একই প্রস্তাব দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি। সংবিধান সংস্কার নিয়েও দলগুলোর মধ্যে মতবিরোধ স্পষ্ট হয়েছে। জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, দেশে দলও অনেক এবং মতও ভিন্ন। গণ-অভ্যুত্থানের চেতনায় দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য থাকলেই হবে। রাজনৈতিক আদর্শের ভিন্নতা কোনো ব্যাপার নয়। এ ছাড়া বিভিন্ন জায়গায় দখল, চাঁদাবাজিসহ নানা ইসুতে সরকারের একাধিক উপদেষ্টা ও বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য এখনো অব্যাহত আছে।
সব মিলিয়ে সরকারের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর সম্পর্কে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ খবরের কাগজকে বলেন, দেশের বড় রাজনৈতিক দল বিএনপি এবং আন্তর্জাতিক মহলও নির্বাচন চাইছে। কারণ, দেশের অর্থনীতি স্থবির হয়ে গেছে। বিদেশি কোনো
বিনিয়োগ নেই, সমঝোতাও হবে না। এ জন্য নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করতে দেরি হলে দেশে অস্থিরতা বাড়বে। ফলে দ্রুত নির্বাচন হলে দেশের সংকটও কমে আসবে।
দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফেরাতে সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। দেশ ও জনগণের কল্যাণার্থে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য গড়ে তুলতে হবে। অন্তর্বর্তী সরকার রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পারস্পরিক ঐক্য ও সংহতি বজায় রেখে আগামীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে সক্ষম হবে বলে বিশ্বাস করি।