ঢাকা ৪ ফাল্গুন ১৪৩১, সোমবার, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
English
সোমবার, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ৪ ফাল্গুন ১৪৩১

সরকারের সামনে চ্যালেঞ্জ  স্থিতিশীলতা ফেরাতে জাতীয় ঐকমত্য প্রয়োজন

প্রকাশ: ১৮ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:৪৮ পিএম
সরকারের সামনে চ্যালেঞ্জ 
স্থিতিশীলতা ফেরাতে জাতীয় ঐকমত্য প্রয়োজন

দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এখনো পরিপূর্ণভাবে স্থিতিশীল হতে পারেনি। এরই মধ্যে চার সংস্কার কমিশন তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, এখন সব দলের সঙ্গে আলোচনা করে গণ-অভ্যুত্থানের সনদ তৈরি করা হবে। আর সেই সনদের ভিত্তিতে হবে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন। এদিকে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র চূড়ান্ত করার লক্ষ্যে রাজনৈতিক দল ও অন্য অংশীজনদের সঙ্গে গত বৃহস্পতিবার একটি সর্বদলীয় বৈঠক করেছে অন্তবর্তী সরকার। ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ‘ঐক্যবদ্ধভাবে দিতে না পারলে ঘোষণাপত্রের দরকার নেই।’

ন্যূনতম প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে চলতি বছরেই নির্বাচন চায় বিএনপি। এ ক্ষেত্রে অনেকটাই কৌশলী অবস্থান নিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। দলটি আগে ব্যাপকভিত্তিক সংস্কার ও পরে নির্বাচনের কথা বলছে। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান দায়িত্ব হলো যৌক্তিক সময়ের মধ্যে নির্বাচন দেওয়া। নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য যেসব সংস্কার প্রয়োজন, সেগুলো চিহ্নিত করে শুধু অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে বাস্তবায়ন করতে হবে। একই সঙ্গে ভোটের জন্য প্রস্তুতি, ভোটার তালিকা তৈরিসহ নির্বাচনের একটা রোডম্যাপ দেওয়াই হবে অন্তর্বর্তী সরকারের বড় চ্যালেঞ্জ। সংস্কার কমিশনে বিএনপি তাদের মতামত দিয়েছে। এই মতামতের ওপর ভিত্তি করে প্রধান উপদেষ্টা সব রাজনৈতিক দল ও অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা করে কী কী সংস্কার করা যায়, সে ব্যাপারে ঐকমত্য সৃষ্টি করতে পারেন। যেসব বিষয়ে ঐকমত্য হবে সেগুলো সংস্কার হবে। এখানে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি সংস্কার চিহ্নিত করে বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন। রাজনীতিতে আলোচনা, এখন সংস্কার হোক আর যা-ই হোক, বিএনপির সমর্থন বা সমঝোতা ছাড়া সরকারের কোনো কাজই সহজ হবে না। পর্যবেক্ষকদের মতে, সব দলের সঙ্গে সমন্বয় করে নির্বিঘ্নে একটি নির্বাচন করে নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের সামনে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। 

তথ্যমতে, সরকার ও বিএনপিসহ তার মিত্র দলগুলোর মধ্যে দূরত্বের মূল কারণ হলো নির্বাচনের সুস্পষ্ট দিনক্ষণ ঘোষণা না করা। এ ছাড়া নির্বাচনের আগে রাষ্ট্র বিনির্মাণে ঠিক কতটা সংস্কার হবে, সে বিষয়ে সুস্পষ্ট ধারণা না দেওয়া। এতে সন্দেহ ও অবিশ্বাসের সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। এ ছাড়া সংবিধান সংস্কার প্রশ্নে গণতন্ত্র মঞ্চেও অনৈক্যের সুর। এই ইস্যুতে জোট থেকে বেরিয়ে যেতে চাইছে গণসংহতি আন্দোলন ও রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন। দল দুটির প্রস্তাব- নির্বাচনের মাধ্যমে গণপরিষদ গঠন করতে হবে এবং সংবিধান পুনর্লিখন করতে হবে। একই প্রস্তাব দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি। সংবিধান সংস্কার নিয়েও দলগুলোর মধ্যে মতবিরোধ স্পষ্ট হয়েছে। জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, দেশে দলও অনেক এবং মতও ভিন্ন। গণ-অভ্যুত্থানের চেতনায় দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য থাকলেই হবে। রাজনৈতিক আদর্শের ভিন্নতা কোনো ব্যাপার নয়। এ ছাড়া বিভিন্ন জায়গায় দখল, চাঁদাবাজিসহ নানা ইসুতে সরকারের একাধিক  উপদেষ্টা ও বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য এখনো অব্যাহত আছে। 

সব মিলিয়ে সরকারের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর সম্পর্কে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ খবরের কাগজকে বলেন, দেশের বড় রাজনৈতিক দল বিএনপি এবং আন্তর্জাতিক মহলও নির্বাচন চাইছে। কারণ, দেশের অর্থনীতি স্থবির হয়ে গেছে। বিদেশি কোনো 
বিনিয়োগ নেই, সমঝোতাও হবে না। এ জন্য নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করতে দেরি হলে দেশে অস্থিরতা বাড়বে। ফলে দ্রুত নির্বাচন হলে দেশের সংকটও কমে আসবে। 

দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফেরাতে সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। দেশ ও জনগণের কল্যাণার্থে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য গড়ে তুলতে হবে। অন্তর্বর্তী সরকার রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পারস্পরিক ঐক্য ও সংহতি বজায় রেখে আগামীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে সক্ষম হবে বলে বিশ্বাস করি।

 

বাংলাদেশের পোশাকশিল্প  টেকসই করতে সম্মিলিত উদ্যোগ দরকার

প্রকাশ: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০২:৫৩ পিএম
বাংলাদেশের পোশাকশিল্প 
টেকসই করতে সম্মিলিত উদ্যোগ দরকার

করোনা ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কা সামলে বাংলাদেশ তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বেশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। গত সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে তৈরি পোশাক রপ্তানি ইতিবাচক ধারায় ফিরতে শুরু করে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দুই সপ্তাহের মাথায় কানাডা, মেক্সিকো ও চীন থেকে পণ্য আমদানিতে বাড়তি শুল্ক আরোপ করায় তৈরি পোশাক খাত নিয়ে নতুন করে সম্ভাবনা দেখছেন বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা। তারা বলছেন, চীনা পণ্যে অতিরিক্ত ১০ শতাংশ শুল্ক বসানো হয়েছে। 

এ কারণে যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো চীন থেকে ক্রয়াদেশ সরাবে। ফলে বাংলাদেশের সামনে বাড়তি ক্রয়াদেশ পাওয়ার সুযোগ তৈরি হবে। এমনকি বিনিয়োগকারীরা চীন থেকে কারখানা সরিয়ে এখন অন্য দেশে নিতে আগ্রহী হতে পারেন। সেই বিনিয়োগ বাংলাদেশও নিতে পারে। ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রথমবার ক্ষমতায় আসার পর যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু হয়। এরপর চীন থেকে ক্রয়াদেশ সরতে থাকে। এ সময় চীনের ক্রয়াদেশের একটি অংশ বাংলাদেশে আসে। ওই বছর যুক্তরাষ্ট্রে ৫৯৩ কোটি ডলার পোশাক রপ্তানি হয়, যা সাত বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। 

তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকরা বলছেন, চীন থেকে বাড়তি ক্রয়াদেশ নেওয়ার মতো সক্ষমতা বাংলাদেশের তৈরি পোশাক কারখানাগুলোর রয়েছে। তবে গ্যাস ও বিদ্যুতের সংকটের কারণে সে সক্ষমতার ব্যবহার কিছুটা কম হতে পারে। চীন থেকে কম ও মাঝারি মূল্যের পোশাকের ক্রয়াদেশ বাংলাদেশে আসার সম্ভাবনা বেশি। দামি পোশাকের ক্রয়াদেশ আনতে হলে চীন থেকে স্থানান্তরিত হওয়া বিনিয়োগ বাংলাদেশে আনতে হবে। এ জন্য দরকার সরকারি পর্যায় থেকে উদ্যোগ গ্রহণ। পোশাক রপ্তানিকারকরা বলেন, শুল্ক আরোপের আগে থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো বাড়তি ক্রয়াদেশ দেওয়া শুরু করেছে। নতুন ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরাও আলোচনা করছেন কিংবা বাংলাদেশে আসছেন। এমনকি চীন থেকে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করে, এমন প্রতিষ্ঠানও বাংলাদেশের বায়িং হাউস ও পোশাক কারখানাগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে।

গত মঙ্গলবার ঢাকায় সাসটেইনেবল অ্যাপারেল ফোরামের ষষ্ঠ সংস্করণ অনুষ্ঠানে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনে দেশের পোশাকশিল্পকে আরও টেকসই করতে দেশি-বিদেশি উদ্যোক্তাসহ আমদানি-রপ্তানিকারকদের সম্মিলিত উদ্যোগ প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন। বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের ভোক্তারা বাংলাদেশ থেকে আমদানি করা উচ্চ গুণগত ও মানসম্মত পণ্য থেকে উপকৃত হয়েছেন। আমরা এগিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ইইউ ও বাংলাদেশের মধ্যে অংশীদারত্ব আরও শক্তিশালী এবং বিকশিত হওয়া প্রয়োজন। ইইউ বাংলাদেশের সঙ্গে একযোগে কাজ করার জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ, যাতে বাংলাদেশ টেকসই উন্নয়নের সুযোগ সৃষ্টির সক্ষমতা অর্জন করতে পারে। 

বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্র। সে হিসাবে বাংলাদেশকে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় টেকসই পোশাক উৎপাদনকারী দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে হলে এবং যুক্তরাষ্ট্রের বাজারকে প্রভাবিত করতে হলে সরকারিভাবে সম্মিলিত উদ্যোগ দরকার। পোশাকশিল্পকে টেকসই করতে গ্যাস ও বিদ্যুতের সংকট নিরসনে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। বাংলাদেশের পোশাকশিল্পকে যুগোপযোগী, আধুনিক ও টেকসই করতে দরকার কার্যকরী উদ্যোগ। সরকার তার সফল উদ্যোগের মাধ্যমে এ শিল্পকে আরও গতিশীল ও আধুনিকায়ন করতে সক্ষমতার পরিচয় দেবে, এটাই প্রত্যাশা।

 

জুলাই-আগস্ট হত্যাকাণ্ড: জাতিসংঘের প্রতিবেদন সঠিক তদন্তের ভিত্তিতে বিচারকাজ সম্পন্ন করুন

প্রকাশ: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০১:১৮ পিএম
জুলাই-আগস্ট হত্যাকাণ্ড: জাতিসংঘের প্রতিবেদন
সঠিক তদন্তের ভিত্তিতে বিচারকাজ সম্পন্ন করুন

জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান দমাতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে বলপ্রয়োগ নীতি অনুসরণ করেছিলেন তা নজিরবিহীন। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শত শত হত্যাকাণ্ড, গ্রেপ্তার, নির্যাতন ও ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনার অন্তরালে লুকিয়ে ছিল ক্ষমতায় টিকে থাকার অপচেষ্টা। যা গত কয়েক মাসে দেশের গণমাধ্যম, সরকারের তদন্ত সংস্থা এবং মানবাধিকার সংগঠনের বিভিন্ন প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। গত বুধবার প্রকাশিত জাতিসংঘের প্রতিবেদনেও বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে। জুলাই থেকে আগস্ট পর্যন্ত দেশে সংঘটিত ঘটনাগুলো বিশ্লেষণ করে জাতিসংঘ মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তরের অনুসন্ধানী দল শেখ হাসিনা সরকার ও তার দলের বিরুদ্ধে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রমাণ পায়।

 এতে বলা হয়, গত জুলাই-আগস্টে বিক্ষোভের সময় সাবেক সরকার এবং তার নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা বাহিনী, আওয়ামী লীগ-সংশ্লিষ্ট গোষ্ঠীগুলো একসঙ্গে পরিকল্পিতভাবে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনে জড়িত ছিল। আন্দোলন চলাকালে ১৮ জুলাই সাবেক সরকার বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে ‘প্রাণঘাতী বলপ্রয়োগের’ জন্য নিরাপত্তা বাহিনীকে অনুমতি দিয়েছিল। আন্দোলনে ১ হাজার ৪০০ জনের মতো নিহত হয়েছেন। তাদের বেশির ভাগের মৃত্যু হয়েছে রাইফেল ও শটগানের গুলিতে। হাজার হাজার মানুষ গুরুতর আহত হয়েছেন। ওই সময় নিরাপত্তাবাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সমন্বয় কাজে নেতৃত্ব দিয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তাদের নির্দেশেই বিক্ষোভ দমনে অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ করেছে নিরাপত্তা সংস্থাগুলো। ওই সময় বিক্ষোভ দমনের সঙ্গে সরাসরি জড়িত ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বিভিন্ন সূত্র এবং সংশ্লিষ্টদের বর্ণনা থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে জাতিসংঘের ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং মিশন ওই প্রতিবেদন তৈরি করে। 

সুইজারল্যান্ডের জেনেভা কার্যালয় থেকে প্রকাশিত দীর্ঘ প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, কীভাবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং অন্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বড় আকারের অভিযানের দিকনির্দেশনা ও তদারকি করেছিলেন। যেখানে নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা বাহিনী বিক্ষোভকারীদের গুলি করে হত্যা করেছে বা নির্বিচারে গ্রেপ্তার ও নির্যাতন করেছে। জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার তুর্ক মন্তব্য করেছেন, বাংলাদেশের জনগণের বিরোধিতার মুখেও ক্ষমতা ধরে রাখতে শেখ হাসিনা সরকার জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে নৃশংসতা চালিয়েছিল।

জাতিসংঘের তদন্ত প্রতিনিধিদল তদন্তের লক্ষ্যে ২৩০ জনের সাক্ষাৎকার নেয়, ১৫৩টি ফরেনসিক প্রতিবেদন এবং ১ হাজারেরও বেশি ছবি, ভিডিও, রেকর্ড, ফাইলের ডিজিটাল ফরেনসিক বিশ্লেষণ করে। এ ছাড়া ৯৫৯টি ই-মেইল পায় তদন্ত দল। প্রতিবেদনে জবাবদিহি ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত এবং সমস্যার মূল উৎস খুঁজে বের করতে ৫০টির মতো সুপারিশ করেছে। এতে রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করা থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে। যেন সত্যিকার বহুদলীয় গণতন্ত্রে ফেরার পথ রুদ্ধ না হয়। দল নিষিদ্ধ করলে বাংলাদেশের বিপুলসংখ্যক ভোটারকে ভোটাধিকার চর্চা থেকে বঞ্চিত করা হবে বলে মনে করে জাতিসংঘ। প্রতিবেদনে অবাধ ও সত্যিকারের নির্বাচনের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে নিরাপদ সহায়ক পরিবেশ নিশ্চিত করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। 

ভোটের আগে সব রাজনৈতিক দল যেন সমান প্রচারের সুযোগ পায়। একই সঙ্গে নির্বাচনি প্রতিষ্ঠানগুলো যেন রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত হয়ে কাজ করতে পারে; সে বিষয়ও নিশ্চিত করতে হবে। আরও বলা হয়, নিরপেক্ষভাবে কার্যকর, পক্ষপাতহীনতার সঙ্গে সব বিচারবহির্ভূত হত্যা ও গুমের ঘটনার তদন্ত করতে হবে। র‌্যাব ও এনটিএমসিকে বিলুপ্ত করার সুপারিশও করা হয়েছে। ন্যায়বিচার ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে জরুরি ভিত্তিতে নিরাপত্তা ও বিচার বিভাগের সংস্কার করতে বলেছে জাতিসংঘ।

 জুলাই-আগস্ট হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের ব্যাপারে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া নিশ্চিত করতে হবে। যাতে কেউই ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত না হয়। কোনো নিরপরাধ ব্যক্তি যাতে হয়রানি বা পক্ষপাতিত্বের শিকার না হয়, সে জন্য সঠিক তদন্ত আবশ্যক। একই সঙ্গে যাতে কেউ রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বলি না হয়, সেদিকটাও সতর্কতার সঙ্গে সরকারকে দেখতে হবে। দেশের বৃহত্তর স্বার্থে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি গণতন্ত্রকে সুসংহত করতে সরকার দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করবে, এটাই প্রত্যাশা। 

দুর্নীতির সর্বগ্রাসী বিস্তার নির্মূলে সরকারকেই ব্যবস্থা নিতে হবে

প্রকাশ: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০১:১৫ পিএম
দুর্নীতির সর্বগ্রাসী বিস্তার
নির্মূলে সরকারকেই ব্যবস্থা নিতে হবে

বিশ্বব্যাপী দুর্নীতির মাত্রা নিয়ে জার্মানির বার্লিনভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল (টিআই) প্রতিবছর দুর্নীতির ধারণাসূচক (সিপিআই) প্রতিবেদন প্রকাশ করে। গত মঙ্গলবার তারা এক সংবাদ সম্মেলনে প্রকাশ করেছে ‘দুর্নীতির ধারণাসূচক ২০২৪’। ২০২১ সালের নভেম্বর থেকে ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ের তথ্যের ভিত্তিতে এই সূচক তৈরি করা হয়েছে। সেই সূচক থেকে জানা গেছে, দুর্নীতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে ২০২৪ সালে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৪তম। এর আগের বছর ছিল দশম। ২০২৪ সালের ধারণাসূচক অনুসারে ১৮০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৫১তম। এর আগের বছর বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৪৯তম। অবস্থানগত দিক থেকে দশম থেকে চতুর্দশ অবস্থানে নেমে এলেও বাংলাদেশে দুর্নীতি কমেনি; বরং দুর্নীতিগ্রস্ত হওয়ার দিক থেকে বাংলাদেশের অবনতি হয়েছে। ১৪৯ থেকে নেমে এসেছে ১৫১তম অবস্থানে। 

সিপিআই অনুসারে দুর্নীতি ধারণার মাত্রাকে ‘শূন্য’ (০) থেকে ‘এক শ’ (১০০) স্কেলে পরিমাপ করা হয়। এই স্কেল অনুসারে শূন্য (০) স্কোরকে সর্বোচ্চ আর এক শ (১০০) স্কোরকে ব্যাপকতার দিক থেকে সর্বনিম্ন ধরা হয়। সেদিক থেকে এবারের সিপিআই অনুসারে বাংলাদেশ আরও ১ পয়েন্ট কম স্কোর করেছে। ২০২৩ সালে বাংলাদেশের স্কোর ছিল ২৪, এবার ১ কমে হয়েছে ২৩। অর্থাৎ দুর্নীতিতে অবনতি ঘটেছে বাংলাদেশের। সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান ব্যাখ্যা করে বলেছেন, বাংলাদেশের দশম থেকে চতুর্দশ অবস্থানে চলে যাওয়া মানে এ দেশে দুর্নীতি কমেনি; বরং বেড়েছে। স্কোর কমে যাওয়া থেকেই সেটা বোঝা যায়। 

দুর্নীতির ধারণাসূচক (সিপিআই) থেকে আরও জানা গেছে, দুর্নীতির বৈশ্বিক গড় স্কোর হচ্ছে ৪৩। বাংলাদেশ পেয়েছে এরও অর্ধেক। একমাত্র আফগানিস্তান ছাড়া দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশই সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ। শুধু তাই নয়, গত ১৩ বছরের মধ্যে প্রাপ্ত স্কোর সর্বনিম্ন।

দুর্নীতির উল্লিখিত সূচক থেকে বোঝা যায়, বাংলাদেশে দুর্নীতি বেড়েছে। কী কারণে বেড়েছে, তারও ব্যাখ্যা দিয়েছে টিআই। তাদের প্রতিবেদন অনুসারে, বিগত সরকারের আমলে নির্বিচারে লুটপাট, দুর্নীতিবাজদের প্রশ্রয় দেওয়া এবং আইনের সঠিক প্রয়োগ না হওয়ায় বাংলাদেশের অবস্থানের ক্রমাবনতি ঘটেছে। সবচেয়ে বেশি দুর্নীতি হয়েছে সরকারি প্রকল্পের কেনাকাটায়। কিন্তু এর বিরুদ্ধে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। দুর্নীতি দমন কমিশনসহ 
(দুদক) দুর্নীতি প্রতিরোধে কাজ করা সংস্থাগুলোর নিষ্ক্রিয়তায় অর্থ পাচার ও দুর্নীতির বিস্তার ঘটেছে। 

লক্ষণীয়, দুর্নীতির কারণ প্রসঙ্গে সরকারি প্রতিষ্ঠানের কেনাকাটাকে মূলত দায়ী করা হয়েছে। প্রশ্রয় দিয়েছে ক্ষমতাসীন সরকার। এমনকি ‍বিগত সরকার দুর্নীতি সংঘটনে সহায়তা ও অংশগ্রহণ করেছে। দুর্নীতিসংক্রান্ত এই পর্যবেক্ষণ দুর্নীতির গতি-প্রকৃতি অনুসারে নতুন নয়। প্রায় চার দশক ধরে আমরা এটা দেখে আসছি, শুনে আসছি। একটা সময় বেশ কয়েক বছর বাংলাদেশ ধারাবাহিকভাবে দুর্নীতির শীর্ষে ছিল। এখন এর সামান্য উন্নতি হলেও উল্লেখ করার মতো পরিবর্তন আসেনি। দুর্নীতি এখনো আমাদের জাতীয় অগ্রগতির প্রধান অন্তরায়। বিশেষ করে দেশ থেকে অর্থ পাচারের নানা তথ্য বিভিন্ন সময়ে সামনে এসেছে। বর্তমানে ক্ষমতাসীন অন্তর্বর্তী সরকার কর্তৃক গঠিত শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটিও বলেছে, দেশে গত ১৫ বছরে ‘চামচা পুঁজিবাদ থেকেই চোরতন্ত্র’ তৈরি হয়েছিল। রাজনীতিক, সামরিক ও বেসামরিক আমলা, বিচার বিভাগসহ সবাই তাতে অংশ নিয়েছে।

 দুর্নীতির মাধ্যমে ২৩৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার দেশ থেকে অবৈধভাবে পাচার হয়েছে। 
এসব তথ্যের পাশাপাশি পাবলিক পারসেপশন বা সাধারণ মানুষের ধারণা হচ্ছে, দুর্নীতি আমাদের সমাজে সর্বত্র বিরাজমান। সবচেয়ে বেশি দুর্নীতি হয় সরকারি অফিস-আদালতে। আগেও এই দুর্নীতি ছিল, এখনো আছে। নির্মূল হয়নি অথবা রূপবদল হয়েছে মাত্র। দুর্নীতি নির্মূল না হলে, নিদেনপক্ষে কমিয়ে আনা না গেলে বাংলাদেশের অগ্রগতি যে মাত্রায় হওয়ার কথা তা কখনো ঘটবে না। জাতিগতভাবে আসলে আমাদের এই দুর্নীতিকে নির্মূল করার ব্যবস্থা নিতে হবে।

 এই নির্মূলে সবচেয়ে বড় ও প্রধান ভূমিকা পালন করতে হবে সরকারকে। সরকারের যেসব প্রতিষ্ঠান দুর্নীতি প্রতিরোধে কাজ করছে, সেসব প্রতিষ্ঠানকে সব ধরনের প্রভাব থেকে মুক্ত হয়ে দুর্নীতি প্রতিরোধে কাজ করতে হবে। দুর্নীতি নির্মূল করার প্রধান দায়িত্ব দুর্নীতি দমন কমিশনের। দুদককে ঢেলে সাজানো হয়েছে। আমাদের প্রত্যাশা, দুর্নীতি নির্মূলে তারা সর্বাত্মকভাবে সক্রিয় থাকবে। তবে দুর্নীতি নির্মূলের পরিবর্তে দুর্নীতি যাতে না হতে পারে, সেই ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। 

সরকারের একার পক্ষে দুর্নীতি নির্মূল করা সম্ভব নয়। এ জন্য জনসচেতনতার প্রয়োজন। জনগণকে এ ব্যাপারে সচেতন করার কাজটি সরকারকেই করতে হবে। আমরা মনে করি, দুর্নীতি কমিয়ে আনা নয়, দুর্নীতির সম্পূর্ণ মূলোৎপাটন প্রয়োজন। দুর্নীতি যাতে না হয়, সেই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলে সেটা হবে সবচেয়ে ভালো দৃষ্টান্ত।

নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকার  সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করুন

প্রকাশ: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৮:২৪ পিএম
নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকার 
সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করুন

গত সোমবার সন্ধ্যায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় বিএনপির তিন সদস্যের প্রতিনিধিদল প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করে। বৈঠক শেষে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, প্রধান উপদেষ্টা এবং তার সঙ্গে যারা ছিলেন তারা আশ্বস্ত করেছেন, অতি দ্রুত নির্বাচনের ব্যবস্থা করছেন। প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে তারা কাজ করছেন। জনগণের প্রত্যাশা, অতি দ্রুত একটা রোডম্যাপ ঘোষণা করা হবে, যার মধ্য দিয়ে ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন সম্পন্ন হবে। ন্যূনতম সংস্কার সম্পন্ন করে আলোচনা এবং ঐকমত্যের ভিত্তিতে নির্বাচন দেওয়ার বিষয়ে বৈঠকে কথা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন বিএনপি মহাসচিব। ১৫ ফেব্রুয়ারি জাতীয় ঐকমত্য গঠন কমিশনের প্রথম বৈঠক হবে। বৈঠকে রাজনৈতিক দলগুলোকে যোগদানের আহ্বান জানানো হবে। বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে অন্তর্বর্তী সরকারের নেওয়া সংস্কারের পদক্ষেপগুলো ব্যাখ্যা করবেন। 

বিএনপি বলছে, অন্তর্বর্তী সরকারের কোনো কোনো উপদেষ্টা ক্ষমতায় থেকে রাজনৈতিক দল গঠনের প্রক্রিয়ায় জড়িত রয়েছেন মর্মে জনগণের মধ্যে সংশয় তৈরি হয়েছে। এ প্রক্রিয়ায় প্রশাসনযন্ত্রকে ব্যবহার করার নানা রকম লক্ষণও প্রকাশ পাচ্ছে। যা দেশ ও গণতন্ত্রের জন্য সুফল বয়ে আনবে না। দলটির নেতারা বলছেন, জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী যথাযথ গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় যেকোনো দলের আত্মপ্রকাশকে তাদের দল স্বাগত জানাবে। 

নির্বাচন নিয়ে নানা আলোচনা, গুঞ্জন ও মতবিরোধের মধ্যে প্রধান উপদেষ্টার এই আশ্বাস পাওয়া গেল। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, এর ফলে নির্বাচনের অনিশ্চয়তা দূর হওয়ার পাশাপাশি জনমনে এক ধরনের স্বস্তি ফিরে আসবে। কারণ নির্বাচন নিয়ে সরকার, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে বিএনপির মতপার্থক্য প্রকাশ্য হয়ে পড়ে। জামায়াতে ইসলামী আগে সংস্কার পরে নির্বাচনের নীতি নিয়ে অগ্রসর হচ্ছিল। এমন পরিস্থিতিতে প্রধান উপদেষ্টার আশ্বাস রাজনীতির জন্য ইতিবাচক বার্তা বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। 
‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ সম্পর্কে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা সরকারপ্রধানকে বলেছি, এ ধরনের অভিযান আগে হয়েছিল। আগের অভিযানগুলো নিয়ে অনেক অভিযোগ ছিল। 

সেই ধরনের ঘটনার যেন পুনরাবৃত্তি না হয়। কোনোভাবেই যেন নিরপরাধ মানুষ আক্রান্ত না হন। বর্তমানে প্রতিনিয়ত নানা ধরনের দাবি নিয়ে মব সংস্কৃতির নামে সীমাহীন জনদুর্ভোগ, সড়কে উত্তেজনা ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির প্রয়াস লক্ষণীয়। বিএনপি মনে করে, অন্তর্বর্তী সরকার ছয় মাস পার করলেও জনপ্রত্যাশা কতটুকু পূরণ হয়েছে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। নির্বাচিত সরকার না থাকায় অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং বিনিয়োগের গতি স্থবির হয়ে পড়েছে। জনপ্রত্যাশা অনুযায়ী, সংস্কার প্রস্তাবগুলোর সাংবিধানিক ও আইনি ভিত্তি প্রদানের জন্য একটি নির্বাচিত সংসদই কেবল উপযুক্ত ফোরাম। অবিলম্বে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি রয়েছে তাদের দলের পক্ষ থেকে। 

অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচনের প্রস্তুতি হিসেবে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে। এর মধ্য দিয়ে একই সঙ্গে নির্বাচন কমিশনও ডিসেম্বরে নির্বাচন ধরে প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে একজন কমিশনার সাংবাদিকদের জানিয়েছেন। নির্বাচনি প্রক্রিয়ায় একধাপ এগিয়েছে দেশ। জনমনে স্বস্তি ফেরাতে সরকারের এ পদক্ষেপ এই মুহূর্তে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আশা করছি, অন্তর্বর্তী সরকার দেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের স্বার্থে সব দলকে নির্বাচনি প্ল্যাটফর্মে আনতে সক্ষম হবে।

 

 

অপারেশন ডেভিল হান্ট  নিরপরাধ মানুষকে যেন হয়রানি করা না হয়

প্রকাশ: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:৫৩ পিএম
অপারেশন ডেভিল হান্ট 
নিরপরাধ মানুষকে যেন হয়রানি করা না হয়

‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’। বিশেষ এই অভিযানে নেমেছে যৌথ বাহিনীর বিশেষায়িত দল। সরকারের ভাষ্য অনুসারে, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার এবং সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় এনে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। এ ছাড়া অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড প্রতিহত এবং সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করতে যৌথ বাহিনীর সমন্বয়ে চলছে 
এই অভিযান।

খবরের কাগজে প্রকাশিত একাধিক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত শনিবার রাতে এই অভিযানে নেমেছে যৌথ বাহিনী। এতে সেনাসদস্যের পাশাপাশি পুলিশ, র‌্যাবসহ অন্য বাহিনীর সদস্যরাও অংশ নিচ্ছেন। প্রধানত দুটি লক্ষ্য সামনে রেখে এই অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। সন্ত্রাসী, অপরাধীদের গ্রেপ্তার এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে যারা দেশকে অস্থিতিশীল করছেন ও আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটাচ্ছেন, তাদের আইনের আওতায় আনা। গতকাল সোমবার পর্যন্ত সারা দেশে এই অভিযানে ১ হাজার ৩০৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

পর্যবেক্ষকরা লক্ষ করেছেন, ৮ আগস্ট সরকার গঠনের পর থেকে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। এ-সংক্রান্ত বিভিন্ন ঘটনায় দেশের সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীরা নানা সময়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। জনমনে বাড়ছিল উৎকণ্ঠা। স্বয়ং প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস মাত্র এক সপ্তাহ আগে নিরাপত্তা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ এবং দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য ‘সেন্ট্রাল কমান্ড সেন্টার’ গঠনের নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু সরকার এবার শুধু এতে সীমাবদ্ধ না থেকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটানোর লক্ষ্যে সর্বাত্মক অভিযানে নেমেছে। এ ক্ষেত্রে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে অস্থিতিশীল এলাকাগুলোকে। অভিজ্ঞ মহল একে স্বাগত জানিয়েছেন।

 সুপ্রিম কোর্টের প্রখ্যাত আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক বলেছেন, পরিস্থিতির যেভাবে অবনতি ঘটছিল, তাতে এই অভিযানের যৌক্তিকতা আছে। স্বাভাবিকভাবেই মনে করা হচ্ছে, এতে অপরাধের সংখ্যা কমে আসবে। তবে এই অভিযান নিয়ে অভিন্ন মত থাকলেও অনেকেই সরকারকে সচেতন থাকতে বলেছেন। বিশেষ করে সাধারণ মানুষ যাতে হয়রানির শিকার না হন, সে বিষয়ে সরকারকে সতর্ক থাকতে হবে। এ জন্য মাঠপর্যায়ের প্রয়োজনীয় গোয়েন্দা তথ্য থাকা জরুরি। সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে সুনির্দিষ্ট অপরাধীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানোই যুক্তিযুক্ত হবে। কোনো অবস্থাতেই নিরপরাধ বা নিরীহ মানুষকে হয়রানি করা যাবে না। খেয়াল রাখতে হবে, এই অভিযান যেন কোনোভাবে প্রশ্নবিদ্ধ বা বিতর্কিত না হয়। কারণ, অতীতে আমরা এ ধরনের অভিযানের সময় আইনের ব্যত্যয় ঘটতে দেখেছি। মানবাধিকার লঙ্ঘনের মতো ঘটনাও ঘটেছে। এবার কিছুতেই যেন তা না হয়, সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। 

সাবেক পুলিশপ্রধান আবদুল কাউয়ুম বলেছেন, ‘সরিষার ভেতরে ভূত’ রয়েছে, ইতোমধ্যে এমন অভিযোগ উঠেছে। ফলে স্থিতিশীলতার পরিবর্তে পরিস্থিতি যেন অস্থিতিশীল হয়ে না ওঠে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। মনে রাখতে হবে, এই অভিযানের সাফল্যের ওপর দেশের অবনতিশীল আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি নির্ভর করছে। দেশের মানুষ যাতে শান্তিপূর্ণভাবে জীবনযাপন করতে পারে, সরকারকে তা নিশ্চিত করতে হবে। সরকার প্রকৃত সন্ত্রাসী ও অপরাধীদের আইনের আওতায় নিয়ে আসবে। জনজীবনে দ্রুত ফিরে আসবে স্বস্তি, এটাই প্রত্যাশা।