
দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর সাবেক মন্ত্রী-এমপি ও রাজনীতিকদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এসেছে বেশি। দুর্নীতি দমন কমিশনও আইনি ব্যবস্থা নিতে তৎপর হয়েছে। বিগত বছরগুলোয় যাদের বিরুদ্ধে কথা বলার সুযোগই ছিল না, আজ সময় ও ক্ষমতার পালাবদলে তাদের বিরুদ্ধে হত্যা, গুম, খুন ছাড়াও ব্যাপকভাবে দুর্নীতির অভিযোগ উঠে এসেছে। দুর্নীতি দমন কমিশন পুনর্গঠনের পর গত ১০ ডিসেম্বর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ শতাধিক সাবেক মন্ত্রী-এমপির দুর্নীতি অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় কমিশন।
অনুসন্ধান শেষে শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যসহ কয়েকজন মন্ত্রী-এমপির বিরুদ্ধে একাধিক মামলা হয়েছে। বাকিদের ব্যাপারে অনুসন্ধান চলছে। দুর্নীতিতে বরাবরই আমলাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ বেশি। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পরিসংখ্যানেও বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে। ৫ আগস্ট থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সেই হিসাব পাল্টে গেছে। দুর্নীতিসংক্রান্ত অভিযোগ দাখিলের প্রবণতা লক্ষণীয়ভাবে বেড়েছে। ভুক্তভোগী ছাড়াও সাধারণ মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে দুদকে অভিযোগ দাখিল করছেন। বিশেষ করে ৫ আগস্টের পর প্রতিদিন শত শত অভিযোগ দাখিল হতে দেখা গেছে। এসব যাচাই-বাছাইয়ের পর দুদকের তফসিলভুক্ত অপরাধসংক্রান্ত অভিযোগের অনুসন্ধান শুরু হয়েছে।
দুদকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৪-এ দুদকে অভিযোগ এসেছে ১৫ হাজার ৮৪২টি। যার মধ্যে জানুয়ারি থেকে ৪ আগস্ট পর্যন্ত সাত মাসে অনুসন্ধানের জন্য নেওয়া হয়েছে মাত্র ৫৩৩টি। পুরো বছরে ১৫ হাজার ৮৪২টি অভিযোগের মধ্যে ৫ আগস্ট থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত এসেছে ৮ হাজার ৬২৫টি অভিযোগ। এর মধ্যে অনুসন্ধান শুরু করা হয়েছে ১ হাজার ৩৬১টির।
দুদকের আরেক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত বছর মোট ৩৭৪টি মামলা করে দুদক। এসব মামলায় মোট আসামির সংখ্যা ৯৫৮। এর মধ্যে সরকারি চাকরিজীবী ৩৮১ ও রাজনীতিক ২৩ জন। বাকিরা বেসরকারি চাকরিজীবী, ব্যবসায়ী, জনপ্রতিনিধি ও অন্যান্য। একই বছরে ৩৫৪টি মামলায় চার্জশিট দেওয়া হয়েছে। এতে মোট আসামি ১ হাজার ৪১৫। আসামির তালিকায় সরকারি চাকরিজীবী ৫৬০ জন, রাজনীতিক ১৪, বাকিরা বেসরকারি চাকরিজীবী, ব্যবসায়ী, জনপ্রতিনিধি ও অন্যান্য।
দুদকের মুখপাত্র ও মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) আক্তার হোসেন খবরের কাগজকে বলেন, মূলত ৫ আগস্টের পর দুদকে অভিযোগ দাখিলের সংখ্যা বেড়েছে। সে অনুযায়ী আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সাবেক মন্ত্রী-এমপিদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। কারণ তারা এখন কারাগারে আছেন, জামিন নিয়ে যাতে বেরিয়ে যেতে না পারেন, সে জন্য গুরুত্ব বিবেচনায় তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। আগামীতে অভিযোগ অনুযায়ী সরকারি চাকরিজীবীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
দুদকের পরিসংখ্যান ২০২৪ বিশ্লেষণ করলে আমরা দেখতে পাই, দুদকে সবচেয়ে বেশি অভিযোগ এসেছে সাবেক মন্ত্রী-এমপি ও রাজনীতিকদের বিরুদ্ধে। মন্ত্রী-এমপি ও রাজনীতিকদের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আসছে, তা সঠিকভাবে খতিয়ে দেখে অপরাধ প্রমাণিত হলে তাদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। শুধু দেশের রাজনীতিকই নন, সরকারি চাকরিজীবী, ব্যবসায়ী, জনপ্রতিনিধি ও অন্য সবার অভিযোগ খতিয়ে দেখতে হবে। এক কথায় দুর্নীতি প্রমাণিত হলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে না পারলে সমাজে ভালো বার্তা বয়ে আনবে না। সেই সঙ্গে দুদককে শক্তিশালী প্রতিষ্ঠানে রূপদানের জন্য সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।