
উচ্চ বেতনে রাশিয়ায় চাকরির প্রলোভন দেওয়া হয়েছিল। সে প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে দালালরা এমন অন্তত ২০ জনকে প্রথমে ওমরাহ ভিসায় সৌদিতে নেয়। সেখান থেকে ১০ জনকে ওমরাহ শেষে নেওয়া হয় রাশিয়ায়। কিন্তু সেখানে চাকরি মেলেনি তাদের। উল্টো নির্যাতনসহ বাধ্য করে তাদের রাশিয়ার পক্ষে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামানো হয়। এর মধ্যে নরসিংদীর পলাশ থানার বাসিন্দা মো. আকরাম হোসেন রাশিয়ার প্রশিক্ষণ ক্যাম্প থেকে পালিয়ে নিজ ব্যবস্থাপনায় গত ২৬ জানুয়ারি দেশে ফিরে আসেন। পরে আকরামের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আন্তর্জাতিক মানব পাচার চক্রের অন্যতম প্রধান ফাবিহা জেরিন তামান্নাকে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। সিআইডি প্রাথমিকভাবে জানতে পারে, ওই ১০ জনের মধ্যে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে নাটোরের সিংড়া থানার হুমায়ুন কবির নামে এক ব্যক্তি নিহত এবং কেরানীগঞ্জের আমিনুল নামে অপরজন গুরুতর আহত হন। একজন দেশে পালিয়ে আসতে সক্ষম হলেও বাকি ৭ জন এখনো রাশিয়ায় রয়ে গেছেন।
বৃহস্পতিবার (৬ জানুয়ারি) বিকেলে সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (মিডিয়া) জসীম উদ্দিন খান বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তামান্না মানব পাচারের ঘটনায় সম্পৃক্ত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। সিআইডি জানতে পারে, একইভাবে ১০ জনের আরেকটি দল সৌদি আরবে অবস্থান করছে। তাদেরও রাশিয়া নিয়ে জোরপূর্বক যুদ্ধে অংশগ্রহণ করানোর বিষয়টি জানাজানি হয়। পরে তারা রাশিয়া যেতে অস্বীকার করলে তাদের পাসপোর্ট কেড়ে নেওয়া হয়। তাই তারা সৌদি আরবে কোনো কাজ করতে পারছেন না, দেশে ফিরতেও পারছেন না।
সিআইডি জানিয়েছে, ‘ড্রিম হোম ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস লিমিটেডে’র মাধ্যমে একটি মানব পাচারকারী চক্র রাশিয়ায় মাসে দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা বেতনে চকলেট ফ্যাক্টরি, ক্লিনার অথবা বাবুর্চির কাজের প্রলোভন দেখিয়ে ১০ জনকে প্রথমে সৌদি আরবে ওমরাহ ভিসায় পাঠায়। তাদের ওমরাহ হজ করানোর পর রাশিয়ায় নিয়ে এক সুলতানের কাছে বিক্রি করে দেয়। সুলতান তাদের দাস হিসেবে রাশিয়ান সৈন্যদের কাছে হস্তান্তর করেন। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কাজ না দিয়ে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য তাদের সামরিক প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এতে অনিচ্ছা প্রকাশ করলে শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতন চালানো হয়। পরবর্তী সময়ে বাধ্য হয়ে যুদ্ধে অংশ নেন ভুক্তভোগীরা।