ঢাকা ১ আশ্বিন ১৪৩১, সোমবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪

যৌক্তিক সময়ে কমবে মূল্যস্ফীতি : অর্থ উপদেষ্টা

প্রকাশ: ১৫ আগস্ট ২০২৪, ১০:৫৯ এএম
যৌক্তিক সময়ে কমবে মূল্যস্ফীতি : অর্থ উপদেষ্টা
অর্থ ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ

অর্থ ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ‘মূল্যস্ফীতি চট করে কমবে না। এটা ঘোড়ার মতো নয় যে মাথা নিচু করে দৌড় দেবে, তারপরে ছুটে চলবে। কিছুদিন সময় লাগবে। তবে যুগ যুগ লাগবে না। আমরা যত দ্রুত সম্ভব যৌক্তিক সময়ের মধ্যে মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনব। এরই মধ্যে মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমেছে।’

খাদ্য উৎপাদন ও সরবরাহ বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনা হবে বলে জানান তিনি। 

বুধবার (১৪ আগস্ট) সচিবালয়ে মূল্যস্ফীতি ও খাদ্য সরবরাহ পরিস্থিতি নিয়ে অনুষ্ঠিত এক পর্যালোচনা বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন অর্থ উপদেষ্টা।

তিনি বলেন, মূলস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ফলে দ্রুত এটি কমে আসবে বলে আশা করা যাচ্ছে। কাউকে ধরা বা মারা- এসব এজেন্ডা নেই। একটাই এজেন্ডা, মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনা, যাতে সাধারণ মানুষের কষ্ট লাঘব হয়। সে লক্ষ্য নিয়ে আমরা কাজ করছি, মন্তব্য করেন ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ। 

গত জুলাই মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১৪ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। এটি এক যুগের মধ্যে সর্বোচ্চ। গত দুই বছর ধরে দেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতি বিরাজ করছে, যা সাধারণ মানুষের জীবনযাপনকে কষ্টের মধ্যে ফেলে দিয়েছে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করাই অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান চ্যালেঞ্জ বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা। 

অর্থ উপদেষ্টা বলেন, মূল্যস্ফীতির ওপর বিদেশি বিনিয়োগ নির্ভর করে। যারা এ দেশে বিনিয়োগ করবেন, তারা মূল্যস্ফীতির সূচক দেখেন। কারণ এখানে মুনাফার ব্যাপার আছে। সুতরাং ব্যবসা-বাণিজ্যের দিক থেকে সেটা দেশি হোক আর বিদেশি হোক, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়ে উপদেষ্টা পরিষদে সিদ্ধান্ত হয়েছে। সে জন্য এটিকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে- সাংবাদিকদের এ প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, ‘উৎপাদন ও সরবরাহ বাড়ানোর বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে কৃষিপণ্য উৎপাদনের ওপর বেশি নজর দেওয়া হবে। বিভিন্ন কারণে বাজারে সরবরাহের ব্যাঘাত ঘটে। আমরা কারণগুলো শনাক্ত করে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে বলেছি সংশ্লিষ্টদের।’ 

সিন্ডিকেটের কারণে বাজার অস্থির হয়। তাদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেবেন-এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘সিন্ডিকেটের বিষয়টি আমাদের নজরে আনা হয়েছে।’ 

ছাগলকাণ্ডের মতিউর রহমানসহ সাম্প্রতিক সময়ে যেসব দুর্নীতির ঘটনা ঘটেছে, সেগুলো ধামাচাপা পড়ে যাবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, না না, ধামাচাপা পড়বে না। এগুলোর কার্যক্রম যথারীতি চলমান থাকবে। তিনি বলেন, কাউকে শাস্তি দিতে হলে সঠিক তথ্য-প্রমাণ লাগবে। তা না হলে আইনি প্রক্রিয়ায় বিচার করা কঠিন হয়ে পড়বে। 

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কী নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে- একজন সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, উৎপাদন বাড়াতে কৃষি উপকরণসহ যা কিছু দরকার, সেগুলোর প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সরবরাহব্যবস্থা যাতে কিছুতেই ব্যাহত না হয়, সে বিষয়ে নজর রাখার কথা বলা হয়েছে। 

আরেক প্রশ্নের জবাবে ড. সালেহউদ্দিন বলেন, ‘যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, সেগুলোর বাস্তবায়ন হলে আমি আশা করছি শিগগিরই জিনিসপত্রের দাম কমে আসবে। মানুষ স্বস্তি পাবে। তাই বলে কালই দাম কমে যাবে, তা ঠিক নয়। এর জন্য একটু সময় লাগবে। আমরা বাস্তবায়নকে বেশি প্রাধান্য দেব।’ 

উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, সরবরাহব্যবস্থা ঠিক করা হবে, সমন্বয় করা হবে মুদ্রানীতি ও রাজস্বনীতির। সবকিছুই উন্মুক্ত থাকবে। কিছুই গোপন করা হবে না, আগে যেটা করা হতো। তবে অর্থের অপচয় রোধ করতে হবে। পাশাপাশি অর্থের সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। বৈঠকে উপস্থিত সবাইকে ভয়ভীতিমুক্ত হয়ে কথা বলার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। বলেছেন, তোয়াজ করার দরকার নেই। এমনকি তিনি এও বলেছেন, উপদেষ্টা ভালো মানুষ, এসব কথাও বলার দরকার নেই।

মূল্যস্ফীতি প্রসঙ্গে গভর্নর যা বললেন: বৈঠক শেষে বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে সরবরাহ ঠিক রেখে উৎপাদনের চাকা সচল রাখা। এটা নিশ্চিত করতে পারলে বাজারে দামের ক্ষেত্রে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে হলে আরেকটি বিষয়ে কাজ করতে হবে। সেটা হলো চাঁদাবাজি বন্ধ এবং চাহিদার বিষয়ে হস্তক্ষেপ করা। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে হলে এসব বিষয়ে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। বিষয়গুলো নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি এবং সংশ্লিষ্টদের কাজ করতে বলা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছে। আরও পর্যালোচনা করা হবে, নতুন কিছু করা যায় কি না।’ 

গভর্নর আহসান মনসুর বলেন, আগামী পাঁচ থেকে ছয় মাসের মধ্যে মূল্যস্ফীতি গ্রহণযোগ্য পর্যায়ে নেমে আসবে। রিজার্ভসংকট রাতারাতি যাবে না- এর হিসাব করতে হবে। আমদানিতে কোথায় কতটুকু ডলার দেওয়া যায়, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ ছাড়া উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গেও আলাপ করা হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন। ব্যাংকিং কমিশন গঠনবিষয়ক এক প্রশ্নের জবাবে নতুন গভর্নর বলেন, এ বিষয়ে আলোচনা হয়নি।

বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন গভর্নর আহসান এইচ মনসুর, অর্থসচিব মো. খায়রুজ্জামান মজুমদার, বাণিজ্যসচিব মো. সেলিম উদ্দিন, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন, শিল্পসচিব জাকিয়া সুলতানা, খাদ্যসচিব ইসমাইল হোসেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের দুই ডেপুটি গভর্নর হাবিবুর রহমান ও নুরুন নাহার উপস্থিত ছিলেন।

সূচকের মিশ্র প্রতিক্রিয়ায় কমেছে লেনদেন

প্রকাশ: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:৫৮ এএম
সূচকের মিশ্র প্রতিক্রিয়ায় কমেছে লেনদেন

দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) গতকাল রবিবার মূল্যসূচকের মিশ্র প্রতিক্রিয়ায় কমেছে লেনদেন। কমেছে বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ারের দর। এতে কমেছে প্রধান মূল্যসূচক। একই সঙ্গে কমেছে লেনদেনের পরিমাণ।

অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) দাম কমার চেয়ে দাম বাড়ার তালিকায় রয়েছে বেশিসংখ্যক প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট। তবে কমেছে মূল্যসূচক। একই সঙ্গে কমেছে লেনদেনের পরিমাণ।

এদিন শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হয় বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ার মাধ্যমে। ফলে লেনদেনের শুরুতে সূচকের ঊর্ধ্বমুখিতার দেখা মেলে। তবে অল্প সময়ের মধ্যেই দাম কমার তালিকায় চলে আসে বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠান। লেনদেনের শেষ পর্যন্ত এ ধারা অব্যাহত থাকে।

দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে সব খাত মিলে ১৬৯টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের স্থান হয়েছে দাম বাড়ার তালিকায়। বিপরীতে দাম কমেছে ১৮২টি প্রতিষ্ঠানের। আর ৪৬টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।

বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানের দাম কমায় ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ১৪ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ৭১১ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। অপর দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক আগের দিনের তুলনায় ১ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ২৪৬ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর বাছাই করা ভালো ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ১৫ পয়েন্ট কমে ২ হাজার ৮৫ পয়েন্টে অবস্থান করছে।

প্রধান মূল্যসূচকের পাশাপাশি ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণ বেড়েছে। দিনভর বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৬৬৮ কোটি ৮৯ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৭৩৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা।
 
এই লেনদেনে সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছে লিন্ডে বাংলাদেশের শেয়ার। কোম্পানিটির ৪২ কোটি ৩২ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা সোনালি আঁশের ২৭ কোটি ১৫ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। ২১ কোটি ৪২ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে গ্রামীণফোন।

এ ছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে অগ্নি সিস্টেম, ওরিয়ন ইনফিউশন, সি পার্ল বিচ রিসোর্ট, এনআরবি ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক এবং সোনালি পেপার।

গতকাল ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে দর বৃদ্ধির শীর্ষে উঠে এসেছে এসকে ট্রিমস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড।

এদিন ডিএসইতে এসকে ট্রিমস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের শেয়ারদর আগের কার্যদিবসের তুলনায় ১ টাকা ৭০ পয়সা বা ১০ শতাংশ বেড়েছে।

মূল্যবৃদ্ধির দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে দেশ গার্মেন্টস লিমিটেড। কোম্পানিটির শেয়ারদর ৮ টাকা ৫০ পয়সা বা ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশ বেড়েছে। মূল্যবৃদ্ধির তালিকায় তৃতীয় স্থানে থাকা ওইমেক্স ইলেকট্রোড লিমিটেডের শেয়ারদর বেড়েছে ২ টাকা ১০ পয়সা বা ৯ দশমিক ৮৫ শতাংশ।

গতকাল রবিবার মূল্যবৃদ্ধির শীর্ষে উঠে আসা অপর কোম্পানিগুলো হচ্ছে সি পার্ল রিসোর্ট অ্যান্ড স্পা লিমিটেড, এমারেল্ড অয়েল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, এইচআর টেক্সটাইল লিমিটেড, সেন্ট্রাল ফার্মাসিটিক্যাল লিমিটেড, ওরিয়ন ইনফিউশন লিমিটেড, সোনালি পেপার অ্যান্ড বোর্ড মিলস লিমিটেড এবং কেডিএস অ্যাকসেসরিজ লিমিটেড।

গতকাল ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে দরপতনের তালিকায় শীর্ষে উঠে এসেছে ট্রাস্ট ব্যাংক ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড।

এদিন ট্রাস্ট ব্যাংক ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিট দর আগের কার্যদিবসের তুলনায় কমেছে ৪০ পয়সা বা ৯ দশমিক ৩ শতাংশ। তাতে দরপতনের শীর্ষে জায়গা করে নিয়েছে কোম্পানিটি।
এদিকে দর হারানোর তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসা ন্যাশনাল টি কোম্পানি লিমিটেডের শেয়ারদর আগের দিনের তুলনায় ৪২ টাকা ৬০ পয়সা বা ৮ দশমিক ৭৪ শতাংশ কমেছে। আর শেয়ারদর ৬ দশমিক ৯৭ শতাংশ কমে যাওয়ায় তালিকার তৃতীয় স্থানে অবস্থান নিয়েছে ইবিএল ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড।

এদিন দরপতনের তালিকায় উঠে আসা অন্য কোম্পানিগুলো হলো এমবি ফার্মাসিটিক্যালস পিএলসি, কোহিনুর কেমিক্যাল কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড, প্রিমিয়ার লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স লিমিটেড, প্রাইম ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড, এমবিএল ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড, রিজেন্ট টেক্সটাইল মিলস লিমিটেডের দর কমেছে।

অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই কমেছে ২১ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ২১৩টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৯৬টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৯৭টির এবং ২০টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। মোট লেনদেন হয়েছে ৫ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৮ কোটি ৯৯ লাখ টাকা।

সূচকের মিশ্র প্রতিক্রিয়ায় কমেছে লেনদেন

প্রকাশ: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:৫২ এএম
সূচকের মিশ্র প্রতিক্রিয়ায় কমেছে লেনদেন

দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) গতকাল রবিবার মূল্যসূচকের মিশ্র প্রতিক্রিয়ায় কমেছে লেনদেন। কমেছে বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ারের দর। এতে কমেছে প্রধান মূল্যসূচক। একই সঙ্গে কমেছে লেনদেনের পরিমাণ।

অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) দাম কমার চেয়ে দাম বাড়ার তালিকায় রয়েছে বেশিসংখ্যক প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট। তবে কমেছে মূল্যসূচক। একই সঙ্গে কমেছে লেনদেনের পরিমাণ।

এদিন শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হয় বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ার মাধ্যমে। ফলে লেনদেনের শুরুতে সূচকের ঊর্ধ্বমুখিতার দেখা মেলে। তবে অল্প সময়ের মধ্যেই দাম কমার তালিকায় চলে আসে বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠান। লেনদেনের শেষ পর্যন্ত এ ধারা অব্যাহত থাকে।

দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে সব খাত মিলে ১৬৯টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের স্থান হয়েছে দাম বাড়ার তালিকায়। বিপরীতে দাম কমেছে ১৮২টি প্রতিষ্ঠানের। আর ৪৬টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।

বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানের দাম কমায় ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ১৪ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ৭১১ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। অপর দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক আগের দিনের তুলনায় ১ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ২৪৬ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর বাছাই করা ভালো ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ১৫ পয়েন্ট কমে ২ হাজার ৮৫ পয়েন্টে অবস্থান করছে।

প্রধান মূল্যসূচকের পাশাপাশি ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণ বেড়েছে। দিনভর বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৬৬৮ কোটি ৮৯ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৭৩৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। 

এই লেনদেনে সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছে লিন্ডে বাংলাদেশের শেয়ার। কোম্পানিটির ৪২ কোটি ৩২ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা সোনালি আঁশের ২৭ কোটি ১৫ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। ২১ কোটি ৪২ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে গ্রামীণফোন।

এ ছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে অগ্নি সিস্টেম, ওরিয়ন ইনফিউশন, সি পার্ল বিচ রিসোর্ট, এনআরবি ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক এবং সোনালি পেপার।

গতকাল ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে দর বৃদ্ধির শীর্ষে উঠে এসেছে এসকে ট্রিমস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড।

এদিন ডিএসইতে এসকে ট্রিমস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের শেয়ারদর আগের কার্যদিবসের তুলনায় ১ টাকা ৭০ পয়সা বা ১০ শতাংশ বেড়েছে।

মূল্যবৃদ্ধির দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে দেশ গার্মেন্টস লিমিটেড। কোম্পানিটির শেয়ারদর ৮ টাকা ৫০ পয়সা বা ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশ বেড়েছে। মূল্যবৃদ্ধির তালিকায় তৃতীয় স্থানে থাকা ওইমেক্স ইলেকট্রোড লিমিটেডের শেয়ারদর বেড়েছে ২ টাকা ১০ পয়সা বা ৯ দশমিক ৮৫ শতাংশ।

গতকাল রবিবার মূল্যবৃদ্ধির শীর্ষে উঠে আসা অপর কোম্পানিগুলো হচ্ছে সি পার্ল রিসোর্ট অ্যান্ড স্পা লিমিটেড, এমারেল্ড অয়েল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, এইচআর টেক্সটাইল লিমিটেড, সেন্ট্রাল ফার্মাসিটিক্যাল লিমিটেড, ওরিয়ন ইনফিউশন লিমিটেড, সোনালি পেপার অ্যান্ড বোর্ড মিলস লিমিটেড এবং কেডিএস অ্যাকসেসরিজ লিমিটেড।

গতকাল ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে দরপতনের তালিকায় শীর্ষে উঠে এসেছে ট্রাস্ট ব্যাংক ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড।

এদিন ট্রাস্ট ব্যাংক ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিট দর আগের কার্যদিবসের তুলনায় কমেছে ৪০ পয়সা বা ৯ দশমিক ৩ শতাংশ। তাতে দরপতনের শীর্ষে জায়গা করে নিয়েছে কোম্পানিটি।

এদিকে দর হারানোর তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসা ন্যাশনাল টি কোম্পানি লিমিটেডের শেয়ারদর আগের দিনের তুলনায় ৪২ টাকা ৬০ পয়সা বা ৮ দশমিক ৭৪ শতাংশ কমেছে। আর শেয়ারদর ৬ দশমিক ৯৭ শতাংশ কমে যাওয়ায় তালিকার তৃতীয় স্থানে অবস্থান নিয়েছে ইবিএল ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড।

এদিন দরপতনের তালিকায় উঠে আসা অন্য কোম্পানিগুলো হলো এমবি ফার্মাসিটিক্যালস পিএলসি, কোহিনুর কেমিক্যাল কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড, প্রিমিয়ার লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স লিমিটেড, প্রাইম ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড, এমবিএল ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড, রিজেন্ট টেক্সটাইল মিলস লিমিটেডের দর কমেছে।

অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই কমেছে ২১ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ২১৩টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৯৬টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৯৭টির এবং ২০টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। মোট লেনদেন হয়েছে ৫ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৮ কোটি ৯৯ লাখ টাকা।

খাতুনগঞ্জে কমছে পেঁয়াজের দাম

প্রকাশ: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:২৩ এএম
খাতুনগঞ্জে কমছে পেঁয়াজের দাম
চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে পেঁয়াজের পাইকারি বাজার। খবরের কাগজ

পেঁয়াজ রপ্তানিতে ভারতের ২০ শতাংশ শুল্কহার কমানোর খবরের প্রভাব পড়েছে চট্টগ্রামের পাইকারি বাজারে। দুই দিনের ব্যবধানে সব ধরনের পেঁয়াজে কেজিপ্রতি ১০ টাকা কমেছে বলে জানিয়েছেন পাইকারি ব্যবসায়ীরা। 

খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, ভারত পেঁয়াজ রপ্তানিতে শুল্ক কমানোর খবরে গত শুক্রবার থেকে খাতুনগঞ্জে পেঁয়াজের দাম কমতে শুরু করেছে। বর্তমানে খাতুনগঞ্জে দেশি ও ভারতীয় পেঁয়াজ রয়েছে। চীন ও মিসর থেকে আসা পেঁয়াজের সরবরাহ একেবারে নেই। পাশাপাশি পাকিস্তানি পেঁয়াজের সরবরাহও অনেকটাই কমে গেছে। ভারত থেকে কম শুল্কে পেঁয়াজ এলে বর্তমানে সরবরাহে থাকা আগের কেনা দেশি ও ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হবে না। তখন বড় লোকসানে পড়তে হবে। তার ওপর বেচাকেনাও কম। তাই ব্যবসায়ীরা দাম কমিয়ে আড়তে থাকা পেঁয়াজগুলো বিক্রি করে দিচ্ছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার খাতুনগঞ্জে কেজিপ্রতি দেশি পেঁয়াজ ১০৫ টাকা ও ভারতীয় পেঁয়াজ ১০০ থেকে ১০৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। অন্যদিকে পাকিস্তানি পেঁয়াজ ৮৩ টাকা ও মিসরের পেঁয়াজ ৭৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। বর্তমানে ভারতীয় ও দেশি পেঁয়াজ ৯৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তা ছাড়া পাকিস্তান থেকে আসা পেঁয়াজ কেজিপ্রতি ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

চাক্তাইয়ের আফরা ট্রেডার্সের মালিক মো. আলাউদ্দিন খবরের কাগজকে বলেন, ‘বর্তমানে চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে দেশি, ভারতীয় ও পাকিস্তানি পেঁয়াজ রয়েছে। দামও কমতে শুরু করেছে। কম শুল্কের ভারতীয় পেঁয়াজ এই সপ্তাহে বাজারে চলে আসবে। সরবরাহ বাড়বে। তখন পণ্যটির দাম আরও কমে যাবে।’

খাতুনগঞ্জের হামিদুল্লাহ মিয়া মার্কেট ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. ইদ্রিস খবরের কাগজকে বলেন, ‘ভারত পেঁয়াজ রপ্তানিতে ২০ শতাংশ শুল্ক কমিয়েছে, এমন খবরে খাতুনগঞ্জে প্রতি কেজি পেঁয়াজে ১০ থেকে ১৫ টাকা কমে গেছে। এসব পেঁয়াজ আগের কেনা। নতুন নির্ধারিত শুল্কের পেঁয়াজ বাজারে এখনো আসেনি। কিন্তু চলে এলে পুরোনো পেঁয়াজের প্রতি ক্রেতার আগ্রহ থাকবে না। তখন ব্যাংক লোন শোধ করা সম্ভব হবে না। তাই আমরা কেজিপ্রতি ১০ থেকে ১৫ টাকা লোকসান দিয়ে পণ্যটি বিক্রি করে দিচ্ছি। পাশাপাশি চলতি সপ্তাহের মধ্যে ক্রেতারা কম দামে ভারতীয় পেঁয়াজ পাবেন।’

যা বলছেন সীমান্তের ব্যবসায়ীরা
গত বছরের ডিসেম্বর থেকে চলতি বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত চার মাসের জন্য পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ ঘোষণা করে ভারত। এর পর থেকেই হিলিসহ দেশের বিভিন্ন স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ থাকে। গত ২৩ মার্চ সেই মেয়াদের সময়সীমা বাড়িয়ে অনির্দিষ্টকালের জন্য পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ ঘোষণা করে ভারত সরকার। পরে গত ৪ মে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেয় ভারত সরকার। কিন্তু রপ্তানিতে ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপ রেখেছিল দেশটি। 

ভারত গত ১৩ সেপ্টেম্বর পেঁয়াজ রপ্তানিতে শুল্কহার ৪০ শতাংশ থেকে নামিয়ে ২০ শতাংশ করেছে। তবে পাইপলাইনে এখনো অনেক ট্রাক সারিবদ্ধভাবে ওই দেশের বর্ডারে দাঁড়িয়ে আছে। সিদ্ধান্ত হলেও এখন পর্যন্ত ২০ শতাংশ শুল্কে ভারত পেঁয়াজ বাংলাদেশে ছাড়েনি। অন্যদিকে ১৬ সেপ্টেম্বর (আজ সোমবার) ঈদে মিলাদুন্নবীর (দ.) বন্ধ রয়েছে। চলতি সপ্তাহের মধ্যেই নতুন নির্ধারিত শুল্কহারে পেঁয়াজ বাংলাদেশে আসবে বলে জানিয়েছেন সীমান্তের ব্যবসায়ীরা।

আমদানিকারকরা হিসাব কষে জানিয়েছেন, বর্তমানে ভারত থেকে প্রতি কেজি পেঁয়াজ আনতে ৪৮ রুপি খরচ পড়বে। বাংলাদেশি মুদ্রায় ৬৮ টাকা (প্রতি রুপি ১ টাকা ৪৩ পয়সা হিসেবে)। বাংলাদেশে প্রতি কেজিতে গাড়ি ভাড়া খরচ ৪ টাকা। ওই হিসাবে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম পড়বে ৭২ টাকা। আগে ৪০ শতাংশ শুল্কে পেঁয়াজ আমদানি খরচ পড়ত শত টাকার কাছাকাছি। 

তবে আমদানিকারকরা আরও জানিয়েছেন, ভারতে যদি আবহাওয়া ভালো থাকে, এক সপ্তাহ পর প্রতি কেজি পেঁয়াজ ২০ থেকে ২২ রুপিতে পাওয়া যাবে। তখর খুচরা পর্যায়ে ৫০ থেকে ৫৫ টাকা কেজিতে ভারতীয় পেঁয়াজ পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। 

হিলি স্থলবন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানিকারক মো. মোবারক হোসাইন খবরের কাগজকে বলেন, ‘গত ছয় মাসেরও বেশি সময় ধরে আমরা ৪০ শতাংশ হারে শুল্ক দিয়ে পেঁয়াজ এনেছি। তবে এ সময়ে দেশটি থেকে পেঁয়াজ রপ্তানিতে ধস নামে। কারণ আমাদের আমদানিকারকরা এত বেশি শুল্ক দিয়ে পেঁয়াজ আনতে অনাগ্রহ দেখান। তাই গত ১৩ সেপ্টেম্বর ভারত পেঁয়াজ রপ্তানিতে ২০ শতাংশ শুল্ক নির্ধারণ করে। তবে সেটা এখনো বাস্তবায়ন করেনি দেশটি। আশা করছি, চলতি সপ্তাহের মধ্যে আমরা নির্ধারিত শুল্কে পেঁয়াজ আনতে পারব। বর্তমানে পাইপলাইনে প্রচুর পেঁয়াজ আছে। চলতি সপ্তাহের মধ্যে পেঁয়াজের সরবরাহ অনেক বেড়ে যাবে। মানুষ কম দামে পেঁয়াজ পাবে।’ 

পেঁয়াজ রপ্তানির ওপর বিধিনিষেধ আরও শিথিল করেছে ভারত। পেঁয়াজ রপ্তানির ওপর চার মাস আগে আরোপ করা ৪০ শতাংশ শুল্ক কমিয়ে ২০ শতাংশ করার ঘোষণা দিয়েছে দেশটির সরকার। গত শুক্রবার সন্ধ্যায় ভারতের বৈদেশিক বাণিজ্য সংস্থার মহাপরিচালক সন্তোষ কুমার স্বাক্ষরিত এক নোটিশের মাধ্যমে পেঁয়াজ রপ্তানিতে শুল্ক প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়।

ব্যাংক খাত সংস্কারে বাংলাদেশকে সহায়তা দেবে এডিবি

প্রকাশ: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:০৩ এএম
বাংলাদেশকে সহায়তা দেবে এডিবি

বাংলাদেশের ব্যাংক খাতের সংস্কারে ৫০০ মিলিয়ন বা ৫০ কোটি ডলার সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে ম্যানিলাভিত্তিক বাংলাদেশের অন্যতম উন্নয়ন সহযোগী এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। আগামী বছরের মার্চের মধ্যে এই অর্থ পাওয়া যেতে পারে বলে আভাস দিয়েছে সংস্থাটি। এ ছাড়া বাজেট সহায়তার অংশ হিসেবে চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে (এডিবি) ৪০০ মিলিয়ন বা ৪০ কোটি ডলার পাওয়া যাবে। 

গতকাল রবিবার সচিবালয়ে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে বৈঠক করে এই অর্থ সহায়তা দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে এডিবির প্রতিনিধিদল।

বৈঠকে চলমান ঋণ ও ভবিষ্যৎ অর্থায়ন নিয়ে এডিবির প্রতিনিধিদলের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। এডিবি বলেছে, বাংলাদেশের চলমান প্রকল্পে অর্থায়ন অব্যাহত রাখবে। এ ছাড়া নতুন করে যে বাজেট সহায়তা চাওয়া হয়েছে, সে বিষটিও সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করবে সংস্থাটি। 

বৈঠকে এডিবির সিনিয়র অ্যাডভাইজার এডিমন গিনটিং, কান্ট্রি ডিরেক্টর হুয়ে ইউন জুয়াং, ডেপুটি কান্ট্রি ডিরেক্টর জিয়াংবো নিং উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠক শেষে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘এডিবি বাংলাদেশের অন্যতম অর্থায়ন সহযোগী। বৈঠকে আমরা ক্লাইমেট ফান্ড এবং অন্যান্য জলবায়ু প্রকল্প নিয়ে আলাপ করেছি। এ ছাড়া ব্যবসা-বাণিজ্যের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতার বিষয়েও আলাপ হয়েছে। এডিবি তার চলমান অর্থায়ন প্রকল্পগুলো অব্যাহত রাখার আশ্বাস দিয়েছে। পাশাপাশি বিভিন্ন মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্প পরিকল্পনা নিয়ে আমরা আলাপ করেছি।’ 

বৈঠকে উপস্থিত এক কর্মকর্তা জানান, বাজেট সহায়তা বাবদ এডিবি যে ৪০০ মিলিয়ন ডলার দেওয়ার কথা তা ডিসেম্বরের মধ্যে আসবে। এ ছাড়া ব্যাংকিং ও অন্যান্য খাতের সংস্কারের জন্য সহায়তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ব্যাংক খাতের সংস্কারের জন্য ১ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার সহায়তা চাওয়া হয়েছে। আগামী মার্চের মধ্যে এই খাতে ৫০০ মিলিয়ন ডলার দেবে এডিবি। এ ছাড়া জ্বালানি খাতের উন্নয়নে ১ বিলিয়ন ডলারের সহায়তা চাওয়া হয়েছে। বৈঠকে অর্থ সচিব খায়েরুজ্জামান মজুমদার ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

দেশে সারের সংকট নেই : কৃষি উপদেষ্টা

প্রকাশ: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯:৫৫ এএম
দেশে সারের সংকট নেই : কৃষি উপদেষ্টা
কৃষি মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে দেশের বিভিন্ন বন্যার পরিস্থিতি নিয়ে সম্প্রতি পর্যালোচনা করা হয় এতে সভাপতিত্ব করেন কৃষি ও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেনেন্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। ছবি : সংগৃহীত

দেশে সারেরর সংকট নেই বলে জানিয়েছেন কৃষি ও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। তিনি বলেন, সারের কোনো সংকট হবে না, ডিসেম্বর পর্যন্ত পর্যাপ্ত মজুত রয়েছে । ফলে কৃষকরা চাহিদামতো সার ক্রয় ও ব্যবহার করতে পারবেন বলেও জানান তিনি।
 
শনিবার কৃষি মন্ত্রণালয়ের সভা কক্ষে দেশের বিভিন্ন জেলায় বন্যা পরিস্থিতি পর্যালোচনা, বন্যার্তদের পুনর্বাসনে গৃহীত পদক্ষেপ ও বাস্তবায়ন অগ্রগতি পর্যালোচনা এবং কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই), বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) ও বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের (বিএআরসি) কার্যক্রম সম্পর্কে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় কৃষিসচিব ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়াসহ মন্ত্রণলয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও দপ্তর/সংস্থা প্রধানরা উপস্থিত ছিলেন।

সার আমদানির প্রক্রিয়া স্বাভাবিক আছে বলে জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, ভবিষ্যতে সংকট হতে পারে- এ আশঙ্কায় অতিরিক্ত সার ক্রয় বা মজুত না করা থেকে বিরত থাকুন। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের পুনর্বাসন কার্যক্রম স্বচ্ছতার সঙ্গে দ্রুত সম্পন্ন করার জন্যও সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেন তিনি।

জানা গেছে, দেশে ১৬ আগস্ট থেকে আকস্মিক বন্যায় দেশের ২৩টি জেলায় ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ জেলাসমূহে মোট ৩ লাখ ৭২ হাজার ৭৩৩ হেক্টর জমি প্লাবিত হয়। ক্ষতিগ্রস্ত ফসলি জমির পরিমাণ ২ লাখ ৮ হাজার ৫৭৩ হেক্টর। ফসল উৎপাদনে ক্ষতির পরিমাণ ৭ লাখ ১৪ হাজার ৫১৪ টন, যার আর্থিক মূল্য প্রায় ৩,৩৪৬ কোটি টাকা। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের সংখ্যা ১৪ লাখ ১৪ হাজার ৮৯ জন। বন্যায় আক্রান্ত ২৩টি জেলার মোট আবাদকৃত ফসলের শতকরা ১৪.৫৮ ভাগ নষ্ট হয়েছে।

বন্যায় অধিক আক্রান্ত ৭টি জেলায় ক্ষতিগ্রস্ত জমির পরিমাণ: ফেনী ৩৫,৬৭৩ হেক্টর (৮০%), নোয়াখালী ৩৮,৪৫৬ হেক্টর (৩৭%), কুমিল্লা ৪৯,৬০৮ হেক্টর (৩৬%), লক্ষ্মীপুর ১৫,৬২৬ হেক্টর (৩৩%), চট্টগ্রাম ২৩,৯৯২ হেক্টর (১৬%), মৌলভীবাজার ১৫,২২২ হেক্টর (১২%) ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া ৮,৩২৬ হেক্টর (৩৫%)।

বন্যায় জেলাগুলোর রোপা আমন ১,৪১,৬০৯ হেক্টর, আউশ ৩৮,৬৮৯ হেক্টর, বোনাআমন ৭৬৪ হেক্টর, রোপা আমন বীজতলা ১৪,৯০৮ হেক্টর ও শাকসবজি ১১,২৯০ হেক্টর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়া আদা, হলুদ, আখ, পান, মরিচ, তরমুজ, পেঁপে, গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ, টমেটো ইত্যাদি ফসল এবং ফলবাগান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

বন্যা মোকাবিলায় ফসলের ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় বন্যাত্তোর পরিস্থিতিতে রোপণের জন্য আমন ধানের বীজ বিতরণ ও বীজতলা প্রস্তুত করা, কন্ট্রোল রুমের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ, কৃষি পুনর্বাসন সহায়তা দেওয়া এবং কমিটির মাধ্যমে সামগ্রিক কার্যক্রম সমন্বয় ও মনিটরিং করা হচ্ছে।

বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকের মাঝে পুনর্বাসন কর্মসূচি বাবদ ৯টি জেলায় (কুমিল্লা, চাঁদপুর, বি.বাড়িয়া, সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, কক্সবাজার, লক্ষ্মীপুর ও খাগড়াছড়ি) রোপা আমন চাষের জন্য তাৎক্ষণিকভাবে ১৩ কোটি ৬৬ লাখ টাকা প্রণোদনা দেওয়া হয়। এর মাধ্যমে আমন ধানের ৪০০ মে. টন বীজ কৃষক পর্যায়ে বিতরণ করা হয়। উপকারভোগী কৃষক পরিবারকে ১০ কেজি ডিএপি সার, ১০ কেজি এমওপি সার এবং নগদ ১০০০ টাকা (মোবাইল/অনলাইন ব্যাংকিং) দেওয়া হচ্ছে। এতে ১০,৬৬৭ হেক্টর জমি রোপা আমন চাষের আওতায় আসবে এবং উপকারভোগী কৃষকের সংখ্যা ৮০,০০০ জন।

বন্যাকবলিত জেলাকে গুরুত্ব দিয়ে ৬৪ জেলায় ১২টি ফসলে (গম, ভুট্টা, সরিষা, সূর্যমুখী, চিনাবাদাম, সয়াবিন, পেঁয়াজ, মুগ, মসুর, খেসারি, ফেলন ও অড়হড়) রবি মৌসুমে প্রণোদনা/পুনর্বাসনের জন্য ১৬৪.৭৯ কোটি টাকা অর্থছাড় করা হয়েছে, যাতে ১৬.৪১ লাখ কৃষক উপকৃত হবে। পরবর্তীতে শীতকালীন শাকসবজি উৎপাদনের জন্য ২২.৮৪ কোটি টাকা ১.৫ লক্ষ কৃষককে প্রণোদনা দেওয়ার জন্য অর্থছাড় করা হয়েছে।

বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) বিভিন্ন খামারে ২২.৫ একর জমিতে চারা উৎপাদনের জন্য ৪৫০০ কেজি আমন ধানের বীজ বপন করা হয়েছে। উৎপন্ন চারা দিয়ে ৪৫০ একর (১৩৫০ বিঘা) জমিতে আমন ধান আবাদ করা সম্ভব হবে।

আগামী ২০ থেকে ২৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ফেনী, নোয়াখালী ও খাগড়াছড়ি জেলায় মোট ২৫০০টি কৃষক পরিবারের কাছে রোপা আমন ধানের চারা পৌঁছাবে, যা দিয়ে ২৫০০ বিঘা জমিতে আমন ধান আবাদ করা হবে। এর মধ্যে বিএডিসি কর্তৃক সরবরাহকৃত বীজে ১৩২৫ বিঘা, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট কর্তৃক সরবরাহকৃত বীজে ৩৭৫ বিঘা, বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা) কর্তৃক সরবরাহকৃত বীজে ৪৫০ বিঘা এবং বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) কর্তৃক সরবরাহকৃত বীজে ৩৫০ বিঘা জমিতে রোপা আমন ধান চাষ করা হবে। বিএডিসির মধুপুরস্থ খামারের ১.৫০ একর উঁচু জমিতে আমন ধানের বীজ রোপণ করা হয়েছে, যা দ্বারা ফেনী জেলার মহিপালে অবস্থিত খামারের ক্ষতিগ্রস্ত ২৫ একর (৭৫ বিঘা) জমিতে আমন ধান আবাদ করা হবে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহায়তায় কুমিল্লা সেনানিবাসে ২.৫০ একর (৭.৫ বিঘা) জমিতে চারা তৈরি করে ক্ষতিগ্রস্ত দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল জেলার কৃষক পরিবারের মধ্যে বিনামূল্যে বিতরণ করা হবে। আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট ১২০০ কেজি বীজের চারা ২৪০টি কৃষক পরিবারের মধ্যে বিনামূল্যে বিতরণ করবে মর্মে আশ্বাস পাওয়া গেছে। বেসরকারি সংস্থা সিনজেন্টা থেকে ১৫ মে. টন বীজ ৫ কেজি হারে ৩০০০ জন কৃষক পরিবারের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে।