প্রত্যেক প্রাণীর বেঁচে থাকার জন্য গাছ আবশ্যকীয়। গাছ আমাদের অক্সিজেন দেয়। সেই অক্সিজেন গ্রহণ করে আমরা বেঁচে থাকি। একটি গাছ বছরে প্রায় ১৩ কেজি কার্বন-ডাই অক্সাইড গ্রহণ করে। সবুজ গাছগাছালি ও বনের মাধ্যমে আল্লাহতায়ালা পৃথিবীকে সুশোভিত ও সৌন্দর্যমণ্ডিত করেছেন।
পৃথিবীর মাটি আবাদ ও ভূমিকে সবুজ-শ্যামল করতে গুরুত্ব দিয়েছে ইসলাম। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তিনি জমিন থেকে তোমাদের সৃষ্টি করেছেন, এর মধ্যে তোমাদের বসতি দান (আবাদ) করেছেন।’ (সুরা হুদ, আয়াত: ৬১)
বোঝা গেল, পৃথিবীতে আমাদের অস্তিত্বের অন্যতম লক্ষ্য হলো, জমিনকে আবাদ করা। গাছ লাগানো ও গাছগাছালির যত্ন নেওয়া সেই আবাদের অংশ। গাছ পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে। চারদিক সতেজ-সজীব গতিময় রাখে। গাছ লাগানো একটি সুন্দর সুন্নাহও বটে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যেকোনো মুসলমান (ফলবান) গাছ লাগাবে তা থেকে যা কিছু খাওয়া হবে, তা তার জন্য সদকা হবে। ওই গাছ থেকে যা চুরি হবে, তাও সদকা হিসেবে গণ্য হবে। পশু যা খাবে, তাও সদকা হিসেবে গণ্য হবে। পাখি যা খাবে, তাও সদকা হিসেবে গণ্য হবে। আর কেউ ওই গাছের ক্ষতিসাধন করলে, তাও তার জন্য সদকা হিসেবে বিবেচিত হবে।’ (মুসলিম, ১৫৫২)
রাসুলুল্লাহ (সা.) আরও বলেছেন, ‘যেকোনো মুসলমান ফলবান গাছ রোপণ করে কিংবা কোনো ফসল ফলায় আর তা থেকে পাখি, মানুষ বা চতুষ্পদ জন্তু খায়, তবে তার জন্য সেটি সদকা বলে গণ্য হবে।’ (বুখারি, ২১৯৫)
জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ (রা.) বলেন, “রাসুলুল্লাহ (সা.) একবার উম্মে মাবাদের বাগানে প্রবেশ করে তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘হে উম্মে মাবাদ, এ গাছ কে লাগিয়েছে? কোনো মুসলমান না কোনো কাফের?’ সে বলল, ‘মুসলমান’। তিনি বললেন, ‘কোনো মুসলমান যদি কোনো গাছ লাগায়, আর তা থেকে মানুষ বা পশু খায়, তবে সেটি তার জন্য দানস্বরূপ থাকবে।” (মুসলিম, ৯৯২)
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘কেউ যদি পড়ে থাকা (মালিকানাহীন) জমিকে আবাদ করে, তবে সে এর প্রতিদান পাবে, আর যেসব খাদ্যসন্ধানী প্রাণী এ জমির ফসল থেকে খাবে, তা ওই ব্যক্তির জন্য সদকারূপে গণ্য হবে।’ (আস-সুনানুল কুবরা লিন নাসায়ি, ৫৭৫৭)
আনাস (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যদি নিশ্চিতভাবে জানো যে কিয়ামত এসে গেছে, তখন হাতে যদি একটি গাছের চারা থাকে, যা লাগানো যায়, তবে সেই চারাটি লাগাবে।’ (বুখারি, আদাবুল মুফরাদ, ৪৭৯)
উল্লিখিত হাদিসগুলো পাঠ করলে আমাদের সামনে গাছ লাগানোর ব্যাপারটি কতটা গুরুত্বপূর্ণ, তা বুঝে আসে। এখানে গাছ লাগানোর ক্ষেত্রে পেশাদার হওয়া জরুরি নয়; নিছক ঘরের আশপাশে, বাড়ির আঙিনায় গাছ লাগিয়েও এ সুন্নতের ওপর আমল করা যায়। তেমনই জমি ও নগর-পরিচ্ছন্নতার কাজেও অংশ নেওয়া যায়। তাও না পারলে অন্তত কোনো গাছ বা চারার ক্ষতি না করা।
গাছ লাগানো অন্যতম একটি ইবাদত। ইসলামের দৃষ্টিতে এ কাজ অত্যন্ত পুণ্যময়। গাছ লাগানো রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর বিশেষ আমল। তিনি নিজে গাছ লাগিয়েছেন ও তার পরিচর্যা করতে মানুষকে উৎসাহিত করেছেন।
লেখক: আলেম ও সাংবাদিক