ইসলাম জিন ও শয়তানের অস্তিত্বকে বিশ্বাস করে। মনুষ্য জাতির সৃষ্টির আদিকাল থেকেই ইতিহাসে জড়িত শয়তানের নাম। জিনেরা মানুষ ও প্রাণীর রূপ ধারণ করতে পারে। ইবলিস বদরের যুদ্ধের সময় সুরাকা ইবনে মালিকের রূপ ধরে এসে মুশরিকদের সাহায্য করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। আবু হুরাইরা (রা.) বলেন, “রমজান মাসে রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাকে দান-সদকার সম্পদগুলো দেখাশোনার দায়িত্বে নিয়োজিত করলেন। রাতে এক লোক এসে কিছু খাবারদাবার নিয়ে যাচ্ছিল। আমি খপ করে তাকে ধরে বললাম, ‘আমি তোমাকে নবিজির কাছে নিয়ে যাব’। সে বলল, ‘আমি গরিব মানুষ। আমার অনেক বড় পরিবার। খুব অভাবে পড়ে গেছি।’ আমার দয়া হলো, তাকে ছেড়ে দিলাম। পরদিন সকালে আল্লাহর রাসুলের সঙ্গে দেখা হলে তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘আবু হুরাইরা, তোমার কয়েদি গতকাল রাতে কী বলেছে?’ আমি বললাম, ‘ইয়া রাসুলাল্লাহ, সে খুবই অভাবী একজন মানুষ। পরিবারের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করতে পারছে না সে। তার প্রতি আমার খুব দয়া হলো, তাই তাকে ছেড়ে দিয়েছি।’ তিনি বললেন, ‘সে মিথ্যা বলেছে। আজ আবার আসবে।’ নবিজির কথায় আমি নিশ্চিত ছিলাম, সে ফিরে আসবে। তাই তার জন্য ওত পেতে রইলাম। সে আবারও চুপিচুপি ঢুকে পড়ে সদকার খাবারদাবার চুরি করতে লাগল। আমি তাকে হাতেনাতে ধরে বললাম, ‘এবার তোমাকে অবশ্যই নবিজির কাছে নিয়ে যাব।’ সে বলল, ‘আমাকে ছেড়ে দিন। আমি গরিব মানুষ। বড় একটা পরিবারের খরচ চালাতে হয় আমাকে, এই শেষ; আর আসব না’। এতে আমার আবারও তার প্রতি দয়া হলে তাকে ছেড়ে দিলাম। ভোরবেলা রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাকে বললেন, ‘আবু হুরাইরা, গতকাল রাতে তোমার কয়েদি কী বলেছে?’ জবাব দিলাম, ‘ইয়া রাসুলাল্লাহ, সে খুবই অভাবী একজন মানুষ। তার প্রতি আমার খুব দয়া হলে তাকে ছেড়ে দিয়োছি।’ তিনি বললেন, ‘মিথ্যা বলেছে। সে আজকেও আসবে।’ ঠিকই সে রাতের বেলায় খাবার চুরি করতে চলে আসে। আমি তাকে জাপটে ধরে বললাম, ‘এবার আমি তোমাকে নবিজির কাছে নেবই নেব, এই নিয়ে তিনবার হলো, কথা দিয়েছিলে আর আসবে না, কিন্তু ঠিকই এসেছ।’ সে বলল, ‘আমাকে ছেড়ে দিন, আমি আপনাকে এমন কিছু কথা শিখিয়ে দেব, যাতে আল্লাহ আপনার কল্যাণ করবেন।’ আমি বললাম, ‘তাই নাকি? শুনি তোমার কী কথা?’ সে উত্তর দিল, ‘ঘুমানোর আগে আপনি আয়াতুল কুরসি পড়ে নেবেন, তা হলে আল্লাহর পক্ষ থেকে আপনার জন্য একজন পাহারাদার নিযুক্ত করা হবে, সকাল পর্যন্ত শয়তন আপনার ধারে-কাছে আসতে পারবে না।’ আমি তাকে ছেড়ে দিলাম। পরদিন সকালে রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘তোমার কয়েদি গত রাতে কী বলল?’ জবাব দিলাম, ‘সে আমাকে একটি আমলের কথা বলেছে। তার দাবি, এই আমলটি করলে আল্লাহ আমাকে কল্যাণ দান করবেন। তাই তাকে ছেড়ে দিয়েছি।’ রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘কী বলেছে সে?’ আমি বললাম, ‘সে বলেছে, রাতে ঘুমোতে যাওয়ার সময় আয়াতুল কুরসি পড়তে। তা হলে আল্লাহর পক্ষ থেকে এজন্য একজন পাহারাদার নিযুক্ত করা হবে। সকাল পর্যন্ত শয়তন ধারে-কাছে আসতে পারবে না।’ রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘সে তোমাকে সত্য কথাই বলেছে, যদিও সে নিজে একজন মিথ্যাবাদী। আবু হুরাইরা, গত ৩ রাত তুমি কার সঙ্গে কথা বলেছ, জানো?’ আমি বললাম, ‘জি না। কে সে?’ জবাবে নবিজি বলেন, ‘সে ছিল শয়তান।” (বুখারি, হাদিস: ২৩১১)
মানুষের ছদ্মবেশ ছাড়াও শয়তান বিভিন্ন প্রাণীর রূপ ধারণ করতে পারে। যেমন- উট, গাধা, গরু, কুকুর বা বিড়াল। জিনেরা প্রায়ই কালো কুকুর ও বিড়ালের রূপ ধরে। কারণ কালো রং অন্যান্য রঙের তুলনায় অপশক্তি ও তাপ ধারণে অধিক সক্ষম, যা শয়তানের জন্য বেশি উপযোগী।
জিনেরা সাপের রূপও ধারণ করে। অনেক মানুষ তাদের এই রূপে দেখেছে বলে প্রমাণ পাওয়া যায়। তাই রাসুলুল্লাহ (সা.) ঘরে থাকা সাপ হত্যা করতে নিষেধ করেছেন এ কারণে যে, তারা মুমিন জিনও হতে পারে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,‘মদিনায় কিছু জিন আছে, যারা ইসলাম গ্রহণ করেছে। যদি তাদের কাউকে দেখো, তা হলে ৩ দিন তাকে সতর্ক করবে। এরপরও যদি তাদের দেখতে পাও, তা হলে হত্যা করে ফেলো। কারণ সেটা মুমিন নয়, শয়তান।’ (মুসলিম, হাদিস: ২২৩৬)
লেখক: আলেম, গবেষক ও সাংবাদিক