সাক্ষাৎকার / বিশ্বমানের হজ ও ওমরা সেন্টার করতে চাই : এম. শাহাদাত হোসাইন তসলিম । খবরের কাগজ
ঢাকা ২৬ বৈশাখ ১৪৩১, বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪

সাক্ষাৎকার বিশ্বমানের হজ ও ওমরা সেন্টার করতে চাই : এম. শাহাদাত হোসাইন তসলিম

প্রকাশ: ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:০০ এএম
বিশ্বমানের হজ ও ওমরা সেন্টার করতে চাই : এম. শাহাদাত হোসাইন তসলিম
হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব)-এর প্রেসি‌ডেন্ট এম. শাহাদাত হোসাইন তসলিম। ছবি : সংগৃহীত

হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব)-এর প্রেসিডেন্ট এম. শাহাদাত হোসাইন তসলিম। এর আগে তিনি দুইবার এ সংগঠনের প্রেসিডেন্ট ও একবার মহাসচিব ছিলেন। কুমিল্লার এ কৃতিসন্তান পড়াশোনা করেছেন দেশ-বিদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে। স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছেন যুক্তরাষ্ট্র থেকে। একাধারে তিনি একজন সফল ব্যবসায়ী, সমাজসেবক ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। আল-রশিদ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি ২০০১ সাল থেকে জড়িত আছেন হজ ব্যবস্থাপনার সঙ্গে। বাংলাদেশের হজ ব্যবস্থাপনাকে সহজ, সুন্দর ও আদর্শ হজ ব্যবস্থাপনায় উন্নীত করার নেপথ্য কারিগর তিনিই। হজ ব্যবস্থাপনা, হাজিদের করণীয়-বর্জনীয়, হাবের সঙ্গে দীর্ঘ পথচলা ও ব্যক্তিজীবনের নানা অনুষঙ্গ নিয়ে তার সঙ্গে কথা বলেছেন মিরাজ রহমান ও রায়হান রাশেদ   

খবরের কাগজ: টানা তৃতীয়বারের মতো হাবের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন, অনুভূতি কী? 
তসলিম: টানা তিনবার (২০১৯ থেকে বর্তমান) আমি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছি—প্রতিবারই পূর্ণ প্যানেলে জয় পেয়েছি। আর এর আগে একবার মহাসচিব (২০১৭-২০১৯) নির্বাচিত হয়েছি। আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহতায়ালার রহমত, হাজিদের দোয়া এবং হাব সদস্যদের ভালোবাসা এবং আস্থায় এটা সম্ভব হয়েছে। বাংলাদেশের ৯৫% হাজিদের হজকেন্দ্রিক সার্বিক কার্যক্রম পরিচালনার গুরুত্বপূর্ণ কর্মযজ্ঞটি হাবের মাধ্যমে সম্পাদিত হয়। পৃথিবীতে হাব-ই একমাত্র সংগঠন, যার অধীনে এত অধিকসংখ্যক মানুষ বেসরকারিভাবে হজে যায়। আমিসহ আমার নির্বাচিত সহকর্মীরা হাবের মাধ্যমে অর্পিত হজকেন্দ্রিক দায়িত্বকে ইবাদত মনে করে পালন করি। তাই হাব সদস্যরা আমাদের ওপর এ গুরুদায়িত্ব অর্পণে আস্থা রাখেন। 

খবরের কাগজ: আপনার নেতৃত্বে হাবে সংঘটিত হয়েছে এমন কিছু কাজের কথা বলুন, যা এর আগে হয়নি। 
তসলিম: বাংলাদেশের হজ ব্যবস্থাপনায় বেশকিছু বিশৃঙ্খলা ও অব্যবস্থাপনা ছিল। হজযাত্রীদের কষ্টের অনেক বিষয় ছিল। অনেক অনিয়ম ছিল। সততা, নৈতিকতা ও ন্যায়বিচারের ঘাটতি ছিল। আমরা এগুলো চিহ্নিত করে আন্তরিকভাবে সমাধানের চেষ্টা করেছি। সারাজীবনের লালিত স্বপ্ন বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে হাজিরা বিভিন্নভাবে প্রতারিত হতেন এবং এজেন্সি মালিকরা বঞ্চিত হতেন নৈতিক ও যৌক্তিক অনেক অধিকার থেকে। উভয় পক্ষীয় সমস্যার সমাধানের একটি সেতুবন্ধন তৈরিতে কাজ করেছি। যেমন—হজযাত্রীদের ব্যবহার অনুপযোগী একটি ব্যাগ নিতে বাধ্য করা হতো। এ ব্যাগের পেছনে ছিল অনৈতকতার চর্চা। হাজিদের থেকে বেশি টাকা নিয়ে কম টাকায় ব্যাগ সরবরাহের ব্যাপারটি গোটা হজ ব্যবস্থাপনার আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ছিল। অনৈতিক এ বাণিজ্য বন্ধে আমি এক প্রকার যুদ্ধ করেছি। আল্লাহ আমার সহায় হয়েছেন এবং এটি বন্ধ হয়েছে। সরকার ব্যাগ-ব্যবস্থা চালু করেছিল ভালোর জন্য, কিন্তু কিছু সুযোগসন্ধানী এর অপব্যবহার করেছিল। 
হজযাত্রী রিপ্লেসমেন্টে বিড়ম্বনায় পড়তে হতো। টাকার লেনদেন করতে হতো। সেটাও আমরা বন্ধ করেছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ডিজিটাল হজ ব্যবস্থাপনার কারণে এটা সম্ভব হয়েছে। এখন রিপ্লেসমেন্টের জন্য কারও কাছে যেতে হয় না। এজেন্সিগুলো নিজ অফিসে বসেই অনলাইনে এটা করতে পারেন।  
এ ছাড়া ডিজিটাল হজ ব্যবস্থাপনারই সুফল হিসেবে হজযাত্রীদের নিবন্ধন, প্রাক-নিবন্ধনের পদ্ধতিটি সহজ হয়েছে। আগে হজের তিন মাস আগে নিবন্ধন, প্রাক-নিবন্ধন প্রক্রিয়াটি মাত্র ৭ দিনের জন্য খুলে দেওয়া হতো। এটা নিয়ে তৈরি হতো ব্যাপক জটিলতা। আমরা এটিকে সহজ করেছি। সারা বছর নিবন্ধনের সুযোগ রেখেছি। 

খবরের কাগজ: আপনি একজন সফল ব্যবসায়ী, সমাজসেবক ও রাজনীতিবিদ। এ পথচলার অনুপ্রেরণা কে?
তসলিম: সফলতা আপেক্ষিক বিষয়। সফলতার শেষ নেই। আমি যতটুকু কাজ বা যা-ই করেছি, যা-ই বুঝেছি, অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি—এসবের মূল প্রেরণা আমার আব্বা মাওলানা রশিদ আহমদ। তিনি বাংলাদেশের বিখ্যাত একজন আলেম, লেখক ও পণ্ডিত ছিলেন। শিক্ষকতা করেছেন, করেছেন ব্যবসাও। তিনি ছিলেন নিভৃতচারী একজন সমাজসেবক। বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা। তিনি আমার জীবনের পাথেয়। আমি তার কাছ থেকেই সবকিছু শিখেছি। আব্বার পরে আম্মা এখন পর্যন্ত আমার অনুপ্রেরণার উৎস। আমি তার কাছে এখনো বিভিন্ন বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হই। তিনি আমাকে গাইড করেন। আলহামদুলিল্লাহ, আমার জীবনের সবকিছু জুড়ে আছে আব্বা-আম্মার দোয়া ও প্রভাব। পাশাপাশি আমার শিক্ষকদের অবদানও অনস্বীকার্য। 

খবরের কাগজ: জীবনে চলার পথে যখন এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হন—কি সিদ্ধান্ত নেবেন তা বুঝে উঠতে পারেন না, তখন কী করেন?
তসলিম: ব্যক্তিগত জীবনে আমি এমন পরিস্থিতিতে দৃঢ় থাকি। সহজে ভেঙে পড়ি না। আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করি। বেশি বিপদে বা কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হলে, আমি সিজদায় পড়ে যাই। সিজদায় লুটিয়ে পড়ে রাব্বুল আলামিনের কাছে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ফরিয়াদ জানাই।

খবরের কাগজ: হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ নিয়ে আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
তসলিম: বাংলাদেশের হজ ব্যবস্থাপনা নিয়ে আমার অনেক স্বপ্ন। এ দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে আল্লাহকে পাওয়ার যেমন সুযোগ রয়েছে, তেমন জাহান্নামে যাওয়ার মাধ্যমও হতে পারে এটি। আমি এখানে কাজ করে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে চাই। আমার জীবনের সবচেয়ে বড় স্বপ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে, হজযাত্রীদের খাদেম হয়ে থাকা। খাদেম হিসেবে থাকার এ নিয়তের বরকতেই আমি হাবের প্রেসিডেন্টের দায়িত্বে আছি। এ পদে থাকি আর না থাকি— হজযাত্রীদের খাদেম হিসেবে আশকোনা হজক্যাম্পে এক বোতল পানি নিয়ে হলেও এ সেবায় আমি আজীবন থাকতে চাই। 
বিশ্বের বিভিন্ন উন্নত মুসলিম দেশের আদলে বাংলাদেশের হজ ব্যবস্থাপনাকে আমি আদর্শ ও মডেল হজ ব্যবস্থাপনায় উন্নীত করতে চাই। বিশেষভাবে হজ ও ওমরাযাত্রীদের জন্য বিশ্বমানের হজ ও ওমরা সেন্টার প্রতিষ্ঠা করা আমার জীবনের অন্যতম সেরা স্বপ্ন। প্রত্যেক হজ ও ওমরাযাত্রী হজ বা ওমরা পালনে যাওয়ার আগে এ সেন্টার থেকে বাস্তবসম্মত হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে নিজেকে প্রস্তুত করবেন। এমন ব্যবস্থাপনা ইন্দোনেশিয়াসহ বেশ কিছু মুসলিম দেশে রয়েছে।   
আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি—যদি এ রকম একটি হজ ও ওমরা সেন্টার করা যায়, তা হলে বাংলাদেশের কোটি কোটি মুসলমানদের উপকার হবে। এটি হবে সদকায়ে জারিয়া। যুগের পর যুগ হাজিরা এখান থেকে সেবা পাবেন এবং সঠিকভাবে হজ ও ওমরা পালন করবেন। এ ছাড়া যারা ধনাঢ্য আছেন, তাদের প্রতি অনুরোধ করব— তারাও যেন এ ব্যাপারে এগিয়ে আসেন। 

খবরের কাগজ: হজ পালনেচ্ছু প্রত্যেক বাংলাদেশির কোন কোন বিষয়ে প্রস্তুতি ও সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি?
তসলিম:  হজ একটি ধৈর্যের যাত্রা। কষ্টমিশ্রিত আমল। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, হজ এক প্রকারের জিহাদ। সুতরাং হজের কষ্টগুলো মেনে নিতে হবে। প্রায় ৩০/৪০ লাখ মানুষকে একই সময় একই স্থানে একই আমল করতে হয়—এর ব্যবস্থাপনা করাটা খুব সহজ নয়।­ সুতরাং এখানে ধৈর্যধারণের কোনো বিকল্প নেই। আরও মনে রাখতে হবে, এটা কোনো সাধারণ সফর নয়। লৌকিকতা, দাম্ভিকতা কিংবা আভিজাত্য প্রকাশের সফর নয় এটি। এ সফরের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত নিজেকে সংযত রাখতে হবে।   

খবরের কাগজ:  সোস্যাল মিডিয়ার অনেক পোস্টে দেখা যায়— বিশ্বের বিভিন্ন মুসলিম দেশের তুলনায় বাংলাদেশ থেকে হজ পালনের খরচ অনেক বেশি। এ বিষয়ে আপনার মতামত জানতে চাচ্ছি...
তসলিম:  সোস্যাল মিডিয়ায় দেখা যায়, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া বা অন্যান্য অনেক দেশ থেকে ২ লাখ, ৩ লাখ টাকায় হজে যাওয়া যায়। অনেকে লেখেন, বাংলাদেশ থেকে বেশি টাকা নেওয়া হচ্ছে। তারা সরকার, কর্তৃপক্ষ বা হাবকে দোষারোপ করেন। মানুষের এই জানাটা ভুল। কোনো দেশ থেকেই এত কম টাকায় হজে যাওয়ার সুযোগ নেই। এসব প্রচারণায় তথ্যগত অনেক ঘাটতি রয়েছে। এটাকে আমি নিছক অপপ্রচার ছাড়া অন্য কিছু বলতে চাই না। এ ব্যাপারে সবার সচেতনতা কামনা করি।  
তবে বাংলাদেশের হজের প্যাকেজ আরও কম হওয়া উচিত। হজের খরচ কমানোর জন্য হাব সবসময় সব ধরনের চেষ্টা করে থাকে। সরকারও করছে, ধর্ম মন্ত্রণালয়ও করছে। এ ক্ষেত্রে আমি বিশেষভাবে অনুরোধ করব—বিমান ভাড়া আরেকটু কমানো সম্ভব হলে, হজ প্যাকেজ আরও কমানো সম্ভব।  
এ ছাড়া আমরা সৌদি আরবের প্যাকেজও কমনোর চেষ্টা করছি। আশার কথা হলো—২০২৩ সালের হজের প্যাকেজ থেকে ২০২৪ সালের হজের প্যাকেজ ৯০ হাজার টাকা কমেছে। অথচ ২৩ থেকে ২৪ সালে কিন্তু কোনো সেবা বা খাদ্যের দাম কমেনি। 

খবরের কাগজ: আপনার তত্ত্বাবধানে পরিচালিত আল-রশিদ ফাউন্ডেশন নিয়ে কিছু বলুন...
তসলিম:  আল-রশিদ ফাউন্ডেশন মূলত একটি সমাজসেবামূলক সংস্থা। অসহায়, গরিব এবং দুস্থ মানুষদের নানাভাবে সাহায্য-সহযোগিতা করা হয় এ সংস্থা থেকে। আল-রশিদ ফাউন্ডেশনের নানা কর্মমুখী অর্জন রয়েছে। করোনা মহামারী চলাকালে এ সংস্থা নিজস্ব অর্থায়নে সারা বাংলাদেশের মুসলিম-অমুসলিম নির্বিশেষে প্রায় সাড়ে তিন হাজার মৃতের পরিবহন, গোসল ও দাফন-কাফন সম্পন্ন করেছে।

 

অপবিত্র জিনিস দিয়ে চিকিৎসা করা যাবে?

প্রকাশ: ০৯ মে ২০২৪, ০৭:০০ পিএম
অপবিত্র জিনিস দিয়ে চিকিৎসা করা যাবে?
চিকিৎসার সরঞ্জাম। ইন্টারনেট

ইসলাম কল্যাণের ধর্ম। মানুষকে পবিত্র ও পরিশুদ্ধ করার ধর্ম। এ ধর্মের প্রতিটি বিধান দেওয়া হয়েছে মানুষের ভালোর জন্য। মুসলমান যখন দুঃখ-কষ্ট পায়, বিনিময়ে গুনাহ মাফ হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘দুঃখ-কষ্ট, চিন্তা ও রোগ যা দিয়েই একজন মুমিন আক্রান্ত হোক, এমনকি কোনো উদ্বেগও যদি তাকে উদ্বিগ্ন করে, তবে আল্লাহতায়ালা এর বিনিময়ে তার গুনাহসমূহ (ছোট গুনাহ) মাফ করে দেন।’ (বুখারি, হাদিস: ৫৩১৮)

এ কারণেই অসুস্থ অবস্থায় কোনো মুমিনের পাপে লিপ্ত হওয়া উচিত নয়। কারণ তাহলে পাপের কারণে ওই পুরস্কার ও সুবিধা থেকে সে বঞ্চিত হবে। অসুস্থ হলে কোনো নাপাক, অপবিত্র ও হারাম জিনিস দিয়ে চিকিৎসা নেওয়াও চরম ভুল। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, ‘আল্লাহতায়ালা যেসব বস্তু হারাম করেছেন তাতে তিনি তোমাদের জন্য কোনো আরোগ্য রাখেননি। তার এ কথাটি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সুন্নাহ থেকেই সংগৃহীত।’ (মুসতাদরাক লিল হাকিম, হাদিস: ৭৫০৯)

আবু হুরাইরা (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ অপবিত্র জিনিস দিয়ে চিকিৎসা গ্রহণ করতে নিষেধ করেছেন।’ (আবু দাউদ, হাদিস: ৩৮৭০) হাদিসে ‘খবিস’ শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে। এ ব্যাপক শব্দের মধ্যে হারাম, অপবিত্র ও ঘৃণিত সব জিনিস অন্তর্ভুক্ত। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর বলা ব্যাপক অর্থবোধক শব্দগুলোর অন্যতম এটি। অর্থাৎ যত অপবিত্র বস্তু তাঁর যুগে ছিল অথবা পরবর্তীকালে উদ্ভব ঘটবে, সবই নিষিদ্ধের তালিকায় চলে আসবে। ফলে চিকিৎসা বা নিরাময় লাভে তা ব্যবহার করা যাবে না।

তারিক ইবনে সুওয়াইদ জুফি (রা.) একবার রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে মদ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন। কিন্তু রাসুলুল্লাহ (সা.) তাকে নিষেধ করলেন অথবা মদ প্রস্তুত করাকে খুব খারাপ মনে করলেন। এরপর তারিক (রা.) বললেন, ‘আমি তো ওষুধ প্রস্তুত করার উদ্দেশ্যে মদ বানাই।’ তিনি বললেন, ‘এটি তো (রোগ নিরাময়কারী) ওষুধ নয়; বরং এটি নিজেই রোগ।” (মুসলিম, হাদিস: ১৯৮৪)

কেউ যদি হারাম বা অপবিত্র জিনিস দ্বারা চিকিৎসা করতে একান্ত বাধ্য হয় এবং হারাম বা অপবিত্র জিনিস ছাড়া অন্য কোনো চিকিৎসা না থাকে, তা হলে তার জন্য প্রয়োজন অনুপাতে হারাম জিনিস দিয়ে চিকিৎসার অনুমতি রয়েছে। কারণ কোরআনে জীবন সংকটাপন্ন হলে হারাম জিনিস ভক্ষণের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। দুররুল মুখতার কিতাবে হারাম জিনিস দিয়ে চিকিৎসার একটি সুস্পষ্ট মূলনীতি উল্লেখ করা হয়েছে। হারাম জিনিসের মাঝে চিকিৎসা সুনিশ্চিত হয় এবং এটি ছাড়া অন্য কোনো চিকিৎসা না থাকে, তা হলে হারাম জিনিস দিয়ে চিকিৎসার অনুমতি দেওয়া হবে। (আদ-দুররুল মুখতার, খণ্ড: ১, পৃষ্ঠা: ২১০)

লেখক: আলেম, গবেষক ও সাংবাদিক

 

সাহাবিদের আত্মত্যাগের অনন্য নজির তাবুক যুদ্ধ

প্রকাশ: ০৯ মে ২০২৪, ০৯:১৫ এএম
সাহাবিদের আত্মত্যাগের অনন্য নজির তাবুক যুদ্ধ
সৌদি আরবের মদিনা থেকে ৬৯০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত তাবুক শহর। ইন্টারনেট

আল্লাহ বলেন, ‘হে ঈমানদাররা, তোমাদের হয়েছে কী যে, যখন তোমাদের আল্লাহর পথে বের হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়, তখন তোমরা আরও জোরে মাটি কামড়ে ধরো। তোমরা কি আখেরাতের স্থলে দুনিয়ার জীবনকেই বেশি পছন্দ করো? আখেরাতের তুলনায় পার্থিব জীবনের ভোগ সামগ্রী তো অতি সামান্য। তোমরা যদি যুদ্ধাভিযানে বের না হও, তাহলে তোমাদের ভয়াবহ শাস্তি দেওয়া হবে, আর তোমাদের স্থলে অন্য সম্প্রদায় আনা হবে (অথচ) তোমরা তার কোনোই ক্ষতি করতে পারবে না। আল্লাহ সব বিষয়ে সর্বশক্তিমান।’ (সুরা তওবা, আয়াত: ৩৮-৩৯)

রাসুলুল্লাহ (সা.) তখন মদিনায়। এর মধ্যে আত্মরক্ষা ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় কয়েকটি যুদ্ধ করেছেন তিনি। সবগুলো যুদ্ধ করেছেন মদিনার সীমানায় কিংবা আশপাশে থেকে। এ যুদ্ধে যাবেন মদিনার বাইরে। যেতে হচ্ছে। সময়টি ৬৩০ খ্রিষ্টাব্দের নবম হিজরি। যুদ্ধটি তাবুকের যুদ্ধ।

তাবুক মদিনা ও দামেস্কের (সিরিয়া) মধ্যবর্তী একটি জায়গার নাম। মদিনা থেকে এটি ৬৯০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। ইসলামের বিরুদ্ধে আরবের কাফের ও মুনাফিকদের শেষ চেষ্টা ছিল এই যুদ্ধ। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর দূত হারেস বিন উমায়ের (রা.)-কে হত্যার মধ্য দিয়ে রোমানদের বিরুদ্ধে তাবুক যুদ্ধের সূচনা হয়েছিল।

রাসুলুল্লাহ (সা.) একবার দূতের মাধ্যমে জানতে পারলেন, মুতা যুদ্ধের প্রতিশোধ নিতে চূড়ান্ত ফায়সালাকারী একটি যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে পরাশক্তি রোম। শাম ও আরব সীমান্তে তারা বিশাল বাহিনী মোতায়েন করেছে। চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয় মদিনায়। নবিজি (সা.) সাহাবিদের বললেন, হিরাক্লিয়াসের আক্রমণের আগে আমরা আক্রমণ করব। মদিনার সব মুসলমানকে তৈরি হতে বললেন। এর আগে এমন রাজকীয় বাহিনীর মুখোমুখি তারা কোনো দিন হননি। মদিনার বাইরে গিয়ে যুদ্ধও করেননি।

এদিকে মদিনায় তখন খেজুর পাকার মৌসুম চলছে। খেজুরের ভারে নুইয়ে আছে কাঁদিগুলো। মন ভালো হয়ে যায় এমন একটি দৃশ্য লেগে আছে বাগানগুলোয়। সময়মতো ঘরে খেজুর তুলতে পারলে এবার জীবন হবে অন্যরকম। তবে সময়মতো খেজুর ঘরে না তুলতে পারলে মুশকিলে পড়তে হবে। মদিনায় খাদ্যাভাবও দেখা দিয়েছে এর মধ্যে। তীব্র গরমে জনজীবনে নাভিশ্বাস উঠেছে।

এদিকে তাবুক প্রান্তরে পৌঁছাতে হলে পাড়ি দিতে হবে দুর্গম মরুভূমি। যুদ্ধের রসদও তেমন নেই। এসবের মধ্যে শহর ছেড়ে এমন রাজকীয় বিশাল বাহিনীর মোকাবিলা করতে যাওয়া; বিরাট কষ্টসাধ্য ও ঝুঁকিপূর্ণ ব্যাপারই বটে। কিন্তু রাসুলপ্রেমী সাহাবিরা সবকিছু পেছনে ফেলে ত্যাগের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করে নবিজির হাতে যুদ্ধের বাইয়াত নেন। অনেকে যুদ্ধে যেতে চাইলেন না। আল্লাহ তাদের মুনাফিকির পরিচয় সুস্পষ্ট করে দেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) ৩০ হাজার যোদ্ধা সাহাবির কাফেলা নিয়ে চললেন তাবুক প্রান্তের দিকে। হিরাক্লিয়াস মুসলমানদের এমন দুঃসাহসিক অভিযানের সংবাদ পেয়ে ময়দান ছেড়ে পালিয়ে যায়। বিনা যুদ্ধেই আল্লাহ মুসলমানদের বিজয় দেন।

লেখক: আলেম ও সাংবাদিক

জিনের সঙ্গে কি মানুষের বিয়ে হয়?

প্রকাশ: ০৮ মে ২০২৪, ০৭:০০ পিএম
জিনের সঙ্গে কি মানুষের বিয়ে হয়?
প্রতীকী ছবি। ইন্টারনেট

আল্লাহতায়ালা প্রতিটি বস্তু জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করেছেন। জিন জাতির মধ্যেও রয়েছে নর-নারীর জোড়া। মানুষের মতো তাদেরও রয়েছে বিয়েশাদি ও বাচ্চা প্রজননের নির্ধারিত প্রক্রিয়া। পবিত্র কোরআনে জান্নাতি রমণীদের কুমারিত্বের বর্ণনায় এসেছে যে, ‘তাদের কোনো মানুষ বা জিন স্পর্শ করেনি।’ (সুরা আর রহমান, আয়াত: ৫৬)

অনেকেই মনে করে জিনের সঙ্গে মানুষের বিয়ে সম্ভব। আগে কখনো কখনো তাদের মাঝে বিয়ে হয়েছে। কোরআনের একটি আয়াত, সাহাবি এবং তাবিয়িদের থেকে কিছু বর্ণনা থেকে তারা এমনটা মনে করে থাকেন। আল্লাহ শয়তানকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘আর তুই তাদের (মানুষের) ধন-সম্পদ ও সন্তানসন্ততির মধ্যে অংশীদার হ এবং তাদেরকে (মিথ্যা) প্রতিশ্রুতি দিতে থাক। তাদের প্রতি শয়তানের অঙ্গীকার ধোঁকা ছাড়া কিছুই নয়।’ (সুরা ইসরা, আয়াত: ৬৪)

সুদ ও হারাম পন্থায় সম্পদ উপার্জন ও ব্যয় করার মাধ্যমে শয়তান মানুষের সম্পদে অংশীদার হয়। আর জিনা অথবা স্ত্রী সহবাসের সময় যারা ‘বিসমিল্লাহ’ বলে না, শয়তান তাদের কর্মে অংশীদার হয়। ইমাম আল-হাকিমুত তিরমিজি মুজাহিদ (রহ.) থেকে বর্ণনা করেন, ‘স্ত্রী সহবাস করার সময় যে ব্যক্তি ‘বিসমিল্লাহ’ বলে না, শয়তান তার সাথে স্ত্রী-সহবাসে লিপ্ত হয়।’ (নাওয়াদিরুল উসুল, আল-হাকিমুত তিরমিজি, খণ্ড: ১, পৃষ্ঠা: ৩৮৪)

মুজাহিদ (রহ.) বলেন, ‘ইয়েমেনের সাবা অঞ্চলের রানি বিলকিসের মা ছিল একজন দীর্ঘ কেশিনী নারী জিন।’ (মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা, হাদিস: ৩১৮৬০)

শরিয়তের বিধান সাব্যস্ত করার ক্ষেত্রে এ ধরনের বর্ণনা গ্রহণযোগ্য নয়। যদিও ইতিহাসের পাতায় বর্ণনাগুলো উঠে এসেছে।

অধিকাংশ ফকিহ জিনের সঙ্গে মানুষের বিয়েশাদি নিষেধ করেছেন; চাই সে পুরুষ হোক বা নারী। মানুষ ও জিন আলাদা জাতি। মৌলিক উপাদান ভিন্ন হওয়া এটির বড় প্রমাণ। আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহর অন্যতম একটি নিদর্শন হলো, তোমাদের থেকেই তিনি তোমাদের সঙ্গিনী সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে প্রশান্তি লাভ করতে পারো। আর সুদৃঢ় করেছেন তোমাদের পরস্পরের মাঝে দয়া ও ভালোবাসা। নিশ্চয় এর মাঝে রয়েছে চিন্তাশীলদের জন্য বহু নিদর্শন।’ (সুরা রুম, আয়াত: ২১)

অপর এক আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহ তোমাদের থেকেই তোমাদের জোড়া তৈরি করেছেন।’ (সুরা নাহল, আয়াত: ৭২)

এই দুই আয়াতের ব্যাখ্যায় মুফাসসিরগণ বলেছেন, ‘আল্লাহ পুরুষের সঙ্গী হিসেবে নারী জাতিকে সৃষ্টি করেছেন সমগোত্রীয় এবং একই উপাদান থেকে।’

আনাস ইবনে মালেক (রা.)-এর কাছে ইয়েমেনের এক সম্প্রদায় জিজ্ঞাসা করে, “একটি পুরুষ জিন আমাদের গোত্রের এক নারীর ব্যাপারে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছে, ‘তারা ভেবেছিল এ ধরনের বিয়ে হালাল হবে।’ আমরা কি তা কবুল করব।’ উত্তরে তিনি বলেন, ‘আমি তা ভীষণ অপছন্দ করি। এর দ্বারা বরং ফিতনাই বৃদ্ধি পাবে। কারণ যখন কোনো গর্ভবতী নারীকে জিজ্ঞাসা করা হবে এটা কার সন্তান? সে বলবে জিনের।’ (রুহুল মায়ানি, আল্লামা আলুসি, খণ্ড: ১০, পৃষ্ঠা: ১৮৪)

আনাস ইবনে মালেক (রা.)-এর মতে, ‘কেউ কেউ জিনের সঙ্গে বিয়েকে হারাম না বলে অপছন্দনীয় বলেছেন।’ (মাজমুউল ফাতাওয়া, ইবনে তাইমিয়া, খণ্ড: ১৯, পৃষ্ঠা: ৩৯)। জিন জাতি আল্লাহর মাখলুকের মধ্য থেকে একটি মাখলুক। মহান আল্লাহ তাদের রব।

লেখক: আলেম, গবেষক ও সাংবাদিক

মূর্খদের এড়িয়ে চলতে হয় যে কারণে

প্রকাশ: ০৮ মে ২০২৪, ১০:১২ এএম
মূর্খদের এড়িয়ে চলতে হয় যে কারণে
প্রতীকী ছবি। ইন্টারনেট

পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘আর ভালো ও মন্দ সমান হতে পারে না। মন্দকে প্রতিহত করো তা দিয়ে, যা উৎকৃষ্টতর। ফলে তোমার ও যার মধ্যে শত্রুতা রয়েছে সে যেন হয়ে যাবে তোমার অন্তরঙ্গ বন্ধু।’ (সুরা হামিম সিজদা, আয়াত: ৩৪-৩৫)

মানুষ সামাজিক জীব। একা চলতে পারে না। বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে মিশতে হয়। ওঠাবসা করতে হয়। বহুজনের সঙ্গে কথা বলতে হয়। মুমিন মানুষের সঙ্গে কথা বলার সময় ভদ্রতা বজায় রাখে। সুন্দর আচরণ করে। কিন্তু কখনো মুমিন বান্দার এমন লোকের সঙ্গে সাক্ষাৎ ঘটে যায়, যাদের মধ্যে ভদ্রতার লেশমাত্রও থাকে না। এ ধরনের লোকদের মুখোমুখি হলে কী করবে তারা, এ নিয়ে ভাবনায় পড়ে যায় অনেক সময়। ইসলামের নির্দেশনা হলো, মূর্খদের এড়িয়ে যেতে হবে। তারা তর্ক করলে তাদের থেকে দূরে থাকতে হবে। এটাই সুন্নাহ।

মূর্খ হচ্ছে, যারা তর্ক করার সময় বা কথা বলার সময় নিজের বিবেক-বুদ্ধি কাজে লাগাতে চায় না। ফলে সদুপায়ে তাদের সঙ্গে কোনো বিষয়ে সমাধানে পৌঁছার সুযোগ থাকে না। তাই নিজের স্বাভাবিক আচরণ ও ভদ্রতা বজায় রাখতে তাদের এড়িয়ে যাওয়ার বিকল্প নেই। আল্লাহ বলেন, ‘(হে নবি,) আপনি ক্ষমাপরায়ণতা অবলম্বন করুন, (মানুষকে) সৎকাজের আদেশ দিন এবং অজ্ঞদের এড়িয়ে চলুন।’ (সুরা আরাফ, আয়াত: ১৯৯)

এখানে তাদের থেকে সম্পর্ক ছিন্ন করার কথা বলা হয়নি; বরং তাদের সঙ্গে অযথা কথা না বাড়িয়ে যথাসম্ভব তাদের এড়িয়ে চলার ব্যাপারটি বলা হয়েছে। স্বাভাবিক আচরণবিধির গণ্ডি পেরিয়ে যেসব লোক এ ধরনের আচরণ করে তাদের সঙ্গে কেমন আচরণ করবে, হাদিসে তার বিবরণ এসেছে। আবু হুরাইরা (রা.) বলেন, “এক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রাসুল, আমার আত্মীয়স্বজন আছে। আমি তাদের সঙ্গে আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করি, কিন্তু তারা আমার সঙ্গে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করে রাখে। আমি তাদের উপকার করি, কিন্তু তারা আমার অপকার করে। আমি তাদের সঙ্গে সহনশীল আচরণ করি, কিন্তু তারা আমার সঙ্গে মূর্খতাসুলভ আচরণ করে।’ তিনি বললেন, ‘তুমি যা বললে, যদি প্রকৃত অবস্থা এমনই হয়, তা হলে তুমি যেন তাদের ওপর গরম ছাই নিক্ষেপ করছ। সর্বদা তোমার সঙ্গে আল্লাহর পক্ষ থেকে তাদের বিপক্ষে একজন সাহায্যকারী (ফেরেশতা) থাকবে, যত দিন তুমি এই অবস্থায় বহাল থাকবে।” (মুসলিম, হাদিস: ২৫৫৮)

মূর্খদের এড়িয়ে চলার উপায় হচ্ছে, তাদের সঙ্গ ত্যাগ করা; তাদের সঙ্গে বিবাদে লিপ্ত না হওয়া। তাদের কষ্ট থেকে বাঁচার জন্য এর চেয়ে কার্যকর ওষুধ নেই; তাদের শত্রুতা প্রতিরোধের এর চেয়ে উত্তম উপায় নেই। তাদের এড়িয়ে চলার মধ্যেই মুমিনদের প্রশান্তি ও মর্যাদা আছে।


লেখক: আলেম ও গবেষক

মানুষের ওপর কি জিনদের বদনজর পড়ে?

প্রকাশ: ০৭ মে ২০২৪, ০৬:৪৫ পিএম
মানুষের ওপর কি জিনদের বদনজর পড়ে?
ইংরেজিতে 'জিন' লেখা ছবি। ইন্টারনেট

মানুষ সৃষ্টির আগে আল্লাহতায়ালা জিনদের সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহ বলেন, ‘আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি কালো কাদামাটি থেকে, যা শুকিয়ে ঠনঠনে হয়েছিল। আর তাদের আগে জিনকে সৃষ্টি করেছি লেলিহান অগ্নিশিখা থেকে।’ (সুরা হিজর, আয়াত: ২৬-২৭)। এই আয়াত থেকে প্রতীয়মান হয়, মানবজাতির আগেই জিনদের সৃষ্টি করা হয়েছে। তবে যথেষ্ট মতভেদ রয়েছে, ঠিক কতদিন আগে তাদের সৃষ্টি করা হয়েছে।

মানুষের ওপর জিনের বদনজর পড়ে কি না, এ ব্যাপারে অনেক লোকাচার রয়েছে। বদনজর দুইভাবে হয়ে থাকে। এক. মানুষের থেকে। দুই. জিনের থেকে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘বদনজরের বিষয়টি সত্য।’ (মুসলিম, হাদিস: ২১৮৭)

রাসুলুল্লাহ (সা.) আরও বলেছেন, ‘বদনজরের ব্যাপারটি সত্য। যদি কোনো কিছু ভাগ্যকে পরিবর্তন করতে পারত, তবে বদনজরই পারত।’ (মুসলিম, হাদিস: ২১৮৮)

মানুষের মধ্যে অনেকে আছেন, বদনজরের বিষয়টি অস্বীকার করতে চান। তারা এটি নিয়ে বেশ কড়া কথা বলেন। কিন্তু হাদিস থেকে বোঝা যায়, নজর সত্য। ফলে প্রত্যেক মুসলিম হৃদয় বিনাবাক্যে মেনে নেয় ব্যাপারটি। উরওয়া ইবনে জুবাইর (রা.) বলেন, ‘একদিন নবিজি (সা.) উম্মে সালামার ঘরে চেহারা ফ্যাকাশে হয়ে গেছে এমন একজন দাসীকে দেখত পান। তখন তিনি উম্মে সালামাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, এই দাসীকে রুকইয়া অর্থাৎ ঝাড়ফুঁক করাও, তার বদনজর লেগেছে।’ (বুখারি, হাদিস: ৫৭৩৯)

ইবনে হাজার (রহ.) বলেন, ‘বদনজর জিন ও মানুষ উভয়ের থেকেই লাগতে পারে।’ (মুসনানে আহমাদ, হাদিস: ৯৬৬৮)

ইমাম আহমাদ (রহ.) আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘বদনজর সত্য, যা শয়তান ও হিংসুক বনি আদমের কারণে হয়।’ (ফাতহুল বারি, খণ্ড: ১০, পৃষ্ঠা: ২০২)

বদনজর থেকে বাঁচতে সব সময় আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতে হবে। তাঁর কাছে আশ্রয় চাইতে হবে। আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনার মাধ্যমে বদনজর থেকে বাঁচা যেতে পারে। যদি কেউ বদনজরে আক্রান্ত হয়ে যায়, তা হলে তাকে কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে রুকইয়া তথা ঝাড়ফুঁক করা যেতে পারে। রুকইয়ার মাধ্যমে বদনজর থেকে পরিত্রাণের কথা হাদিসে পাওয়া যায়।

লেখক: আলেম, গবেষক ও সাংবাদিক