সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেশত্যাগের খবর ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে সিলেটে অস্থিরতা বেড়ে যায়। আন্দোলনকারীদের নাম করে বিক্ষুব্ধ জনতা জেলা প্রশাসক কার্যালয়, পুলিশ সুপার কার্যালয় ও বাসভবনসহ বিভিন্ন সরকারি স্থাপনায় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে। সিলেটের প্রায় আড়াই হাজার দোকান ভাঙচুর করা হয়েছে। এছাড়া সাবেক মন্ত্রী, সংসদ সদস্যসহ প্রায় সব নেতৃস্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও জনপ্রতিনিধির বাসায় অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর করা হয়েছে।
সোমবার (৫ আগস্ট) বেলা তিনটার দিকে নগরীর বন্দরবাজার এলাকায় পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে আগুন দেওয়া হয়। এরপর পাশেই জেলা প্রশাসক কার্যালয়, জেলা পরিষদ ভবনে ভাঙচুর করে অগ্নিসংযোগ চালানো হয়। জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে থাকা বেশ কয়েকটি গাড়িও ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে বিক্ষোভকারীরা। একই সময়ে আরেকটি দল নগরীর কিন ব্রিজ এলাকায় পুলিশ সুপারের বাসায় আগুন দেয়। সিলেটের প্রায় সবগুলো থানা পুলিশ ফাঁড়িতেও ভাঙচুর ও আগুন দেওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
সিলেট নগরীর ধোপদিঘির এলাকায় সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের বাসায় ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়েছে। নগরীর শাপলাবাগ এলাকায় প্রবাসী কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী ও গোপাল টিলা এলাকায় সুনামগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য রনজিত সরকারের বাসায়ও হামলা করা হয়েছে।
একই সময় পৃথকভাবে আরও কয়েকটি দল নগরীর পূর্ব শাপলাবাগ এলাকায় সিলেট সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আজাদুর রহমান আজাদ, গোপালটিলা এলাকায় অবস্থিত সুনামগঞ্জ-১ (তাহিরপুর, জামালগঞ্জ, ধর্মপাশা ও মধ্যনগর) আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য (এমপি) রনজিত চন্দ্র সরকার এবং সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাসুক উদ্দিন আহমদ ও সহসভাপতি আসাদ উদ্দিনের বাসায় হামলা, ভাঙচুর চালায়। নগরীর ৫ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর রেজওয়ান আহমদ এবং ৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর লায়েক আহমদ, উপশহরের সাবেক কাউন্সিলর সালেহ আহমদ সেলিমের বাসায়ও হামলা ও ভাঙচুর হয়।
এই গণঅভ্যুত্থানে নগরীর আওয়ামী লীগ নেতা ও সমর্থিত অনেক ব্যবসায়ীর ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর ও ব্যাপক লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) কার্যনির্বাহী সদস্য ও সিলেট জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক মাহি উদ্দিন আহমদ সেলিমের ব্র্যন্ডিং ব্যবসা প্রতিষ্ঠান মাহাতে ভাঙচুর ও ব্যাপাক লুটপাট হয়েছে। এই ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে বিকেল তিনটা থেকে লুটপাট শুরু হয়ে রাত ১০টায় শেষ হয়। এসব ঘটনা গণমাধ্যমকর্মীরা সরাসরি দেখলেও ভিডিও বা ছবি তুলতে দিচ্ছে না হামলা ও লুটপাটকারীরা। এমনকী গণমাধ্যমকর্মীদের দেখলেও তারা মারার জন্য তেড়ে আসছে।
এ ছাড়া সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ, গোলাপগঞ্জ, বিয়ানীবাজারসহ বিভিন্ন উপজেলার থানা, পুলিশ ফাঁড়ি, সরকারি অফিস ভাঙচুর ও আগুন দেওয়া ও লুটপাট হয়েছে। এসব ঘটনায় পুরো নগরীজুড়েই আতঙ্ক বিরাজ করছে।
এদিকে নগরীতে এসব হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট ঠেকাতে বিএনপির নেতাকর্মী, গণমাধ্যকর্মী, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন পেশাজীবীদের নিয়ে রাতভর মাইকিং ও টহল দিয়েছেন সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী।
শাকিলা ববি/জোবাইদা/অমিয়/