চার বছর আগে পতিত জমিতে শখের বসেই মাছের ঘের গড়ে তুলেছিলেন। সেই মাছের ঘের তার স্বপ্ন পূরণের সারথি হয়ে উঠেছে। প্রায় ২২ একর জমির ওপর ছোটবড় মিলিয়ে সাতটি মাছের ঘের থেকে এ বছর তিনি লাভ করেছেন ১৯ লাখ টাকা। সাফল্যের এ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন আলফাডাঙ্গার বিদ্যাধর গ্রামের তরুণ উদ্যোক্তা তাজমিন উর রহমান তুহিন।
ফরিদপুরের একেবারে শেষ সীমান্তে আলফাডাঙ্গা উপজেলা। সীমান্তবর্তী এই জনপদের মানুষের বড় অবলম্বন কৃষি। তবে বর্ষার পানি নিষ্কাশনের সুবিধা না থাকায় বেশির ভাগ জমিই এক ফসলি। দরিদ্র বর্গাদার কৃষকের বেশির ভাগই এ জন্য বছরের বেশির ভাগ সময় কিষান দিয়ে বা রিকশা ভ্যান চালিয়ে সংসার চালায়। জমির মালিকেরাও কৃষিতে তেমন লাভের মুখ দেখতে পান না। এ অবস্থায় স্থানীয় যুবক তাজমিন উর রহমান তুহিন বিকল্প পন্থা হিসেবে এক ফসলি জমিতে গড়ে তোলেন মাছের ঘের।
পড়ালেখা শেষ করে ঢাকায় একটি পোশাকের ব্যবসার পাশাপাশি অনেকটা শখের বসেই চার বছর আগে গড়ে তোলেন হজরত শাহ্জালাল মৎস্য অ্যান্ড ডেইরি ফার্ম। মাছের ঘেরের পাশেই তিনি করছেন সবজির আবাদ। এ ছাড়া গরুর খামার ও বায়োগ্যাস প্লান্ট গড়ে তুলেছেন। সব মিলিয়ে একটি বহুমুখী কৃষি খামারে রূপ নিয়েছে তার শখের উদ্যোগ।
তুহিন বলেন, ‘এই জমিগুলো ছিল নিচু, এক ফসলি জমি। এখানে কৃষিকাজ করে লাভবান হতাম না। কৃষকেরাও জমি লিজ নিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হতেন। তখন আমি আধুনিক পদ্ধতিতে কী করতে পারি সেই চিন্তা থেকে জেলা প্রশাসনের অনুমোদন নিয়ে জমি খনন করে মাছের ঘের করি। আর ঘেরের চারপাশে উঁচু জমিতে কলা, পেঁপে, সিম, বেগুনসহ নানান সবজি লাগাই। ফলদ গাছও রোপণ করি। এখন এখানে ছোটবড় মিলিয়ে সাতটি বড় ঘের রয়েছে। দেশীয় প্রজাতির রুই, মৃগেল, কাতল, পুঁটি ও গ্রাসকাপ জাতীয় মাছের চাষ করছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘গত অর্থবছরে এ থেকে তার প্রায় ১৯ লাখ টাকা আয় হয়েছে। তা থেকে সরকারি খাতে ৫৭ হাজার টাকার উৎস কর দিয়েছি।’
মাছের ঘেরের সাফল্যের পর তাজমিন উর রহমান তার বাড়ির পাশে গড়ে তুলেছেন গরুর খামার ও বায়োগ্যাস প্লান্ট। নতুন করে আরও দুটি ঘের বাড়ানোরও উদ্যোগ নিয়েছেন। স্থানীয়রা বলছেন এই ঘের হওয়ায় তাদের অনেক সুবিধা হয়েছে। তার দেখাদেখি অন্যরাও উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন মাছের চাষে।
পাশের মালা গ্রামের তাইজুল ইসলাম টিটন বলেন, ‘আমি তার এই উদ্যোগ দেখে উদ্বুদ্ধ হই। এরপর পাঁচ একর জমিতে মাছের ঘের করি। পাশাপাশি ঘেরে পাড়ে সবজি লাগাই। এবছর আমি এক লাখ টাকার শুধু লাউ বিক্রি করেছি। ১১ লাখ টাকার মাছ বিক্রি করেছি।’
স্থানীয় ওয়ার্ড মেম্বার সৈয়দ শরিফুল ইসলাম বলেন, এই জমিতে একসময় কিছুই হতো না বললেই চলে। তবে এখন এই ঘের করায় যেমন এর মালিকরা লাভবান হচ্ছেন, তেমনি গ্রামবাসীও উপকৃত হচ্ছেন। এখানে অনেকের কর্মসংস্থান হচ্ছে। অনেকে বিনা মূল্যে মাছ ধরে পরিবারের চাহিদা মেটাচ্ছেন।
এ ব্যাপারে আলফাডাঙ্গা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা এসএম লুৎফর রহমান বলেন, ‘তানজিম উর রহমান তুহিন প্রায় ২২ একর জমির ওপরে যে মাছের ঘের গড়ে তুলেছেন, সেটি খুবই ভালো একটি দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছে। আমরা নতুনভাবে যারা মৎস্য চাষের প্রশিক্ষণ নিতে আসেন তাদেরকে সেখানে নিয়ে সরেজমিনে প্রশিক্ষণ দিই। তিনি এজন সফল মৎস্যচাষি হিসেবে সুনাম কুড়িয়েছেন। আমরা তাকে সবধরনের পরামর্শ ও প্রয়োজনীয় সহায়তা করছি।’