বিলীন হচ্ছে পার্ক-মাঠ । খবরের কাগজ
ঢাকা ২৬ বৈশাখ ১৪৩১, বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪

বিলীন হচ্ছে পার্ক-মাঠ

প্রকাশ: ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১২:১৮ পিএম
বিলীন হচ্ছে পার্ক-মাঠ
সবুজ কমে যাচ্ছে দিন দিন। রাজধানীর মিরপুর-১ নম্বর সংলগ্ন এলাকা থেকে শুক্রবার তোলা।

তাপপ্রবাহের কবলে পড়ে মানুষ ছুটে যেতে চায় সবুজ শীতল গাছগাছালির ছায়ায়। এ ক্ষেত্রে তাদের পার্কের দিকে নজর পড়ে। বাসার কাছে কোথায় আছে সবুজে ঘেরা পার্ক কিংবা উদ্যান, সেখানে যাওয়ার আগ্রহ বাড়ে মানুষের। কিন্তু এই কংক্রিটের রাজধানীতে নিঃশেষ হওয়ার পথে পার্ক ও খেলার মাঠ। যে কয়টি অবশিষ্ট আছে, সেগুলোও নির্মাণকাজে ও বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হচ্ছে। তা ছাড়া পার্ক-মাঠ থাকার ক্ষেত্রে এলাকাভিত্তিক বৈষম্যও রয়েছে। উন্নত এলাকায় থাকলেও অনুন্নত এলাকায় পার্ক-মাঠ নেই বললেই চলে। ফলে রাজধানীর শিশু-কিশোরদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ হচ্ছে না। হুমকির মুখে পড়েছে রাজধানীর জীববৈচিত্র্যও। একদিকে সবুজায়ন কমছে নানা ধরনের আধুনিকায়নের নামে। সবুজায়ন বাড়ানোর কিছু পরিকল্পনা থাকলেও এর গতি খুবই ধীর বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঢাকা শহরের যে আয়তন সেই তুলনায় ৬১০টি মাঠ থাকা দরকার। কিন্তু আছে মাত্র ২৩৫টি। এগুলো ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন ও গণপূর্ত অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন মিলিয়ে ওয়ার্ড সংখ্যা ১২৯। এর মধ্যে ৪১টি ওয়ার্ডে কোনো খেলার মাঠ-পার্ক নেই। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, ঢাকা শহরে গত ২২ বছরে পার্ক ও মাঠের সংখ্যা কমেছে ১২৬টি। 

কমছে খেলার মাঠ
দুই সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ৭৫টি ওয়ার্ডে পার্ক বা মাঠ রয়েছে মাত্র ২৭টি। এর মধ্যে ছয়টি পার্ক বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে ইজারা দেওয়া হয়েছে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ৫৪টি ওয়ার্ডে পার্ক রয়েছে মাত্র ২৩টি। বিদ্যমান এসব পার্ক ও খেলার মাঠের অধিকাংশেই নেই সর্বসাধারণের প্রবেশাধিকার। ফলে নাগরিকরা বঞ্চিত হচ্ছেন নির্মল বায়ু সেবন, ব্যায়াম ও হাঁটাচলার অধিকার থেকে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, যেকোনো শহরের প্রত্যেক নাগরিকের জন্য প্রায় ৯ বর্গমিটার খোলা জায়গা দরকার। এই খোলা জায়গা হওয়া উচিত পার্ক ও খেলার মাঠ। কিন্তু ঢাকা শহরে এর পরিমাণ এক বর্গমিটারেরও কম। 

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) এক জরিপে দেখা যায়, ঢাকার ২৩৫টি খেলার মাঠের মধ্যে ১৪১টি প্রাতিষ্ঠানিক। অর্থাৎ জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত নয়। মাত্র ৪২টি খেলার মাঠ জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত। এর মধ্যে দখল হয়ে আছে ১৬টি মাঠ। এ ছাড়া ১৭টি সরকারি মাঠ, ২৪টি আবাসিক কলোনি মাঠ এবং ১২টি ঈদগাহ রয়েছে।

হারিয়ে যাচ্ছে পার্ক
ফার্মগেটের আনোয়ারা পার্কে মেট্রোরেলের পাইলিং ও সার্ভিস এরিয়া নির্মাণের জন্য এই পার্কের সব গাছই কেটে ফেলা হয়েছে। নতুন করে সাজানোর নাম করে শাহবাগের শিশুপার্কটিও পাঁচ বছরেরও বেশি সময় ধরে বন্ধ করে রাখা হয়েছে। এখানেও বড় গাছগুলো কেটে ফেলা হয়েছে।

গুলিস্তানের ওসমানী উদ্যান নামের পার্কটিরও অবস্থা ভালো না। উন্নয়নের নামে নানা কর্মকাণ্ড করেও পার্কটির আগের চেহারা আর ফেরানো যায়নি। বাংলামোটরের পান্থকুঞ্জ পার্কে চলছে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের র‍্যাম্প নির্মাণের কাজ। চকবাজারের ওয়াটার ওয়েক্স রোডের বশিরউদ্দিন সরদার পার্কের অবস্থাও ভালো নয়। একচিলতে জায়গা। সেটাতেও রাইড বসিয়ে ব্যবসা করা হচ্ছে। বনানীর ব্লক-সির পার্কটিও বেশির ভাগ সময় তালাবদ্ধই থাকে। 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাজধানী যে দিন দিন উত্তপ্ত হয়ে উঠছে এর জন্য অনেকাংশে দায়ী পার্ক-খেলার মাঠ হারিয়ে যাওয়া। পরিবেশ ধ্বংস না করে উন্নয়ন কীভাবে করা যায়, সেই উপায় বের করতে হবে। 

বিআইপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইপিডি) নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান খবরের কাগজকে বলেন, রাজধানীতে খেলার মাঠ নিয়মিতই কমছে। যেগুলো আছে সেগুলোও বেদখলে। কর্তৃপক্ষগুলোও উদাসীন। 

যদিও দুই মেয়র পার্ক-খেলার মাঠের গুরুত্ব তুলে ধরে বারবার বলছেন। তার পরও বাস্তবতা ভিন্ন বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। 

সম্প্রতি ডিএনসিসির মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেছেন, ‘নতুন ওয়ার্ডগুলোর প্রতিটিতে একটি করে পার্ক-খেলার মাঠ করতে চাই। এ জন্য জমি অধিগ্রহণ করব।’ 

আর ডিএসসিসির মেয়র ফজলে নূর তাপস বলেছেন, ‘প্রতিটি ওয়ার্ডে যাতে একটি করে খেলার মাঠ নিশ্চিত করা যায়, সে জন্য ৩০ বছর মেয়াদি একটি ইমপ্লিমেন্টেশন প্ল্যান প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে যদি জমি অধিগ্রহণের প্রয়োজন হয়, সেটাও করা হবে।’

শিশু-কিশোরদের বিকাশ হুমকির মুখে
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) বলছে, শিশু-কিশোরদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য প্রতিদিন ন্যূনতম ১ ঘণ্টা করে খেলাধুলা ও শারীরিক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত থাকা প্রয়োজন। ইউএন-হ্যাবিটেটও মনে করে, হাঁটা দূরত্বে খেলার মাঠ, সবুজ এলাকা থাকা উচিত। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পরিকল্পনার মানদণ্ড অনুযায়ী যেকোনো আবাসন এলাকার ন্যূনতম ১০ শতাংশ খেলার মাঠ-পার্ক ইত্যাদির জন্য বরাদ্দ থাকা প্রয়োজন। 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্বল্প আয়ের মানুষসহ নগরের সব এলাকা ও শ্রেণি-পেশার মানুষের জন্য সামাজিক ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে খেলার মাঠ-পার্ক সুবিধাদি নিশ্চিত করতে হবে। উত্তরা, বনানীর মতো পরিকল্পিত এলাকায় বিনোদন সুবিধাদি না বাড়িয়েই জনসংখ্যা ও জনঘনত্ব নিয়ন্ত্রণহীনভাবে বাড়তে দেওয়া হচ্ছে। ফলে এসব এলাকার বাসযোগ্যতা কমছে।

এ প্রসঙ্গে অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, খেলার মাঠকে আধুনিক নগর পরিকল্পনায় বিনোদন সুবিধার পাশাপাশি স্বাস্থ্য অবকাঠামো হিসেবে বিবেচনা করা হয়। যে মাঠগুলো অবশিষ্ট আছে, সেগুলোতে সবার প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে হবে। 

পূর্ণাঙ্গ তালিকা চেয়েছেন হাইকোর্ট
ঢাকার উত্তর ও দক্ষিণের মেয়র, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) চেয়ারম্যান এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে ঢাকা নগরীর সব পার্ক ও খেলার মাঠের তালিকা তৈরি করে আদালতে দাখিলের জন্য ছয় মাস সময় দিয়েছেন হাইকোর্ট। পার্ক ও খেলার মাঠে বাণিজ্যিক স্থাপনা নির্মাণ বন্ধের পাশাপাশি বিদ্যমান পার্ক ও খেলার মাঠগুলো জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত রাখার এবং আদেশ পালনের পর ছয় মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করারও নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) দায়ের করা একটি রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এমন আদেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

এ ছাড়া জনসাধারণের ব্যবহার্য পার্ক ও খেলার মাঠে বাণিজ্যিকীকরণ, অননুমোদিত স্থাপনা নির্মাণ, শ্রেণি পরিবর্তন এবং দখল সংবিধান ও প্রচলিত আইনের পরিপন্থী হওয়ায় কেন তা বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন আদালত। চার সপ্তাহের মধ্যে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব; স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব; পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব; ডিএসসিসি ও ডিএনসিসি মেয়র; রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালকসহ সংশ্লিষ্টদের রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

গুলিস্তান থেকে বছরে ওঠে কোটি টাকা

প্রকাশ: ০৯ মে ২০২৪, ০৭:১০ এএম
গুলিস্তান থেকে বছরে ওঠে কোটি টাকা
ছবি : সংগৃহীত

গত সোমবার বেলা ৩টা। গুলিস্তানের জিরো পয়েন্টের সিগন্যাল পার হওয়ার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আকাশ পরিবহনের একটি বাস, গুলিস্তান হয়ে সদরঘাট যাবে বাসটি। প্রায় ৩০ মিনিট পার হলেও সিগন্যাল ছাড়ছে না, বাসে হাতে গোনা কয়েকজন যাত্রী ছিলেন। জ্যামের কারণে অধিকাংশ যাত্রী হেঁটেই তাদের গন্তব্যে রওনা হয়েছেন। বাসচালক মনির হেলপার জলিলকে বলেন, ‘কি রে গাড়িতে দেহি যাত্রী নাই।’ জলিল বলেন, ‘ওস্তাদ ব্যাপক জ্যাম, গাড়ি ঘুরাইয়া দেন, গাড়ি ঘুরাইয়া যাত্রী নিয়া নিমুনে।’ চালকের সঙ্গে কথা শেষে জ্যাম গাড়ি যাবে না বলে যাত্রীদের নামিয়ে দেন জলিল। পরে পকেট থেকে ৫০ টাকা বের করে মনির জলিলকে দেন। জলিল জানতে চান, ‘কিসের টাহা? মনির বলেন, ‘বুঝেন না কিসের।’ তখন জলিল জানান, ৫০ টাকা এখন আর নেয় না ট্রাফিক, ১০০ টাকা লাগব। পরে আরেকটি ৫০ টাকার নোট জলিলকে দেন মনির, পরক্ষণে ছাড়ে সিগন্যাল। দ্রুত গাড়ি টান দিয়ে ঘুরিয়ে নেন মনির, ততক্ষণ রাজিব নামের ট্রাফিক পুলিশের হাতে টাকা ধরিয়ে দেন হেলপার জলিল।

রাজধানীর গুলিস্তান জিরো পয়েন্টে এ ধরনের ঘটনা নিত্যদিনের। সরেজমিনে দেখা যায়, গাজীপুর থেকে পল্টন-গুলিস্তান হয়ে সদরঘাট ও কেরানীগঞ্জ যায় আকাশ, ভিক্টর, প্রভাতি-বনশ্রী, আজমেরি, সাভার ও গাজীপুর পরিবহনের এসব বাস। তবে গরম ও অতিরিক্ত যানজটের কারণে অধিকাংশ গাড়ি এই সিগন্যাল থেকে ঘুরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন চালকরা।

টাকা নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে বাসচালক মনির খবরের কাগজকে বলেন, ‘বাসে সমস্যা ছিল তাই ঘুরাইয়া দিসে।’ তখন এ প্রতিবেদক তাকে গাড়ি ঘোরানো ও ভিডিওর কথা বললে তিনি স্বীকার করেন যে তার হেলপার ১০০ টাকা দিয়েছেন ট্রাফিক পুলিশকে।

আইন না মেনে চালকদের গাড়ি ঘোরানোর সুযোগ দিয়ে কতিপয় পুলিশ সদস্য নিজের পকেট ভারী করছেন। জিরো পয়েন্টে সড়কে আকাশ পরিবহন থেকে টাকা নেওয়ার কথা অস্বীকার করেন ট্রাফিক পুলিশের সদস্য রাজিব। তিনি খবরের কাজকে বলেন, ‘আমি কোনো টাকা নিইনি।’

এখানে গাড়ি ঘোরানোর কোনো নিয়ম নেই, তবে কে ঘোরাচ্ছেন- প্রতিবেদকের এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘গাড়ি ঘোরানোর কারণ আছে।’ কী কারণ জানতে চাইলে তিনি তর্কে জড়ান।

বিপরীত পাশে দায়িত্বরত সার্জেন্ট তৌফিক হোসেনকে বিষয়টি জানালে তিনি বলেন, ‘এই রুটে প্রতিদিন প্রায় ৭০০ গাড়ি চলে। গাড়ি সাধারণত ঘোরাতে দিই না। এই পয়েন্ট দিয়ে গাড়ি ঘোরানো বেআইনি। অনেক সময় আমি কাজের প্রয়োজনে আশপাশে গেলে আমার চোখ ফাঁকি দিয়ে ঘোরানো হয়। বিষয়টি আমি দেখছি।’ পরে তিনি সেখানে দায়িত্বরত ট্রাফিককে সতর্ক করেন ও গাড়ি যেন ঘোরানো না হয় সে নির্দেশ দেন।

সরেজমিনে আরও দেখা যায়, গুলিস্তান জিরো পয়েন্ট ও গোলাপ শাহর মাজার থেকে টাকার বিনিময়ে গাড়ি ঘোরাতে দিচ্ছে ট্রাফিক পুলিশ। এ ছাড়া সদরঘাট থেকে গুলিস্তান বাসস্ট্যান্ড হয়ে আসা বাসগুলো মূল সড়কে এসে যাত্রী তোলা ও সড়ক আইন ভঙ্গ করলে দায়িত্বরত ট্রাফিককে টাকা দিয়ে ম্যানেজ করেন বাসগুলোর চালক ও হেলপার।

শুধু গুলিস্তান জিরো পয়েন্ট, গোলাপ শাহর মাজার ও গুলিস্তান বাসস্ট্যান্ড থেকে এভাবে বছরে ওঠে কোটি টাকা। তবে এখন প্রশ্ন হচ্ছে কীভাবে বছরে এই টাকা ওঠে?

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) এক সমীক্ষায় জানা গেছে, ঢাকায় ৩৮৮টি রুটে বাস চলাচলের অনুমোদন থাকলেও এখন ১১০টি রুটে বাস চলে। এ ছাড়া ১৮ হাজার ৪৩১টি যাত্রীবাহী বাস চলাচলের অনুমোদন থাকলেও চলে ১০ হাজার ২৮৯টি বাস।

ঢাকা পরিবহন মালিক সমিতি জানায়, প্রতিদিন গুলিস্তান জিরো পয়েন্ট-গোলাপ শাহ মাজার-গুলিস্তান বাসস্ট্যান্ড-তাঁতীবাজার মোড়-সদরঘাট-কেরানীগঞ্জ রুটে বাস চলে ৫৮০টি। এর মধ্যে আকাশ পরিবহনের ৮০টি, ভিক্টর পরিবহনের ১০০টি, প্রভাতি-বনশ্রী পরিবহনের ৬০টি, আজমেরি পরিবহনের ১০০টি, সাভার পরিবহনের ২০০টি ও গাজীপুর পরিবহনের ৪০টি বাস চলে এই রুটে। গাড়ি ঘোরানো, ইচ্ছামতো যাত্রী তোলা-নামানোসহ বিভিন্ন কারণে এসব বাসকে প্রতিনিয়ত রাস্তায় ট্রাফিককে টাকা দিয়েই চলতে হয়। এ ছাড়া মামলার ভয় তো রয়েছেই।

প্রতিদিন এই রুটে চলাচল করে ৫৮০টি বাস। এর মধ্যে ৩৫০টি বাস থেকে যদি ১০০ টাকা করে তোলা হয়, সেই হিসাবে প্রতিদিন তোলা হয় ৩৫ হাজার, যা মাসে হয় সাড়ে ১০ লাখ ও বছরে ১ কোটি ২৬ লাখ টাকা।

এ বিষয়ে ঢাকা পরিবহন মালিক সমিতির সহসভাপতি মাহবুবুর রহমান খবরের কাগজকে বলেন, ‘সড়কে পুলিশের টাকা নেওয়ার বিষয়টি আমরা অবগত নই। এ বিষয়ে গাড়ির কোম্পানিগুলো ভালো বলতে পারবে। তবে চালকদের কোনো অভিযোগ পেলে আমরা মালিককে জানানোর চেষ্টা করি।’

গাড়ি ঘোরানো ও গুলিস্তানের তিন পয়েন্ট থেকে ট্রাফিকের টাকা আদায়ের বিষয়ে কথা হয় ডিএমপির যুগ্ম পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক-দক্ষিণ) এস এম মেহেদী হাসানের সঙ্গে। তিনি খবরের কাগজকে বলেন, ‘আপনি যে অভিযোগটি দিলেন, সে বিষয়ে আসলে একটি তালিকা হওয়া উচিত। আপনি কষ্ট করে আমাদের অফিসে এসে যদি তথ্য দেন, তবে খুবই ভালো হয়। আমরা একটি তালিকা করে ওই সব পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।’

তিনি বলেন, ‘পুলিশ একটি সুশৃঙ্খল বাহিনী। কতিপয় পুলিশ সদস্যের জন্য এই বাহিনীর বদনাম হবে তা হতে পারে না। অপরাধ করলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।’

এবারও থাকছে সরকারের ডিজিটাল পশুর হাট

প্রকাশ: ০৯ মে ২০২৪, ০৫:৫৫ এএম
এবারও থাকছে সরকারের ডিজিটাল পশুর হাট
ছবি : সংগৃহীত

এবারের কোরবানির ঈদ উপলক্ষেও বসছে সরকারের ডিজিটাল গরুর হাট। সরকারের একশপ প্রকল্প, এটুআই, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, আইসিটি বিভাগ ও ইউএনডিপির সহযোগিতায় এই হাট (digitalhaat.gov.bd) বসছে। এ ছাড়া আয়োজনে থাকছে ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব) ও বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিডিএফএ)।

সংশ্লিষ্টরা জানান, ৬৪ জেলায় একযোগে চালু হবে এই ডিজিটাল কোরবানির হাট। কোরবানির পশু কেনাবেচায় মানুষের ভোগান্তি কমাতে বিগত কয়েক বছরের মতো এবারও অনলাইনে চালু হচ্ছে এই হাট। সব জেলা ও উপজেলার হাটগুলো এই প্ল্যাটফর্মের সঙ্গে যুক্ত থাকবে।

ই-ক্যাবের সংশ্লিষ্টরা জানান, ডিজিটাল হাটে পশু বেচাকেনা প্রতিবছরই বাড়ছে। ২০২০ সালে প্রথমবারের মতো পরিচালিত ডিজিটাল হাটে ২৭ হাজার পশু বিক্রি হয়। পরের বছর অর্থাৎ ২০২১ সালে ৩ লাখ ৮৭ হাজার পশু বিক্রি হয় ডিজিটাল হাটে। সর্বশেষ ২০২৩ সালে ৪ লাখ ৬৩ হাজার ৯৬টি পশু বিক্রি হয়েছে, যার মূল্য ৪ হাজার ২৩১ কোটি ৫৮ লাখ ৯৮ হাজার টাকা।

ডিজিটাল হাটের ওয়েবসাইটে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শত শত খামারি যুক্ত থাকবেন। ওয়েবসাইটের পাশাপাশি অ্যাপ থেকেও পশু কিনতে পারবেন ক্রেতারা। ওয়েবসাইট ও অ্যাপে গ্রাহকের অভিযোগ জানানোরও ব্যবস্থা থাকবে। এ ছাড়া থাকবে অনলাইন পেমেন্ট সিস্টেমের সুবিধাও।

ডিজিটাল হাট সংশ্লিষ্টরা বলেন, ‘হাট থেকে পশু কিনে নিয়ে যাওয়া একটি বিরাট সমস্যা। কিন্তু ডিজিটাল হাটের উদ্যোগে পশু শিপমেন্টের ব্যবস্থাও থাকবে। এ ছাড়া মাংস প্রসেসিং করার জন্য থাকবে কসাইয়ের ব্যবস্থাও।’

লাইভ হাট থাকবে। ভিডিও কলে পশু দেখা যাবে এবং আপডেট দেওয়া হবে প্রতিনিয়ত। ঢাকার বাইরে চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও যশোরে জবাইসহ সব ধরনের সেবা দেওয়া হবে।
এ প্রসঙ্গে ডিজিটাল হাট পরিচালনা প্রতিষ্ঠান ই-ক্যাবের পরিচালক আবদুল ওয়াহেদ তমাল খবরের কাগজকে বলেন, বরাবরের মতো এবারও ডিজিটাল পশুর হাট থাকবে। ডিজিটাল হাটে ব্যাপক সাড়া পড়েছে বিগত বছরগুলোতে। গত বছর অর্থাৎ ২০২৩ সালে ডিজিটাল হাটে ৪ লাখ ৬৩ হাজার ৯৬টি পশু বিক্রি হয়েছে, যার মূল্য ৪ হাজার ২৩১ কোটি ৫৮ লাখ ৯৮ হাজার টাকা।’

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এবার ১ কোটি ৩০ লাখের বেশি পশুকে কোরবানির জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে।। গত বছর ছিল ১ কোটি ২৫ লাখ গবাদিপশু। কিন্তু কোরবানি ঈদ পর্যন্ত অবিক্রীত ছিল ১৯ লাখ পশু।

ঢাকায় বসছে ২২ পশুর হাট

এবার কোরবানির পশু কেনাবেচার জন্য দুটি স্থায়ী হাটসহ রাজধানীতে ২২টি হাট বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি ও ডিএসসিসি)। সংশ্লিষ্টরা জানান, ইতোমধ্যে হাটের দরপত্রের প্রাথমিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

ডিএনসিসি গাবতলীতে স্থায়ী হাট ব্যবহারের পাশাপাশি ৯টি অস্থায়ী হাট বসাবে। অন্যদিকে ডিএসসিসি সারুলিয়ায় স্থায়ী হাটের পাশাপাশি ১১টি অস্থায়ী হাট বসাবে।

ডিএনসিসির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাহে আলম জানান, ৯টি হাট স্থাপনের জন্য প্রাথমিকভাবে ইজারা নোটিশ দেওয়া হয়েছে।

ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান বলেন, প্রাথমিকভাবে ১১টি হাটের ইজারা দেওয়া এবং অফিশিয়াল মূল্য নির্ধারণের বিষয়টি ঠিক করা হয়েছে। কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনে সমন্বয় করার ক্ষমতা রাখে।

আফতাবনগরে হাট বসানোয় নিষেধাজ্ঞা হাইকোর্টের

রাজধানীর আফতাবনগরে পশুর হাট বসানোর ইজারার বিজ্ঞপ্তি স্থগিত করেছেন হাইকোর্ট। ফলে কোরবানির ঈদে আফতাবনগরে কোরবানির পশুর হাট বসানো যাবে না। গতকাল বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি কাজী জিনাত হকের হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলসহ এ আদেশ দেন।

আফতাবনগর আবাসিক এলাকায় হওয়ায় আদালত এ আদেশ দিয়েছেন। এর আগে আফতাবনগরে গরুর হাট বসানোর সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেন ওই এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ আলমগীর হোসেন ঢালী।

গত ৪ এপ্রিল ডিএসসিসির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা ঈদুল আজহা ২০২৪ উপলক্ষে কোরবানির পশুর হাট বসানোর জন্য ইজারা বিজ্ঞপ্তি দেন। ওই বিজ্ঞপ্তি চ্যালেঞ্জ করে রিট করা হয়।

আসন্ন বাজেটে অতিধনীদের কর আরও বাড়ছে

প্রকাশ: ০৮ মে ২০২৪, ০৪:২০ পিএম
আসন্ন বাজেটে অতিধনীদের কর আরও বাড়ছে
খবরের কাগজ গ্রাফিকস

আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে সুপার ট্যাক্স গ্রুপ অর্থাৎ সবচেয়ে বেশি আয়ের মানুষের ওপর ধার্যকৃত বার্ষিক করের হার বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।

শুধু তা-ই নয়, অতিরিক্ত সম্পদ থাকার কারণে মাশুল হিসেবে নির্দিষ্ট হারে প্রদেয় কর ‘সারচার্জের’ সবোর্চ্চ হার বাড়ানোরও প্রস্তাব করা হয়েছে। এক কোটি টাকার বেশি কর বকেয়া আছে, এমন সব করদাতার কাছ থেকে কর আদায়ে বাজেটে আইন করে কঠোরতা আনার হিসাব কষা হয়েছে। অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় আসছে বারের প্রস্তাবিত বাজেটে সবচেয়ে বেশি পরিমাণের কর অব্যাহতির ছক আঁকা হয়েছে। শিল্পের অনেক খাতে কর অবকাশ সুবিধা বাতিলের প্রস্তাব করা হয়েছে।

এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল মজিদ খবরের কাগজকে বলেন, ‘সাধারণ করদাতাদের ওপর কর কমিয়ে ধনীদের ওপর কর বাড়িয়ে এবং করের আওতা সম্প্রসারণ করে আদায় বাড়ানো উচিত।’

আইএমএফসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের কাছ থেকে জীবনযাত্রার ব্যয়ের সঙ্গে সমন্বয় করে করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানোর চাপ থাকলেও এনবিআর এর বিরোধিতা করছে। ন্যূনতম করের হার কমানোরও পক্ষে নয় রাজস্ব আদায়কারী সরকারি সংস্থাটি।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সুপারিশে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) থেকে এসব প্রস্তাব প্রণয়ন করে অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে এসব প্রস্তাব খতিয়ে দেখে প্রয়োজনে কিছু সংযোজন বা বিয়োজন করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পাঠানো হবে। এনবিআরের এসব প্রস্তাবনা শেষ পর্যন্ত রাজস্ব বাজেটে অন্তর্ভুক্ত করা হবে কি না, তা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন।

সূত্র জানায়, আইএমএফের সুপারিশে এনবিআরের প্রস্তাবে কর আদায়ে স্বচ্ছতা আনতে ই-পেমেন্টে কর পরিশোধ উৎসাহিত করা হয়েছে। অনলাইনে করদাতা সংগ্রহ এবং রিটার্ন দাখিলে কড়াকড়ি আনা হয়েছে। এনবিআর কর শাখার কর্মকর্তাদের ক্ষমতা বাড়িয়ে কর প্রশাসনকে ঢেলে সাজানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। রাজস্ব কার্যালয় বাড়ানোর প্রস্তাবও থাকছে। ভূমি রেজিস্ট্রেশন, সিগারেট, মোবাইল, ভ্রমণ কর, পরিবেশ সারচার্জ, কার্বোনেটেড বেভারেজে করের এবং করের পরিধি বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।

আইএমএফের সুপারিশে প্রণীত এনবিআরের প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ‘ন্যূনতম ১০ বছর ধরে কর অবকাশ সুবিধা পাচ্ছে ৩০ থেকে ৩৫ ধরনের শিল্প খাত। এসব শিল্পের বেশির ভাগ খাত থেকে কর অবকাশ সুবিধা বাতিল করে করের আওতায় আনা হলে রাজস্ব বাড়বে, যা বাজেট ঘাটতি কমাতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে। ১০ বছর ধরে কর অবকাশ সুবিধা পাওয়া শিল্প খাতের মধ্যে রয়েছে ফার্মাসিউটিক্যালস, কৃষি যন্ত্রপাতি, কম্পিউটার, ইলেকট্রনিক্স শিল্প, অটোমোবাইল, বাইসাইকেল, গাড়ির টায়ার, নির্মাণসামগ্রীর ইট কিংবা রড রপ্তানি করে- এমন কৃষি প্রক্রিয়াকরণ শিল্প, পোলট্রি শিল্প, প্লাস্টিক রিসাইক্লিং শিল্প ও মোবাইল ফোনের যন্ত্রাংশ। তৈরি পোশাকশিল্প এবং প্রযুক্তি খাতেও রয়েছে বড় অঙ্কের রাজস্ব ছাড়। দীর্ঘদিন ধরে দেওয়া এসব সুবিধা কমাতে হবে।’

এক অনুষ্ঠানে এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম বলেন, ‘বছরের পর বছর ঢালাও কর ছাড়ের সুবিধা দেওয়া সম্ভব নয়। শিল্প খাতে সক্ষমতা বাড়াতে হবে। কর ছাড়ের সুবিধা কমাতে হবে। এতে রাজস্ব আদায় বাড়বে।’

কর ছাড়ের বিরোধিতা করে দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম খবরের কাগজকে বলেন, ‘বড় মাপের ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের ওপর থেকে কর সুবিধা কমানো বা প্রত্যাহার করা হলে সমগ্র অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। তাই সময় দিয়ে এসব উদ্যোগ বাস্তবায়ন করতে হবে। যত চাপ বড়দের ওপর। এটা তো ঠিক নয়। আমাদের কথা বিবেচনা করতে হবে।’

অতিরিক্ত সম্পদ থাকার মাশুল হিসেবে নিয়মিত করের পাশপাশি সম্পদশালীদের বাড়তি কর (সারচার্জ) দিতে হয়। বর্তমানে নিট পরিসম্পদের মূল্য ১০০ কোটি টাকা অতিক্রম করলে ৩৫ শতাংশ হারে অতিরিক্ত কর দিতে হয়। এ হার আরও ৫ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। অনেক দিন ধরে এ কর কমানোর জোরালো দাবি থাকলেও আগামী অর্থবছরের বাজেটে তা আমলে আনা হচ্ছে না।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এনবিআরের বাজেট প্রস্তুতির এক কর্মকর্তা খবরের কাগজকে বলেন, ‘ধনীদের সারচার্জ প্রদান সমস্যা নয়। এর হার বাড়ানো যৌক্তিক। তবে আমাদের দেশের ধনীরা ক্ষমতাবান, সমাজের প্রভাবশালী। শেষ পর্যন্ত সারচার্জ সম্ভব হবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমন্ত্রণে রবীন্দ্রনাথ, নেই কোনো স্মৃতিচিহ্ন

প্রকাশ: ০৮ মে ২০২৪, ০২:২৭ পিএম
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমন্ত্রণে রবীন্দ্রনাথ, নেই কোনো স্মৃতিচিহ্ন
কুষ্টিয়ার শিলাইদহে রবীন্দ্র কুঠিবাড়ি (বাঁয়ে), সলিমুল্লাহ হলে রবীন্দ্র স্মারক। ছবি: খবরের কাগজ

নোবেল বিজয়ের ১৩ বছর পর ১৯২৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমন্ত্রণে বিশ্বকবি খ্যাত কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ঢাকায় এসেছিলেন। থেকেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের প্রভোস্ট ও ইতিহাসবিদ অধ্যাপক রমেশচন্দ্র মজুমদারের (আর সি মজুমদার) বাংলোতে। টানা ৯ দিনের ঢাকা সফরে ঘুরেছেন পুরান ঢাকা ও নব্য গড়ে ওঠা রমনায়। অবস্থান করেছিলেন বুড়িগঙ্গায় নবাব সলিমুল্লাহর ছেলে খাজা হাবিবুল্লাহর বিলাসবহুল জলযানে। এ ছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) আয়োজনে কার্জন হলে দুটো বক্তৃতা দিয়েছিলেন। তৎকালীন মুসলিম হলে (সলিমুল্লাহ মুসলিম হল) গাঁদা ফুল দিয়ে অভ্যর্থনা জানানো হয়েছিল রবি ঠাকুরকে, জগন্নাথ হলের শিক্ষার্থীদের অনুরোধে বাসন্তিকা পত্রিকার জন্য লিখে দিয়েছিলেন ‘বাসন্তিকা’ কবিতা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে রবীন্দ্রনাথের এমন অনেক স্মৃতিই রয়েছে, যেগুলো শুধু বইয়ের পাতায় বদ্ধ। রবীন্দ্রনাথের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভ্রমণের কোনো স্মারকচিহ্নের দেখা না মিললেও আর সি মজুমদারের সঙ্গে তোলা রবি ঠাকুরের একটি স্থিরচিত্র মেলে।

হলটির শহিদ অধ্যাপক অনুদ্বৈপায়ন ভট্টাচার্য স্মৃতি গ্রন্থাগারের রক্ষিত ছেঁড়া-জীর্ণ-শীর্ণ ৪৩ বছরের আগের একটি বাসন্তিকা পত্রিকায় মিলে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সেই ছবিটি। জগন্নাথ হলের বাসন্তিকা পত্রিকায় রজতজয়ন্তী সংখ্যায় আর সি মজুমদারের লিখা ‘কবিস্মৃতি- রবীন্দ্রনাথ’ এর মধ্যে ছোট আকারের রবীন্দ্রনাথের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমন্ত্রণে ৯ দিন ভ্রমণের অনেক স্মৃতিই উঠে আসে। ১৯০৫ সালে রমেশ চন্দ্র মজুমদার কলকাতা কলেজে ভর্তি হওয়ার পর বন্ধুদের আড্ডায় রবীন্দ্রনাথ প্রসঙ্গ চলে আসতো, যদিও তখন রবীন্দ্রনাথ নোবেল পাননি। বন্ধুমহলের সবচেয়ে বড় কুলদাপ্রসাদ মল্লিকসহ কয়েকজনের অংশগ্রহণে ‘রবীন্দ্র চক্র’- এর বৈঠক বসত। সেই থেকে রবীন্দ্রভক্ত হয়ে পড়েন আর সি মজুমদার।

আর সি মজুমদার জগন্নাথ হলের বাসন্তিকার রজতজয়ন্তীর সংখ্যায় ‘কবিস্মৃতি- রবীন্দ্রনাথ’ এর প্রথমাংশে এভাবে লিখেছেন, ‘সন্ধ্যায় ইনস্টিটিউটে, কখনো বা শিবপুরের বোটানিক্যাল গার্ডেনে আমাদের এই ছোট্ট রবীন্দ্রচক্রের বৈঠক বসত এবং আমরা কয়েকজন রবীন্দ্রনাথের পরম ভক্ত হয়ে উঠলাম। তারপরে ৬৭ বছর কেটেছে- সে ভক্তি কখনো কমেনি, শতগুণ বেড়েছে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমন্ত্রণে রবীন্দ্রনাথ যখন আসেন, তখন তাকে অনেকটা কাছ থেকে দেখার সুযোগ পেয়েছিলেন আর সি মজুমদার। বাসন্তিকায় লিখা শুধু ‘কবিস্মৃতি- রবীন্দ্রনাথ’ এ নয়, ১৯৫৯ সালে প্রকাশিত ‘জীবনের স্মৃতি দ্বীপে’ বইয়ের ‘ঢাকায় রবীন্দ্রনাথ ও শরৎচন্দ্র’ অংশে ১৯২৬ সালে রবীন্দ্রনাথের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আসাকে ঘিরে বিস্তর বর্ণনা করেছেন আর সি মজুমদার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমন্ত্রণে যখন রবীন্দ্রনাথ এসেছিলেন ঘটনাক্রমে কবিগুরুর থাকার ব্যবস্থা হয়েছিল আর সি মজুমদারের বাসায়।

১৯২৬ সালে কবিগুরু যখন ঢাকা আসবেন বেশ শোরগোল পড়েছিল। তৎকালীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক জর্জ হ্যারি ল্যাংলির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সিদ্ধান্ত হয় রবীন্দ্রনাথ আর সি মজুমদারের বাড়িতে থাকবেন। আর রবীন্দ্রনাথের পুত্র রথীন্দ্রনাথ, পুত্রবধূ এবং রবীন্দ্রসংগীতের প্রধান স্বরলিপিকার দীনেন্দ্রনাথ ঠাকুর, রবীন্দ্র সহযোগী কালীমোহন ঘোষ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বাড়িতে থাকবেন। এবং কবির সঙ্গী ইতালির খ্যাতনামা অধ্যাপক জিয়োসেপ্নে তুচ্চিসহ দুজন বিদেশি সঙ্গী থাকবেন উপাচার্যের বাসভবনে। যদিও বাকিদের থাকার সিদ্ধান্ত নিয়ে ঢাকার লোকজনের মাথাব্যথা না থাকলেও কবি ভক্তদের মাঝে বেশ শোরগোল শুরু হয়ে গিয়েছিল ঢাকাজুড়ে।

আর সি মজুমদার ‘কবিস্মৃতি- রবীন্দ্রনাথ’ এ উল্লেখ করেছেন, ‘ঢাকায় দু-চারজন লোক বেশ শোরগোল পাকিয়ে তুলল। তারা রবীন্দ্রনাথকে জানাল যে, ঢাকার জনসাধারণের এ ইচ্ছা নয় যে তিনি আমার বাড়িতে থাকেন। এই নিয়ে অনেক অপ্রীতিকর ব্যাপার ঘটে ও রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে আমার অনেক চিঠি লেখালেখি হয়। ফলে রবীন্দ্রনাথ তার বিশ্বভারতীর অধ্যাপক শ্রী নেপালচন্দ্র রায়কে সরেজমিনে তদন্ত করবার জন্য ঢাকায় পাঠালেন। নেপালবাবু ফিরে গিয়ে রবীন্দ্রনাথকে জানালেন যে, দু-একটি লোক ছাড়া আমার বাড়িতে থাকায় সকলেরই সম্মতি আছে। তখন স্থির হলো রবীন্দ্রনাথ আমার বাড়িতেই থাকবেন।’

অন্যদিকে ‘জীবনের স্মৃতি দ্বীপে’ বইয়ের ‘ঢাকায় রবীন্দ্রনাথ ও শরৎচন্দ্র’ অংশে মজুমদার লিখেছেন তার পাঠানো এক চিঠির প্রেক্ষিতে একটি চিঠিতে- ‘রবীন্দ্রনাথ লিখলেন যে, তিনি আমার বাড়িতেই থাকবেন।’

রবীন্দ্রনাথ কলকাতা থেকে ঢাকায় এসেছিলেন গোয়ালন্দ, নারায়ণগঞ্জ হয়ে। তিনি ১৯২৬ সালের ৭ জানুয়ারি ঢাকায় পৌঁছান।
আর সি মজুমদার ‘জীবনের স্মৃতি দ্বীপে’ বইয়ের ‘ঢাকায় রবীন্দ্রনাথ ও শরৎচন্দ্র’ অংশে লিখেছেন, ‘নারায়ণগঞ্জ স্টিমার স্টেশন থেকে গাড়ি করে রবীন্দ্রনাথকে ঢাকায় আমার বাড়িতে নিয়ে আসা হলো। সেখানকার বড় বড় জমিদার, বিশেষতঃ ভাওয়ালের রাজকুমার এবং ঢাকার নবাব, আমায় বলে পাঠালেন যে রবীন্দ্রনাথের জন্য কোনো গাড়ি দরকার হলে আমি যেন তাদের জানাতে দ্বিধা না করি। রবীন্দ্রনাথের আগমন উপললক্ষে ঢাকায় বিপুল উদ্দীপনা; রাস্তায় বহু লোক তাকে সংবর্ধনা জানালেন।’

যখন আর সি মজুমদারের বাড়িতে কবি গুরু প্রবেশ করেন ব্যাপক উৎসাহ আর উদ্দীপনায় তাকে সাদরে গ্রহণ করা হলো। ঢাকা শহরের ভদ্র সমাজের মানুষজনের উপস্থিতিও ছিল বেশ।

‘জীবনের স্মৃতি দ্বীপে’ আর সি মজুমদার অনেকটা এভাবেই বর্ণনা করেছেন, ‘তার আসার দিন আমার গৃহদ্বারে, সিঁড়িতে, ওপরের বারান্দায় এবং ঘরে নানারকম আলপনা আঁকা হয়, দরজার সামনে মঙ্গলকলস এবং আম্রপল্লব। ...কবি এসে পৌঁছানমাত্রই তার ওপর ফুলবর্ষণ শুরু হলো। মেয়েরা শঙ্খধ্বনিতে তাকে স্বাগত জানালেন। মঙ্গল-কলসের মাঝে পথ দিয়ে আমরা বাড়িতে প্রবেশ করলাম।’

আর সি মজুমদারের এই বর্ণনা তাই প্রমাণ করে নোবেল বিজয়ী রবীন্দ্রনাথকে এক পলক দেখতে এবং তার যেন সম্মান আর কদরের ঘাটতি না হয় বেশ সচেতনই ছিলেন তারা। ১৯০৯-১০ সালের দিকে কলকাতায় হায়দরাবাদ থেকে একজন বড় সংগীতজ্ঞ ও বাদকের আসরে রবি ঠাকুরের গলায় প্রথম গান শোনেন। পঞ্চাশ বছর বয়সী রবীন্দ্রনাথের কণ্ঠে শুনলেন ‘তুমি কেমন করে গান কর হে গুণী।’

আর সি মজুমদার ‘কবিস্মৃতি- রবীন্দ্রনাথ’ এর মধ্যে লিখেছেন, ‘পঞ্চাশ বছর বয়সে তার গলায় যে সুর ধ্বনিত হলো সারা সভাকক্ষ তার মূর্ছনায় ভরে গেল। গানের প্রতিটি শব্দ স্পষ্ট বুঝতে পারা যাচ্ছিল-যা আজকালের রবীন্দ্রসংগীতে দুর্লভ।’

১৯২৬ সালে কবিগুরুর ঢাকা ভ্রমণ প্রসঙ্গে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সৌমিত্র শেখর ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও রবীন্দ্র-রচনা’ শীর্ষক এক লিখাতে লিখেছেন, ‘১৯২৬-এর ফেব্রুয়ারির ৭ তারিখে ঢাকা মিউনিসিপ্যাল নর্থব্রুক হলে সংবর্ধনা গ্রহণ দিয়ে ঢাকা কর্মসূচি শুরু করলেও ১০ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুসলিম হলের (এখন সলিমুল্লাহ মুসলিম হল) কর্মসূচি দিয়েই মূলত তার বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক কর্মসূচির সূচনা।’

সলিমুল্লাহ মুসলিম হলে যখন রবীন্দ্রনাথকে ফুলেল সংবর্ধনা দেওয়া হয় তখন বৈদ্যুতিক পাখায় গাঁদা ফুলের পাপড়ি বিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। যেই না পাখা চালিয়ে দেওয়া হলো চারদিকে ছড়িয়ে পড়ল ফুলের পাপড়ি, চারপাশ করতালিতে ধ্বনিত হলো।

এদিকে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ ঘোষ ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং রবীন্দ্রনাথ’ শীর্ষক এক লেখায় ১০ ফেব্রুয়ারি দুপুরে সলিমুল্লাহ মুসলিম হলে ওই ফুলেল সংবর্ধনা প্রসঙ্গে লেখেন, ‘‘সংবর্ধনা সভায় হলের ছাত্ররা রবীন্দ্রনাথকে শ্রদ্ধা জানিয়ে একটি অভিনন্দনপত্র পাঠ করেন। মুসলিম হলের শিক্ষার্থীদের আন্তরিক সংবর্ধনায় রবীন্দ্রনাথ বিশেষভাবে অভিভূত হয়ে পড়েন। সংবর্ধনার উত্তরে তাই তিনি প্রথমেই বলেন, ‘এই সভাগৃহে প্রবেশ করার পর থেকে এ পর্যন্ত আমার ওপর পুষ্পবৃষ্টি হচ্ছে। প্রাচীন শাস্ত্রে পড়েছি কৃতী ব্যক্তির ওপর পুষ্পবৃষ্টি হয়। এ পুষ্পবৃষ্টি যদি তারই প্রমাণ করে তবে আমি আজ আনন্দিত।’ অভিভাষণের শেষে কবি বলেন, ‘ঈশ্বর এক, তার মধ্যে কোনো ভেদ নাই। যিনি সকল বর্ণের, সকল জাতির জন্য নিত্য, তার গভীর প্রয়োজন প্রকাশ করছেন।’’

অধ্যাপক বিশ্বজিৎ ঘোষের ওই লেখার সূত্রে জানা যায়, ১০ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় ডাকসুর আয়োজনে কার্জন হলে তিনি উপস্থাপন করেন প্রথম বক্তৃতা: ‘দ্য বিগ অ্যান্ড দ্য কমপ্লেক্স’।

বিশ্বজিৎ ঘোষ ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং রবীন্দ্রনাথ’ শীর্ষক ওই লেখাতে উল্লেখ করেন, “সভার প্রারম্ভে সমবেত সুধীদের কাছে রবীন্দ্রনাথের পরিচয় দিতে গিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর জি এইচ ল্যাংলি বলেন: ‘এটা আমাদের পক্ষে আজ একটা পরম সুযোগ যে, এই সন্ধ্যায় পৃথিবীর একজন শ্রেষ্ঠ শিল্পী আমাদের কাছে কিছু বলবেন।’

ওই সন্ধ্যায় রবীন্দ্রনাথ দীর্ঘ ভাষণ উপস্থাপন করেন। তার ভাষণের মূল কথা ছিল: শিল্প-সৃষ্টি বিষয় ও ভাবের আবেগময় বিবরণ বা নিবেদন। তাই এটা কখনোই ক্যামেরায় তোলা ফটোর মতো নয়। শিল্পী খুবই ভাবপ্রবণ এবং তার এই প্রবণতা বিষয় নির্বাচনের রুচি-বাগীশতাতেই নয়, তার শিল্পের প্রত্যেকটি বিস্তৃত ব্যাপারেও। ...আমি গভীরভাবে বিশ্বাস করি, ঈশ্বর তার সৃষ্টির মধ্যে বাস করেন। শিল্পীও তেমনি নিজেকে মেলে ধরেন তার শিল্পের মাঝে। শিল্পীর শিল্পাদর্শ নিছক বিলাস বা কল্পনা-উদ্ভূত নয়, তা পরম বাস্তব।”

পরবর্তীতে অসুস্থতার কারণে ১১ ও ১২ ফেব্রুয়ারি পরবর্তী কর্মসূচিগুলো বাতিল করা হয়। অধ্যাপক ঘোষ ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং রবীন্দ্রনাথ’ ১৯২৬ সালের বাসন্তিকা (জগন্নাথ হল বার্ষিকী) পত্রিকার সূত্র টেনে ওই পত্রিকায় লেখা হয়- “কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের সংবর্ধনার জন্য, হল ইউনিয়ন বিপুল আয়োজন করিয়াছিলেন। কবি হঠাৎ অসুস্থ হইয়া পড়ায় সংবর্ধনা হইতে পারে নাই। কার্জন হলে আমাদের হলের পক্ষ হইতে কবিকে একটি অভিনন্দনপত্র দেওয়া হয়। অভিনন্দনপত্র মূল্যবান বস্ত্রে মুদ্রিত ও রৌপ্যখচিত হয়ে ভেলভেট নির্মিত একটি সুদৃশ্য আধারে কবিকে উপহূত করা হয়। কবি ইহার কারুকার্যে অতীব প্রীত হইয়াছিলেন।”

অসুস্থ হলে সিভিল সার্জন ও ঢাকার অন্যান্য বড় বড় ডাক্তাররা শরীর পরীক্ষা করতে হাজির হন আর সি মজুমদারের বাড়িতে। আর সি মজুমদার তার ‘জীবনের স্মৃতি দ্বীপে’ লিখেছেন, “ডাক্তারেরা দেখে বললেন যে অসুখের কোন লক্ষণ তো দেখা যাচ্ছে না। রবীন্দ্রনাথ শুনে বললেন যে অসুখ তেমন কিছু নয়। তবে বহুদিন পরে পূর্ব বাংলায় এসেছি; মনে হয় জলে একটু থাকতে পারলে ভাল হতো।”

পরবর্তীতে বুড়িগঙ্গার ওয়াইজঘাটে নবাব সলিমুল্লাহর ছেলে খাজা হাবিবুল্লাহর বিলাসবহুল জলযান তুরাগ হাউস বোটে কবির থাকার ব্যবস্থা করা হয়। এ সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের ছাত্র নাট্যকার শ্রীমন্মথ রায়ের দায়িত্বে ২০-২৫ জন উৎসুক ছাত্র তার পরিচর্যার দায়িত্ব নিলেন। জানা যায়, তুরাগ হাউস বোটে অবস্থানকালীন সময়ে প্রতিদিন সকালে রবীন্দ্রনাথ ঢাকার নবাবদের মোটরচালিত বোটে বুড়িগঙ্গায় ভ্রমণে বের হতেন। প্রায় ছয় থেকে সাত মাইল ভ্রমণ করতো মোটরচালিত বোট।

বুড়িগঙ্গায় জলযান বিলাসের পুরো সময় জুড়ে দেখভালে পাশে ছিলেন তৎকালীন জগন্নাথ হলের প্রভোস্ট আর সি মজুমদার ও তার স্ত্রী। এই সময় জুড়ে অনেক মানুষ সাক্ষাৎ করতে আসতেন। আর সি মজুমদার কবিস্মৃতি- রবীন্দ্রনাথ এ লিখেন, “এক দিন বিকালে প্রায় ৪০-৫০ জন উপস্থিত। রবীন্দ্রনাথ আমার স্ত্রীকে ডেকে বললেন, এদের একটু জলযোগের ব্যবস্থা কর। আমার বাড়ি সেখান থেকে প্রায় তিন মাইল দূরে। কিন্তু মন্মথ তার ছাত্রদলকে নানা দিকে পাঠিয়ে আধ-ঘণ্টার মধ্যেই শহর থেকে প্রচুর মিঠাই ও চায়ের ব্যবস্থা করল।”

পয়ষট্টি বছরের রবীন্দ্রনাথ ছিলেন বেশ ভোজনরসিক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমন্ত্রণে যখন তিনি এলেন প্রতিদিন তার খাবারে বড় কই মাছ খাবারে দেওয়া হতো এর পাশাপাশি অন্যান্য তরকারিও থাকত। মাছ খেয়ে বেশ খুশিও হতেন তিনি। আর সি মজুমদার তার ‘জীবনের স্মৃতি দ্বীপে’ বইতে লিখেছেন, “অন্যান্য তরকারির সঙ্গে তিনি পুরো মাছটিও খেতেন। খেয়ে তিনি খুব খুশী হতেন- বলতেন, ‘পূর্ব বাংলার মতো মাছ রান্না আমাদের ওদিকে করতে পারে না।”

মেয়ের নামে কবিতা এবং রবীন্দ্রনাথের নাম চুরি:

আর সি মজুমদারের একমাত্র পুত্রসন্তানের নাম ছিল অশোক, ডাক নাম রবি। রবির বয়স তখন নয় দশ বছর হবে। সকলকে সাবধান করে দেওয়া হয়েছিলাম যতদিন রবীন্দ্রনাথ থাকবেন যেন তাকে রবি বলে ডাকা না হয়। কিন্তু একদিন ঘটে বিপত্তি, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আর সি মজুমদারের ছেলের নাম জিজ্ঞেস করলে সে বলে, ‘রবি।’

এ নিয়ে আর সি মজুমদার ‘জীবনের স্মৃতি দ্বীপে’ লিখেছেন, “রবীন্দ্রনাথ আমার ছেলেকে ডেকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘তোমার নাম কি?’ সে, বলে বসল ‘রবি।’ তখন তিনি গম্ভীরভাবে আমাকে ও আমার স্ত্রীকে ডেকে বললেন, ‘তোমরা তো লোক ভালো নও।’ আমরা তো কিছু বুঝতে না পেরে ভয়ানক ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেছি। ‘কি ব্যাপার?’ তিনি বললেন, ‘আমি আসার আগেই আমার নামটা তোমরা চুরি করেছ। সুতরাং এরপর আরও অন্য জিনিস চুরি করতে পার।’ আমরা হেসে উঠলাম।”

ওই বইতে মেয়ে ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে ঘিরে তিনি আরেকটি ঘটনা উল্লেখ করেছেন। তিনি লিখেছেন, “আমার বড় মেয়ের বয়স তখন বারো তেরো বছর। এক দিন হঠাৎ সে রবীন্দ্রনাথের সামনে গিয়ে জিজ্ঞাসা করল, ‘আপনি নাকি খুব বড় কবি? আপনি নাকি অনেক কবিতা লিখেছেন।’ রবীন্দ্রনাথ একটু হেসে বললেন, ‘হ্যাঁ, এই দুর্নাম আমার আছে।’ অমনি একটি ছোট খাতা বার করে সে বলল, ‘আমায় নামে একটি কবিতা লিখে দিন না।’ রবীন্দ্রনাথ তার নাম জিজ্ঞাসা করলেন- ভালো নাম ও ডাক নাম। এবং তৎক্ষণাৎ তার সেই ছোট খাতায় তারই কলমে একটি কবিতা লিখে দিলেন- তার মধ্যে তার দুটি নামই আছে। আমার এই মেয়ের বিবাহের সময় এই কবিতাটি প্রতিলিপিসহ ছাপিয়েছিলাম। পরে রবীন্দ্রনাথের ‘স্ফুলিঙ্গ’ নামক ছোট একখানি পুস্তিকায় ও রচনাবলিতে এটি ছাপা হয়েছে। তবে তাতে ঘটনাটির কোনো উল্লেখ নেই।

বইটির একটি জায়গায় আর সি মজুমদার লিখেছেন, “৯দিন রবীন্দ্রনাথ আমার অতিথি ছিলেন।”

সরেজমিনে গিয়ে সলিমুল্লাহ মুসলিম হল, বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রবীন্দ্রনাথের আসা প্রসঙ্গে কোনো তথ্য কিংবা স্মারকচিহ্নের খোঁজ পাওয়া যায়নি। সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের হল প্রভোস্টের কক্ষে দেখা মেলে হলটির আজীবন সদস্যের নাম যেখানে কবিগুরুর অবস্থান দ্বিতীয়।

এদিকে জগন্নাথ হলের শহিদ অধ্যাপক অনুদ্বৈপায়ন ভট্টাচার্য স্মৃতি গ্রন্থাগারে দেখা মিলে রজতজয়ন্তী বাসন্তিকা পত্রিকার একটি সংখ্যা। যার মারফতে তৎকালীন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি ছবি, বাসন্তিকা পত্রিকা এবং ওই পত্রিকায় লিখা তৎকালীন হল প্রভোস্ট অধ্যাপক রমেশচন্দ্রের ‘কবিস্মৃতি- রবীন্দ্রনাথ’ পাওয়া যায়।

সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের গ্রন্থাগারিক আলম সরকার এবং জগন্নাথ হলের সহকারী গ্রন্থাগারিক বিমল চন্দ্র সরকারের ধারণা, ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় সেইসব কাগজ পুড়িয়ে দেওয়া হতে পারে। তাদের মতো একই ধারণা পোষণ করেন রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ ঘোষ।

সার্বিক বিষয়ে তিনি খবরের কাগজকে বলেন, ‘রবীন্দ্রনাথ নোবেল পুরস্কারের ১৩ বছর পর এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পাঁচ বছর পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছিলে, বক্তৃতা রেখেছিলেন, এটি নিশ্চয়ই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু যে কারণেই হোক শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় না, রেকর্ড সংরক্ষণের প্রতি গোটা জাতির ইতিহাসে মনোযোগের অভাব রয়েছে। এ বিষয়ে তথ্য ছবিসহ রেকর্ড সংরক্ষিত অবস্থায় নেই। মাত্র একটি মাত্র ছবি পাওয়া যায়, তৎকালীন জগন্নাথ হলের প্রভোস্টের সঙ্গে।’

এর পেছনে তিনটি কারণে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘প্রথমত, তখন হয়তো ক্যামেরার ব্যবহার এতটা ব্যাপক ছিল না। দ্বিতীয়ত, ১৯৭১ সালে যেভাবে জগন্নাথ হল তছনছ হয়েছে; আমার ধারণা এ ধরনের কোনো রেকর্ড যদি থাকতো হয়তো সেটা তখন নষ্ট হয়ে গেছে। তৃতীয়ত আমরা জাতিগতভাবেই রেকর্ড সংরক্ষণের প্রতি ততটা মনোযোগী না। ১৯৩৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে ডি.লিট উপাধি দেয়। সেই তথ্যও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেকর্ডে নেই, বিশ্বভারতীর ফাইলে পেয়েছি। তেমনি অসুস্থতার কারণে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যে ডি.লিট উপাধি গ্রহণের জন্য আসতে পারবেন না- এ নিয়ে রবীন্দ্রনাথের ছেলে রথীন্দ্রনাথ ঠাকুর যে চিঠি দিয়েছিলেন সেটিও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সংরক্ষিত নেই। পরবর্তীতে সেটি আমি জাদুঘরে দেখেছিলাম।’

সলিমুল্লাহ মুসলিম হলে আজীবন সদস্য করার কারণ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘দীর্ঘ দশটা বছর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আমাদের এই অঞ্চলে ছিলেন। বাঙালি এবং একজন বিখ্যাত নোবেল বিজয়ী। কেউ কেউ বিখ্যাত মানুষকে সম্মান দেখালে নিজেই অনেকটা সম্মানিত হয়। হয়ত এই বোধ থেকেই আজীবন সদস্য করা হয়েছে।’

বিশ্ববিদ্যালয় এ নিয়ে কাজ করতে পারে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় করতে পারে, তবে খুব যে বেশি তথ্য পাওয়া যাবে বলে মনে হয় না। তারপরে বিশ্ববিদ্যালয় চাইলে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং নজরুলকে নিয়ে একসঙ্গে একটি কাজ করলেও করতে পারে। আমি অনেক খুঁজেছি, কলকাতায় খুঁজেছি; তেমন একটা পাইনি। ফলে এটি একটি কঠিন কাজ। এটা আমাদের জাতিগত সংকট, আমরা পুরোনো জিনিস ওভাবে রাখি না ধ্বংস করে ফেলি।’  

অতিবৃষ্টির আশঙ্কা চ্যালেঞ্জ পরিস্থিতি সামলানো

প্রকাশ: ০৮ মে ২০২৪, ০১:৫১ পিএম
অতিবৃষ্টির আশঙ্কা চ্যালেঞ্জ পরিস্থিতি সামলানো
খবরের কাগজ গ্রাফিকস

এবার বর্ষা মৌসুমে বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে বেশি মাত্রায় বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা রয়েছে। বেশি বৃষ্টির ফলে হতে পারে ব্যাপক বন্যা। রেকর্ড তাপপ্রবাহের পর আসন্ন বন্যা পরিস্থিতি সামাল দেওয়াকে চলতি বছরের চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন আবহাওয়াসংশ্লিষ্টরা। অন্যদিকে বৃষ্টিপাত বেশি হলে তাপমাত্রা বাড়ার শঙ্কা কম থাকবে। সে হিসাবে আগামী তিন মাসে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ তথা তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি হওয়ার আশঙ্কা কম। তবে ১৩ দিনেরও বেশি কালবৈশাখী হতে পারে।

বাংলাদেশের আবহাওয়ার তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ-গবেষণা করেন আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ। খবরের কাগজকে তিনি বলেন, এ বছর এল-নিনো (সমুদ্রের পানির উষ্ণতা বেড়ে যাওয়া) বিদায় নেবে। জুলাই থেকে লা-নিনা (এল-নিনোর বিপরীত) বছর শুরু হবে। এ সময় শুধু বাংলাদেশই নয়- ভারত, নেপাল, ভুটানেও বৃষ্টি বেশি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আপাতত চ্যালেঞ্জ হচ্ছে বর্ষাকালে বেশি বৃষ্টি। কারণ বৃষ্টি বেশি হলে বন্যার আশঙ্কাও বেড়ে যায়। এটিই চলতি বছর ২০২৪ সালে একমাত্র চ্যালেঞ্জ হবে বলে মনে হচ্ছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তর মঙ্গলবার (৭ মে) মে, জুন ও জুলাই মাসের দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাস প্রকাশ করে। সেখানেও সামগ্রিকভাবে দেশে স্বাভাবিক অপেক্ষা বেশি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, মে মাসে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা থাকলেও পরবর্তী দুই মাসে স্বাভাবিক অপেক্ষা বেশি হতে পারে বৃষ্টি। সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হতে পারে সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগে।

পূর্বাভাস অনুযায়ী, মে মাসে সিলেট বিভাগে ৪৮৫-৬১০ মিলিমিটার, ময়মনসিংহ বিভাগে ৩৬০-৪৫৫ মিলিমিটার, চট্টগ্রাম বিভাগে ২৯৫-৩৭০ মিলিমিটার, ঢাকা বিভাগে ২৭৫-৩৫০ মিলিমিটার, রংপুর বিভাগে ২৪৫-৩১৫ মিলিমিটার, বরিশাল বিভাগে ২৪৫-৩১০ মিলিমিটার এবং খুলনা বিভাগে ১৬৫-২১০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।

আবহাওয়াসংশ্লিষ্টরা জানান, সাধারণত জুনের ১০ থেকে ১৫ তারিখের মধ্যে বর্ষা মৌসুম শুরু হয়। বর্ষা পুরোপুরি শুরু হতে জুন পার হয়ে যায়। জুলাই-আগস্টে বেশি বৃষ্টি হতে পারে। ফলে আকস্মিক বন্যার আশঙ্কা রয়েছে। তবে বৃষ্টির শঙ্কা ভালোভাবে বোঝা যায় এক মাস আগে।

বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্র ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী সরদার উদয় রায়হান খবরের কাগজকে বলেন, স্বাভাবিক অপেক্ষা বেশি বৃষ্টি হলে সাধারণভাবে বন্যার ঝুঁকিটা বেড়ে যায়। তবে বন্যা কতটুকু মাত্রায় হবে, সেটা ঝুঁকিপূর্ণ হবে কি না, এই মুহূর্তে সেটা নির্দিষ্ট করে বলা যাবে না। কারণ অনেক সময় স্বাভাবিক অপেক্ষা বেশি বৃষ্টির পরও বন্যা পরিস্থিতি হয় না। বৃষ্টিটা ভাগ হয়ে পড়ে। আবার দেখা যায়, স্বাভাবিক অপেক্ষা কম বৃষ্টিতেও বন্যা হতে পারে। এ সময় দেখা যায় অল্প সময়ে বেশি পরিমাণে বৃষ্টি হয়। চট্টগ্রাম ও সিলেটে বেশি বৃষ্টি হলে আকস্মিক বন্যা হতে পারে।

অতি তীব্র তাপপ্রবাহের সম্ভাবনা নেই, বাড়বে কালবৈশাখী
গত এপ্রিল মাসে মাসে সারা দেশে স্বাভাবিক অপেক্ষা কম বৃষ্টিপাত হয়েছে। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের পশ্চিমাঞ্চলীয় এলাকায় তাপীয় লঘুচাপ অবস্থান করায় দেশের অনেক স্থানের ওপর দিয়ে ১-১৯ এপ্রিল ২০২৪ পর্যন্ত মাঝারি থেকে তীব্র এবং ২০-৩০ এপ্রিল ২০২৪ পর্যন্ত তীব্র থেকে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যায়। এ মাসে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪৩.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস (যশোর, ৩০ এপ্রিল) রেকর্ড করা হয়। একই সঙ্গে দেশের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা স্বাভাবিক অপেক্ষা যথাক্রমে ৩.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং ২.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি এবং সারা দেশে গড় তাপমাত্রা ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি ছিল।

পূর্বাভাস বলছে, চলতি মে মাসে দেশের কোথাও কোথাও এক থেকে তিনটি মৃদু থেকে মাঝারি এবং এক থেকে দুটি তীব্র তাপপ্রবাহের আশঙ্কা রয়েছে। আর তিন মাসে (মে, জুন, জুলাই) চার থেকে ছয়টি মৃদু থেকে মাঝারি এক থেকে দুটি তীব্র তাপপ্রবাহ হতে পারে। সে হিসাবে জুন ও জুলাই মাসে তীব্র তাপপ্রবাহের সম্ভাবনা নেই। অর্থাৎ তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কম থাকবে। আর চলতি মাসেই বিদায় নিতে পারে তাপপ্রবাহ।

মে মাসে বঙ্গোপসাগরে ১-২টি লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে। সেখান থেকে মাসের দ্বিতীয়ার্ধে একটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে বলে জানিয়েছিল আবহাওয়া অধিদপ্তর। আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ বলেন, লঘুচাপ থেকে নিম্নচাপ এবং পরে ঘূর্ণিঝড় হয়। তবে আগামী ১০ দিনে সে রকম কোনো আশঙ্কা নেই।