কমছে না সাইবার বুলিং । খবরের কাগজ
ঢাকা ২৩ বৈশাখ ১৪৩১, সোমবার, ০৬ মে ২০২৪

কমছে না সাইবার বুলিং

প্রকাশ: ২৯ নভেম্বর ২০২৩, ০৪:০০ পিএম
কমছে না সাইবার বুলিং
খবরের কাগজ গ্রাফিকস

দেশে অনলাইন হয়রানি বা সাইবার বুলিংয়ের প্রবণতা অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে অনেক গুণ বেড়েছে। ফেসবুকে কারও পোস্ট যদি মতাদর্শ বা ব্যক্তিগত বিশ্বাসের বিপরীত হয়, সে ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে বিরূপ বা আক্রমণাত্মক মন্তব্য আসে। ফেসবুকে কারও কোনো একটা খুঁত খুঁজে পেলে রক্ষা নেই, শুরু করে দেওয়া হয় টানাহেঁচড়া। বিভিন্ন বয়সের মানুষ এ বুলিংয়ের শিকার হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে ফেসবুকে বহু ট্রলের শিকার হওয়া শিশুশিল্পী সিমরিন লুবাবা এর বড় উদাহরণ। এ ধরনের অনলাইন হয়রানি বা বুলিংয়ের কারণে অনেকেরই মানসিক স্বাস্থ্য মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এই ক্ষতি কখনো কখনো ভয়াবহ আকার ধারণ করে। অনেকে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে এবং অনেক ক্ষেত্রে সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়।

বিশেষ করে অনলাইনে একে অপরকে ট্রল করা, কমেন্ট সেকশনে আক্রমণাত্মক মন্তব্য করা, ইনবক্সে নিপীড়ন করা, উসকানিমূলক তথ্য ছড়ানো, ব্যক্তিগত আক্রমণ ইত্যাদি বেড়ে চলেছে। এর কারণ হচ্ছে আমাদের সহনশীলতা কমে যাচ্ছে।

জাতীয় সাইবার নিরাপত্তা এজেন্সির (সিএসএ) মহাপরিচালক আবু সাঈদ মো. কামরুজ্জামান এক সংবাদ সম্মেলনে গতকাল সোমবার জানিয়েছেন, ফেসবুক, গুগলের মতো ডিজিটাল মিডিয়া প্রতিষ্ঠানগুলোকে জবাবদিহির আওতায় আনতে প্রণয়ন করা হচ্ছে ‘ব্যক্তিগত উপাত্ত সুরক্ষা আইন, ২০২৩।’ ইতোমধ্যে আইনটি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে নীতিগত অনুমোদন পেয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, প্রযুক্তির উৎকর্ষের সঙ্গে সঙ্গে মানুষ এখন প্রযুক্তি নির্ভরশীল। সেই সঙ্গে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের নিত্যনতুন আকর্ষণীয় ফিচারের মোহে ভার্চুয়াল জগৎই এখন মানুষের কাছে বাস্তব জগৎ। কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপটে এই অনলাইন প্ল্যাটফর্ম বিনোদন এবং যোগাযোগের মাধ্যম থেকে সরে গিয়ে ব্যক্তিগত হতাশা উদ্গীরণের জায়গা হয়ে যাচ্ছে না তো!

একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ‘দিন যত যাচ্ছে, ততই অসহিষ্ণু হয়ে উঠছেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ব্যবহারকারীরা। আমাদের মধ্যে দিন দিন সহনশীলতা কমে যাচ্ছে। আমাদের ব্যক্তিগত চাওয়া-পাওয়ার ব্যবধান, অর্থনৈতিক টানাপোড়েন, পারিবারিক অশান্তি, একাকিত্ব, সামাজিক রীতিনীতির সীমাবদ্ধতা, রাষ্ট্রীয় নিপীড়নসহ নানাবিধ কারণে আমরা দিনে দিনে নিষ্পেষিত হচ্ছি। আবার এই ক্ষোভ, এই হতাশা আমরা সঠিকভাবে প্রকাশ করতে পারছি না। এমতাবস্থায় নিজেদের অগোচরেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমরা সহিংস হয়ে উঠছি। আমাদের যত ক্ষোভ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এসে বিস্ফোরিত হচ্ছে। আবার অনলাইনের এই বিস্ফোরণের প্রভাব প্রত্যক্ষভাবে আমাদের অফলাইন জীবনে পড়ছে।’ 

একটি টেলিভিশন চ্যানেলের সংবাদকর্মী বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় হচ্ছে ফেসবুক। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটেই যদি দেখি, বিগত কয়েক বছরে ফেসবুকে ছড়ানো মিথ্যা তথ্যের কারণে দেশে একাধিক বড় সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। ধর্মীয় উন্মাদনা ছড়িয়ে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা চালানো, পদ্মা সেতুতে শিশুর রক্ত আর মাথা লাগার গুজব ছড়ানোর পরিণতিতে ছেলেধরা সন্দেহে ঢাকায় এক মাকে গণপিটুনি দিয়ে হত্যা, ধর্মীয় উত্তেজনা ছড়িয়ে ভাঙচুর ও নির্যাতন। রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি করা বা সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা এ রকম ভুরি ভুরি উদাহরণ খুঁজে পাওয়া যাবে।’ 

বিশেষজ্ঞরা জানান, মিথ্যা তথ্য ছড়ানোর পেছনে অনেক রাজনৈতিক বা ব্যক্তিগত কারণ থাকতে পারে। কিন্তু এই সংবেদনশীল তথ্যগুলোর ফ্যাক্ট চেক না করে গণহারে শেয়ার করার কারণে যে অঘটনগুলো ঘটছে, এই কারণগুলোর নেপথ্যে কী থাকতে পারে! এর একটা কারণ হতে পারে এই সব উসকানিমূলক তথ্য শেয়ার করার মাধ্যমে আমাদের মধ্যে একধরনের আত্মতুষ্টি কাজ করে। নানাবিধ সমস্যার মধ্যে জর্জরিত আমরা যখন অনলাইনে ঢুকে আমাদের বিশ্বাসের ভিন্নমতের কোনো বিষয় দেখি, তখন তার মধ্যে মনের রং মিশিয়ে আমরা তিলকে তাল বানিয়ে শেয়ার করি। এর ফলে একটা মানুষ যখন বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ে, তখন আমাদের মধ্যে একধরনের প্রশান্তি কাজ করে। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. সামিনা লুৎফা বলেন, ‘আমাদের বাকস্বাধীনতা নেই। ফলে মানুষের ভেতর যে রাগ বা হতাশা অবদমিত হয়ে আছে, তা অন্য মানুষের ওপর উগরে দিচ্ছে। আমাদের জীবনযাত্রার মান এমন কঠিন জায়গায় পৌঁছেছে, সব জিনিসের দাম যেভাবে বাড়ছে তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মানুষ পেরে উঠতে পারছে না। মানুষের নাভিশ্বাস উঠে যাচ্ছে। কিন্তু সবার হাতেই একটা করে মোবাইল ডিভাইস আছে, যার মাধ্যমে সে তার মতামত প্রকাশ করতে পারছে। এমতাবস্থায় জীবনের নানা পর্যায়ে মানুষের যে অভিযোগগুলো জমা হয়ে আছে, যার বিরুদ্ধে তারা কিছু বলতে পারছে না, এই মোবাইল ফোনের মাধ্যমে তাদের অভিযোগটাকে অন্য কোনো ব্যক্তির ওপর ঝেড়ে দিচ্ছে। আমাদের সমাজে অসহিষ্ণুতা অনেক বেড়ে গেছে।’

তিনি বলেন, ‘এগুলো প্রকাশের জন্য সমাজে অনেকগুলো পাত্র তৈরি হয়েছে। এর মধ্যে আপনি যদি নারী হন, উচ্চবিত্ত পরিবারের হন, কথাবার্তায় আঞ্চলিক টান থাকে তাহলে আপনি হবেন এসব হতাশা ঝাড়ার আদর্শ পাত্র। বিশেষ করে নারীঘটিত কোনো ইস্যু হলে মানুষের অভিযোগ স্থানান্তর করার ক্ষেত্রটা অনেক বেশি হারে হয়ে থাকে। একটা বাচ্চা মেয়েও এর থেকে রেহাই পায় না। আমাদের যেহেতু অনেক হতাশা রয়েছে, সে ক্ষেত্রে সবচাইতে দুর্বল যে সামাজিক শ্রেণি তার ওপরেই এই ব্লেইম ট্রান্সফার করা হচ্ছে। আমাদের অনলাইন স্পেসে ডেমোক্রেটিক স্পেস নিয়ে যাদের বিরুদ্ধে কথা বলা দরকার, সে সুযোগ নেই বলেই হয়তো অপেক্ষাকৃত কম ক্ষমতাসম্পন্ন বা ক্ষমতাহীন জায়গায় আমাদের রাগ প্রকাশ করে ভেতরের দহন কম করি।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘর্ষ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. সাজ্জাদ সিদ্দিকি এ বিষয়ে খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমাদের কারিকুলাম, রাষ্ট্রের গুরুত্বহীনতা ও প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাব্যবস্থা মিলিয়ে এই অবস্থার জন্য দায়ী আমরা। পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোতে যেখানে মানুষ মূল্যবোধের জায়গাটাকে অনেক বড় করে দেখে, সেখানে উন্নয়নশীল দেশে, বিশেষ করে মিডল ইস্ট, আফ্রিকা বা সাউথ এশিয়ায় মূল্যবোধের জায়গাটিকে অনেক কম গুরুত্ব দেওয়া হয়। বিশেষ করে আমাদের দেশে একটি ভালো প্রজন্ম তৈর করার জন্য উদ্যোগ বা আগ্রহ রাষ্ট্রের কোনো লেভেল থেকে কখনো দেখা যাচ্ছে না। রাষ্ট্র তার নিজের সুযোগ-সুবিধা নিয়েই সব সময় ব্যস্ত থাকে। এর ফলে শিক্ষা, মূল্যবোধ এইগুলোকে প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের মাধ্যমে সামাজিকীকরণ করা হয়নি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এখন ভালো-মন্দের বিভেদ শেখানোর ওপর জোর দেওয়া হয় না। ফলে যার যা ভালো লাগছে সে তাই করছে, এতে কাউকে আঘাত দেওয়া হচ্ছে কি না এসব কেউ পাত্তা দিচ্ছে না। দিন দিন ভালো চিন্তাশীল মানুষের সংখ্যা কমে যাচ্ছে।’

ড. সাজ্জাদ সিদ্দিকি বলেন, ‘মডার্ন কমিউনিকেশন, যাকে আমরা নিউ মিডিয়া বলি এর মাধ্যমে যোগাযোগের সুযোগটা হয়ে যাচ্ছে অবারিত। এই মুহূর্তে কিছু দেখছেন, তার ওপর ভিত্তি করে নগদে কোনো মন্তব্য করে বসলেন। এভাবে মন্তব্য করার জন্য ব্যক্তির মধ্যে একধরনের হিরোইজম কাজ করে। এই ভালো লাগা থেকে একধরনের স্যাডিজম তৈরি হয়, যা তাদের আনন্দ দেয়, একে তারা গুরুত্ব দেয়। ফলে ব্যক্তিগত আক্রমণ করে মানুষ পৈশাচিক আনন্দ পাচ্ছে, তাদের মধ্যে স্যাডিস্ট আনন্দের দেখা পাওয়া যায়। এ ছাড়া মানুষ পারিপার্শ্বিক বিভিন্ন কারণে অসহিষ্ণু হয়ে পড়ছে, তাদের ক্ষোভ বাড়ছে। দেখা যাচ্ছে, এ ক্ষোভ তারা তাদের কাছের মানুষদের সঙ্গে প্রকাশ করতে পারছে না, তাই ফেসবুকে অপরিচিতদের উপরে উগড়ে দিচ্ছে।

বিশ্ব ধাত্রী দিবস: যোগ্যতায় এগোলেও মর্যাদায় পিছিয়ে ধাত্রীরা

প্রকাশ: ০৫ মে ২০২৪, ০১:১২ পিএম
বিশ্ব ধাত্রী দিবস: যোগ্যতায় এগোলেও মর্যাদায় পিছিয়ে ধাত্রীরা

বাংলার গ্রামীণ জনপদে মিডওয়াইফারি বা ধাত্রী পেশা অতি প্রাচীন। অতীতে যখন চিকিৎসা ব্যবস্থার তেমন উন্নতি হয়নি, তখন কোনো প্রসূতির সন্তান প্রসবে ধাত্রীই ছিলেন একমাত্র ভরসা।

তবে বর্তমানে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে শিশুর জন্ম হলেও প্রসবের আগে, প্রসবকালীন ও পরবর্তী সময় পর্যন্ত ধাত্রীদের ভূমিকা নিরাপদ মাতৃত্বের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। সে দিক বিবেচনায় এনে ধাত্রীদের পেশাকে দ্বিতীয় শ্রেণিতে উন্নীত করা হয়েছে।

তবে এখনো সাধারণ মানুষের কাছে ধাত্রী পেশাটি তেমন মর্যাদা পায় না বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। এ অবস্থায় এ বছরও বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশে নানা আয়োজনে রবিবার (৫ মে) পালিত হচ্ছে বিশ্ব ধাত্রী দিবস। এবারের প্রতিপাদ্য ‘টেকসই মিডওয়াইফারি: আগামীকালের বিশ্বের যত্ন নেওয়া’।

পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের এমসিএইচ (মা ও শিশু) সার্ভিসেস ইউনিটের সহকারী পরিচালক ডা. মো. ফায়জুর রহমান বলেন, আমরা যারা ডাক্তার তারা বুঝি একজন প্রসূতি মায়ের জন্য প্রশিক্ষিত ধাত্রী কতটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। কারণ প্রথম পর্যায়ে একজন প্রসূতি মায়ের স্বাভাবিক প্রসব হবে নাকি অস্ত্রোপচার লাগবে এটা নির্ধারণই করেন একজন ধাত্রী। কারণ নিয়ম অনুযায়ী প্রথমে ধাত্রী ওই প্রসূতির অবস্থা পরীক্ষা করে তার স্বাভাবিক প্রসবের চেষ্টা করবেন তা সম্ভব না হলে অস্ত্রোপচারে যেতে হয়।

অন্যদিকে অবস্টেট্রিক্যাল অ্যান্ড গাইনোকোলজিক্যাল সোসাইটি অব বাংলাদেশ (ওজিএসবি) এর সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ফেরদৌসি বেগম বলেন, নিরাপদ মাতৃত্ব নিশ্চিত করতে এবং মাতৃ ও শিশুমৃত্যু কমাতে প্রশিক্ষিত ধাত্রীর কোনো বিকল্প নেই। কারণ সন্তান প্রসবের আগে অন্তঃসত্ত্বা নারীকে মানসিকভাবে সাপোর্ট দেওয়া ও ডাক্তারের নির্দেশনা মোতাবেক যাবতীয় কাজ করা, সন্তান প্রসবের পর তাকে প্রয়োজনীয় সেবাদান করা ও নবজাতকের পরিচর্যা করা, অন্তঃসত্ত্বা নারী ও তার পরিবারকে নতুন মা ও নতুন শিশুর যত্নে করণীয় সম্পর্কে বুঝিয়ে দেওয়া- এ সবই ধাত্রীকে করতে হয়। কিন্তু অনেকেই এখনো জানেন না নার্স আর ধাত্রীদের কাজের পার্থক্য কি। পাশাপাশি প্রয়োজনের তুলনায় দেশে ধাত্রীর সংখ্যা অনেক কম থাকায় প্রসূতি মা ও নবজাতকের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিতে আমাদের অনেক সময়ই হিমশিম খেতে হয়।

জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিলের (ইউএনএফপিএ) প্রসূতি ও নবজাতকের স্বাস্থ্যসেবার মান বৃদ্ধির পরিসংখ্যান বলছে- বাংলাদেশে ৮৭ শতাংশ স্বাভাবিক প্রসব শুধু দক্ষ ধাত্রী দ্বারা সম্ভব। ২০২৩ সালের মে মাস পর্যন্ত পাওয়া তথ্য মতে, দেশে নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কাউন্সিল থেকে নিবন্ধন করা মিডওয়াইফের সংখ্যা প্রায় ৮ হাজার। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং ইউনিয়ন সাব সেন্টারে প্রায় ২ হাজার ৫৫৭ জন মিডওয়াইফ কাজ করছেন। অন্যদিকে বাংলাদেশ মিডওয়াইফারি অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য মতে, এখনো দেশে মোট সাধারণ প্রসবের ৭৮ শতাংশ হয়ে থাকে মিডওয়াইফ বা ধাত্রীদের মাধ্যমে। এ ছাড়া অন্যান্য সেবাসহ প্রায় ৯০ শতাংশ কাজেই মিডওয়াইফরা জড়িত।

তবে সেবাগ্রহীতার তুলনায় মিডওয়াইফদের সংখ্যা অপ্রতুল হওয়ায় নিরবচ্ছিন্ন সেবাদান ব্যাহত হচ্ছে। টেকসই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে দ্রুত মিডওয়াইফ নিয়োগ দেওয়া জরুরি বলেছেন সংশ্লিস্টরা।

এদিকে পরিসংখ্যান ব্যুরোর গত মাসের প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশের মোট সন্তান প্রসব পদ্ধতির ৪৯.৩ শতাংশই স্বাভাবিক যার মধ্যে বাসাবাড়িতে হয় ৩২.৭৭ শতাংশ এবং এদের বেশির ভাগই ধাত্রীদের হাতে হয়ে থাকে। এ ছাড়া ৫০.৯ শতাংশ প্রসব হয় অস্ত্রোপচারে যেখানে প্রসবপূর্ব, প্রসবকালীন এবং প্রসব পরবর্তী সময়ে ধাত্রীদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকে।

আইএমএফের শর্তে চাপ বেড়েছে জনজীবনে

প্রকাশ: ০৫ মে ২০২৪, ১২:৩৭ পিএম
আইএমএফের শর্তে চাপ বেড়েছে জনজীবনে
খবরের কাগজ গ্রাফিকস

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বাংলাদেশের জন্য ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ কর্মসূচি অনুমোদন করে গত বছরের জানুয়ারিতে। কিস্তিভিত্তিক এই ঋণ পাওয়ার জন্য রাজস্ব আয় বাড়ানো, কর অব্যাহতি কমানো, ব্যাংক খাতে সুশাসন নিশ্চিতকরণ, টাকার বিনিময় হার নমনীয়সহ অনেকগুলো শর্ত দিয়েছে সংস্থাটি। তবে অন্যতম শর্ত হচ্ছে বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি কমিয়ে আনা। সরকার তাদের (আইএফএফ) এই শর্ত মেনে নিয়েছে এবং বছরে চার দফা বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। কীভাবে এই দাম সমন্বয় করা হবে, তার একটি পরিকল্পনাও দিয়েছে আইএমএফের কাছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, আগামী তিন বছর বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি কমিয়ে আনা হবে।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে বিদ্যুৎ খাতে বছরে ভর্তুকি ৮৪ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। আইএমএফ চায়, দাম সমন্বয় করে (বৃদ্ধি করে) বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকির চাপ কমাতে। অর্থাৎ এই খাতে কোনো ভর্তুকি চায় না ওয়াশিংটনভিত্তিক ঋণদাতা এই সংস্থাটি। আইএমএফের শর্ত অনুযায়ী ক্রমান্বয়ে দাম বাড়িয়ে তা নিয়ে আসা হবে উৎপাদন খরচের সমান বা কাছাকাছি পর্যায়ে।

এখন প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের পাইকারি দাম গড়ে ৭ টাকার কিছু বেশি। তবে আইএমএফের পরামর্শ মেনে ভর্তুকি প্রত্যাহার করা হলে এ দর ১২ টাকার ওপরে নিয়ে যেতে হবে। সে ক্ষেত্রে ভোক্তাপর্যায়ে গড়ে বিদ্যুতের দাম হবে প্রায় ১৫ টাকা, যা এখন প্রায় ৯ টাকা।

অর্থনীতিবিদসহ সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, বিদ্যুতের দাম বাড়লে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ে। তাই এটি বছরে কয়েকবার বাড়ানো হলে বাজারে জিনিসপত্রের দাম নাগালের বাইরে চলে যাবে। এমনিতেই সাধারণ মানুষ উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপে আছে। এত চাপ ভোক্তা নিতে পারবে না। বিদ্যুৎ খাতে মূল্য বৃদ্ধি করে পুরো ভর্তুকি সমন্বয়ের সিদ্ধান্ত হবে আত্মঘাতী।

গত বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে আইএমএফের প্রতিনিধিদল বিদ্যুৎ বিভাগের সঙ্গে বৈঠক করে। ভর্তুকি কমাতে বিদ্যুতের দাম সমন্বয়ের বিষয়টি বৈঠকে উঠে আসে।

সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলেন, মূল্য বৃদ্ধি না করে বিদ্যুৎ খাতে যেসব অনিয়ম-দুর্নীতি আছে সেগুলো বন্ধ করতে হবে। ক্যাপাসিটি চার্জ সরকারের জন্য গলার কাঁটা। এ পদ্ধতি বাতিল করতে হবে। পাশাপাশি দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে কেন্দ্রগুলোর উৎপাদন খরচ কমিয়ে ভর্তুকি কমানো যেতে পারে।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমাদের ভর্তুকির পরিমাণ বেশি। তবে ঠিক কোন ক্ষেত্রে এটি কমাতে হবে, সেটি দেখার বিষয়। এর মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকির মাত্রা বেশি। এই খাতের বড় সমস্যা হচ্ছে অতিরিক্ত ক্যাপাসিটি চার্জ। তবে কৃষি খাতে ভর্তুকি কমানো উচিত হবে না।’ বিদ্যুতের দাম বাড়লে জনগণের ওপর চাপ বাড়বে কি না- এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘চাপ তো বাড়বেই। এমনিতেই মূল্যস্ফীতির চাপ বাড়ছে। তার ওপর বিদ্যুতের চাপ বাড়লে জনগণের ওপর চাপ আরও ঘনীভূত হবে। আমাদের রাজস্ব আদায় কম। ফলে বাজেট ঘাটতি মেটাতে ব্যাংকের ওপর নির্ভরশীল হতে হয়। আবার ব্যাংক থেকে ঋণ নিলে মূল্যস্ফীতিতে প্রভাব পড়ে। কাজেই সব বিষয় বিচার-বিশ্লেষণ করে সতর্কতার সঙ্গে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’

অবশ্য বিদ্যুৎ খাতের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকার বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি দিয়ে আসছে। তাই দাম সমন্বয়ের নামে ভর্তুকি কমানোর মানে হলো বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি। তবে খরচ কমিয়েও সরকার ভর্তুকি সমন্বয় করতে পারে। অনিয়ম, দুর্নীতি, অপচয় রোধ করে বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ কমানোর দিকে সরকারের মনোযোগ নেই।

অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক এম এম আকাশ বলেন, ‘বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনে (বিইআরসি) বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির একটি পদ্ধতি আছে। ভোক্তা, বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী সংস্থা, সরকারসহ সব পক্ষের উপস্থিতিতে যৌক্তিক কারণ পর্যালোচনা করে দাম বাড়ানোর জন্য গণশুনানি করে সিদ্ধান্ত গ্রহণের একটি ব্যবস্থা প্রচলিত আছে। বিইআরসি গঠনের পরামর্শ দিয়েছিল বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ। এখন সংস্থাটি নিজেরাই সে ধরনের পদ্ধতিকে বাদ দিয়ে সরাসরি সরকারকে চাপ দিয়ে দাম বৃদ্ধির পরামর্শ দিয়েছে। এটি তাদের একধরনের আচরণগত অসংগতি।’

তিনি আরও বলেন, ‘তাদের (আইএমএফ-বিশ্বব্যাংক) উচিত সরকারকে বলা, আগে গণশুনানি হোক। সেখানে বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের প্রতিনিধি উপস্থিত থেকে যুক্তিতর্ক তুলে ধরতে পারবেন। গণশুনানি ছাড়া বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর পদ্ধতি সঠিক নয়।’

এক প্রশ্নে অধ্যাপক আকাশ আরও বলেন, ‘আইএমএফের কথা শুনলে জনগণের ওপর চাপ বাড়বে, এটি খুবই স্বাভাবিক। এখন কথা হচ্ছে, সরকার তাদের কাছ থেকে ঋণ নিয়েছে। কাজেই তাদের কথা তো শুনতেই হবে। এটি তো সরকারের নীতির দুর্বলতা। সরকার কেন এ ধরনের শর্তে ঋণ নিচ্ছে। বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হলে জনগণ আরও দিশেহারা হবে। এতে কোনো সন্দেহ নেই। আমি মনে করি, বিকল্প হিসেবে বিইআরসিকে পুনর্গঠন করা দরকার। সেখানে আলোচনা করে দাম বৃদ্ধির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’

আরেক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘রাজস্ব বৃদ্ধি আমরাও সমর্থন করি। কিন্তু কথা হচ্ছে কোন উৎস থেকে রাজস্ব বাড়ানো হবে, তা ঠিক করতে হবে। আমরা চাই ধনিক শ্রেণির কাছ থেকে প্রত্যক্ষ কর আদায়ে বেশি নজর দেওয়া উচিত।’

আইএমএফের ঋণ কর্মসূচি শুরুর পর দুই কিস্তিতে ১০০ কোটি ডলারের বেশি বাংলাদেশ পেয়েছে। তৃতীয় কিস্তিতে ৬৮ কোটি ডলার পাওয়ার কথা জুন মাসে। আইএমএফের বর্তমান দলটি ২৪ এপ্রিল থেকে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের সঙ্গে আলোচনা করছে, যা শেষ হবে ৮ মে।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র বলেছে, তেল-গ্যাসে এখন ভর্তুকি নেই। আইএমএফের প্রতিনিধিদল জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ, পেট্রোবাংলা, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) সঙ্গেও আলাদা বৈঠক করেছে। পেট্রোবাংলা ও বিপিসি প্রায় একইভাবে আইএমএফকে জানিয়েছে, গ্যাস ও জ্বালানি তেলে নতুন করে ভর্তুকির চাপ নেই। তেলের দাম নিয়ে স্বয়ংক্রিয় যে পদ্ধতি (আন্তর্জাতিক বাজারে বাড়লে দেশে বাড়বে, কমলে কমবে) চালু করার কথা আইএমএফ বলেছিল, তা হয়েছে। প্রতি মাসে জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয় করা হচ্ছে। এতে জ্বালানি তেলে আর কখনো ভর্তুকি দিতে হবে না।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ গত ফেব্রুয়ারিতে সাংবাদিকদের বলেছিলেন, উৎপাদন খরচের চেয়ে কম দামে বিদ্যুৎ বিক্রি করা হয়। ঘাটতি মেটাতে দাম সমন্বয় করা হচ্ছে। আগামী তিন বছর ধরে ধাপে ধাপে দাম সমন্বয় করা হবে। এর অংশ হিসেবে সর্বশেষ গত মার্চ মাসে বিদ্যুতের দাম সরকার একবার বাড়ায়।

এর আগে গত বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত তিন মাসে তিন দফায় বাড়ানো হয়েছিল বিদ্যুতের দাম। গত দেড় দশকে পাইকারি পর্যায়ে ১২ বার ও খুচরায় ১৪ দফা বাড়ানো হয়েছে বিদ্যুতের দাম।

সরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিআইডিএসের ঊর্ধ্বতন গবেষণা পরিচালক ড. জায়েদ বখত বলেন, ‘রাজস্ব আদায়ে আমাদের বড় দুর্বলতা আছে। কাঙ্ক্ষিত রাজস্ব আদায় করতে পারলে ভর্তুকির ওপর এত বেশি চাপ আসত না। আইএমএফের সব পরামর্শ মেনে চলার দরকার পড়ত না।’ তিনি বলেন, ‘দেশে মূল্যস্ফীতির চাপ রয়েছে। বিদ্যুতের দাম বাড়লে এই চাপ আরও বাড়বে। ফলে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ বাড়বে। ভর্তুকির চাপ সামলাতে হবে। তবে সেটি সহনীয়ভাবে।

কর আদায় বাড়াতে চায় আইএমএফ: মোট দেশজ উৎপাদন-জিডিপি অনুপাতে বাংলাদেশে কর আদায় বিশ্বে সবচেয়ে কম। এর অন্যতম কারণ হলো কর অব্যাহতির পরিমাণ বেশি। বর্তমানে বাংলাদেশে জিডিপির তুলনায় কর অনুপাত ৯ শতাংশের নিচে। আইএমএফ এই অনুপাত কমপক্ষে ১২ শতাংশে উন্নীত করতে চায়। এ জন্য কর অব্যাহতি তুলে নিতে বলেছে সরকারকে।

এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে ৩০টি শিল্প খাত কর অবকাশ সুবিধা পায়। এই সুবিধা চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত আছে। একই সঙ্গে তথ্যপ্রযুক্তি ও সার্ভিস সেক্টরে ২১টি খাত একই সুবিধা পাচ্ছে। সম্প্রতি এনবিআরের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এসব খাত থেকে কর অব্যাহতি তুলে নেওয়ার প্রস্তাব করেছে আইএমএফ প্রতিনিধিদল।

উল্লেখ্য, কর অবকাশ মানে হচ্ছে, শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত মুনাফার বিপরীতে কোনো কর দিতে হয় না। মেয়াদ শেষ হলে প্রযোজ্য হারে কর দিতে হয়।

ফিলিস্তিন ইস্যুতে উত্তাল বিশ্ব

প্রকাশ: ০৫ মে ২০২৪, ১১:৪৯ এএম
ফিলিস্তিন ইস্যুতে উত্তাল বিশ্ব
ছবি : সংগৃহীত

গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলার পর গাজায় হামলা চালানো শুরু করে ইসরায়েলি সেনারা। তাদের হামলায় ছোট্ট এ উপত্যকায় ৩৪ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হওয়ার পাশাপাশি হাজার হাজার ঘর-বাড়ি ধ্বংস হয়ে গেছে। এ হামলার প্রতিবাদে ফুঁসে উঠেছে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এ নিয়ে যা ভাবছেন আমাদের দেশের বিশিষ্টজনেরা-

>পরিবর্তন আনতে হবে এই বিশ্বব্যবস্থার : সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী
>যুদ্ধ বন্ধ না করলে পশ্চিমাদেরই ক্ষতি : মুন্সি ফয়েজ আহমেদ
>অব্যাহত রয়েছে বিশ্ব মানবতার প্রতিবাদ : মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম
>অধিকার ন্যায়সংগত ও ধর্মসম্মত : মুফতি মোহাম্মদ রুহুল আমীন

বজ্রপাত প্রতিরোধে ব্যর্থ হচ্ছে সব কৌশল

প্রকাশ: ০৪ মে ২০২৪, ১১:৪৭ এএম
বজ্রপাত প্রতিরোধে ব্যর্থ হচ্ছে সব কৌশল
খবরের কাগজ গ্রাফিকস

প্রাণহানি বিবেচনায় ২০১৬ সালে বজ্রাঘাতকে দুর্যোগ হিসেবে ঘোষণা করে সরকার। এরপর সাত বছর পার হলেও এখনো এই দুর্যোগ প্রতিরোধে টেকসই কোনো প্রকল্প নিতে পারেননি মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্টরা। বজ্রাঘাত প্রতিরোধে ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের নেওয়া তালগাছ প্রকল্প, আবহাওয়া অধিদপ্তরের লাইটনিং ডিটেকশন সেন্সর প্রকল্প থেকে প্রত্যাশিত সাফল্য পাওয়া যায়নি।

সর্বশেষ বজ্রনিরোধক দণ্ড, বজ্রনিরোধক যন্ত্র ও ছাউনি স্থাপনের মাধ্যমে চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে কোনো কিছুর মাধ্যমেই বজ্রাঘাতে প্রাণহানি ঠেকানো যাচ্ছে না। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সব কৌশলই ব্যর্থ হয়েছে। তাই গবেষণার মাধ্যমে সব অংশীজন ও বিশেষজ্ঞকে নিয়ে প্রকল্প নেওয়া হলে উপযুক্ত সমাধান আসতে পারে বলে মনে করছেন তারা।

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড ভালনারেবিলিটি স্টাডিজের অধ্যাপক এবং উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাহবুবা নাসরীন খবরের কাগজকে বলেন, ‘বজ্রাঘাতে মৃত্যু বাড়ছে। এটি যেহেতু দুর্যোগ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে, আমাদের নির্দেশনা মানতে হবে। একই সঙ্গে এটি প্রতিরোধে গবেষণার মাধ্যমে সম্ভাব্য সব উপায় বের করতে হবে।’

টানা তাপপ্রবাহে গত বৃহস্পতিবার বজ্রাঘাতে দেশের চার জেলায় ১০ জনের মৃত্যু হয়। এর মধ্যে কুমিল্লায় চারজন, রাঙামাটিতে তিনজন, কক্সবাজারে দুজন এবং খাগড়াছড়ি জেলায় একজন।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, দেশে ২০১১ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ২ হাজার ১৬৪ জনের প্রাণহানি ঘটেছে এই বজ্রাঘাতে। এ ছাড়া ২০২১ সালে ৩৬৩ জন এবং ২০২২ সালে মারা গেছেন ২৭৪ জন। সেভ দ্য সোসাইটি অ্যান্ড থান্ডারস্টর্ম অ্যাওয়ারনেস ফোরামের (এসএসটিএফ) হিসাব অনুযায়ী, ২০২২-এর এপ্রিল থেকে ২০২৩ সালের মে মাস পর্যন্ত বজ্রাঘাতে ৩৪০ জন প্রাণ হারিয়েছেন।

মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তর-সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০১৭ সালে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর দুই প্রকল্পের (কাবিখা ও টিআর) মাধ্যমে সারা দেশে ৪০ লাখ তালগাছের চারা রোপণ শুরু করে। কিন্তু সেটিতে প্রত্যাশিত সাফল্য না আসায় ২০২২ সালে সেটি বাতিল ঘোষণা করেন তৎকালীন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান। ২০১৮ সালে আবহাওয়া অধিদপ্তরের নেওয়া ‘লাইটনিং ডিটেকশন সেন্সর’ প্রকল্পও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে কার্যক্ষমতা হারিয়েছে।

অন্যদিকে ২০২১-২২ অর্থবছরের আওতায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর বজ্রপাতপ্রবণ ১৫ জেলায় একই প্রকল্পের (কাবিখা ও টিআর) মাধ্যমে ৩৩৫টি বজ্রনিরোধক দণ্ড-যন্ত্র বসায়। সংশ্লিষ্ট জেলাগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এর অনেকগুলোই সচল নেই। আবার কোনোটির কাভারেজ বা রেডিয়াস খুবই কম। এই ধরনের আরও ৬ হাজার ৭৯৩টি দণ্ড বসানোর জন্য ১ হাজার ৩২১ কোটি টাকার প্রকল্প সম্প্রতি পরিকল্পনা কমিশনে পাঠিয়েছে মন্ত্রণালয়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই প্রকল্পও খুব বেশি কার্যকরী হবে না। কারণ এসব যন্ত্রের কাভারেজ খুবই কম। যদি কাভারেজ কয়েক কিলোমিটার বা কয়েক শ মিটারও হয়, তাহলে এটি বজ্রাঘাত থেকে রক্ষায় কার্যকর হবে। না হলে এ থেকে এটি থেকে সুফল আসবে না।

বিষয়টির সত্যতা পাওয়া যায় ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. কামরুল হাসানের কথায়। খবরের কাগজকে তিনি বলেন, ‘১ হাজার ৩০০ কোটি টাকার প্রজেক্ট আমরা পাঠিয়ে দিয়েছি। ১৫টি জেলা চিহ্নিত করেছি। এসব অঞ্চলে বজ্রনিরোধক দণ্ড স্থাপনের জন্য প্রকল্প করে আমরা পাঠিয়ে দিয়েছি। তবে প্রকল্পটি এখনো পাস হয়নি।’

আগের বসানো দণ্ডের উপযোগিতা কেমন এবং অনেক জায়গায় সচল না থাকার বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘খবরটি আমার কাছেও এসেছে। যেসব দণ্ড স্থাপন করা হয়েছে, কিছু জায়গায় নষ্ট হয়ে গেছে। যেগুলো নষ্ট হয়েছে, সেগুলো ঠিক করতে বলেছি। এর কাভারেজে ভিন্নতা রয়েছে। সর্বোচ্চ ৮০০ মিটার কাভার করে। এটি ক্যাপাসিটির ওপর নির্ভর করে। আমরা চাচ্ছি, অত্যাধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে এটি করতে। কারণ প্রত্যেক মানুষের জীবন মূল্যবান।’

বজ্রপাতে করণীয় সম্পর্কে জানতে চাইলে আবহাওয়াবিদ ওমর ফারুক খবরের কাগজকে বলেন, ‘এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত বেশি বজ্রপাত হয়। আমাদের সচেতন হতে হবে। বজ্রপাত হওয়ার আগে বোঝা যায়। আগেই বিদ্যুৎ চমকানি শুরু হয়। এ জন্য পশ্চিম দিকে তাকাতে হবে। কারণ পশ্চিম দিক থেকে ধীরে ধীরে এটি নিজের অবস্থানের দিকে আসবে। বিষয়টি জনসাধারণকে বোঝাতে হবে। এটির স্থায়িত্ব এক ঘণ্টার বেশি থাকে না। এ সময় বাড়িতে বা নিরাপদে থাকতে হবে। তাহলে প্রাণহানি হবে না।’

এই বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের মতামত জানতে পড়ুন...

করণীয় নিয়ে প্রচার করতে হবে

প্রকল্প ব্যর্থ হলে জনগণের টাকা নষ্ট হবে

রেকার বিলে দুর্নীতি: নকল রসিদে টাকা নেওয়ার অভিযোগ

প্রকাশ: ০৪ মে ২০২৪, ১০:৪৭ এএম
রেকার বিলে দুর্নীতি: নকল রসিদে টাকা নেওয়ার অভিযোগ
পুলিশের রেকারের ছবিটি শুক্রবার রাজধানীর সার্ক ফোয়ারা এলাকা থেকে তোলা। ছবি: খবরের কাগজ

গত মঙ্গলবার বেলা আড়াইটা। রাজধানীর সোনারগাঁও ট্রাফিক পুলিশ বক্সের সিগন্যালে দাঁড়িয়ে আছে ঢাকা মেট্রো-দ ১১-২২-২৫ নম্বরের একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা। সিগন্যাল পার হওয়ার সময় অটোরিকশাটিকে থামানোর সংকেত দেন বুলবুল নামের ট্রাফিক পুলিশের একজন সদস্য। থেমে যায় অটোরিকশাটি। এরপর ট্রাফিক সার্জেন্ট অটোরিকশার চালক রহিমের কাগজপত্র দেখতে চান। কাগজ নিয়ে অটোরিকশা থেকে নেমে সার্জেন্টের সঙ্গে পুলিশ বক্সে ঢোকেন চালক। বক্সে ১০ মিনিটের মতো থাকার পর তিনি বের হয়ে আসেন।

পুলিশ তাকে জানায়, এই গাড়ির ফিটনেসে সমস্যা আছে। কিন্তু চালকের দাবি ফিটনেসে কোনো সমস্যা নেই। চালক এরপর মালিকের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন। এমনকি পুলিশের সঙ্গেও তার মালিককে ফোনে কথা বলিয়ে দেন। এভাবে চলতে থাকে সমঝোতার চেষ্টা। কিন্তু শেষ রক্ষা হয় না। অটোরিকশা নাকি তাকে রেখেই যেতে হবে। কিছুক্ষণ পর পুলিশ আবারও ঢোকে বক্সে, এরপর একটি রেকার বিলের রসিদ নিয়ে বেরিয়ে আসে।

রহিম জানান, জরিমানা করা হয়েছে ১ হাজার ২০০ টাকা। এ ধরনের ঘটনা সোনারগাঁও ট্রাফিক পুলিশ বক্সের নিত্যদিনের। প্রতিদিন কম করে হলেও ১০টি গাড়িকে জরিমানা করা হয়। কিছু গাড়ি ডাম্পিং করলেও অধিকাংশ ছেড়ে দেওয়া হয়।

সম্প্রতি ইস্কাটনে পরিবার নিয়ে ডাক্তার দেখাতে আসেন মোহাম্মদ সরস ভূঁইয়া। তাকে একটি হাসপাতালের সামনে নামিয়ে দেন তার নিজস্ব গাড়ির চালক মনির। নামিয়ে দেওয়ার দৃশ্য নিজ মোবাইলে ভিডিও ধারণ করে গাড়িটি আটকান ট্রাফিক সার্জেন্ট রেজাউল ও ট্রাফিক কনস্টেবল সেলিম। তাদের অভিযোগ- গাড়ির চালক মূল সড়কে তার মালিককে নামিয়েছেন, যা নিয়মবহির্ভূত।

এ সময় রেজাউল ও সেলিম ড্রাইভার মনির হোসেনের লাইসেন্স নিয়ে ৫ হাজার টাকার একটি মামলা দিতে চান। মনির গাড়ির নামে মামলা দিতে বলেন। কিন্তু পুলিশ গাড়ির নামে মামলা দিতে ইচ্ছুক নয়। পরে মনির তার বস সরসকে ফোন দেন। তখন সরস বলেন, ‘আমি ডাক্তারের চেম্বারে আছি। পুলিশকে সেটা বুঝিয়ে বলেন।’ পুলিশকে বোঝাতে গিয়ে উল্টো বিপদে পড়েন মনির। রেগে গিয়ে কনস্টেবল সেলিম বলেন, ‘এমপি-মন্ত্রী ফোন দিলেও মামলা দেব।’ পরে সার্জেন্ট রেজাউল গাড়ি রেকারে লাগিয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে একটি ভুয়া রসিদ দিয়ে ৬০০ টাকা আদায় করেন চালক মনিরের কাছ থেকে।

মনির অভিযোগ করে বলেন, ‘আমি ১০ বছরে কখনো আমার লাইসেন্সে মামলা খাইনি। সব সময় আইন মেনে গাড়ি চালাই। হঠাৎ ট্রাফিক কনস্টেবল সেলিম এসে আমাকে ধরেন এবং গাড়ি রেকার দেওয়ার ভয় দেখিয়ে রেকার বিলের রসিদ ধরিয়ে দেন। পরে নগদ ৬০০ টাকা দিতে হলো।’

একই দিনে বাংলামোটর মোড়ে ট্রাফিক কনস্টেবল জসিম এক মোটরসাইকেলচালকের বিরুদ্ধে মামলা দিতে চান। বক্সের মধ্যে ওই চালক তার পায়ে পড়েন। কিন্তু কনস্টেবল সেলিম কোনোভাবেই তা মানতে নারাজ। জসিম পাঠাওয়ের চালক। ৩০০ টাকা দিয়ে কোনোভাবে তিনি ম্যানেজ করেন কনস্টেবল সেলিমকে। এই মোটরসাইকেলটির নম্বরটি হচ্ছে- ঢাকা মেট্রো-ল-১৩৫৭৪৩।

সরেজমিনে রাজধানীর কারওয়ান বাজার, বাংলামোটরসহ বেশ কয়েকটি ট্রাফিক বক্স ঘুরে দেখা যায়, রাজধানীর বিভিন্ন ট্রাফিক পয়েন্টে এ ধরনের ঘটনা নিত্যদিনের। এই রেকার বিল নিয়ে চলে নয়ছয়। ট্রাফিক বক্সগুলো স্বচ্ছ কাচ দিয়ে ঘেরার কথা থাকলেও পুরোটাই টিনের বেড়া দেওয়া। তাই ভেতরে কী হয়, বাইরে থেকে দেখার কোনো সুযোগ নেই। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন কায়দায় অপরাধ করে যাচ্ছে কিছু সংখ্যক পুলিশ।

বিভিন্ন ভুক্তভোগীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে রেকার বিলের বিষয়ে অনুসন্ধান চালায় খবরের কাগজের অনুসন্ধানী টিম। অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে চাঞ্চল্যকর অনেক তথ্য। ইতোমধ্যে এ বিষয়ে বেশ কয়েকটি ভিডিও ফুটেজ ও ছবি খবরের কাগজের হাতে এসে পৌঁছেছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ট্রাফিক পুলিশের কাছে রেকার বিলের দুটি রসিদ থাকে। এর মধ্যে একটি সরকারি রসিদ (আসল)। ওই সরকারি রসিদ অনুযায়ী সড়কে দায়িত্বপ্রাপ্ত কতিপয় ট্রাফিক সার্জেন্ট হুবহু নকল আরেকটি রসিদ বানিয়ে নিজেদের কাছে রেখে দেন। নকল ওই রসিদটি দেখে বোঝার উপায় নেই যে সেটি আসল নয়। রেকার লাগানোর পর কোনো চালকের সঙ্গে মীমাংসা হলে টাকা নিয়ে দেওয়া হয় নকল রসিদ। মীমাংসা না হলে মামলা দিয়ে তাকে সরকারি রসিদ দেওয়া হয়।

অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, রিকশা, ভ্যান, মোটরসাইকেল, প্রাইভেট কার, সিএনজিচালিত অটোরিকশাসহ হালকা যানবাহনের জন্য ১ হাজার ২০০ টাকা এবং ট্রাক, বাস, বড় পিকআপ-ভ্যান, কার্গোসহ ভারী যানবাহনের জন্য রেকার বিল ২ হাজার টাকা। সন্ধ্যার পর থেকে সারা রাতই রেকারের ব্যবহার বাড়ে। অভিযোগ হচ্ছে- গাড়ির কাগজপত্র ঠিক নেই, চালকের লাইসেন্স নেই, গাড়ির ফিটনেস নেই। এরপর সুযোগ বুঝে আদায় করা হয় রেকার বিল। সমঝোতা হলে কখনো নকল রসিদ দিয়ে আদায় করা হয় টাকা। আবার কখনো রসিদ ছাড়াও টাকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়।

ট্রাফিকের একটি বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, অভিযোগ রয়েছে সার্জেন্ট থেকে শুরু করে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও এই টাকার ভাগ পেয়ে থাকেন। পুলিশের অবৈধভাবে আয়ের একটি বড় খাত এটি। তবে এখানে যে বড় ধরনের দুর্নীতি হচ্ছে, সেটিও শনাক্ত করা কঠিন।

সোনারগাঁও ট্রাফিক পুলিশ বক্সে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্য মতিউর রহমান খবরের কাগজকে বলেন, ‘হালকা যানের জন্য ১ হাজার ২০০ ও ভারী যানের জন্য রেকার বিল ২ হাজার টাকা। তবে ঢাকার বাইরের গাড়ি হলে হিসাব অন্য রকম। এর বেশি তথ্য দিতে পারব না। আপনি ডিসির সঙ্গে কথা বলেন।’

দিনে কয়টি গাড়ি ডাম্পিং হয় জানতে চাইলে সোনারগাঁও ট্রাফিক বক্সের দায়িত্বরত পুলিশ সদস্য বুলবুল খবরের কাগজকে বলেন, কোনো দিন ১০টি, কোনো দিন তিন থেকে চারটি। অবৈধ যানবাহন ও যেসব যানবাহনে সমস্যা থাকে সেগুলাতেই রেকার লাগানো হয় বলে জানান তিনি।

রেকার বিল এবং সড়কে হালকা ও ভারী যানবাহন থেকে চাঁদাবাজি, অপহরণ, নির্যাতন থেকে শুরু করে ঘুষ, মাদক চোরাকারবার, মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো, অবৈধভাবে আটক করাসহ পুলিশের বিরুদ্ধে নানাবিধ অভিযোগ রয়েছে। এসব অপরাধের অভিযোগ মূলত পুলিশ সুপার থেকে কনস্টেবল পদমর্যাদার পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে।

২০২২ সালের ১২ মে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের অফিসে বাংলাদেশ সরকারের সরবরাহ করা তথ্য অনুসারে, দেশের ২ লাখ ১৩ হাজার আইন প্রয়োগকারী বাহিনীর সদস্যের মধ্যে প্রায় ৯ দশমিক ৬ শতাংশ কেবল ২০২১ সালে বিভাগীয় তদন্তের মুখোমুখি হয়েছেন। ২০১৫ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত এই সংখ্যা ১ লাখ ১৭ হাজার বা বাহিনীর মোট সদস্য সংখ্যার ৫৫ শতাংশ। ওই সময়ের মধ্যে বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে অন্তত ১ হাজার ৬৯২টি ফৌজদারি মামলা করা হয়।

২০২১ সালে মোট ১৭ হাজার ৯৬৬ জন সদস্য সতর্কতা, তিরস্কার বা অস্থায়ী বেতন হ্রাসের মতো ছোটখাটো শাস্তির মুখোমুখি হয়েছিলেন এবং ২ হাজার ৩৮৮ জন বরখাস্ত বা পদাবনতির মতো বড় শাস্তি পেয়েছেন।

তবে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার পরও এই পুলিশ সদস্যরা তাদের অপরাধমূলক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন।

এ বিষয়ে সমাজ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক তৌহিদুল হক খবরের কাগজকে বলেন, আর্থিক ফায়দা এবং সামাজিক প্রতিপত্তির চাহিদা থেকেই অপরাধমূলক কাজে জড়িয়ে পড়েন কতিপয় পুলিশ সদস্য।

পুলিশের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগও রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, নিয়োগ-বাণিজ্যের মাধ্যমে চাকরিতে আসা ব্যক্তি বিনিয়োগ করা অর্থ তুলে নিতে চান, যা থেকেই শুরু হয় অনিয়মের। তাই তাদের অপরাধমূলক কাজ থেকে ফেরানো কঠিন।

রেকার বিলের এসব দুর্নীতির বিষয়ে কথা হয় অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মো. মনিবুর রহমানের সঙ্গে। তিনি খবরের কাগজকে বলেন, ট্রাফিক সার্জেন্ট, কনস্টেবল ও ট্রাফিকে দায়িত্বরত কেউ যদি রেকার বিলের নকল রসিদ দিয়ে বিল আদায় করে ও প্রমাণ পাওয়া যায়, তবে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হবে। তিনি বলেন, পুলিশের কোনো সদস্য অপরাধ করলে তাকে ছাড় দেওয়া হয় না। এ বিষয়ে কাজ করার জন্য পুলিশ সদর দপ্তরে একটি আলাদা সেলও রয়েছে। ওই সেলের কাজই হচ্ছে- সাধারণ মানুষের অভিযোগ নিয়ে কাজ করা। সেখানে প্রতিদিনই বিভিন্ন অভিযোগ জমা পড়ে। তদন্ত করে কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিয়ে থাকে। অপরাধ করলে কাউকে ছাড় দেওয়া হয় না।