আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় চলতি বছর কুমিল্লায় বোরোর ভালো ফলন হয়েছে। এতে কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে।
এরই মধ্যে জেলার প্রায় অর্ধেক ধান কাটা সম্পন্ন হয়েছে। পুরোপুরি শেষ হতে সময় লাগবে আরও ১৫ থেকে ২০ দিন। মৌসুমের শুরুতে তীব্র দাবদাহের কারণে ধান কাটতে কৃষকরা বিড়ম্বনায় পড়লেও মাঝের কয়েক দিন বৃষ্টি হওয়ায় স্বস্তি নিয়েই তারা ফসল ঘরে তুলছেন। তবে কৃষি-শ্রমিকের সংকট ও অতিরিক্ত মজুরির কারণে ধান কাটা কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তারা।
কুমিল্লার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে জানা গেছে, বৈশাখের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে কুমিল্লায় বোরো ধান কেটে ঘরে তোলার উৎসব শুরু হয়েছে। মৌসুমের শুরুতে প্রচণ্ড গরম উপেক্ষা করে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কৃষকরা বোরোর জমিতে ধান কাটা ও ধান ছাড়ানোর কাজে ব্যস্ত সময় পার করেন। কেউ কেউ শ্রমিক না পেয়ে নিজের পরিবারের লোকজন নিয়েই ধান কাটতে মাঠে নেমে পড়েন।
কুমিল্লা সদর উপজেলার রসুলপুর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বোরো ধান কাটতে কৃষকরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। জমির ধান কেটে বাড়ির পাশের মাঠেই ধান মাড়াই ও শুকানোর কাজ করছেন তারা। কৃষকদের এ কাজে সহযোগিতা করছেন কিষানিরা। সব মিলিয়ে কষ্ট করে মাঠে ফলানো ধান ঘরে তুলতে দম ফেলার ফুরসত মিলছে না তাদের।
কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার রসুলপুর গ্রামের কৃষক আবদুল রহমান বলেন, এ বছর ১৪৭ শতক জমিতে বোরোর আবাদ করেছি, ফলনও ভালো হয়েছে। এরই মধ্যে প্রায় অর্ধেক ধান কাটা হয়েছে। শুরুতে কিছুদিন প্রচণ্ড গরমের কারণে ধান কাটতে অসুবিধা হয়েছে। তারপরও কষ্ট করে কাটতে হয়েছে। এখন গরম একটু কমায় এবং আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় শান্তিতে ধান কাটতে পারছি। তবে আমাদের এলাকায় শ্রমিকের সংকট রয়েছে। মজুরিও বেশি। একজন শ্রমিককে ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা দিতে হয়। যদি বাজারে ধানের দাম ভালো পাওয়া যায়, তা হলে আমাদের একটু পোষাবে।
ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার বড়ধুশিয়া গ্রামের কৃষক শের আলী বলেন, রোদ-বৃষ্টি উপেক্ষা করে, মাথার ঘাম পায়ে ফেলে বোরো ধান রোপণ করতে হয়। এ ছাড়া বোরো আবাদের খরচও বেশি। ধান রোপণের পর থেকে তিন-চার দিন পরপর সেচ দিতে হয়। এ বছর ফলন ভালো হওয়ায় অনেক খুশি হয়েছি। তবে ন্যায্য দাম যদি না পাই, তা হলে লোকসানের মুখে পড়তে হবে। সরকারের কাছে আবেদন- বোরো আবাদে যেন আমাদের ভর্তুকি দেওয়া হয়।
একই উপজেলার শিদলাই এলাকার কৃষক কামরুল ইসলাম বলেন, শ্রমিক সংকটের কারণে আমার ১৯ শতক জমির পাকা ধান ঘরে তুলতে পারছি না। ৮০০/৯০০ টাকা মজুরি দিয়েও চাহিদা অনুযায়ী শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। অন্যান্য বছর ধান কাটার সময় দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা শ্রমিক পাওয়া যেত। এ বছর তাদের খুব একটা পাওয়া যাচ্ছে না। এরই মধ্যে ঝড়-বৃষ্টি শুরু হয়েছে। যদি ভারী বৃষ্টি হয়, তা হলে আমাদের বিপাকে পড়তে হবে।
ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মাসুদ রানা বলেন, ধানচাষকে লাভজনক করতে শ্রমিকনির্ভরতা কমিয়ে আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার অর্থাৎ কৃষি যান্ত্রিকীকরণের দিকে আমাদের যেতে হবে। এ লক্ষ্যে সরকার ভর্তুকিতে বিভিন্ন যন্ত্রপাতি সরবরাহ করে থাকে। আমরা এ ব্যাপারে কৃষকদের সচেতন করার চেষ্টা করছি।
কুমিল্লার সদর দক্ষিণ উপজেলার ছোট ধর্মপুর গ্রামের কৃষক হাফিজ উদ্দিন বলেন, ধান কাটার মৌসুমে এর আগে এমন গরম অনুভব করিনি। প্রচণ্ড দাবদাহ উপেক্ষা করেই মাঠে ধান কাটতে হয়েছে। এরপর স্বস্তির বৃষ্টি কৃষকদেরও কিছুটা প্রশান্তি দিয়েছে। তবে শ্রমিক সংকটের কারণেই ধান কাটায় বিলম্ব হচ্ছে। গেল বোরো মৌসুমে ৬০০/৭০০ টাকায় ধান কাটার শ্রমিক পাওয়া যেত। এ বছর ৮০০ টাকায়ও শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। এতে করে ধানচাষ, সেচ ও বিভিন্ন সময়ের শ্রমিক খরচ শেষে ফলনের হিসাব মিলাতে কষ্ট হচ্ছে।
কুমিল্লা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আইউব মাহমুদ জানান, এ বছর কুমিল্লায় এক লাখ ৬২ হাজার ৬০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ করা হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলনও ভালো হয়েছে। এরই মধ্যে কুমিল্লায় প্রায় ৫০ শতাংশ বোরো ধান কাটা হয়ে গেছে। মাঝখানে বৃষ্টির কারণে ধান কাটায় কৃষকদের কিছুটা ব্যাঘাত হয়েছে। পুরো ধান কাটা শেষ হতে আরও ১৫/২০ দিন লাগতে পারে।