
আজ ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য নির্ধারণ হয়েছে ‘অধিকার, সমতা, ক্ষমতায়ন, নারী ও কন্যার উন্নয়ন’। এই প্রতিপাদ্য সামনে রেখে আজ বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে দিবসটি উদ্যাপিত হচ্ছে। সংবাদপত্রে বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশিত হয়েছে। টিভি চ্যানেলগুলো বিশেষ অনুষ্ঠানমালা সম্প্রচার করছে। সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে নানা কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে।
দিবসটি নিয়ে মানবাধিকারকর্মী ও নারী সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকেও কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। সবার দাবি একটাই- নারীর অধিকার, নারীর ক্ষমতায়ন সর্বোপরি সুশাসন ও লিঙ্গসমতা প্রতিষ্ঠা। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নারীরা আজ বহুদূর এগিয়েছেন। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে নারীরা আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছেন। নিজ গুণে, স্বমহিমায় এ দেশের নারীরা আপন ভুবন আলোকিত করেছেন। একসময়ে এর শুরুটা অত মসৃণ ছিল না। চার দেয়ালে বন্দি ছিল এ দেশের নারীসমাজ। তারা সমাজে অনেকটাই ছিলেন নিগৃহীত, লাঞ্ছিত ও বঞ্চিত।
পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত হতে আজকে নারীসমাজ অন্তপুরের আঁধার ভেদ করে আলোর ঝান্ডা উঁচিয়ে উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় শামিল হয়েছেন। বিগত কয়েক দশকে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে নারীর অংশগ্রহণ চোখে পড়ার মতো। সামাজিক, পারিবারিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক প্রতিটি ক্ষেত্রে নারীর অবদানকে অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। টেকসই উন্নয়ন, দারিদ্র্য বিমোচন সর্বোপরি দেশের উন্নয়নের জন্য নারীদের স্বাবলম্বী করতে সুযোগের সমতা সৃষ্টি করতে হবে। দুর্নীতির কারণে নারীর ক্ষমতায়ন চরমভাবে বাধাগ্রস্ত। তাই সমাজে লিঙ্গসমতা ও সুশাসন নিশ্চিতের মধ্য দিয়ে নারীর ক্ষমতায়ন প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন।
আমরা চাই বৈষম্যহীন এক পৃথিবী। যেখানে নারীরা হবেন শান্তি, শক্তি ও সম্ভাবনার এক অমৃত কাণ্ডারি। যেখানে বৈরিতা থাকবে না, থাকবে শুধু সহমর্মিতা। নারী ও পুরুষ একই বৃন্তে দুটি ফোটা ফুল। পুরুষ ছাড়া নারী যেমন সৌন্দর্যহীন, তেমনি পুরুষও নারীর সৌন্দর্যের আধার। আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম এই নারীকে সম্মান রেখে বলেছিলেন-
‘বিশ্বে যা-কিছু মহান সৃষ্টি চিরকল্যাণকর,
অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।
বিশ্বে যা-কিছু এল পাপ-তাপ বেদনা অশ্রুবারি,
অর্ধেক তার আনিয়াছে নর, অর্ধেক তার নারী।’
নারী ও কন্যার প্রতি যথাযথ সম্মান ও ভালোবাসা প্রদর্শন করা আমাদের দায়িত্ব। আন্তর্জাতিক নারী দিবস একটি বিশ্বব্যাপী পরিক্রমা। নারীদের সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সংস্কৃতিক অর্জনকে স্বীকৃতি দেওয়ার পাশাপাশি আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে দিনটি উদ্যাপন করা হয়। কালের পরিক্রমায় পথ চলতে চলতে নারীরা তাদের দাবি আদায়ে কখনো পিছপা হননি।
লিঙ্গসমতার জন্য, ন্যায্য অধিকার আদায়ের জন্য নারীর ক্ষমতায়নের একটি টেকসই রূপায়ণে নারীর আজন্ম লড়াই চলমান। নারী অধিকার, নারী মুক্তি আন্দোলনের বহ্নিশিখা হয়ে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে আজও তারা মুক্ত হতে পারেনি। আজও নারী ও কন্যাশিশুকে ধর্ষণের শিকার হতে হচ্ছে। ধর্ষণের পর হত্যাও করা হচ্ছে তাদের। যদিও এবারের প্রতিপাদ্যে নারী ও কন্যার অধিকার, সমতা, ক্ষমতায়নের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। তার পরও পত্রপত্রিকা খুললে নারী ও কন্যাশিশুর ওপর পৈশাচিক ও বর্বরোচিত খবরে চোখ আটকে যায়।
অর্থাৎ এ সময়ে এসেও লোলুপ দৃষ্টির বিকৃত মানুষের আস্ফালন চোখে পড়ে। দেশের কতিপয় হীনমনা মানুষের মানসিকতার ইতিবাচক পরিবর্তন আমরা সবাই প্রত্যাশা করি। আগামী দিনগুলোতে নারীর সুস্থ-সুন্দর জীবনের নিশ্চয়তার জন্যই বিশ্বের নারী ও মানবাধিকারকর্মীরা এখনো মাঠে-ময়দানে সোচ্চার রয়েছেন। স্থানীয় থেকে জাতীয় পর্যায়ে সর্বস্তরে সিদ্ধান্ত গ্রহণ-প্রক্রিয়ায় নারীর স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে না পারলে নারীর ক্ষমতায়ন ত্বরান্বিত হবে না।
বৈষম্যহীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রত্যয়ে এ দেশের তরুণ প্রজন্ম দেশ পরিচালনায় অংশ নিয়েছে। প্রত্যাশা করছি, তরুণরা নারীর উন্নয়নেও পিছিয়ে থাকবে না। ভবিষ্যতের নারীরা যাতে সংকট ও প্রতিবন্ধকতাকে পেছনে ফেলে আরও বহুদূর এগিয়ে যেতে পারেন, সে জন্য এ প্রজন্মকে আরও অগ্রগামী ভূমিকা পালন করতে হবে। দিবসটি উপলক্ষে বিশ্বের সব নারীর প্রতি রইল শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা। দিবসটির পূর্ণ যাত্রা সফল হোক, সার্থক হোক।