
দেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনা সম্ভব বলে জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। গতকাল খবরের কাগজে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। বর্তমান সরকার যেহেতু দেশে আর্থিক দুর্নীতি ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় অঙ্গীকারবদ্ধ, ফলে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। আমরা এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই।
ইতোপূর্বে অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থনৈতিক শ্বেতপত্র কমিটি তাদের প্রতিবেদনে জানিয়েছিল, বিগত ১৫ বছরে বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর গড়ে প্রায় ১৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অবৈধভাবে পাচার হয়েছে। বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি ২০২৪ সালে এক গবেষণায় বলেছিল, ৫০ বছরে বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থের পরিমাণ ১১ লাখ ৯২ হাজার কোটি টাকা। আর যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইনটিগ্রিটি (জিএফআই) বলেছে, ২০১১ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে ৯ হাজার কোটি বা ৯০ বিলিয়ন ডলার সমপরিমাণ অর্থ পাচার হয়েছে। অর্থ উপদেষ্টা বলেছেন, পাচার করা টাকার অঙ্ক বিশাল। সব টাকা ফেরত আনতে সেগুলো চিহ্নিত করা হচ্ছে। গ্রহণ করা হচ্ছে আইনি পদক্ষেপ। এই আইনি পদক্ষেপের সঙ্গে আবার যুক্ত থাকবে বিভিন্ন দেশ।
বাংলাদেশ ইতোমধ্যে যেসব উদ্যোগ গ্রহণ করেছে, তার মধ্যে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) পাচার হওয়া টাকা উদ্ধার ও তথ্য সংগ্রহে সহযোগিতা চেয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এ পর্যন্ত ৭৫টি মিউচ্যুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিসট্যান্স রিকোয়েস্ট (এমএএলআর) পাঠিয়েছে। ইতোমধ্যে এই অনুরোধের ৩১টির জবাব পাওয়া গেছে। দুদক বেশ কয়েকটি দেশের সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা সংস্থা এবং আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গেও বৈঠক করেছে। দুদকের এই উদ্যোগে বিভিন্ন দেশে অবস্থিত বাংলাদেশের দূতাবাসগুলো সহযোগিতা করছে। সবচেয়ে বেশি পাচার হয়েছে এমন শীর্ষ ১০টি দেশের সঙ্গে চুক্তি করার প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ। এই দেশগুলো হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সুইজারল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড ও হংকং। সেই সঙ্গে বাংলাদেশ চাইছে ৩০টি আন্তর্জাতিক আইনি সংস্থার সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হতে। সরকারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করছেন, এভাবে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে পাচার হওয়া অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনা সম্ভব। অর্থ উপদেষ্টাও এ কথা বলেছেন। ২০০ কোটি টাকার বেশি যারা পাচার করেছেন, তাদের অনেককে চিহ্নিত করা হয়েছে। তাদের পাচার করা টাকা ফেরত আনা সম্ভব বলে সরকার মনে করে। এই টাকা ফিরিয়ে আনা গেলে তা থেকে রাজস্বও পেতে পারে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। প্রতিষ্ঠানটির ১২ সদস্যের টাস্কফোর্স পাচার করা অর্থ ফেরত এবং তা থেকে রাজস্ব আদায়ে কাজ করছে।
সব মিলিয়ে পাচার করা অর্থ ফিরিয়ে আনার জন্য সরকার সমন্বিত বহুমুখী উদ্যোগ নিয়েছে। সরকারের এই উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। তারা আন্তর্জাতিক সহযোগিতাও পাচ্ছে। ফলে আমরা আশান্বিত হতে পারি। আমরাও মনে করি, সরকারের এই উদ্যোগকে আরও এগিয়ে নিয়ে গেলে কাঙ্ক্ষিত সাফল্য অর্জন করা সম্ভব হতে পারে। যদিও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সব অর্থ হয়তো ফেরত আনা কঠিন হবে। কিন্তু এর সিংহভাগ যদি ফেরত আনা যায়, তাহলে তাও সরকারের অভূতপূর্ব সাফল্য হিসেবে প্রশংসিত হবে। অর্থ পাচার করতে চাইলেও পারা যায় না- এই বার্তাও ভবিষ্যতে বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাচার বন্ধ হতে সাহায্য করবে। সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশের আর্থিক খাতে সুশাসন ও শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার জন্য এই উদ্যোগ খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আমরা মনে করি।