
দেশে দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে কিডনি রোগীর সংখ্যা। কিন্তু সেবাব্যবস্থা খুবই অপ্রতুল। প্রয়োজনীয় চিকিৎসক, নার্স ও টেকনিশিয়ানের তীব্র সংকটের মধ্য দিয়ে চলছে চিকিৎসাব্যবস্থা। পর্যাপ্ত ডায়ালাইসিস ও প্রতিস্থাপনের ব্যবস্থাও নেই। চিকিৎসা ব্যয় বেশি এবং সুযোগ-সুবিধার অভাবে রোগীদের বড় একটি অংশ থেকে যায় চিকিৎসার বাইরে। প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষ মারা যান বিনা চিকিৎসায়। বর্তমানে বাংলাদেশে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ- এই দুটি রোগ খুবই বেশি। আর এই দুটি রোগের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে কিডনি রোগীর সংখ্যাও। ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে কিডনি রোগীর সংখ্যা বাড়তেই থাকবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ দেশের ৫৫ থেকে ৬৫ শতাংশ রোগী জানেনই না তারা উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন। আর এই উচ্চ রক্তচাপজনিত কারণেই অনেক সময় কিডনি বিকল হয়ে যেতে পারে। কিডনি ফাউন্ডেশনের সভাপতি অধ্যাপক ডা. হারুন-উর-রশিদ বলেন, ২০১০ সালের একটি জরিপে দেশে প্রাপ্তবয়স্কদের ১৬ থেকে ১৮ শতাংশের কিডনি রোগ পাওয়া যায়। ২০২৩ সালে দেড় লাখ মানুষের ওপর স্ক্রিনিং প্রোগ্রামে পাওয়া যায় ২২ থেকে ২৩ শতাংশের। এর বৃদ্ধির কারণ হচ্ছে পৃথিবীর সব দেশের মতো বাংলাদেশেও ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে। ২০১০ সালে দেশে ৬ শতাংশের মতো ডায়াবেটিস ছিল, যা এখন ১১ শতাংশে পৌঁছেছে। উচ্চ রক্তচাপ ছিল ১০ শতাংশের, তা এখন ২৪ শতাংশে পৌঁছেছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, কিডনি রোগ দেশের জন্য একটি বড় অর্থনৈতিক ও স্বাস্থ্যগত সমস্যা। সবাই যদি কিডনি রোগের ব্যাপকতা, ভয়াবহতা, পরিণতি ও কারণ সম্পর্কে সচেতন থাকেন এবং স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপন করেন, তাহলে ৬০-৭০ শতাংশের ক্ষেত্রে কিডনি বিকল প্রতিরোধ করা সম্ভব। বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় দক্ষিণ এশিয়ায় কিডনি রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি। বাংলাদেশে কিডনি রোগী কত তার নির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই। এক পর্যালোচনায় দেখা গেছে, বাংলাদেশের প্রায় ১৭ শতাংশ মানুষ দীর্ঘমেয়াদি কিডনি রোগে ভুগছেন। তথ্যমতে, প্রতিবছর প্রায় ৪০ হাজার কিডনি রোগী ডায়ালাইসিসের ওপর নির্ভরশীল। শহর ও গ্রামাঞ্চলে সমানভাবে এ রোগ ছড়িয়ে পড়ছে।
দারিদ্র্য, অসচেতনতা, চিকিৎসাসেবার অপ্রচুলতা, অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন এই সমস্যাকে আরও বাড়িয়ে তুলছে। কিডনি বিকল হলে ডায়ালাইসিস চিকিৎসা এত ব্যয়বহুল যে, ১০ শতাংশ রোগী এর খরচ বহন করতে পারেন না, তাই ৯০ শতাংশের বেশি কিডনি বিকল রোগী প্রায় বিনা চিকিৎসায় মারা যান। কিডনি রোগে যে পাঁচটি পর্যায় রয়েছে তার সর্বশেষ হলো কিডনি বিকল। এর চিকিৎসা হিসেবে ডায়ালাইসিস বা কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয়ে থাকে। জানা যায়, একজন কিডনি বিকল রোগীকে ডায়ালাইসিসের জন্য বেসরকারি পর্যায়ে সপ্তাহে কমপক্ষে ১০ হাজার টাকা গুনতে হয়। সরকারি পর্যায়ে সপ্তাহে ৮০০ টাকা। এর বাইরে যাতায়াত এবং ওষুধের ব্যয় তো রয়েছেই। কিডনি রোগের চিকিৎসায় দেশে প্রশিক্ষিত ডাক্তার, নার্স ও টেকনিশিয়ানের তীব্র সংকট রয়েছে। জাপানের প্রতি ১০ লাখ লোকের জন্য রয়েছেন ৩৪ জন চিকিৎসক। আর বাংলাদেশে প্রতি ১০ লাখের জন্য চিকিৎসক রয়েছেন মাত্র দুজন।
এ দেশে কিডনি রোগীর সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। সেবাব্যবস্থার অপ্রতুলতায় এ রোগের মৃত্যুর হারও বেড়েছে। চিকিৎসা ব্যয়বহুল হওয়ায় অনেক রোগী চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এ দেশে পর্যাপ্ত নেই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, নার্স, টেকনিশিয়ান। কিডনি রোগের সেবাব্যবস্থা সহজ করতে সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। সচেতনতা বাড়াতে ক্যাম্পেইন কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে। যাতে করে মানুষ কিডনি রোগ থেকে মুক্ত থাকতে পারে।