ঢাকা ৪ বৈশাখ ১৪৩২, বৃহস্পতিবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৫
English
বৃহস্পতিবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৫, ৪ বৈশাখ ১৪৩২

কিডনি রোগী বাড়ছে  সেবা অপ্রতুল, প্রয়োজন যথাযথ পদক্ষেপ

প্রকাশ: ১৫ মার্চ ২০২৫, ০২:১১ পিএম
কিডনি রোগী বাড়ছে 
সেবা অপ্রতুল, প্রয়োজন যথাযথ পদক্ষেপ

দেশে দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে কিডনি রোগীর সংখ্যা। কিন্তু সেবাব্যবস্থা খুবই অপ্রতুল। প্রয়োজনীয় চিকিৎসক, নার্স ও টেকনিশিয়ানের তীব্র সংকটের মধ্য দিয়ে চলছে চিকিৎসাব্যবস্থা। পর্যাপ্ত ডায়ালাইসিস ও প্রতিস্থাপনের ব্যবস্থাও নেই। চিকিৎসা ব্যয় বেশি এবং সুযোগ-সুবিধার অভাবে রোগীদের বড় একটি অংশ থেকে যায় চিকিৎসার বাইরে। প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষ মারা যান বিনা চিকিৎসায়। বর্তমানে বাংলাদেশে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ- এই দুটি রোগ খুবই বেশি। আর এই দুটি রোগের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে কিডনি রোগীর সংখ্যাও। ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে কিডনি রোগীর সংখ্যা বাড়তেই থাকবে। 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ দেশের ৫৫ থেকে ৬৫ শতাংশ রোগী জানেনই না তারা উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন। আর এই উচ্চ রক্তচাপজনিত কারণেই অনেক সময় কিডনি বিকল হয়ে যেতে পারে। কিডনি ফাউন্ডেশনের সভাপতি অধ্যাপক ডা. হারুন-উর-রশিদ বলেন, ২০১০ সালের একটি জরিপে দেশে প্রাপ্তবয়স্কদের ১৬ থেকে ১৮ শতাংশের কিডনি রোগ পাওয়া যায়। ২০২৩ সালে দেড় লাখ মানুষের ওপর স্ক্রিনিং প্রোগ্রামে পাওয়া যায় ২২ থেকে ২৩ শতাংশের। এর বৃদ্ধির কারণ হচ্ছে পৃথিবীর সব দেশের মতো বাংলাদেশেও ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে। ২০১০ সালে দেশে ৬ শতাংশের মতো ডায়াবেটিস ছিল, যা এখন ১১ শতাংশে পৌঁছেছে। উচ্চ রক্তচাপ ছিল ১০ শতাংশের, তা এখন ২৪ শতাংশে পৌঁছেছে। 

বিশেষজ্ঞদের মতে, কিডনি রোগ দেশের জন্য একটি বড় অর্থনৈতিক ও স্বাস্থ্যগত সমস্যা। সবাই যদি কিডনি রোগের ব্যাপকতা, ভয়াবহতা, পরিণতি ও কারণ সম্পর্কে সচেতন থাকেন এবং স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপন করেন, তাহলে ৬০-৭০ শতাংশের ক্ষেত্রে কিডনি বিকল প্রতিরোধ করা সম্ভব। বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় দক্ষিণ এশিয়ায় কিডনি রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি। বাংলাদেশে কিডনি রোগী কত তার নির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই। এক পর্যালোচনায় দেখা গেছে, বাংলাদেশের প্রায় ১৭ শতাংশ মানুষ দীর্ঘমেয়াদি কিডনি রোগে ভুগছেন। তথ্যমতে, প্রতিবছর প্রায় ৪০ হাজার কিডনি রোগী ডায়ালাইসিসের ওপর নির্ভরশীল। শহর ও গ্রামাঞ্চলে সমানভাবে এ রোগ ছড়িয়ে পড়ছে। 

দারিদ্র্য, অসচেতনতা, চিকিৎসাসেবার অপ্রচুলতা, অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন এই সমস্যাকে আরও বাড়িয়ে তুলছে। কিডনি বিকল হলে ডায়ালাইসিস চিকিৎসা এত ব্যয়বহুল যে, ১০ শতাংশ রোগী এর খরচ বহন করতে পারেন না, তাই ৯০ শতাংশের বেশি কিডনি বিকল রোগী প্রায় বিনা চিকিৎসায় মারা যান। কিডনি রোগে যে পাঁচটি পর্যায় রয়েছে তার সর্বশেষ হলো কিডনি বিকল। এর চিকিৎসা হিসেবে ডায়ালাইসিস বা কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয়ে থাকে। জানা যায়, একজন কিডনি বিকল রোগীকে ডায়ালাইসিসের জন্য বেসরকারি পর্যায়ে সপ্তাহে কমপক্ষে ১০ হাজার টাকা গুনতে হয়। সরকারি পর্যায়ে সপ্তাহে ৮০০ টাকা। এর বাইরে যাতায়াত এবং ওষুধের ব্যয় তো রয়েছেই। কিডনি রোগের চিকিৎসায় দেশে প্রশিক্ষিত ডাক্তার, নার্স ও টেকনিশিয়ানের তীব্র সংকট রয়েছে। জাপানের প্রতি ১০ লাখ লোকের জন্য রয়েছেন ৩৪ জন চিকিৎসক। আর বাংলাদেশে প্রতি ১০ লাখের জন্য চিকিৎসক রয়েছেন মাত্র দুজন। 

এ দেশে কিডনি রোগীর সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। সেবাব্যবস্থার অপ্রতুলতায় এ রোগের মৃত্যুর হারও বেড়েছে। চিকিৎসা ব্যয়বহুল হওয়ায় অনেক রোগী চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এ দেশে পর্যাপ্ত নেই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, নার্স, টেকনিশিয়ান। কিডনি রোগের সেবাব্যবস্থা সহজ করতে সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। সচেতনতা বাড়াতে ক্যাম্পেইন কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে। যাতে করে মানুষ কিডনি রোগ থেকে মুক্ত থাকতে পারে।

পরিবার ও সমাজে নৃশংসতা বাড়ছে  নৈতিক মূল্যবোধের চর্চা বাড়াতে হবে

প্রকাশ: ১৬ এপ্রিল ২০২৫, ০২:১৪ পিএম
পরিবার ও সমাজে নৃশংসতা বাড়ছে 
নৈতিক মূল্যবোধের চর্চা বাড়াতে হবে

সম্প্রতি দেশে আকস্মিকভাবে বেড়েছে অপরাধমূলক ঘটনা। লোভ-লালসা, নারী ও সম্পত্তি নিয়ে বিরোধসহ বিভিন্ন নৃশংস ঘটনা ঘটেই চলেছে। আকস্মিকভাবে পারিবারিক ও সামাজিক হত্যাকাণ্ড বেড়ে যাওয়ার পেছনে বেশ কিছু কারণও রয়েছে বলে মনে করছেন অপরাধ বিশ্লেষকরা। এসব হত্যাকাণ্ড আগেও ঘটেছে, এখনো ঘটছে, ভবিষ্যতেও ঘটবে। তবে উদ্বেগজনক হারে বেড়ে যাওয়াটা সমাজের জন্য ভালো কোনো বার্তা নয়। এমনিতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এখনো স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরেনি। তা ছাড়া অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিও চোখে পড়ছে না। সবকিছু মিলিয়ে মানুষের মধ্যে অপরাধপ্রবণতা বাড়ছে। এসব অপরাধ বাড়ছে পারিবারিক কলহের জেরে। সন্তান খুন করছে জন্মদাতা বাবাকে। স্বামীর হাতে স্ত্রী খুন হচ্ছে অথবা স্ত্রীর হাতে স্বামী।

 গত কয়েক দিনে এ ধরনের বেশ কিছু পারিবারিক নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটেছে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায়। আইনশৃঙ্খলার দুর্বলতা বা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির অভাব এসব ঘটনা বৃদ্ধির জন্য কোনোভাবে দায়ী কি না, জানতে চাইলে সাবেক আইজিপি মোহাম্মদ নুরুল হুদা বলেন, এর কিছুটা প্রভাব হয়তো পড়ে। কিন্তু সেটিই প্রধান বা অন্যতম কারণ নয়। এর সঙ্গে পারিবারিক ও সামাজিকব্যবস্থা, বিশেষ করে প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনার অভাব, পারিবারিক শিক্ষার অভাব, সাংসারিক অভাব-অনটনসহ নানা ধরনের বিষয় থেকে চিন্তাভাবনার পরিবর্তন ঘটে থাকে। সেখান থেকেই হিংস্রতা-নৃশংসতা বেশি ঘটে। হঠাৎ করেই মানুষের মনোজগতের পরিবর্তন ঘটেছে। আর এই পরিবর্তন বেশির ভাগই নেতিবাচক। কামনা-বাসনা, চাহিদা অতিমাত্রায় পোষণ করছে মানুষ। এর সবকিছুই যে পূর্ণ হবে তা নয়। এর কোনোটির ব্যত্যয় দেখা দিলে ভয়ানক কোনো ঘটনা ঘটিয়ে ফেলছে তারা। ইন্টারনেটভিত্তিক গেম আসক্তিতেও ভুগছে অনেকে। এটি ক্রমাগত অপরাধের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। গত ২২ মার্চ রাতে চুয়াডাঙ্গায় নামাজরত বাবাকে কুপিয়ে হত্যা করে ছেলে। কারণ, গেমে আসক্ত ছেলের হাত থেকে মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়েছে। এ জাতীয় বেশ কিছু ঘটনা সম্প্রতি সমাজ ও পরিবারে উদ্বেগ বাড়িয়েছে বলে জানিয়েছেন বিশ্লেষকরা। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ড. তৌহিদুল হক খবরের কাগজকে বলেন, নানা পারিপার্শ্বিকতায় বর্তমানে সমাজ ও পরিবারে এক ধরনের অস্থিরতা বিরাজ করছে। মানুষের ধৈর্য কমে গেছে। মানবিক মূল্যবোধ কমে গেছে। অন্যদিকে বেড়েছে লোভ আর হিংসা। এসব কারণে একশ্রেণির মানুষ অনেক কিছুই সহজে মেনে নিতে পারেন না। ফলে ঘটছে হত্যার মতো নৃশংস সব ঘটনা। এ জাতীয় ঘটনা শুধু আইন বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে ঠেকানো সম্ভব নয়। এর জন্য সামাজিক, পারিবারিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধের সঠিক চর্চাও খুব জরুরি।

এমন পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে পরিবার ও সমাজের দায় রয়েছে। ধর্মীয় নৈতিকতার শিক্ষা, সামাজিক ও পারিবারিক শিক্ষার চর্চা বাড়াতে হবে। সন্তানদের মানসিক বিকাশে কাউন্সেলিং করা জরুরি, যা উন্নত দেশগুলোতে হয়ে থাকে। সন্তানদের খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। পারিবারিক বন্ধন মজবুত করতে পারস্পরিক সম্মানবোধ থাকতে হবে। সেই সঙ্গে মতপ্রকাশের স্বাধীনতাও থাকতে হবে। পারিবারিক ও সামাজিক এমন নৃশংস অপরাধের বিরুদ্ধে সামাজিক সচেতনতা বাড়াতে পদক্ষেপ নিতে হবে। এ বিষয়গুলো নিশ্চিত করা গেলে নৃশংসতা অনেকটাই কমে আসবে। সর্বোপরি নৈতিক মূল্যবোধের চর্চা বাড়িয়ে এসব অপরাধের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।

বাংলা নববর্ষ ১৪৩২ সর্বজনীন সংহতির বোধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার দিন

প্রকাশ: ১৫ এপ্রিল ২০২৫, ১১:৩৭ এএম
বাংলা নববর্ষ ১৪৩২
সর্বজনীন সংহতির বোধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার দিন

বর্ষপরিক্রমায় আবার এসেছে নতুন বছর। আজ সেই নতুন বছরের প্রথম দিন। রবীন্দ্রনাথের একটা গান আছে, ‘এসো, এসো হে বৈশাখ।’ এই যে আবাহন, এর ভেতর দিয়েই আমাদের প্রাণের আর্তিটুকু বোঝা যায়। জীবন ও প্রাণের এই আবাহন-গীতে বাঙ্ময় হয়ে উঠেছে নতুন দিনটি। নতুন বছরে ব্যর্থ প্রাণের আবর্জনা থেকে মুক্ত হওয়াই হোক আমাদের লক্ষ্য।

আজ দেশের ক্রান্তিলগ্নে চতুর্দিকে পরিব্যাপ্ত হয়ে আছে সামাজিক জরা। আমরা ব্যক্তিগত, রাষ্ট্রীয় ও বৈশ্বিকভাবে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছি নানান সংকটে। নতুন বছর এই মালিন্য থেকে আমাদের মুক্তি দেবে, এ রকম প্রত্যাশা থেকেই রবীন্দ্রবাণীতে উচ্চারিত হয়েছে, ‘তাপস নিশ্বাস বায়ে মুমূর্ষুরে দাও উড়ায়ে।’ আমাদের সম্মিলিত প্রাণের দাবি এতেই নিহিত রয়েছে। যা কিছু জীর্ণ, যা কিছু ব্যর্থ, তাতে প্রাণ সঞ্চার করতে হবে। বাংলা নববর্ষের প্রথম দিনটি সেই আর্তি নিয়েই উপস্থিত হয়েছে। 

বাংলা নববর্ষ বাঙালির সর্বজনীন জাতীয় উৎসব, অসাম্প্রদায়িক উৎসব। পয়লা বৈশাখ বাঙালির সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক আত্মপরিচয়ের উদযাপন এবং উপলব্ধির উৎসব। ১৫৫৬ সালে মুঘল সম্রাট আকবরের আদেশে তার রাজস্ব কর্মকর্তা ফতেহ উল্লাহ সিরাজী ‘সৌর সন’ এবং আরবি ‘হিজরি’ অব্দের ওপর ভিত্তি করে নতুন বাংলা সন তৈরি করেন। ঐতিহাসিকদের মতে, আকবরের রাজ্যাভিষেকের সূচনাবর্ষ থেকে বঙ্গাব্দের গণনা শুরু হয়। সেই হিসাবে বঙ্গাব্দের রয়েছে মিলিত ঐতিহ্য, যা  সর্বজনীন। জাতি-ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে এই দিনটি আমরা সবাই পালন করে থাকি। পয়লা বৈশাখ তাই একটি তারিখমাত্র নয়; জাতিগত ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিতে উদ্বোধিত হওয়ার দিন। এই দিনে আমাদের জাতিসত্তার বিষয়টিও আমরা নতুন করে স্মরণ করতে পারি।

পাকিস্তানি শাসনপর্বে বাঙালির সংস্কৃতিকে যখন মুছে দেওয়ার চেষ্টা হয়, তখনই ছায়ানট রমনার বটমূলে এই পরিচয়কে সামনে নিয়ে আসে। পয়লা বৈশাখ উদযাপনের মধ্য দিয়েই সাংস্কৃতিক উজ্জীবনের ধারাবাহিকতায় ‘বাঙালি’ আত্মপরিচয়ের প্রতিষ্ঠা ঘটে; পরে যা বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ফলে বাংলা নববর্ষকে ঘিরে কোনো বিতর্ক গ্রহণযোগ্য হতে পারে না; অনাকাঙ্ক্ষিত কোনো ঘটনাও নয়। 

সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় উৎসবমুখর পরিবেশে ও সাড়ম্বরে বাংলা নববর্ষ উদযাপনের নির্দেশনা পাঠিয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হবে ‘নববর্ষ আনন্দ শোভাযাত্রা’। ইউনেসকোর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হিসেবে এটি ইতোপূর্বে ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ শিরোনামে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। সমতলের পাশাপাশি পার্বত্য অঞ্চলেও বৈসু, সাংগ্রাই বা বিজু নামে নববর্ষ উদযাপিত হবে। নিরাপত্তার ব্যবস্থাও গ্রহণ করেছে সরকার। 

আমরা আশা করছি, এভাবে আজ আনন্দমুখর পরিবেশে সবার মানসলোকে দেশগত ঐক্যের যে সুর ধ্বনিত হবে, আসন্ন দিনগুলোতে তা বাংলাদেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নেবে। দূর হয়ে যাবে সর্বব্যাপী দুর্নীতি, উদগ্র প্রদর্শনপ্রিয়তা, আত্মঘাতী হানাহানি, অন্তঃসারশূন্য কলহ, অনাকাঙ্ক্ষিত বিভাজন। 
দেশ এখন ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। এ সময়ে আরোপিত মঙ্গলভাবনা নয়, অন্তর থেকে জাগ্রত হোক আত্মশক্তির সংহতি। দেশের প্রতিটি সচেতন ও সুচেতন মানুষের এই হোক প্রত্যয়দীপ্ত ক্রমমুক্তির শপথ।
নববর্ষ উপলক্ষে লেখক, পাঠক, শুভানুধ্যায়ী সবাইকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।

তীব্র হচ্ছে বৈশ্বিক বাণিজ্যযুদ্ধ  ব্যবসা সহজীকরণে কার্যকর পদক্ষেপ নিন

প্রকাশ: ১৩ এপ্রিল ২০২৫, ০৩:৪৮ পিএম
তীব্র হচ্ছে বৈশ্বিক বাণিজ্যযুদ্ধ 
ব্যবসা সহজীকরণে কার্যকর পদক্ষেপ নিন

যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের বাণিজ্যযুদ্ধের কারণে বৈশ্বিক বাজারে তৈরি হয়েছে অস্থিরতা। পাল্টাপাল্টি শুল্ক আরোপের মাধ্যমে একে অপরকে ঘায়েল করার লড়াইয়ে নেমেছে বিশ্বের বৃহত্তর দুই অর্থনীতির দেশ চীন ও আমেরিকা। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চীনা পণ্যের ওপর ১৪৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের পর যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের ওপর শুল্ক বাড়িয়ে ১২৫ শতাংশ করেছে বেইজিং। চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের এমন বাণিজ্যযুদ্ধ বাংলাদেশসহ প্রতিযোগী দেশগুলোর সামনে নতুন সুযোগ নিয়ে আসতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। অন্য দেশগুলোর ওপর আরোপ করা পাল্টা শুল্ক ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করলেও বিশ্ববাণিজ্যের বড় প্রতিদ্বন্দ্বী চীনের ওপর শুল্ক বাড়িয়ে কোণঠাসা করতে তৎপর ডোনাল্ড ট্রাম্প। এরই প্রেক্ষিতে শুল্কযুদ্ধের আবহে প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করতে কৌশলী হয়েছে বেইজিং।
 
চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টাপাল্টি শুল্ক আরোপের মধ্যে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য কেন্দ্র (আইটিসি) জানিয়েছে, চলমান শুল্কযুদ্ধে বৈশ্বিক বাণিজ্য ৩ থেকে ৭ শতাংশ কমে যেতে পারে। বৈশ্বিক জিডিপি কমতে পারে শূন্য দশমিক ৭ শতাংশ। পাল্টাপাল্টি শুল্ক আরোপ উন্নয়নশীল দেশগুলোর অর্থনীতির জন্য মারাত্মক হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বিশ্বের বৃহত্তম দুই দেশের এই বাণিজ্যযুদ্ধ বিশ্বজুড়ে ভয়াবহ অবস্থায় ফেলে দিয়েছে। এর প্রভাবে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ ও এশিয়ার পুঁজিবাজারগুলোর সূচকে পতন শুরু হয়েছে। পতনশীল বাজারে বিনিয়োগকারী ও বেশির ভাগ কোম্পানি মুনাফা হারাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের পাল্টাপাল্টি শুল্ক আরোপের প্রবণতা পণ্যের চাহিদা কমিয়ে দাম বাড়িয়ে দেবে। 

এ ছাড়া ডলারের দাম ৩ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে চলে গেছে। অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তায় স্বর্ণের দাম সর্বকালের সর্বোচ্চ পর্যায়ে উঠে গেছে। বাণিজ্যযুদ্ধের এমন এক পরিস্থিতিতে জাতিসংঘের বাণিজ্য সংস্থার পরিচালক রেবেকা গ্রিনস্প্যান বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, পাল্টাপাল্টি শুল্ক আরোপ উন্নয়নশীল দেশগুলোর ওপর ‘বিপর্যয়কর প্রভাব’ ফেলতে পারে, যার কারণে দেশগুলো বিদেশি সহায়তা বন্ধের চেয়ে বড় ধাক্কা খেতে পারে।

নতুন শুল্কনীতি ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। পাল্টা শুল্ক স্থগিত করায় বাংলাদেশসহ ৭৫টি দেশ সুবিধা পাচ্ছে। বাংলাদেশের অর্থনীতিবিদ ও রপ্তানিকারকরা বলছেন, উচ্চ শুল্কের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে অধিকাংশ পণ্যে চীনের প্রতিযোগিতার সক্ষমতা থাকবে না। ফলে চীন থেকে যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতাপ্রতিষ্ঠান ক্রয়াদেশ সরাবে। সঙ্গে বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ স্থানান্তরিত হবে। যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের বাণিজ্যযুদ্ধের কারণে বৈশ্বিক বাজারে মন্দাভাব থাকবে এতে করে স্বল্প মেয়াদে পণ্যের চাহিদা কমে যেতে পারে। তবে মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদে বাংলাদেশের জন্য সোনালি সময় আসবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

 বাংলাদেশের দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ লাগবে চীনের ব্যবসা নিতে হলে। এ জন্য ব্যবসা সহজীকরণের উপায় খুঁজে বের করতে হবে। সরকারকে এ ক্ষেত্রে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। বিনিয়োগ নেওয়ার ক্ষেত্রগুলোতে যেমন বিশেষায়িত পোশাক, কৃত্রিম তন্তু, ইলেকট্রনিকস, জুতা, খেলনাসামগ্রীর উৎপাদনে অগ্রাধিকার দেওয়া দরকার। তবে তার আগে পাল্টা শুল্ক থেকে রেয়াত পেতে কূটনৈতিক কৌশলের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলাপ-আলোচনায় গুরুত্ব দিতে হবে।

বিনিয়োগ সম্মেলনের তাৎপর্য  অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করুন

প্রকাশ: ১৩ এপ্রিল ২০২৫, ১১:১৪ এএম
বিনিয়োগ সম্মেলনের তাৎপর্য 
অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করুন

দেশে বেশ কিছুদিন ধরে চলছে বিনিয়োগ খরা। এ সমস্যা দূর করতে অন্তর্বর্তী সরকার জোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। গত ৭ এপ্রিল শুরু হওয়া চার দিনের বাংলাদেশ বিনিয়োগ সম্মেলন এই প্রচেষ্টারই অংশ। বাংলাদেশ বিনিয়োগ বোর্ডের (বিডা) আয়োজনে চার দিনব্যাপী বাংলাদেশ বিনিয়োগ সম্মেলন-২০২৫ গত বৃহস্পতিবার শেষ হয়েছে। দেশের ইতিহাসে এবারই প্রথম যুক্তরাষ্ট্র, চীন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, নেদারল্যান্ডস, জার্মানিসহ ৪০টি দেশের সাড়ে ৪০০ খ্যাতনামা বিনিয়োগকারী এতে অংশ নেন। পাশাপাশি দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়িক নির্বাহী এবং নীতিনির্ধারকরাও এতে অংশ নেন। এরই মধ্যে বিভিন্ন দেশের বিখ্যাত বিনিয়োগকারী কোম্পানির শীর্ষ নীতিনির্ধারকরা বাংলাদেশে বিনিয়োগের ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। 

কেউ কেউ একধাপ এগিয়ে বিনিয়োগ চুক্তি এবং সমঝোতা স্মারক সই করেছেন। দেশের ক্রমবর্ধমান বিনিয়োগের সুযোগ এবং অর্থনৈতিক সংস্কার তুলে ধরা হয় এই সম্মেলনের মাধ্যমে। বাংলাদেশে বিনিয়োগের সম্ভাবনা, জুলাই বিপ্লবের পর অর্থনৈতিক সংস্কারকে তুলে ধরা এবং টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের পাইপলাইন তৈরির লক্ষ্যে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন বাংলাদেশে ব্যবসা এবং বিনিয়োগের সম্ভাবনা নিয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। সম্মেলনে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যবসার জন্য সেরা জায়গা।’ গত মঙ্গলবার ঢাকার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করেছে ইয়াংওয়ান করপোরেশনের চেয়ারম্যান কিহাক সাংয়ের নেতৃত্বে কোরিয়ার বিনিয়োগকারীদের একটি প্রতিনিধিদল। দক্ষিণ কোরিয়ার বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ করতে প্রস্তুত রয়েছেন। 

বাংলাদেশ বিনিয়োগ সম্মেলন ২০২৫-এ বাংলাদেশে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা নানা চ্যালেঞ্জের কথা বলেছেন। তারা বলছেন, এ দেশের দুর্নীতি, সরকারি সেবা অপর্যাপ্ত, আর্থিক খাতে প্রবেশে বাধা, বিদ্যুতের সমস্যা এবং উচ্চ করহারের সমস্যা রয়েছে। বিনিয়োগ বাড়াতে কাজ করছে এমন বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানকে ঢেলে সাজানো খুবই জরুরি। স্থানীয় বিনিয়োগকারীরাও সম্মেলন নিয়ে অনেকটা আশাবাদী। তারা বলছেন, দেশে অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিত না হলে সম্মেলনের সুফল আসবে না। অর্থনীতির বিশ্লেষকরা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে বিনিয়োগের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়েছে, এগুলো দূর করতে হবে, তবেই বিদেশি বিনিয়োগ বাড়বে। বিনিয়োগ সম্মেলনে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অংশ নিয়েছিল বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপি। বিভিন্ন প্যানেল আলোচনায় দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরা তাদের কাছে নানা বিষয়ে প্রশ্ন রেখেছেন। দলগুলো তাদের পরিকল্পনা তুলে ধরেছে। 

বিনিয়োগ সম্মেলনের মাধ্যমে দেশে বিনিয়োগ কেন কম হচ্ছে এবং কীভাবে ব্যবসায়ীরা এ দেশে আরও বিনিয়োগে উৎসাহী হতে পারেন, সে ব্যাপারে আলোচনার সুযোগ তৈরি হবে। বাংলাদেশের মতো দেশের জন্য বিদেশি বিনিয়োগের কোনো বিকল্প নেই। তরুণ প্রজন্মের সার্বিক কর্মসংস্থানের জন্য এ ধরনের সম্মেলনের প্রয়োজনীয়তাও অস্বীকার্য। যত বিদেশি বাংলাদেশের ব্যাপারে উৎসাহ প্রকাশ করবেন, দেশের জন্য তত বেশি মঙ্গল। দেশে দীর্ঘদিনের মন্দার মধ্যে ইনভেস্টমেন্ট সামিট-২০২৫ কিছুটা আশার বার্তা বয়ে এনেছে। এটি বিনিয়োগ পরিবেশকে আধুনিক ও বিনিয়োগবান্ধব করার একটি সুযোগ তৈরি করতে পারে। পাশাপাশি স্থানীয় উদ্যোক্তাদের জন্য এটি বিদেশি অংশীদারত্ব ও প্রযুক্তি স্থানান্তরে সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে। এর পূর্ণাঙ্গ সুবিধা পেতে হলে নীতিগত ধারাবাহিকতা এবং অবকাঠামোগত দুর্বলতাগুলো দূর করতে পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। 

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান খবরের কাগজকে বলেন, অনেক দিন ধরে দেশে বিনিয়োগ হয়েও হচ্ছে না। বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর দেশে বিনিয়োগ বাড়াতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ হলো এবারের বিনিয়োগ সম্মেলন। এ সম্মেলনে দেশের বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সেতুবন্ধ রচনা হবে। বিনিয়োগের অন্যতম বাধা জ্বালানিসংকট দূর করতে হবে। রাজস্ব, মুদ্রা, আমদানি, রপ্তানি নীতিসহায়তা বিনিয়োগবান্ধব করতে হবে। তবেই এসব সম্মেলনের সুফল পাওয়া যাবে। 
বিনিয়োগ সম্মেলন দেশে বিনিয়োগ বাড়াতে সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ।

 বাংলাদেশের বিনিয়োগ পরিবেশ নিয়ে যে নেতিবাচক ধারণা রয়েছে, তা থেকে বিনিয়োগকারীকে নতুন ধারণা দিতে সম্মেলনের আয়োজকদের আপ্রাণ চেষ্টা ছিল। এই উদ্যোগটির সফলতা নির্ভর করবে দেশে বিনিয়োগের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টির মাধ্যমে। সে জন্য সরকারকে বিনিয়োগের প্রতিবন্ধকতা দূর করতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ানোর পাশাপাশি স্থানীয় বিনিয়োগ বাড়াতেও পদক্ষেপ নিতে হবে।

 

লাইসেন্স পাবে ব্যাটারিচালিত যান নিয়ন্ত্রণে রাখতে কার্যকর পদক্ষেপ নিন

প্রকাশ: ১২ এপ্রিল ২০২৫, ১০:৪২ এএম
লাইসেন্স পাবে ব্যাটারিচালিত যান
নিয়ন্ত্রণে রাখতে কার্যকর পদক্ষেপ নিন

ব্যাটারিচালিত যান এখন সড়ক-মহাসড়ক দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। এতে সড়কে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হচ্ছে। সেই সঙ্গে দুর্ঘটনার সংখ্যাও বাড়ছে। ঈদের ছুটির চার দিনে ৩২ দশমিক ১০ শতাংশ ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় আহত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন অনেকেই। নগরীর মূল সড়কে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা নিয়ন্ত্রণহীনভাবে ছুটে চলার জন্য ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। ই-রিকশা পুরোপুরি বিদ্যুতের ওপর নির্ভরশীল। ফলে বিদ্যুৎ অবচয় বাড়বে। বর্তমানে এটি সড়ক-মহাসড়কের বিষফোঁড়া। এসব যানবাহনের চালকরা কোনো নিয়মকানুন মানেন না। যানবাহনের কাঠামো যেরকম সে অনুযায়ী গতি নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা নেই। ফাঁকা রাস্তায় অনেক চালক এমন বেপরোয়াভাবে যানটি চালান যে, রাস্তায় প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটছে। 

পরিবহন বিশেষজ্ঞদের মতে, দুর্ঘটনা, যানজট, দূষণ কমাতে চাইলে ছোট গাড়ি নিরুৎসাহিত করে বড় গাড়ি দিয়ে কম সময়ে বেশি যাত্রী পরিবহনে সক্ষম যানবাহন যুক্ত করতে হবে। তা না হলে যানজট ও দুর্ঘটনাকে স্থায়ী রূপ দেওয়া হবে। শহরকে বসবাস উপযোগী করতে হলে ছোট গাড়ি বাদ দিয়ে বড় গাড়িকে প্রাধান্য দিতে হবে; উৎসাহিত করতে হবে। ছোট গাড়িকে বড় গাড়ির প্রতিযোগী নয়, সহযোগী বানাতে হবে। এদিকে এই যানকে টিকিয়ে রাখার ব্যাপারে সিএনজি অটোরিকশা শ্রমিক ঐক্য পরিষদের নেতারা বলেন, ব্যাটারিচালিত তিন চাকার রিকশাকে বৈধতা দিয়ে এই যানবাহনগুলোকে নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আনতে হবে। সিটি করপোরেশন এলাকার মূল সড়কে যাতে চলাচল করতে না পারে, সে বিষয়ে ব্যবস্থা থাকতে হবে। জেলাগুলোতে মূল সড়কে এই যানগুলো যাতে দাপিয়ে বেড়াতে না পারে, সে জন্য প্রবেশাধিকার সংরক্ষিত করতে হবে। 

তথ্যমতে, রাস্তায় ২০ লক্ষাধিক ব্যাটারিচালিত রিকশা রয়েছে। খোদ রাজধানীতে আছে প্রায় ২ লাখ। ব্যাটারিচালিত তিন চাকার (ই-রিকশা) রিকশার লাইসেন্স বা চলাচলের অনুমতি দেবে সরকার। এ লক্ষ্যে বিদ্যমান স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন, ২০০৯ সংশোধনীর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। যেহেতু বর্তমানে সংসদ বহাল নেই, তাই অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে এই সংশোধনী করা হবে। স্থানীয় সরকার বিভাগ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। প্রস্তাবিত সংশোধনীতে ব্যাটারিচালিত তিন চাকার রিকশাকে ‘সাধারণ যানবাহন’ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করা হয়েছে। 
ই-রিকশার লাইসেন্স প্রসঙ্গে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক ড. এম শামসুল হক খবরের কাগজকে বলেন, এটি হবে গণপরিবহন-সংক্রান্ত একটি অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্ত। যারা সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন ট্রান্সপোর্টেশন সম্পর্কে তারা কোনো ধারণা রাখেন কি না, এ বিষয়ে সন্দেহ আছে।

 এমনিতেই দেশে আয়তন অনুযায়ী রাস্তা কম। ছোট গাড়ি চলাচলের স্বীকৃতি দিয়ে রাস্তার জটিলতা বহুগুণ বাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। সিটি করপোরেশন ৮০ হাজার প্যাডেলচালিত রিকশার অনুমতি দিলেও বর্তমানে কয়েক লাখ রিকশা রাজধানীতে চলাচল করছে। কর্তৃপক্ষ এটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি। এখন এই ই-রিকশাকে অনুমতি দিয়ে আরেকটি অরাজকতা তৈরির পাঁয়তারা হচ্ছে। এমনিতে ঢাকা দূষিত নগরী ও বসবাস যোগ্যতায় আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের তলানিতে অবস্থান করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। 

ঢাকা নগরীতে ব্যাটারিচালিত যানের সংখ্যা অনেক বেড়েছে। কিন্তু এ যানগুলোর নিয়ন্ত্রণ ও সঠিক নীতিমালা মানতে দেখা যাচ্ছে না। প্রধান সড়কগুলোতে এটি মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করছে। কারণ এর বেপরোয়া গতি বড় ধরনের দুর্ঘটনা সৃষ্টি করছে। তাই সরকারকে এ বিষয়ে কার্যকরী কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। প্রধান সড়কগুলোতে যাতে এ যান চলাচল করতে না পারে, সে জন্য একটু সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে। চালকদের নীতিমালা অনুসরণ করে এই যানটি চালাতে হবে। সড়কে বিশৃঙ্খলা রোধ করতে হলে এই যানটির নিয়ন্ত্রণ খুবই জরুরি।