
অ্যান্তোনিও গুতেরেসের সঙ্গে গোলটেবিল বৈঠক করেছেন বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর নেতা এবং সংস্কার কমিশনের প্রধানরা। বৈঠকে জাতীয় নির্বাচনের আগে দীর্ঘমেয়াদি সংস্কার নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থান তুলে ধরেন। অন্তর্বর্তী সরকারের চলমান সংস্কার প্রক্রিয়া সম্পর্কে জাতিসংঘ মহাসচিব এই বৈঠকের মাধ্যমে অবহিত হয়েছেন। বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণ প্রত্যাশা করে সংস্কার বাস্তবায়নে সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব। কাজটি দেশের রাজনৈতিক দল ও সরকারকেই করতে হবে বলে তিনি জানান। এ ছাড়া জাতিসংঘ মহাসচিব ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার ওপরও গুরুত্বারোপ করেছেন।
বৈঠকে পাঁচটি সংস্কার কমিশনের প্রধানরা তাদের নিজ নিজ সংস্কার প্রতিবেদনের সংক্ষিপ্ত সার তুলে ধরেন। এরপর রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধিরা তাদের বক্তব্য উপস্থাপন করেন। কোনো কোনো রাজনৈতিক দল লিখিত বক্তব্য জমা দেয়। অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্র সংস্কারে ১৫টি কমিশন গঠন করেছে। ছয়টি কমিশনের দেওয়া সংস্কারের সুপারিশ নিয়ে সরকার এবং রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে। অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া সব দল সংস্কারকে সমর্থন করলেও পদ্ধতি এবং সময়সীমা নিয়ে ভিন্নমত রয়েছে। বৈঠকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সংস্কার দ্রুত শেষ করে নির্বাচন করার কথা জাতিসংঘ মহাসচিবকে বলেছেন। অন্যদিকে মৌলিক সংস্কারের ভিত্তি এই সরকারের সময়ে তৈরি করতে হবে উল্লেখ করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। গণপরিষদের মাধ্যমে সংস্কার করতে হবে অন্যথায় সংবিধান সংস্কার টেকসই হবে না। বৈঠকে জামায়াতে ইসলামী জানিয়েছে, তারা টেকসই গণতন্ত্র ও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়।
জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, সংস্কার প্রয়োজনীয়। জাতিসংঘ এতে পাশে থাকবে। সংস্কার কীভাবে, কতটুকু হবে, তা জনগণ ও রাজনৈতিক দলগুলোকে একমত হয়ে ঠিক করতে হবে। তিনি আরও বলেছেন, বাংলাদেশ সংস্কার ও গণতান্ত্রিক অভিযাত্রার গুরুত্বপূর্ণ পর্বে রয়েছে। দেশটির এ সন্ধিক্ষণে শান্তি সংলাপ ও ঐকমত্য সহায়তার জন্য জাতিসংঘ প্রস্তুত রয়েছে; টেকসই ও ন্যায়সংগত ভবিষ্যৎ গড়ার লক্ষ্যে বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে কাজ করবে। দেশের মানুষ তাদের অবিচল অংশীদার হিসেবে জাতিসংঘের ওপর নির্ভর করতে পারে। জাতিসংঘ মহাসচিব একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন এবং দেশের প্রকৃত রূপান্তরের জন্য সংস্কার প্রক্রিয়ার প্রশংসা করেন।
প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে সংস্কার প্রক্রিয়ার প্রতি জাতিসংঘের পূর্ণ প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন বলে এক সংবাদ সম্মেলনে অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন জানান। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর জনমনে এক ধরনের প্রত্যাশা তৈরি হয়েছিল। এই প্রত্যাশার আলোকে অন্তর্বর্তী সরকার সংস্কারের কাজ শুরু করে। দেশের ভেঙে পড়া সব গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে গতিশীল করার অভিপ্রায়ে সংস্কার কমিশনও গঠন করেছে।
জাতিসংঘ মহাসচিব রাজনৈতিক দল ও সংস্কার কমিশনের প্রধানদের নিয়ে আলোচনায় বসেন। এ দেশের গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির ধারা অব্যাহত রাখতে জাতীয় সংলাপের ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি। দেশের বৃহত্তর স্বার্থে রাজনৈতিক দল ও সরকারকে এই সংলাপ প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখতে হবে। বৈষম্যহীন ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত দেশ গড়ার প্রত্যয়ে একটি সফল সংলাপের মাধ্যমে উদার গণতান্ত্রিক পথে হাঁটবে দেশ, এটিই প্রত্যাশা।