ঢাকা ১০ বৈশাখ ১৪৩২, বুধবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৫
English
বুধবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ১০ বৈশাখ ১৪৩২

উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপে মানুষ নিয়ন্ত্রণে চাই কার্যকর পদক্ষেপ

প্রকাশ: ১৯ মার্চ ২০২৫, ০৮:৩০ পিএম
উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপে মানুষ
নিয়ন্ত্রণে চাই কার্যকর পদক্ষেপ

উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপে সাধারণ মানুষ অনেকটাই দিশেহারা। কয়েক বছর ধরে দেশের অর্থনীতি মন্থর হয়ে আছে। অর্থনীতির এই নাজুক অবস্থায় কেউ সঞ্চয়পত্র ভেঙে খাচ্ছেন, কেউ শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করা শেয়ার লোকসানে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। আড়াই বছর ধরে দেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতি বিদ্যমান রয়েছে। এতে স্বল্প আয়ের মানুষের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এ কথা স্বীকার করতেই হবে, এত সমস্যার মধ্যেও আমাদের অগ্রগতি হয়েছে। মোট দেশজ উৎপাদন জিডিপির প্রবৃদ্ধি বেড়েছে। মাথাপিছু আয়ও বেড়েছে। অর্থনীতিবিদরা বলেছেন, মুষ্টিমেয় মানুষের হাতে এখন বিপুল অর্থ। বৃহত্তর জনগোষ্ঠী নিঃস্ব থেকে নিঃস্ব হচ্ছে। অর্থাৎ একদিকে আমাদের উন্নয়ন হচ্ছে, অন্যদিকে বৈষম্য বাড়ছে ভয়াবহভাবে। এতে সমাজে অস্থিরতা বাড়ছে। সম্প্রতি বিবিএসের পরিসংখ্যান বলছে, মূল্যস্ফীতির চাপ কিছুটা কমতে শুরু করেছে। এটি আশার কথা। জানুয়ারি মাসের তুলনায় ফেব্রুয়ারিতে মূল্যস্ফীতি কমেছে। বিবিএসের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ফেব্রুয়ারিতে সার্বিকভাবে গড় মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৩২ শতাংশ এবং খাদ্য মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ২৪ শতাংশ।

স্বল্প আয় ও দরিদ্র মানুষকে স্বস্তি দিতে সরকার চাল, ভোজ্যতেলসহ নিত্যপণ্যের ওপর শুল্ক কমিয়েছে। কিন্তু শুল্ক কমালেও দাম কমেনি বরং আরও বেড়েছে। শুল্ককরের সুবিধাও মধ্যস্বত্বভোগীদের পকেটে চলে গেছে। খেজুর, সয়াবিন তেলসহ সব পণ্যের পর্যাপ্ত আমদানির পরও পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। এনবিআরের সাবেক সদস্যের মতে, অতীত অভিজ্ঞতা থেকে দেখা গেছে, শুল্ককর কমিয়ে বাজার স্থিতিশীল করা যায়নি। বরং মাঝখান থেকে সরকারের রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে। সে জন্য বাজার নিয়ন্ত্রণে তদারকিব্যবস্থা আরও জোরদার করার পরামর্শ দেন তিনি।

সাধারণ মানুষ সবচেয়ে বেশি অর্থ জমা রাখে ব্যাংকে, তারপর নিরাপত্তা ও অধিক মুনাফার আশায় সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করে। কিন্তু সুদ বেশি হওয়ার পরও সঞ্চয়পত্র কেনা কমিয়ে দিয়েছে মানুষ। এমনকি সঞ্চয়পত্র ভেঙে ফেলার প্রবণতাও লক্ষণীয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত তিন মাসে ২৫ হাজার ৬৯ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র ভেঙেছেন গ্রাহকরা। অন্যদিকে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথমার্ধে সঞ্চয়পত্র কেনার হার ২৭ শতাংশ কমেছে। সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমে যাওয়া ও ভাঙার হার বেড়ে যাওয়ার পেছনে বেশ কিছু কারণ রয়েছে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা। তারা বলছেন, উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষের ব্যয় বেড়েছে। সেই হারে আয় বাড়ছে না, সে জন্য অনেকেই সঞ্চয়পত্র ভাঙতে বাধ্য হচ্ছেন। এ ছাড়া দেশের রাজনীতি, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিসহ সবকিছু একটা অস্থিরতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এ রকম অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানোর অবস্থায় নেই। বিনিয়োগের পরিবেশও তেমনটা আশাব্যঞ্জক নয়, দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগে উৎসাহ হারাচ্ছেন দেশের চলমান পরিস্থিতির কারণে। এ অবস্থায় দেশে কর্মসংস্থানেও ভাটা পড়েছে, এর ফলে আয়ও বাড়ছে না।

সাবেক সচিব গোলাম রহমান খবরের কাগজকে বলেন, ‘সরকার বলছে, মূল্যস্ফীতি আগামী কয়েক মাসের মধ্যে ৭-৮ শতাংশে নেমে আসবে। কিন্তু আমি মনে করি, আগামী এক বছরের মধ্যে ওই পর্যায়ে কমার সম্ভাবনা নেই। উৎপাদনব্যবস্থায় এখনো শৃঙ্খলা ফিরে আসেনি। চাঁদাবাজি, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি, আমাদের উচিত ব্যবসার পরিবেশ তৈরি করা। যাতে কেউ ইচ্ছা করলেও দাম বাড়াতে না পারে।’

গত কয়েক বছরে দেশের মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। এরই মধ্যে দেশে বড় ধরনের রাজনৈতিক পটপরিবর্তন হয়েছে। গত সরকারও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এর ফল হিসেবে এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে গড় মূল্যস্ফীতি আগের তুলনায় কমেছে। দরিদ্র ও স্বল্প আয়ের মানুষকে স্বস্তি দিতে সরকার কিছু কিছু পণ্যের আমদানি ও সরবরাহ বাড়িয়েছে, তার পরও রোজায় সেসব পণ্য ভোক্তাকে কিনতে হচ্ছে চড়া দামে। যদিও এ ক্ষেত্রে শুল্ককর অব্যাহতি দেওয়ায় পুরো মধ্যস্বত্বভোগী ও সিন্ডিকেটের কবজায় রয়েছে। এ অবস্থায় বাজার তদারকিব্যবস্থা শক্তিশালী করতে সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। যাতে করে উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হয়।

জাতীয় নির্বাচনের দিনক্ষণ  রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্য প্রয়োজন

প্রকাশ: ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ০২:০৫ পিএম
জাতীয় নির্বাচনের দিনক্ষণ 
রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্য প্রয়োজন

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে অন্তর্বর্তী সরকার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে সরকার চলতি বছরের ডিসেম্বর থেকে আগামী ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছে। একদিকে রাজনৈতিক দলগুলোর দ্রুত সময়ে নির্বাচনের তাগিদ, অন্যদিকে ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে নির্বাচনের ঘোষণা মানতে রাজি নয় দেশের অন্যতম রাজনৈতিক দল বিএনপিসহ কিছু দল। দলটির দাবি, ডিসেম্বরের মধ্যে অনুষ্ঠিত হোক জাতীয় সংসদ নির্বাচন। সে বিষয়ে সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে তারা নানামুখী চাপেও রেখেছে। এদিকে নির্বাচন নিয়ে সরকারের সুস্পষ্ট ঘোষণা না থাকা এবং ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের আগে সংসদ নির্বাচন নিয়ে ইসির তৎপরতায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) নেতারা। 

একই সঙ্গে তারা পুরোনো ব্যবস্থায় নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। প্রয়োজনে নির্বাচন কমিশন সংস্কারের কথাও বলেছেন। গত ২০ এপ্রিল ইসির সঙ্গে বৈঠকে সংস্কার নিয়ে সরকারের সুনির্দিষ্ট নির্দেশনার আগে ইসিকে সব ধরনের নির্বাচনি তৎপরতা বন্ধ রাখার দাবি জানিয়েছে এনসিপি। এমন পরিস্থিতিতে বিশ্লেষকরা বলছেন, নির্বাচনের দিনক্ষণ নিয়ে ইসিকে সরকারি রোডম্যাপের ওপর নির্ভর করতে হবে, এটাই বাস্তবতা। তবে তাদের উচিত নির্বাচন উপলক্ষে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া। এ জন্য সরকার ও ইসির মধ্যে সমন্বয় থাকতে হবে। 

স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ এ প্রসঙ্গে খবরের কাগজকে বলেন, এ প্রেক্ষাপটে ইসির উচিত হবে চলমান ইস্যুতে সরকারের সঙ্গে কথা বলা এবং নির্বাচনের জন্য নিজেদের প্রস্তুতি যতটা সম্ভব এগিয়ে নেওয়া। এ ছাড়া নির্বাচনের আগে আইনি কিছু সংস্কারের সুপারিশ রয়েছে সংস্কার কমিশনের। এ নির্বাচনের আগে সেগুলো বাস্তবায়ন হবে কি না, আর হলেও তা কীভাবে সম্ভব, সেসব বিষয়ে সরকার ও নির্বাচন কমিশনকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কারণ দেশের ভেঙে পড়া নির্বাচনব্যবস্থার উন্নয়ন এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে সংস্কার প্রস্তাবগুলো আসছে। সেসব পরামর্শ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন না করে আগের পদ্ধতিতে নির্বাচন হলে আগামী সংসদ নির্বাচন অগ্রহণযোগ্য ও প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে। কাজেই আমি মনে করি, নির্বাচনব্যবস্থার সংস্কারকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করেই নির্বাচনের সব ধরনের প্রস্তুতি এগিয়ে নিতে হবে।

বর্তমানে রাজনৈতিক অঙ্গনে নির্বাচন নিয়ে নানা ধরনের আলোচনা চলছে। জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে ইসির ওপর রাজনৈতিক দলগুলোর চাপ থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। এ ক্ষেত্রে ইসিকে ঐকমত্য কমিশন থেকে চূড়ান্ত হওয়া সংস্কারের পরামর্শ ও সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে হবে। নির্বাচন প্রশ্নে রাজনৈতিক দল, ইসি ও নীতিনির্ধারকদের মধ্যে একটি ঐকমত্যে পৌঁছানো জরুরি। দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর গুরুত্বপূর্ণ অনেক বিষয়ে সংস্কারের প্রস্তাব এসেছে।

 সেই সঙ্গে সংস্কার বাস্তবায়নের জন্য জনপ্রত্যাশাও বেড়েছে। কিন্তু সব অংশীজনের মধ্যে সমন্বয় সঠিকভাবে না হওয়ার কারণে বারবার আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে। তাই দেশের বৃহত্তর কল্যাণে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ইসি এবং নীতিনির্ধারকদের মধ্যে একটি সুনির্দিষ্ট নির্বাচনি রোডম্যাপ নিয়ে আলোচনার উদ্যোগ নিতে হবে। যাতে নির্বাচনি সময়সীমা নিয়ে জটিলতা অচিরেই কেটে যায়। আশা করছি, অন্তর্বর্তী সরকার দেশের গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখতে সেই প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবে।

 

সংস্কার নিয়ে দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা  রাজনৈতিক ঐকমত্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত দিন

প্রকাশ: ২২ এপ্রিল ২০২৫, ১০:২৫ এএম
সংস্কার নিয়ে দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা 
রাজনৈতিক ঐকমত্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত দিন

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে সংস্কার নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের আলোচনা চলছে। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর জাতির এক ক্রান্তিলগ্নে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করে। এই সরকারের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে দেশের বিভিন্ন খাতে সংস্কার সাধন করা। এ লক্ষ্যে সংস্কার প্রস্তাব তৈরির জন্য গত বছরের অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে সংবিধান, নির্বাচনব্যবস্থা, জনপ্রশাসন, পুলিশ, দুর্নীতি দমন কমিশন ও বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন গঠন করে সরকার। গত ফেব্রুয়ারি মাসে এই ছয় কমিশন তাদের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রকাশ করে। পরে এসব কমিশনের প্রধানদের নিয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন করা হয়। 

জাতীয় ঐকমত্য কমিশন বলেছে, রাজনৈতিক দলগুলো সংস্কার কমিশনের যেসব সুপারিশ সম্পর্কে একমত হবে, সেগুলোর ভিত্তিতে তৈরি হবে ‘জুলাই চার্টার’ বা জুলাই সনদ। এরপর এই ছয় কমিশনের গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশগুলো স্প্রেড শিটে ছকের আকারে ৩৮টি দলের কাছে পাঠিয়ে প্রতিটি সুপারিশের ক্ষেত্রে দুটি বিষয়ে মতামত চাওয়া হয়। প্রথমটি হলো, সংশ্লিষ্ট সুপারিশের বিষয়ে একমত কি না। এতে তিনটি বিকল্প রাখা হয়েছে। সেগুলো হলো ‘একমত’, ‘একমত নই’ এবং ‘আংশিকভাবে একমত’। দ্বিতীয়তটি হলো প্রতিটি সুপারিশের বিষয়ে সংস্কারের সময়কাল ও বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে মতামত চাওয়া হয়। 

ইতোমধ্যে সংস্কার কমিশনগুলোর সুপারিশ নিয়ে ঐকমত্যে পৌঁছাতে বিভিন্ন দলের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন এবং তা চলমান রয়েছে। একে একে রাজনৈতিক দলগুলো এই আলোচনায় অংশগ্রহণ করছে। আলোচনায় উঠে আসছে সংস্কার কমিশনগুলোর সুপারিশের বিষয়ে তাদের মতামত ও সিদ্ধান্ত। মতাদর্শিক বা আদর্শগত দিক থেকে দলগুলোর মধ্যে দৃষ্টিভঙ্গির পার্থক্য থাকায় তারা কিছু সুপারিশের পক্ষে ইতিবাচক, কিছু বিষয়ে নেতিবাচক মতামত দিচ্ছেন। কোনোটির সম্পূর্ণ, কোনোটির আংশিক মেনে নেওয়ার কথা বলছেন। সুপারিশগুলোর পরিসর যেহেতু অনেক বিস্তৃত, সংখ্যা অনেক; ফলে আলোচনায় মতপ্রকাশের জন্য দীর্ঘ সময় লাগছে। লাগারই কথা। রাষ্ট্র সংস্কারের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো সম্পর্কে দলগুলোর গভীরভাবে ভেবে দেখার প্রয়োজন রয়েছে। যেহেতু এই সংস্কারই হবে ভবিষ্যতের বাংলাদেশ রাষ্ট্র পরিচালনার ভিত্তি, ফলে দলগুলোর কাছে সংস্কারের দিকগুলো অনেক গুরুত্ব পাচ্ছে। 

যৌক্তিক দিক থেকে দেখলে সংস্কার আসলে একটা চলমান প্রক্রিয়া। সামগ্রিকভাবে সংস্কারের বিষয়গুলো সম্পর্কে তাই সিদ্ধান্তে পৌঁছানো সহজ নয়। ১১টি সংস্কার কমিশন গঠন করেছে সরকার। এর মধ্যে ৬টি কমিশনের সংস্কার নিয়ে ঐকমত্য কমিশন আলোচনা করছে। কিন্তু এর বাইরেও রয়ে গেছে আরও ৫টি সংস্কার কমিশনের সুপারিশ। সেই সব কমিশনের প্রতিবেদন এখনো সরকারের হাতে আসেনি; এলে সেগুলো আবার দলগুলোর কাছে পাঠানো হবে। কোনো কোনো কমিশনের প্রতিবেদনে এও বলা হয়েছে, কিছু সংস্কার অন্তর্বর্তী সরকার করে যেতে পারে আর কিছু পরবর্তী নির্বাচিত সরকার করবে। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আলোচনার পর দলগুলোর প্রতিনিধিরা যেভাবে বলছেন, তাতে কিছু বিষয়ে ঐকমত্য হবে, কিছু বিষয়ে আংশিক হবে, কিছু বিষয়ে একেবারেই হবে না। তবে এ জন্য আমাদের থেমে থাকার সুযোগ নেই।

এখন রাজনীতির মুখ্য বিষয় হয়ে উঠেছে নির্বাচন। সংস্কার যেমন প্রয়োজন, তেমনি নির্বাচনও হওয়া জরুরি। বাংলাদেশের মানুষ দীর্ঘদিন ভোটাধিকারের মাধ্যমে রাষ্ট্র পরিচালনায় তাদের মতামত জানাতে পারেননি। এবার সেই সুযোগ এসেছে। জনগণই যেখানে শেষ কথা, তাদের মতামতের ভিত্তিতে গঠিত জাতীয় সংসদের হাতেই সংস্কারের ভার ছেড়ে দেওয়াই হবে যুক্তিযুক্ত। ৫ আগস্টের পর একটা উদার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠনের যে স্বপ্ন বাংলাদেশের মানুষ দেখছে, সে জন্য একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচনের বিকল্প নেই।

পুলিশের সন্দেহভাজন গ্রেপ্তার ন্যায়বিচার সুনিশ্চিত করার উদ্যোগ নিন

প্রকাশ: ২১ এপ্রিল ২০২৫, ০৭:২৫ পিএম
পুলিশের সন্দেহভাজন গ্রেপ্তার
ন্যায়বিচার সুনিশ্চিত করার উদ্যোগ নিন

রাজধানীতে প্রায়ই ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। এ নিয়ে পত্রপত্রিকায় যেমন খবর প্রকাশিত হচ্ছে, তেমনি সেসব ছিনতাইয়ের বিরুদ্ধে পুলিশ ব্যবস্থা নিচ্ছে, এমন খবরও মিলছে। যদিও অধিকাংশ ক্ষেত্রে ছিনতাইয়ের তুলনায় ব্যবস্থা গ্রহণের হার কম। ভুক্তভোগীদের অনেকেই থানায় অভিযোগ করার ব্যাপারে উৎসাহী হন না। এর কারণ, পুলিশ কতটা কী  করতে পারবে, তা নিয়ে ভুক্তভোগীরা সন্দিহান থাকেন। খবরের কাগজে প্রকাশিত একটা প্রতিবেদনে কিছুদিন আগে ঘটে যাওয়া এ রকমই একটা সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। ছিনতাইয়ের অভিযোগে রাজধানীর মিরপুর মডেল থানায় করা একটি মামলায় সন্দেহভাজন হিসেবে এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠিয়ে বিপাকে পড়েছে পুলিশ। এতে ঘটনা সম্পর্কে পুলিশের আন্তরিকতা ও সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
 
প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ১৫ এপ্রিল মিরপুর মডেল থানায় দণ্ডবিধির ৩৯২ ধারার অভিযোগে হওয়া মামলায় আকিব নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর ঘটনার সঙ্গে জড়িত বলে চিকিৎসার স্লিপসহ তাকে আদালতে পাঠায় পুলিশ। সংশ্লিষ্ট বিচারক ছিনতাইয়ের ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে আসামি দাবি করেন, যে ছিনতাইয়ের ঘটনায় মামলা হয়েছে, তার সঙ্গে তিনি জড়িত নন। 

বিচারক আসামির বক্তব্যকে স্বেচ্ছায় জবানবন্দি হিসেবে গ্রহণ করেন। জবানবন্দিতে আসামি বলেন, দুজন ছিনতাইকারী একজন নারীর কাছ থেকে মোবাইলটি ছিনিয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় তার কাছে রেখে যান। পরে লোকজন তাকে ধরে পুলিশে সোপর্দ করেন। ভুক্তভোগীকে পুলিশ খুঁজে পায়নি। 

বিচারক জবানবন্দি গ্রহণের পর আদেশে উল্লেখ করেন, থানা থেকে পাঠানো পুলিশি বিবরণে আসামির আহত হওয়ার কোনো উল্লেখ নেই। লক্ষণীয়, পুলিশ যথাযথভাবে ঘটনার বিবরণ না দিয়ে আসামিকে আদালতে পাঠিয়েছেন। তাদের বর্ণনায় চিকিৎসার কথা ছিল। কিন্তু আহত হওয়ার উল্লেখ ছিল না। 
সম্প্রতি ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন (সিএম) আদালতে যেসব পুলিশি বা জিআর মামলা আসছে, সেসব মামলার অধিকাংশ আসামিকে সন্দেহভাজন অজ্ঞাতনামা আসামি হিসেবে পাঠানো হচ্ছে। 

এসব ক্ষেত্রে কীভাবে আসামিরা মামলাগুলোর ঘটনার সঙ্গে জড়িত, সে বিষয়ে তদন্তকারী কর্মকর্তারা বিস্তারিত কোনো বর্ণনা বা ব্যাখ্যা সাধারণত দেন না। এতে খুব সহজেই আসামিদের জামিন পাওয়ার ক্ষেত্রটি তৈরি হয়ে যায়। 

মামলার ওই আদেশে বিচারক মিরপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এবং মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাকে কেন নিয়মিত মামলা রুজু করা হলো না এবং মামলার বর্ণনায় আহত হওয়ার বিষয়ে কেন ব্যাখ্যা নেই, তার লিখিতভাবে জানতে চেয়েছেন। সেই সঙ্গে বিচারক আসামির স্বীকারোক্তি অনুসারে ছিনতাইয়ের ঘটনার বিষয়টি প্রাথমিকভাবে তদন্ত করে নিয়মিত মামলা রুজু করার নির্দেশ দিয়েছেন। 

মামলার বিবরণ এবং বিচারকের উল্লিখিত আদেশ থেকে বোঝা যায়, যে আইনি প্রক্রিয়ায় মামলাটি করা উচিত ছিল, ওসি ও তদন্ত কর্মকর্তা সেটা করেননি। মামলার ঘটনায় ছিনতাইকারীকে সন্দেহভাজন হিসেবে পুলিশ উপস্থাপন করেছে। ভুক্তভোগীরও সন্ধান পায়নি বলে পুলিশ জানিয়েছে আর তাতেই মামলাটি দুর্বল হয়ে গেছে। আসলে পুলিশের বিবরণটি সিএম আদালতে বিচারযোগ্য মামলাই হয়ে ওঠেনি। 

পুলিশের বিরুদ্ধে বিচারপ্রার্থীদের অনেকেই অভিযোগ করে থাকেন, পুলিশ বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ঘটনার যথাযথ তদন্ত করে না। মামলার বিবরণ থাকে এলোমেলো, কার্যকারণহীন। দুটি কারণে এ রকম হতে পারে। প্রথমত, আইনি বিবরণ বা ভাষা সম্পর্কে জানা না থাকা; দ্বিতীয়ত, ইচ্ছাকৃতভাবে মামলার বিবরণকে অবিন্যস্ত করে উপস্থাপন করা। এতে যা ঘটে তা হলো, ন্যায়বিচারের বিষয়টি অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। প্রকৃত অপরাধী ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যায় অথবা নিরপরাধ মানুষের সাজা পাওয়ার আশঙ্কা থাকে। ন্যায়বিচারের জন্য এটা অশনিসংকেত। এই প্রেক্ষাপটে পুলিশের আন্তরিকতা এবং আইনি সক্ষমতা বৃদ্ধির ওপর জোর দিতে হবে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বলব, আন্তরিকতার সঙ্গে অপরাধের বিশ্বাসযোগ্য তদন্ত করুন। পুলিশের আইনি সামর্থ্য বৃদ্ধি করুন। ন্যায়বিচার সুনিশ্চিত করার উদ্যোগ নিন।  

পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের আন্দোলনসমস্যার সমাধানে ফলপ্রসূ উদ্যোগ নিন

প্রকাশ: ২০ এপ্রিল ২০২৫, ০৪:৪৪ পিএম
আপডেট: ২০ এপ্রিল ২০২৫, ০৪:৪৭ পিএম
পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের আন্দোলনসমস্যার সমাধানে ফলপ্রসূ উদ্যোগ নিন

ছয় দফা দাবিতে সরকারি ও বেসরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় আন্দোলন করছেন। প্রায় সাত মাস আগে তারা প্রথম এই আন্দোলন শুরু করেন। দ্বিতীয় দফায় গত বুধবার আবার তারা এই আন্দোলন শুরু করেছেন। আন্দোলনের অংশ হিসেবে ইতোমধ্যে তারা সড়ক অবরোধ করেছেন। পরদিন রেলপথ অবরোধের ঘোষণা দিলেও তা থেকে সরে এসে মশাল মিছিল এবং গত শুক্রবার ‘কাফন মিছিল’ করেন। 

অবরোধে ঢাকার চিত্র ছিল ভয়াবহ। রাজধানীর প্রধান প্রধান সড়কে দীর্ঘ সময় যান চলাচল স্থবির হয়ে পড়ে। অধিকাংশ সড়কে তৈরি হয় তীব্র যানজট। ব্যাপক ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ মানুষ। ঢাকার বাইরেও বিভিন্ন জেলায় এই অবরোধ কর্মসূচি পালিত হওয়ায় সেসব এলাকার সড়ক-মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। কোথাও আবার রেলওয়ে স্টেশনে অবরোধ করা হয়। সামগ্রিকভাবে জনজীবন স্থবির হয়ে পড়ে। অনেক এলাকায় সেনাবাহিনী, পুলিশ, হাইওয়ে পুলিশ, র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে নিরলস তৎপরতা চালাতে দেখা যায়। জরুরি প্রয়োজনে যারা ঘর থেকে বাইরে এসেছিলেন, তাদের অধিকাংশই যানজটে চরম বিড়ম্বনার শিকার হন। এ রকম অবস্থায় একপর্যায়ে আন্দোলনস্থলে উপস্থিত হন শিক্ষাসচিব ও কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

 শিক্ষা উপদেষ্টার আহ্বানে শিক্ষার্থীরা কর্মসূচি শিথিল করে রেলপথ অবরোধের মতো কর্মসূচি থেকে সরে আসেন। কিন্তু শিক্ষা উপদেষ্টার সঙ্গে সচিবালয়ে আলোচনা করতে গিয়ে শিক্ষার্থীরা তার দেখা পাননি। এতে তারা অসন্তুষ্ট হয়ে গত বৃহস্পতিবার মশাল মিছিল এবং শুক্রবার জুমার নামাজের পর একযোগে মাথায় কাফনের কাপড় বেঁধে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন। সেই সঙ্গে তারা ৬ দফা দাবি মেনে না নেওয়া হলে কঠোর কর্মসূচিরও ঘোষণা দেন। শিক্ষার্থীদের ৬ দফা দাবি হচ্ছে ২০২১ সালের বিতর্কিত নিয়োগপ্রাপ্ত ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টরদের কারিগরি অধিদপ্তর এবং সব প্রতিষ্ঠান থেকে দ্রুত স্থানান্তর করতে হবে। ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্স চার বছর মেয়াদি নিশ্চিত করতে হবে এবং প্রতি সেমিস্টার (পর্ব) পূর্ণ মেয়াদের (ছয় মাস) করতে হবে। উপসহকারী প্রকৌশলী পদে (দশম গ্রেড) ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার ব্যতীত অন্য কেউ আবেদন করতে পারবেন না এবং উপসহকারী প্রকৌশলী ও সমমান পদ ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের জন্য সংরক্ষিত রাখতে হবে। এ ছাড়া কারিগরি শিক্ষা বোর্ড সংস্কার করে কারিগরি সেক্টর পরিচালনায় কারিগরি শিক্ষাবহির্ভূত কোনো জনবল থাকতে পারবে না। কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের বিতর্কিত নিয়োগবিধিমালা সংশোধন করে সব শূন্যপদে কারিগরি জনবল নিয়োগের মাধ্যমে শিক্ষকসংকট দূর করতে হবে। উচ্চশিক্ষার সুযোগ বাড়ানোর লক্ষ্যে ডিপ্লোমা-ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং ছাত্রছাত্রীদের জন্য প্রস্তাবিত চারটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে শতভাগ সিট নিশ্চিত করতে হবে।

সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে সারা দেশে ছড়িয়ে থাকা পলিটেকনিক বা কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৪৮২টি। শিক্ষার্থীদের সংখ্যা ২০২৩ সালের পরিসংখ্যান (ব্যানবেইস) অনুসারে ১ লাখ ৫ হাজারের মতো। গত পাঁচ-ছয় বছরে পাস করে বেরিয়ে যাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা এর চেয়ে বেশি হবে নিঃসন্দেহে। এত বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থীর দাবিকে গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। এ সমস্যা সমাধানের পথে অগ্রসর হওয়ায় হবে সরকারের জন্য সুবিবেচনার কাজ। এ জন্য সংশ্লিষ্টদের সক্রিয় হওয়াটা জরুরি ছিল। সাত মাস আগে শিক্ষার্থীরা তাদের দাবি নিয়ে রাজধানীর একাংশ অবরোধ করেন। জনজীবনে দুর্ভোগ দেখা দেয়। সরকার সে সময় তাদের দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাসও দেয়। কিন্তু সাত মাস অপেক্ষার পরও তাদের দাবির বিষয়ে কোনো অগ্রগতি হয়নি। ফলে নতুন করে গত বুধবার থেকে তারা আবার আন্দোলন শুরু করেন। 

আমাদের এই এক সমস্যা। কেউ কোনো দাবি জানালে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সেই দাবি সমাধানের জন্য দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করে না। সময়ক্ষেপণ করে। এতে পরিস্থিতি জটিল হয়ে যায়। এ ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। সাত মাস আগে উত্থাপিত দাবি সম্পর্কে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এক রকম ঘুমিয়েই ছিল। আমরা মনে করি, এখনই দাবিগুলো নিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা করাটা জরুরি। সেসব দাবি কতটা যৌক্তিক, বিবেচনা করে সমস্যার সমাধান করুন। সাময়িক আশ্বাস নয়, স্থায়ীভাবে সমস্যার সমাধান হওয়া প্রয়োজন। সেটা করা না গেলে, শিক্ষার্থীরা বারবার আন্দোলনে যাবেন আর জনদুর্ভোগ হতে থাকবে। আমরা আশা করব, শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবার সমস্যার সমাধানে ফলপ্রসূ উদ্যোগ গ্রহণ করবে। সাধারণ মানুষ তাহলে জনদুর্ভোগ থেকে রেহাই পাবেন।

১৫ বছর পর সচিব পর্যায়ের বৈঠক পাকিস্তানের ক্ষমা চাওয়ার বিষয়টি সময়ের দাবি

প্রকাশ: ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ১০:৪০ এএম
১৫ বছর পর সচিব পর্যায়ের বৈঠক
পাকিস্তানের ক্ষমা চাওয়ার বিষয়টি সময়ের দাবি

গত বৃহস্পতিবার ঢাকায় বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে দীর্ঘ ১৫ বছর পর পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠক (এফওসি) অনুষ্ঠিত হয়েছে। রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন পররাষ্ট্রসচিব জসিম উদ্দিন এবং পাকিস্তানের পক্ষে নেতৃত্ব দেন সে দেশের পররাষ্ট্রসচিব আমনা বালুচ। বৈঠকে বিরোধপূর্ণ ইস্যুগুলোর দ্রুত সমাধান করে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় নেওয়ার লক্ষ্যে সব বিষয়ে আলোচনা হয়। পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এই বৈঠকের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক পুনরুজ্জীবিত করার অঙ্গীকার প্রতিফলিত হয়েছে। সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে বৈঠকটি। 

কূটনৈতিক পর্যায়ে সাধারণত যেসব বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়, তার লক্ষ্য থাকে বিরোধপূর্ণ ইস্যুগুলোর দ্রুত সমাধান করে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় নেওয়া। এই বৈঠকটিও এর ব্যতিক্রম ছিল না।

ঐতিহাসিকভাবে পাকিস্তানের সঙ্গে এই ভূখণ্ডের মানুষের সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। ১৯৪৭ সালে ভারত ভাগ হলে পাকিস্তান নামক যে রাষ্ট্রের জন্ম হয়, এই ভূখণ্ড তখন ‘পূর্ব পাকিস্তান’ নামে পাকিস্তান রাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল। কিন্তু নানা বঞ্চনা ও বৈষম্যের কারণে ২৪ বছরের মাথায় ১৯৭১ সালে এই সম্পর্ক চরম তিক্ততায় পৌঁছায়। একদিকে পাকিস্তানের অখণ্ডতা রক্ষায় পাকিস্তানিরা বাংলাদেশের মানুষের ওপর নির্মম নিপীড়ন, অত্যাচার ও হত্যাযজ্ঞ চালায়; অন্যদিকে বাংলাদেশের মানুষ পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে মরণপণ যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে স্বাধীনতা অর্জন করে। এর সবই ইতিহাস। কিন্তু আধুনিক বিশ্বে দ্বন্দ্ব-সংঘাত বৈরিতাই শেষ কথা নয়। পারস্পরিক সহযোগিতার মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রগুলোকে চলতে হয়। বাংলাদেশও কূটনীতির এই ধারাতেই বিশ্বের সব রাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে চলেছে। তবে একাত্তরে পাকিস্তানিরা বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে যে আচরণ করেছে, তাতে দুই দেশের সম্পর্ক সহজ হয়ে ওঠেনি। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর নানা টানাপোড়েনের মধ্য দিয়ে কখনো তা সহজ হয়েছে, কখনো আবার থমকে গেছে; অস্বস্তির মাত্রাটাই ছিল বেশি। তবে এখন পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ সরকার পাকিস্তানের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
  
বৈঠক-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে এ কথাই বলেছেন বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের  দুই পররাষ্ট্রসচিব। বাংলাদেশ পাকিস্তানকে জানিয়েছে, অমীমাংসিত বিষয়গুলোর দ্রুত নিষ্পত্তি হলে দুই দেশের সম্পর্ক শক্তিশালী হবে। এ ছাড়া বাংলাদেশের ১৪টি জেলায় আটকে পড়া ৩ লাখ ২৪ হাজার পাকিস্তানি নাগরিককে পাকিস্তানে ফেরত নেওয়ার বিষয়টিও বৈঠকে উত্থাপন করে বাংলাদেশ। বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি জোর দেওয়া হয়েছে ব্যবসা-বাণিজ্যের ওপর। এ ছাড়া কৃষি, মৎস্য, শিক্ষা ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়ানোর বিষয়েও আলোচনা হয়। 

দুই দেশের লেখক, ক্রীড়াবিদ, শিক্ষাবিদসহ সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদলের যাতায়াত বাড়ানোর ওপরও গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। আঞ্চলিক সংস্থা সার্ককে উজ্জীবিত করতে এবং ইসলামি দেশগুলোর সংগঠন ওআইসিতে উভয় দেশের সক্রিয় ভূমিকা রাখার বিষয়েও একমত হয় দুই দেশ। এর সবই ছিল নিঃসন্দেহে ইতিবাচক। তবে বৈঠকে বাংলাদেশ দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উত্থাপন করেছে। প্রথমত, একাত্তরে বাংলাদেশে গণহত্যার জন্য পাকিস্তানকে ক্ষমা চাইতে বলেছে। দ্বিতীয়ত, পাকিস্তানকে বাংলাদেশের পাওনা পরিশোধ এবং ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা বলেছে। 

বাংলাদেশের এই দাবি আজকের নয়। স্বাধীনতার পর থেকেই বাংলাদেশ পাকিস্তানের কাছে এই দাবি জানিয়ে আসছে। কিন্তু ৫৪ বছরেও কোনো ইতিবাচক ফলাফল আসেনি। আমরা মনে করি, বাংলাদেশ দুই দেশের সম্পর্ক উন্নয়নে এখন যে পদক্ষেপ নিয়েছে, পাকিস্তানের তাতে সাড়া দেওয়া উচিত। শুধু সাড়া নয়, অবিলম্বে গণহত্যার জন্য বাংলাদেশের কাছে পাকিস্তানের ক্ষমা চাওয়া উচিত। 

ক্ষমা চাওয়ার বিষয়টি যে নতুন ও অভূতপূর্ব তাও নয়। ইতোপূর্বে নিজেদের অপরাধের জন্য জাপানিরা চীন ও কোরিয়ার কাছে ক্ষমা চেয়েছে। গণহত্যার বিষয়টি আসলে বাংলাদেশের মানুষের আবেগ-অনুভূতির গভীরে এমন ক্ষত সৃষ্টি করে রেখেছে যে, পাকিস্তান ক্ষমা চাইলে বাংলাদেশের মানুষ মানসিকভাবে অনেক স্বস্তিবোধ করবে। এতে দুই দেশের সম্পর্ক রাষ্ট্রীয় ও জনপরিসরে অনেক সহজ হয়ে আসবে। আমরা পাকিস্তানকে এ ব্যাপারে এগিয়ে আসার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।