নামাজ আদায়ে যেসব ভুল করা উচিত নয় । খবরের কাগজ
ঢাকা ২৬ বৈশাখ ১৪৩১, বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪

নামাজ আদায়ে যেসব ভুল করা উচিত নয়

প্রকাশ: ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:০০ এএম
নামাজ আদায়ে যেসব ভুল করা উচিত নয়
ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত নামাজরত মুসল্লির ছবি

প্রাপ্তবয়স্ক মুসলিম নারী-পুরুষের ওপর নির্ধারিত সময়ে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়া ফরজ। আল্লাহ বলেন, ‘নির্দিষ্ট সময়ে নামাজ কায়েম করা মুমিনদের জন্য অবশ্য কর্তব্য।’ (সুরা নিসা, আয়াত: ১০৩)। নামাজ আদায় করতে গিয়ে আমাদের কিছু ভুল হয়; এগুলো মূলত প্রচলিত ভুল। এখানে তেমন ৫টি ভুল নিয়ে আলোচনা করা হলো— 

তাড়াহুড়ো করা: নামাজে ধীরস্থিরতা অবলম্বন করা আবশ্যক। রাসুলুল্লাহ (সা.) নামাজ ধীরস্থিরভাবে আদায় করার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, “মানুষের মধ্যে সর্বাপেক্ষা বড় চোর ওই ব্যক্তি, যে তার নামাজ চুরি করে। সাহাবিরা জিজ্ঞেস করলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল, সে কিভাবে নামাজ চুরি করে? তিনি বলেন, ‘সে নামাজে রুকু ও সিজদা স্থিরতার সঙ্গে পূর্ণভাবে আদায় করে না।” (মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ২২৬৯৫)

জামাত চলাকালে সুন্নত নামাজ পড়া: অনেক মুসল্লি আছেন, জামাত চলাকালেও সুন্নত নামাজ পড়তে থাকেন। এমনটি করতে রাসুলুল্লাহ (সা.) নিষেধ করেছেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যখন জামাতের ইকামাত হয়ে যায়, তখন ফরজ নামাজ ছাড়া আর কোনো নামাজ নেই।’ (মুসলিম, হাদিস: ৭১০)

ইমামের সঙ্গে রুকু-সিজদা করা: ইমাম ‘আল্লাহু আকবার’ বলার পর মুক্তাদি ‘আল্লাহু আকবার’ বলবে। অনুরূপভাবে ‘রাব্বানা লাকাল হামদ’ বলবে। রুকু, সিজদা এবং সালাম ফিরাবে ইমামের পর। ইমামের সঙ্গে সঙ্গে কোনো কাজ করবে না। 

সালাম ফেরানোর পরপরই দাঁড়িয়ে যাওয়া: অনেক মুসল্লি ফরজ নামাজের সালাম ফেরানোর পরপরই সুন্নত আদায়ের জন্য দাঁড়িয়ে যান, এটি ঠিক নয়। সুন্নত হলো, ফরজ আদায়ের পর মাসনুন দোয়া, জিকির ও তাসবিহ-তাহলিল পড়া। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “তোমাদের কেউ যদি অজু ভেঙে না যাওয়া পর্যন্ত নামাজের জায়গায় বসে থাকে, তবে তার জন্য ফেরেশতারা এ বলে দোয়া করে যে, ‘হে আল্লাহ, তুমি তাকে ক্ষমা করে দাও, হে আল্লাহ, তুমি তাকে রহমত করো।” (বুখারি, হাদিস: ৬২৬) 

একাকী ফরজ নামাজ পড়া: অনেকে ফরজ নামাজ একাকী আদায় করে থাকেন, এটা ঠিক নয়। একাকী নামাজের তুলনায় জামাতে নামাজ পড়া উত্তম। আবু সাইদ খুদরি (রা.) বলেন, “একবার রাসুলুল্লাহ (সা.) নামাজ শেষ করার পর এক লোক মসজিদে প্রবেশ করল। রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘তোমাদের মধ্যে কে আছে যে, এ ব্যক্তির সঙ্গে দাঁড়িয়ে (জামাতে নামাজ আদায় করে) সদকা প্রদান করার সাওয়াব অর্জন করবে? তখন এক লোক আগত ব্যক্তির সঙ্গে পুনরায় (জামাতে) নামাজ আদায় করলেন।” (বুখারি)

লেখক: আলেম ও সাংবাদিক

সাহাবিদের আত্মত্যাগের অনন্য নজির তাবুক যুদ্ধ

প্রকাশ: ০৯ মে ২০২৪, ০৯:১৫ এএম
সাহাবিদের আত্মত্যাগের অনন্য নজির তাবুক যুদ্ধ
সৌদি আরবের মদিনা থেকে ৬৯০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত তাবুক শহর। ইন্টারনেট

আল্লাহ বলেন, ‘হে ঈমানদাররা, তোমাদের হয়েছে কী যে, যখন তোমাদের আল্লাহর পথে বের হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়, তখন তোমরা আরও জোরে মাটি কামড়ে ধরো। তোমরা কি আখেরাতের স্থলে দুনিয়ার জীবনকেই বেশি পছন্দ করো? আখেরাতের তুলনায় পার্থিব জীবনের ভোগ সামগ্রী তো অতি সামান্য। তোমরা যদি যুদ্ধাভিযানে বের না হও, তাহলে তোমাদের ভয়াবহ শাস্তি দেওয়া হবে, আর তোমাদের স্থলে অন্য সম্প্রদায় আনা হবে (অথচ) তোমরা তার কোনোই ক্ষতি করতে পারবে না। আল্লাহ সব বিষয়ে সর্বশক্তিমান।’ (সুরা তওবা, আয়াত: ৩৮-৩৯)

রাসুলুল্লাহ (সা.) তখন মদিনায়। এর মধ্যে আত্মরক্ষা ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় কয়েকটি যুদ্ধ করেছেন তিনি। সবগুলো যুদ্ধ করেছেন মদিনার সীমানায় কিংবা আশপাশে থেকে। এ যুদ্ধে যাবেন মদিনার বাইরে। যেতে হচ্ছে। সময়টি ৬৩০ খ্রিষ্টাব্দের নবম হিজরি। যুদ্ধটি তাবুকের যুদ্ধ।

তাবুক মদিনা ও দামেস্কের (সিরিয়া) মধ্যবর্তী একটি জায়গার নাম। মদিনা থেকে এটি ৬৯০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। ইসলামের বিরুদ্ধে আরবের কাফের ও মুনাফিকদের শেষ চেষ্টা ছিল এই যুদ্ধ। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর দূত হারেস বিন উমায়ের (রা.)-কে হত্যার মধ্য দিয়ে রোমানদের বিরুদ্ধে তাবুক যুদ্ধের সূচনা হয়েছিল।

রাসুলুল্লাহ (সা.) একবার দূতের মাধ্যমে জানতে পারলেন, মুতা যুদ্ধের প্রতিশোধ নিতে চূড়ান্ত ফায়সালাকারী একটি যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে পরাশক্তি রোম। শাম ও আরব সীমান্তে তারা বিশাল বাহিনী মোতায়েন করেছে। চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয় মদিনায়। নবিজি (সা.) সাহাবিদের বললেন, হিরাক্লিয়াসের আক্রমণের আগে আমরা আক্রমণ করব। মদিনার সব মুসলমানকে তৈরি হতে বললেন। এর আগে এমন রাজকীয় বাহিনীর মুখোমুখি তারা কোনো দিন হননি। মদিনার বাইরে গিয়ে যুদ্ধও করেননি।

এদিকে মদিনায় তখন খেজুর পাকার মৌসুম চলছে। খেজুরের ভারে নুইয়ে আছে কাঁদিগুলো। মন ভালো হয়ে যায় এমন একটি দৃশ্য লেগে আছে বাগানগুলোয়। সময়মতো ঘরে খেজুর তুলতে পারলে এবার জীবন হবে অন্যরকম। তবে সময়মতো খেজুর ঘরে না তুলতে পারলে মুশকিলে পড়তে হবে। মদিনায় খাদ্যাভাবও দেখা দিয়েছে এর মধ্যে। তীব্র গরমে জনজীবনে নাভিশ্বাস উঠেছে।

এদিকে তাবুক প্রান্তরে পৌঁছাতে হলে পাড়ি দিতে হবে দুর্গম মরুভূমি। যুদ্ধের রসদও তেমন নেই। এসবের মধ্যে শহর ছেড়ে এমন রাজকীয় বিশাল বাহিনীর মোকাবিলা করতে যাওয়া; বিরাট কষ্টসাধ্য ও ঝুঁকিপূর্ণ ব্যাপারই বটে। কিন্তু রাসুলপ্রেমী সাহাবিরা সবকিছু পেছনে ফেলে ত্যাগের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করে নবিজির হাতে যুদ্ধের বাইয়াত নেন। অনেকে যুদ্ধে যেতে চাইলেন না। আল্লাহ তাদের মুনাফিকির পরিচয় সুস্পষ্ট করে দেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) ৩০ হাজার যোদ্ধা সাহাবির কাফেলা নিয়ে চললেন তাবুক প্রান্তের দিকে। হিরাক্লিয়াস মুসলমানদের এমন দুঃসাহসিক অভিযানের সংবাদ পেয়ে ময়দান ছেড়ে পালিয়ে যায়। বিনা যুদ্ধেই আল্লাহ মুসলমানদের বিজয় দেন।

লেখক: আলেম ও সাংবাদিক

জিনের সঙ্গে কি মানুষের বিয়ে হয়?

প্রকাশ: ০৮ মে ২০২৪, ০৭:০০ পিএম
জিনের সঙ্গে কি মানুষের বিয়ে হয়?
প্রতীকী ছবি। ইন্টারনেট

আল্লাহতায়ালা প্রতিটি বস্তু জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করেছেন। জিন জাতির মধ্যেও রয়েছে নর-নারীর জোড়া। মানুষের মতো তাদেরও রয়েছে বিয়েশাদি ও বাচ্চা প্রজননের নির্ধারিত প্রক্রিয়া। পবিত্র কোরআনে জান্নাতি রমণীদের কুমারিত্বের বর্ণনায় এসেছে যে, ‘তাদের কোনো মানুষ বা জিন স্পর্শ করেনি।’ (সুরা আর রহমান, আয়াত: ৫৬)

অনেকেই মনে করে জিনের সঙ্গে মানুষের বিয়ে সম্ভব। আগে কখনো কখনো তাদের মাঝে বিয়ে হয়েছে। কোরআনের একটি আয়াত, সাহাবি এবং তাবিয়িদের থেকে কিছু বর্ণনা থেকে তারা এমনটা মনে করে থাকেন। আল্লাহ শয়তানকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘আর তুই তাদের (মানুষের) ধন-সম্পদ ও সন্তানসন্ততির মধ্যে অংশীদার হ এবং তাদেরকে (মিথ্যা) প্রতিশ্রুতি দিতে থাক। তাদের প্রতি শয়তানের অঙ্গীকার ধোঁকা ছাড়া কিছুই নয়।’ (সুরা ইসরা, আয়াত: ৬৪)

সুদ ও হারাম পন্থায় সম্পদ উপার্জন ও ব্যয় করার মাধ্যমে শয়তান মানুষের সম্পদে অংশীদার হয়। আর জিনা অথবা স্ত্রী সহবাসের সময় যারা ‘বিসমিল্লাহ’ বলে না, শয়তান তাদের কর্মে অংশীদার হয়। ইমাম আল-হাকিমুত তিরমিজি মুজাহিদ (রহ.) থেকে বর্ণনা করেন, ‘স্ত্রী সহবাস করার সময় যে ব্যক্তি ‘বিসমিল্লাহ’ বলে না, শয়তান তার সাথে স্ত্রী-সহবাসে লিপ্ত হয়।’ (নাওয়াদিরুল উসুল, আল-হাকিমুত তিরমিজি, খণ্ড: ১, পৃষ্ঠা: ৩৮৪)

মুজাহিদ (রহ.) বলেন, ‘ইয়েমেনের সাবা অঞ্চলের রানি বিলকিসের মা ছিল একজন দীর্ঘ কেশিনী নারী জিন।’ (মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা, হাদিস: ৩১৮৬০)

শরিয়তের বিধান সাব্যস্ত করার ক্ষেত্রে এ ধরনের বর্ণনা গ্রহণযোগ্য নয়। যদিও ইতিহাসের পাতায় বর্ণনাগুলো উঠে এসেছে।

অধিকাংশ ফকিহ জিনের সঙ্গে মানুষের বিয়েশাদি নিষেধ করেছেন; চাই সে পুরুষ হোক বা নারী। মানুষ ও জিন আলাদা জাতি। মৌলিক উপাদান ভিন্ন হওয়া এটির বড় প্রমাণ। আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহর অন্যতম একটি নিদর্শন হলো, তোমাদের থেকেই তিনি তোমাদের সঙ্গিনী সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে প্রশান্তি লাভ করতে পারো। আর সুদৃঢ় করেছেন তোমাদের পরস্পরের মাঝে দয়া ও ভালোবাসা। নিশ্চয় এর মাঝে রয়েছে চিন্তাশীলদের জন্য বহু নিদর্শন।’ (সুরা রুম, আয়াত: ২১)

অপর এক আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহ তোমাদের থেকেই তোমাদের জোড়া তৈরি করেছেন।’ (সুরা নাহল, আয়াত: ৭২)

এই দুই আয়াতের ব্যাখ্যায় মুফাসসিরগণ বলেছেন, ‘আল্লাহ পুরুষের সঙ্গী হিসেবে নারী জাতিকে সৃষ্টি করেছেন সমগোত্রীয় এবং একই উপাদান থেকে।’

আনাস ইবনে মালেক (রা.)-এর কাছে ইয়েমেনের এক সম্প্রদায় জিজ্ঞাসা করে, “একটি পুরুষ জিন আমাদের গোত্রের এক নারীর ব্যাপারে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছে, ‘তারা ভেবেছিল এ ধরনের বিয়ে হালাল হবে।’ আমরা কি তা কবুল করব।’ উত্তরে তিনি বলেন, ‘আমি তা ভীষণ অপছন্দ করি। এর দ্বারা বরং ফিতনাই বৃদ্ধি পাবে। কারণ যখন কোনো গর্ভবতী নারীকে জিজ্ঞাসা করা হবে এটা কার সন্তান? সে বলবে জিনের।’ (রুহুল মায়ানি, আল্লামা আলুসি, খণ্ড: ১০, পৃষ্ঠা: ১৮৪)

আনাস ইবনে মালেক (রা.)-এর মতে, ‘কেউ কেউ জিনের সঙ্গে বিয়েকে হারাম না বলে অপছন্দনীয় বলেছেন।’ (মাজমুউল ফাতাওয়া, ইবনে তাইমিয়া, খণ্ড: ১৯, পৃষ্ঠা: ৩৯)। জিন জাতি আল্লাহর মাখলুকের মধ্য থেকে একটি মাখলুক। মহান আল্লাহ তাদের রব।

লেখক: আলেম, গবেষক ও সাংবাদিক

মূর্খদের এড়িয়ে চলতে হয় যে কারণে

প্রকাশ: ০৮ মে ২০২৪, ১০:১২ এএম
মূর্খদের এড়িয়ে চলতে হয় যে কারণে
প্রতীকী ছবি। ইন্টারনেট

পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘আর ভালো ও মন্দ সমান হতে পারে না। মন্দকে প্রতিহত করো তা দিয়ে, যা উৎকৃষ্টতর। ফলে তোমার ও যার মধ্যে শত্রুতা রয়েছে সে যেন হয়ে যাবে তোমার অন্তরঙ্গ বন্ধু।’ (সুরা হামিম সিজদা, আয়াত: ৩৪-৩৫)

মানুষ সামাজিক জীব। একা চলতে পারে না। বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে মিশতে হয়। ওঠাবসা করতে হয়। বহুজনের সঙ্গে কথা বলতে হয়। মুমিন মানুষের সঙ্গে কথা বলার সময় ভদ্রতা বজায় রাখে। সুন্দর আচরণ করে। কিন্তু কখনো মুমিন বান্দার এমন লোকের সঙ্গে সাক্ষাৎ ঘটে যায়, যাদের মধ্যে ভদ্রতার লেশমাত্রও থাকে না। এ ধরনের লোকদের মুখোমুখি হলে কী করবে তারা, এ নিয়ে ভাবনায় পড়ে যায় অনেক সময়। ইসলামের নির্দেশনা হলো, মূর্খদের এড়িয়ে যেতে হবে। তারা তর্ক করলে তাদের থেকে দূরে থাকতে হবে। এটাই সুন্নাহ।

মূর্খ হচ্ছে, যারা তর্ক করার সময় বা কথা বলার সময় নিজের বিবেক-বুদ্ধি কাজে লাগাতে চায় না। ফলে সদুপায়ে তাদের সঙ্গে কোনো বিষয়ে সমাধানে পৌঁছার সুযোগ থাকে না। তাই নিজের স্বাভাবিক আচরণ ও ভদ্রতা বজায় রাখতে তাদের এড়িয়ে যাওয়ার বিকল্প নেই। আল্লাহ বলেন, ‘(হে নবি,) আপনি ক্ষমাপরায়ণতা অবলম্বন করুন, (মানুষকে) সৎকাজের আদেশ দিন এবং অজ্ঞদের এড়িয়ে চলুন।’ (সুরা আরাফ, আয়াত: ১৯৯)

এখানে তাদের থেকে সম্পর্ক ছিন্ন করার কথা বলা হয়নি; বরং তাদের সঙ্গে অযথা কথা না বাড়িয়ে যথাসম্ভব তাদের এড়িয়ে চলার ব্যাপারটি বলা হয়েছে। স্বাভাবিক আচরণবিধির গণ্ডি পেরিয়ে যেসব লোক এ ধরনের আচরণ করে তাদের সঙ্গে কেমন আচরণ করবে, হাদিসে তার বিবরণ এসেছে। আবু হুরাইরা (রা.) বলেন, “এক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রাসুল, আমার আত্মীয়স্বজন আছে। আমি তাদের সঙ্গে আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করি, কিন্তু তারা আমার সঙ্গে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করে রাখে। আমি তাদের উপকার করি, কিন্তু তারা আমার অপকার করে। আমি তাদের সঙ্গে সহনশীল আচরণ করি, কিন্তু তারা আমার সঙ্গে মূর্খতাসুলভ আচরণ করে।’ তিনি বললেন, ‘তুমি যা বললে, যদি প্রকৃত অবস্থা এমনই হয়, তা হলে তুমি যেন তাদের ওপর গরম ছাই নিক্ষেপ করছ। সর্বদা তোমার সঙ্গে আল্লাহর পক্ষ থেকে তাদের বিপক্ষে একজন সাহায্যকারী (ফেরেশতা) থাকবে, যত দিন তুমি এই অবস্থায় বহাল থাকবে।” (মুসলিম, হাদিস: ২৫৫৮)

মূর্খদের এড়িয়ে চলার উপায় হচ্ছে, তাদের সঙ্গ ত্যাগ করা; তাদের সঙ্গে বিবাদে লিপ্ত না হওয়া। তাদের কষ্ট থেকে বাঁচার জন্য এর চেয়ে কার্যকর ওষুধ নেই; তাদের শত্রুতা প্রতিরোধের এর চেয়ে উত্তম উপায় নেই। তাদের এড়িয়ে চলার মধ্যেই মুমিনদের প্রশান্তি ও মর্যাদা আছে।


লেখক: আলেম ও গবেষক

মানুষের ওপর কি জিনদের বদনজর পড়ে?

প্রকাশ: ০৭ মে ২০২৪, ০৬:৪৫ পিএম
মানুষের ওপর কি জিনদের বদনজর পড়ে?
ইংরেজিতে 'জিন' লেখা ছবি। ইন্টারনেট

মানুষ সৃষ্টির আগে আল্লাহতায়ালা জিনদের সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহ বলেন, ‘আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি কালো কাদামাটি থেকে, যা শুকিয়ে ঠনঠনে হয়েছিল। আর তাদের আগে জিনকে সৃষ্টি করেছি লেলিহান অগ্নিশিখা থেকে।’ (সুরা হিজর, আয়াত: ২৬-২৭)। এই আয়াত থেকে প্রতীয়মান হয়, মানবজাতির আগেই জিনদের সৃষ্টি করা হয়েছে। তবে যথেষ্ট মতভেদ রয়েছে, ঠিক কতদিন আগে তাদের সৃষ্টি করা হয়েছে।

মানুষের ওপর জিনের বদনজর পড়ে কি না, এ ব্যাপারে অনেক লোকাচার রয়েছে। বদনজর দুইভাবে হয়ে থাকে। এক. মানুষের থেকে। দুই. জিনের থেকে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘বদনজরের বিষয়টি সত্য।’ (মুসলিম, হাদিস: ২১৮৭)

রাসুলুল্লাহ (সা.) আরও বলেছেন, ‘বদনজরের ব্যাপারটি সত্য। যদি কোনো কিছু ভাগ্যকে পরিবর্তন করতে পারত, তবে বদনজরই পারত।’ (মুসলিম, হাদিস: ২১৮৮)

মানুষের মধ্যে অনেকে আছেন, বদনজরের বিষয়টি অস্বীকার করতে চান। তারা এটি নিয়ে বেশ কড়া কথা বলেন। কিন্তু হাদিস থেকে বোঝা যায়, নজর সত্য। ফলে প্রত্যেক মুসলিম হৃদয় বিনাবাক্যে মেনে নেয় ব্যাপারটি। উরওয়া ইবনে জুবাইর (রা.) বলেন, ‘একদিন নবিজি (সা.) উম্মে সালামার ঘরে চেহারা ফ্যাকাশে হয়ে গেছে এমন একজন দাসীকে দেখত পান। তখন তিনি উম্মে সালামাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, এই দাসীকে রুকইয়া অর্থাৎ ঝাড়ফুঁক করাও, তার বদনজর লেগেছে।’ (বুখারি, হাদিস: ৫৭৩৯)

ইবনে হাজার (রহ.) বলেন, ‘বদনজর জিন ও মানুষ উভয়ের থেকেই লাগতে পারে।’ (মুসনানে আহমাদ, হাদিস: ৯৬৬৮)

ইমাম আহমাদ (রহ.) আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘বদনজর সত্য, যা শয়তান ও হিংসুক বনি আদমের কারণে হয়।’ (ফাতহুল বারি, খণ্ড: ১০, পৃষ্ঠা: ২০২)

বদনজর থেকে বাঁচতে সব সময় আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতে হবে। তাঁর কাছে আশ্রয় চাইতে হবে। আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনার মাধ্যমে বদনজর থেকে বাঁচা যেতে পারে। যদি কেউ বদনজরে আক্রান্ত হয়ে যায়, তা হলে তাকে কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে রুকইয়া তথা ঝাড়ফুঁক করা যেতে পারে। রুকইয়ার মাধ্যমে বদনজর থেকে পরিত্রাণের কথা হাদিসে পাওয়া যায়।

লেখক: আলেম, গবেষক ও সাংবাদিক

যে কারণে আল্লাহ ধীরস্থিরতা পছন্দ করেন

প্রকাশ: ০৭ মে ২০২৪, ০৯:০০ এএম
যে কারণে আল্লাহ ধীরস্থিরতা পছন্দ করেন
আরবিতে 'আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা হুওয়াল হাইয়্যুল কাইয়ুম' লেখা ছবি। ইন্টারনেট

মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। মানুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে আল্লাহর ইবাদতের জন্য। মানুষকে দিয়েছেন বিশেষ কিছু বৈশিষ্ট্য ও অভ্যাস। কিছু কাজ করার আদেশ দিয়েছেন, করেছেন কিছু কাজ থেকে নিষেধও। উদ্দেশ্য মানুষকে পরীক্ষা করা, যাচাই করা। মানুষের সেই সহজাত অভ্যাসগুলোর একটি তাড়াহুড়া করা। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘মানুষ তো বড় ত্বরাপ্রবণ।’ (সুরা বনি ইসরাইল, আয়াত: ১১)

আরেক আয়াতে এরশাদ হয়েছে, ‘সৃষ্টিগতভাবে মানুষ ত্বরাপ্রবণ।’ (সুরা আম্বিয়া, আয়াত: ৩৭)

তাড়াহুড়া করা নিষেধ

আল্লাহতায়ালা মানুষকে কাজকর্মে তাড়াহুড়া করতে নিষেধ করেছেন। সবকিছু ধীরস্থিরতার সঙ্গে করতে বলেছেন। আল্লাহ তাড়াহুড়া পছন্দ করেন না। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘আমি সত্বরই তোমাদের আমার নিদর্শনাবলি দেখাব। অতএব, আমাকে শীঘ্র করতে বলো না।’ (সুরা আম্বিয়া, আয়াত: ৩৭)

আরেক আয়াতে এসেছে, ‘আল্লাহর নির্দেশ এসে গেছে। অতএব, এর জন্য তাড়াহুড়া করো না।’ (সুরা নাহল, আয়াত: ১)

এ ছাড়া এ বিষয়ে বহু আয়াত রয়েছে। তাড়াহুড়া না করে ঠাণ্ডা মাথায় ধীরস্থিরভাবে কাজ করার অনুকূলে অনেক হাদিস এসেছে। তাইতো এটি হয়ে উঠেছে মুসলিমের অন্যতম বৈশিষ্ট্য, বিশেষ ক্ষেত্র ছাড়া তার বিপরীত হয় না। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘সুন্দর আচরণ, ধৈর্য ও মধ্যপন্থা অবলম্বন হলো নবুয়তের ৪০ ভাগের ১ ভাগ।’ (তিরমিজি, হাদিস: ২০১০)

আল্লাহ ধীরস্থিরতা পছন্দ করেন

এক সাহাবির মধ্যে ধীরস্থিরতার গুণ ছিল। ব্যাপারটি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর ভালো লাগত। আল্লাহতায়ালাও পছন্দ করেন সে গুণ। সাহাবিকে সে কথা জানালেনও এক দিন। আবু সাইদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) আবদুল কায়েস গোত্রের আশাজ আবদুল কায়েসকে বললেন, ‘তোমার মাঝে দুটি বিশেষ গুণ আছে, যা আল্লাহ পছন্দ করেন, সহিষ্ণুতা ও ধীরস্থিরতা।’ (মুসলিম, হাদিস: ১৭)

দোয়ায় তাড়াহুড়া করা যাবে না

আল্লাহ মানুষকে সব সময় তাঁর কাছে দোয়া করতে বলেছেন। তিনি দোয়াকারীর দোয়া কবুল করেন। তবে তাড়াহুড়া করে দোয়া করতে নিষেধ করেছেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের প্রত্যেকের দোয়া কবুল হয়ে থাকে, যদি সে তাড়াহুড়া না করে। আর এ কথা না বলে, দোয়া তো করলাম কিন্তু আমার দোয়া কবুল হলো না।’ (বুখারি, হাদিস: ৫৯৮১)

ধীরস্থিতার সঙ্গে নামাজে আসতে হবে

রাসুলুল্লাহ (সা.) তাড়াহুড়া করে জামাতের নামাজ ধরতেও নিষেধ করেছেন। আবু কাতাদা (রা.) বলেন, ‘‘একবার আমরা রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে নামাজ আদায় করছিলাম। হঠাৎ তিনি লোকদের (ত্বরিত আগমনের) আওয়াজ শুনতে পেলেন। নামাজ শেষে তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, ‘তোমাদের কী হয়েছিল?’ তারা বললেন, ‘আমরা নামাজের জন্য তাড়াহুড়া করে আসছিলাম।’ রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘এমন করবে না। যখন নামাজে আসবে, ধীরস্থিরভাবে আসবে। (ইমামের সঙ্গে) যতটুকু পাও আদায় করবে, আর যতটুকু ছুটে যায় তা (ইমামের সালাম ফেরানোর পর) আদায় করে নেবে।’’ (বুখারি, হাদিস: ৬০৯)

লেখক: আলেম ও সাংবাদিক