
রাজধানীতে ব্যাটারিচালিত রিকশা, ভ্যান এবং ইজিবাইক এখন অলিগলি ছাপিয়ে মূল সড়কে দাপটের সঙ্গে চলছে। সম্প্রতি সড়কে রিকশা, ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে সাইনবোর্ডও টাঙানো হয়েছে। তার পরও নিয়ম মানছেন না চালকরা। ঢাকায় ট্রাফিক পুলিশের তৎপরতা বাড়লেও যানজট পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। এর প্রধান কারণ ভিআইপিসহ প্রধান সড়কে রিকশার বেপরোয়া চলাচল।
খবরের কাগজের প্রাপ্ত তথ্যমতে, রাজধানীজুড়ে ১০ লাখ রিকশা চলাচল করছে। এর মধ্যে শুধু কামরাঙ্গীরচরে ২০ হাজার রিকশা চলাচল করে। এই রিকশাচালকরা কিছুদিন আগে আন্দোলনে নেমেছিলেন। ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধে হাইকোর্টের রায় স্থগিত করার দাবিতে কয়েক দিন রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় আন্দোলন করেছিলেন ব্যাটারিচালিত রিকশার চালকরা। ইউনিয়ন নেতারা বলছেন, সড়কে রিকশার শৃঙ্খলা ফেরাতে সরকারকে সব ধরনের সহযোগিতা করতে তারা প্রস্তুত। ৫ আগস্টের পর দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় সড়কে রিকশার চলাচল বেড়ে যায়, যা এখন নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে যাচ্ছে।
খবরের কাগজে প্রকাশিত প্রতিদিনের তথ্যমতে, রাজধানীর প্রধান সড়কগুলোয় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে রিকশা (ব্যাটারি/প্যাডেলচালিত)। দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে প্রধান সড়কে রিকশাচালকরা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। কয়েক মাস ধরে চেষ্টা করেও পুলিশ তাদের নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেনি। প্রধান সড়কগুলোয় রিকশা চলাচল নিষিদ্ধ লেখা বড় সাইনবোর্ড টাঙিয়ে সতর্ক করার চেষ্টা করলেও মানছেন না চালকরা। ট্রাফিক আইন অমান্য করা একরকম অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। রাস্তা পার হওয়ার জন্য জেব্রা ক্রসিং ও ফুট ওভারব্রিজ কেউ ব্যবহার করছে না। হুটহাট দৌড় দিয়ে রাস্তা পার হতে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন অনেকে। এ ছাড়া সড়কে রিকশার বিশৃঙ্খলা সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে গেছে। আইন করে এদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা না নিলে নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হবে। ট্রাফিক কনস্টেবলদের অভিযোগ, তারা বাধা দিলে বা কিছু বলতে গেলে অনেক চালকই বাজে আচরণ করেন। কখনো কখনো হামলার হুমকিও দেন।
গত বছর নভেম্বরে চেম্বার আদালতের রায়ের আলোকে ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী বলেছিলেন, এখন থেকে প্রধান সড়কে কোনো অটোরিকশা চলবে না। ভেতরের সড়কগুলোতে আগের মতো এসব যান চলবে। এ ছাড়া নতুন কোনো অটোরিকশা যাতে রাজধানীর রাস্তায় না নামে এ ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকার তাগিদ দেন কমিশনার। নভেম্বর মাসেই ডিএমপি সদর দপ্তরের ডিএমপি কমিশনারের সঙ্গে ব্যাটারিচালিত রিকশাচালক, মালিক, গ্যারেজ মালিক ও রিকশা-ভ্যান-ইজিবাইক শ্রমিক ইউনিয়নের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক হয়। বৈঠকে ট্রাফিক আইন মেনে চলা ও সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে সবার সহযোগিতা কামনা করেন কমিশনার।
ভিআইপিসহ প্রধান সড়কগুলোয় রিকশা চলাচল বন্ধ করতে সরকারকে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। লাইসেন্স, রুট পারমিট ও চালকদের প্রশিক্ষণ দিতে নীতিমালা দ্রুত করতে হবে। শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে হলে প্রতিটি থানায় চালক ও মালিকদের নিয়ে প্রশিক্ষণের আয়োজন করতে হবে। যাতে তারা প্রধান সড়ক ব্যবহার করতে নিরুৎসাহিত হয়। চালকরা সচেতন হলে এবং নিয়ম মেনে চলাচল করলে সড়কগুলোয় দুর্ঘটনার সংখ্যাও কমে আসবে।