
রমজান একটি বরকতপূর্ণ ও তাৎপর্যপূর্ণ মাস। এ মাসে আল্লাহতায়ালা মুমিনের প্রতিটি আমলের প্রতিদান বহু গুণে বাড়িয়ে দেন। এ মাসে একটি নফল আদায় করলে, অন্য সময়ের ফরজ আদায়ের সওয়াব হয়। আর ফরজ আদায় করলে অন্য সময়ের সত্তরটি ফরজ আদায়ের সমান হয়। (শুআবুল ঈমান, ৩৩৩৬)। তাই অন্যান্য মাসের তুলনায় এ মাসে বেশি বেশি নেক আমল করা প্রতিটি মুমিনের কর্তব্য। এ মাসে রাসুলুল্লাহ (সা.) থেকে বিশেষ কিছু আমলের কথা হাদিসে বর্ণিত হয়েছে।
বেশি বেশি কোরআন তেলাওয়াত করা : রমজান মাসের একটি বিশেষ আমল কোরআন তেলাওয়াত করা। রাসুলুল্লাহ (সা.) অন্যান্য সময়ের তুলনায় এ মাসে অধিক পরিমাণ কোরআন তেলাওয়াত করতেন। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত; তিনি বলেন, ‘রমজান ছাড়া অন্য কোনো রাতে আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে পূর্ণ কোরআন তেলাওয়াত করতে কিংবা ভোর অবধি নামাজে কাটিয়ে দিতে অথবা পূর্ণ মাস রোজা পালন করে কাটিয়ে দিতে দেখিনি।’ (মুসলিম, ১৭৭৩)।
দান-সদকা : দান-সদকা একটি বিশেষ আমল। রমজানে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর দান-খয়রাত বহুগুণ বেড়ে যেত। ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দানশীল ছিলেন। আর রমজান মাসে তা আরও বেড়ে যেত। এ সময় জিবরাইল (আ.) তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন। রমজানের প্রতি রাতে জিবরাইল (আ.) রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে কোরআন পাঠ করতেন। এ সময় রাসুলুল্লাহ (সা.) প্রবহমান বাতাসের চেয়েও বেশি দান করতেন।’ (মুসলিম, ২৩০৮)।
রাসুল যে চারটি কাজ বেশি বেশি করতেন : রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা রমজান মাসে চারটি কাজ বেশি বেশি করো। তন্মধ্যে দুটি কাজ এমন, যা করলে তোমাদের প্রতিপালক সন্তুষ্ট হন। আর অপর দুটি কাজ এমন, যা না করে উপায় নেই। যে দুটি কাজে তোমাদের প্রতিপালক খুশি হন, তা হলো, কালিমা তাইয়্যেবা পাঠ করা ও ইসতেগফার করা। আর যে দুটি কাজ না করে উপায় নেই, তা হলো, তোমারা আল্লাহর কাছে জান্নাত প্রার্থনা করো এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তি কামনা করো।’ (ইবনে খুজাইমা, ১৮৮৭)।
রাত জেগে ইবাদত করা: রাসুলুল্লাহ (সা.)বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে প্রতিদান প্রাপ্তির আশায় রমজানের রোজা রাখবে এবং ইবাদতে রাত জাগরণ করবে, সে ভূমিষ্ঠ শিশুর ন্যায় যাবতীয় গোনাহ থেকে নিষ্পাপ হয়ে যাবে।’ (ইবনে খুজাইমা, ২২০১)।
বেশি বেশি জিকির-আজকার : রমজানের প্রতিটি মুহূর্ত অনেক মূল্যবান। তাই একজন মুমিন রমজানের পুরো সময় কাজে লাগাতে পারে। বিশেষ করে জিকির-আজকারে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আমার কাছে সমস্ত পৃথিবী অপেক্ষাও প্রিয়তর হচ্ছে সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ ও আল্লাহু আকবার বলা।’ (মুসলিম, ২২৯৫)।
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে আরও বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি দৈনিক একশত বার বলবে, সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহী অর্থাৎ আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা করি তাঁর প্রশংসার সঙ্গে, তার সমস্ত গুনাহ মাফ করা হবে, যদিও তার গুনাহ সমুদ্রের ফেনার ন্যায় অধিক হয়।’ (মুসলিম, ২২৯৬)।
লাইলাতুল কদর তালাশ করা : রমজান মাসে এমন একটি রাত রয়েছে, যা হাজার মাসের চেয়ে উত্তম। আল কোরআনের ঘোষণা, ‘কদরের রাত হাজার মাসের চেয়েও উত্তম।’ (সুরা কদর, ৪)। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ঈমান ও সওয়াব পাওয়ার আশায় ইবাদত করবে, তার আগের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।’ (বুখারি, ৩৫)।
লেখক : আলেম, গবেষক ও সাংবাদিক