ঢাকা ৪ বৈশাখ ১৪৩২, বৃহস্পতিবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৫
English
বৃহস্পতিবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৫, ৪ বৈশাখ ১৪৩২

রাসুলুল্লাহ (সা.) যেভাবে রমজান কাটাতেন—১৪ যেসব আমল বেশি বেশি করতেন

প্রকাশ: ১৫ মার্চ ২০২৫, ১১:২২ এএম
যেসব আমল বেশি বেশি করতেন
প্রতীকী ছবি

রমজান একটি বরকতপূর্ণ ও তাৎপর্যপূর্ণ মাস। এ মাসে আল্লাহতায়ালা মুমিনের প্রতিটি আমলের প্রতিদান বহু গুণে বাড়িয়ে দেন। এ মাসে একটি নফল আদায় করলে, অন্য সময়ের ফরজ আদায়ের সওয়াব হয়। আর ফরজ আদায় করলে অন্য সময়ের সত্তরটি ফরজ আদায়ের সমান হয়। (শুআবুল ঈমান, ৩৩৩৬)। তাই অন্যান্য মাসের তুলনায় এ মাসে বেশি বেশি নেক আমল করা প্রতিটি মুমিনের কর্তব্য। এ মাসে রাসুলুল্লাহ (সা.) থেকে বিশেষ কিছু আমলের কথা হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। 

 

বেশি বেশি কোরআন তেলাওয়াত করা : রমজান মাসের একটি বিশেষ আমল কোরআন তেলাওয়াত করা। রাসুলুল্লাহ (সা.) অন্যান্য সময়ের তুলনায় এ মাসে অধিক পরিমাণ কোরআন তেলাওয়াত করতেন। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত; তিনি বলেন, ‘রমজান ছাড়া অন্য কোনো রাতে আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে পূর্ণ কোরআন তেলাওয়াত করতে কিংবা ভোর অবধি নামাজে কাটিয়ে দিতে অথবা পূর্ণ মাস রোজা পালন করে কাটিয়ে দিতে দেখিনি।’ (মুসলিম, ১৭৭৩)।

 

দান-সদকা : দান-সদকা একটি বিশেষ আমল। রমজানে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর দান-খয়রাত বহুগুণ বেড়ে যেত। ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‌ রাসুলুল্লাহ (সা.) মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দানশীল ছিলেন। আর রমজান মাসে তা আরও বেড়ে যেত। এ সময় জিবরাইল (আ.) তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন। রমজানের প্রতি রাতে জিবরাইল (আ.) রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে কোরআন পাঠ করতেন। এ সময় রাসুলুল্লাহ (সা.) প্রবহমান বাতাসের চেয়েও বেশি দান করতেন।’ (মুসলিম, ২৩০৮)।

 

রাসুল যে চারটি কাজ বেশি বেশি করতেন : রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা রমজান মাসে চারটি কাজ বেশি বেশি করো। তন্মধ্যে দুটি কাজ এমন, যা করলে তোমাদের প্রতিপালক সন্তুষ্ট হন। আর অপর দুটি কাজ এমন, যা না করে উপায় নেই। যে দুটি কাজে তোমাদের প্রতিপালক খুশি হন, তা হলো, কালিমা তাইয়্যেবা পাঠ করা ও ইসতেগফার করা। আর যে দুটি কাজ না করে উপায় নেই, তা হলো, তোমারা আল্লাহর কাছে জান্নাত প্রার্থনা করো এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তি কামনা করো।’ (ইবনে খুজাইমা, ১৮৮৭)।

 

রাত জেগে ইবাদত করা: রাসুলুল্লাহ (সা.)বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে প্রতিদান প্রাপ্তির আশায় রমজানের রোজা রাখবে এবং ইবাদতে রাত জাগরণ করবে, সে ভূমিষ্ঠ শিশুর ন্যায় যাবতীয় গোনাহ থেকে নিষ্পাপ হয়ে যাবে।’ (ইবনে খুজাইমা, ২২০১)।

 

বেশি বেশি জিকির-আজকার : রমজানের প্রতিটি মুহূর্ত অনেক মূল্যবান। তাই একজন মুমিন রমজানের পুরো সময় কাজে লাগাতে পারে। বিশেষ করে জিকির-আজকারে।  আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আমার কাছে সমস্ত পৃথিবী অপেক্ষাও প্রিয়তর হচ্ছে সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ ও আল্লাহু আকবার বলা।’ (মুসলিম, ২২৯৫)। 
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে আরও বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি দৈনিক একশত বার বলবে, সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহী অর্থাৎ আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা করি তাঁর প্রশংসার সঙ্গে, তার সমস্ত গুনাহ মাফ করা হবে, যদিও তার গুনাহ সমুদ্রের ফেনার ন্যায় অধিক হয়।’ (মুসলিম, ২২৯৬)।

 

লাইলাতুল কদর তালাশ করা : রমজান মাসে এমন একটি রাত রয়েছে, যা হাজার মাসের চেয়ে উত্তম। আল কোরআনের ঘোষণা, ‘কদরের রাত হাজার মাসের চেয়েও উত্তম।’ (সুরা কদর, ৪)। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ঈমান ও সওয়াব পাওয়ার আশায় ইবাদত করবে, তার আগের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।’ (বুখারি, ৩৫)।


 
লেখক : আলেম, গবেষক ও সাংবাদিক

স্বপ্নে কাউকে হত্যা করতে দেখা কিসের বার্তা?

প্রকাশ: ১৬ এপ্রিল ২০২৫, ০৬:৩০ পিএম
আপডেট: ১৬ এপ্রিল ২০২৫, ১২:৪৫ পিএম
স্বপ্নে কাউকে হত্যা করতে দেখা কিসের বার্তা?
প্রতীকী ছবি । সংগৃহীত

স্বপ্ন মানুষের মনের অবস্থা, চিন্তা এবং ভবিষ্যৎ সম্পর্কে নানা ইঙ্গিত প্রদান করে। তবে কিছু স্বপ্ন রহস্যময় ও ভীতিকর হয়, বিশেষ করে স্বপ্নে হত্যার দৃশ্য, যা অত্যন্ত জটিল এবং ভয়াবহ হতে পারে। ইসলামিক স্বপ্নতত্ত্ব অনুসারে, এ ধরনের স্বপ্নের ব্যাখ্যা বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে করা হয়, যা ব্যক্তির আধ্যাত্মিক ও মানসিক অবস্থার সঙ্গে সম্পর্কিত।

১. কাউকে হত্যা করা: যদি আপনি স্বপ্নে কাউকে হত্যা করতে দেখেন, এটি একটি বড় ধরনের কাজে লিপ্ত হওয়ার ইঙ্গিত হতে পারে। কিছু মানুষ মনে করেন, এ ধরনের স্বপ্ন দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি পাওয়ার সম্ভাবনাও নির্দেশ করতে পারে। অন্যদিকে, যদি আপনি নিজেকে হত্যা করতে দেখেন, তা হলে এটি হতে পারে যে, আপনি আত্মবিশ্বাসী হয়ে নিজের তওবা গ্রহণ করবেন এবং জীবনে কল্যাণ লাভ করবেন।

২. নিজেকে হত্যা করা: বিশেষজ্ঞদের মতে, স্বপ্নে নিজেকে হত্যা করা মানে দীর্ঘ আয়ু লাভের লক্ষণ। এটি একটি ইতিবাচক সঙ্কেত হিসেবে ধরা হয়, যা জীবনের কষ্ট বা সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার সম্ভাবনা নির্দেশ করে।

৩. জবাই করা: যদি আপনি কাউকে জবাই করতে দেখেন, এর মানে হতে পারে যে, আপনি সেই ব্যক্তির চেয়ে উন্নত বা উত্তম হয়ে উঠবেন। তবে, যদি আপনি কাউকে জবাই করতে দেখেন এবং তিনি আপনার পরিচিত হন, তবে এটি ইঙ্গিত দেয় যে, আপনি তার প্রতি কোনো ভুল বা অন্যায় কাজ করবেন। এই স্বপ্নে উন্নতি আসার সম্ভাবনা রয়েছে, তবে তা ওই ব্যক্তির কাছ থেকেই আসবে।

৪. পিতা-মাতা বা পিতাকে জবাই করা: স্বপ্নে যদি বাবা-মাকে জবাই করতে দেখেন, এটি ইঙ্গিত দেয় যে, আপনি তাদের প্রতি অবাধ্য বা সীমা লঙ্ঘনকারী হয়ে উঠতে পারেন। আবার যদি কোনো মহিলা বা প্রাণীকে জবাই করতে দেখেন, এটি সাধারণত আপনার যৌন জীবন বা সম্পর্কের দিকে ইঙ্গিত দেয়, যা ভুল পথে চলে যেতে পারে।

৫. শিশু বা অন্য কোনো প্রাণীকে জবাই করা: শিশুদের জবাই করা বা তাদের গোশত খাওয়া দেখতে পেলে, এটি ইঙ্গিত দেয় যে, আপনি আপনার জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ সময় পার করছেন এবং আপনার কর্ম ও আচরণ থেকে আপনি পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে সম্মান এবং কল্যাণ লাভ করবেন।

৬. বাদশাহ বা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সম্পর্ক: স্বপ্নে যদি বাদশাহ কাউকে জবাই করেন এবং তার মাথাবিহীন লাশ আপনার ঘাড়ে রাখেন, এটি একটি সতর্কবার্তা হতে পারে। এ ধরনের স্বপ্ন নির্দেশ করে যে, কর্তৃপক্ষ মানুষের প্রতি অন্যায় করতে পারে এবং তাদের চাহিদা পূরণে অক্ষম থাকবে।

এভাবেই হত্যার স্বপ্নের ব্যাখ্যা নানা দৃষ্টিকোণ থেকে ভিন্ন হতে পারে। তবে, এই ব্যাখ্যাগুলো মূলত মুহাম্মাদ ইবনে সীরীনের 'তাফসিরুল আহলাম' গ্রন্থের ওপর ভিত্তি করে সংকলিত। স্বপ্নের সম্পূর্ণ অর্থ অনুধাবন করার জন্য ব্যক্তিগত প্রেক্ষাপট এবং অনুভূতির সঙ্গে মিলিয়ে দেখা জরুরি।

 

লেখক : আলেম ও সাংবাদিক 

 

রাগ নিয়ন্ত্রণ করলে মেলবে যে প্রতিদান

প্রকাশ: ১৬ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:৩০ এএম
আপডেট: ১৬ এপ্রিল ২০২৫, ১২:২৭ পিএম
রাগ নিয়ন্ত্রণ করলে মেলবে যে প্রতিদান
ফোণে অন্যের সাথে রেগে কথা বলার দৃশ্য । ছবি সংগৃহীত

শয়তান সাধারণত ঝগড়া-বিবাদ ও দ্বন্দ্বের মাধ্যমে মানুষের রাগ উসকে দেয়। রাগের সময় মানুষকে নিয়ন্ত্রণে আনা তার পক্ষে সহজ। এর মাধ্যমে শয়তান মানুষকে তার কাঙ্ক্ষিত অকল্যাণের দিকে ঠেলে দেয়। সৃষ্টির সূচনাতেই আদম (আ.) এবং তার সন্তানদের এ সহজাত প্রবৃত্তি সম্পর্কে শয়তান খুব ভালোভাবে অবহিত ছিল।


আনাস ইবনে মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহতায়ালা যখন জান্নাতে আদম (আ.)-এর আকৃতি গঠন করলেন, তখন আল্লাহ তার আকৃতিকে যত দিন ইচ্ছা ফেলে রাখলেন। এ সময় ইবলিস তার চতুর্দিকে ঘুরাফেরা করতে লাগল। দেখতে দেখতে সে অনুভব করল, এটি একটি শূন্য কাঠামো। তখন সে বুঝল যে, (আল্লাহ) এমন একটি সত্তা সৃষ্টি করেছেন, যে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২৬১১)


এই বর্ণনার বিভিন্ন অর্থের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থ হলো—রাগের সময় নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারা। রাগের সময় নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারা কঠিন হলেও, রাসুলুল্লাহ (সা.) তার সুন্নাহর মাধ্যমে আমাদের শিখিয়েছেন কীভাবে রাগের মুহূর্তে নিজেকে সংযত রাখতে হয়, যাতে শয়তানের ফাঁদে পড়া থেকে বাঁচা যায়। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘প্রকৃত বীর সেই ব্যক্তি নয়, যে কাউকে কুস্তিতে হারিয়ে দেয়; বরং প্রকৃত বাহাদুর সে, যে ক্রোধের সময় নিজেকে সংবরণ করতে সক্ষম।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫৭৬৩)


রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাদের জানিয়ে দিয়েছেন, রাগ নিয়ন্ত্রণকারী ব্যক্তির জন্য আল্লাহতায়ালা কত বড় পুরস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি বলেন, তোমরা ছুটে যাও তোমাদের পালনকর্তার ক্ষমা এবং জান্নাতের দিকে, যার প্রশস্ততা আসমান ও জমিনের মতো। এটি মুত্তাকিদের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে, যারা সচ্ছলতা ও অসচ্ছলতার সময়ে (অর্থ) খরচ করে, যারা নিজেদের রাগ নিয়ন্ত্রণ করে এবং মানুষের প্রতি ক্ষমা প্রদর্শন করে। আল্লাহ সৎকর্মশীলদের ভালোবাসেন।’ (সুরা আল ইমরান, আয়াত: ১৩৩-১৩৪)


মুয়াজ ইবনে আনাস জুহানি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হলেও ক্রোধ সংবরণ করে, (এজন্য) কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাকে সব সৃষ্টির সামনে ডেকে বলবেন, তুমি যে হুর চাও, পছন্দ করে নিয়ে যাও।’ (সুনানু আবি দাউদ, হাদিস: ৪৭৭৭)


এই সুন্নাহ আমাদের জন্য এক চমৎকার শিক্ষা। রাগ নিয়ন্ত্রণ করা কেবল আমাদের দুনিয়ার শান্তি ও সুখের জন্য নয়, বরং আখেরাতে আমাদের জন্য এক বিশাল পুরস্কার অপেক্ষা করছে। রাগ সংবরণ করার মাধ্যমে আমরা শয়তানের ফাঁদে না পড়তে পারি এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে সক্ষম হই। এটি আমাদের দুনিয়া ও আখেরাতের উন্নতির জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ পথ।

 

লেখক : আলেম ও সাংবাদিক

স্বপ্নে তরবারি ও তলোয়ার দেখা: কীসের পূর্বাভাস?

প্রকাশ: ১৫ এপ্রিল ২০২৫, ০৬:৩০ পিএম
স্বপ্নে তরবারি ও তলোয়ার দেখা: কীসের পূর্বাভাস?
দুটি ধারলো তরবারির ছবি । সংগৃহীত

স্বপ্ন শুধু ঘুমের জগতের কল্পনা নয়— অনেক সময় এটি হয়ে ওঠে গভীর বার্তাবাহী। যেখানে আমাদের দৈনন্দিন জীবনের নানা সংকেত ও ইঙ্গিত লুকিয়ে থাকে। স্বপ্নে তরবারি বা তলোয়ার দেখার বিষয়টি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই অস্ত্রগুলোর প্রতীকী অর্থ রয়েছে যা আমাদের ভবিষ্যৎ, পারিবারিক সম্পর্ক, সন্তান কিংবা জীবনের বড় পরিবর্তন নিয়ে নানা বার্তা দেয়।

বীরত্ব ও নেতৃত্বের আগমন: স্বপ্নে তরবারি দেখার অন্যতম অর্থ হলো বীরত্ব বা শক্তি লাভ। তরবারি দেখলে এটি সাধারণত বীরপুরুষ হওয়ার লক্ষণ হিসেবে ধরা হয়। যদি স্বপ্নে আপনি তরবারি দিয়ে কাউকে আঘাত করেন বা হত্যার দৃশ্য দেখেন, এটি সাধারণত গোত্রের ঝগড়া বা পারিবারিক অশান্তি নির্দেশ করে। 

কর্তৃত্ব ও দায়িত্ব:  গলায় তরবারি ঝোলাতে দেখলে, এটি রাজত্বের বড় দায়িত্ব গ্রহণের পূর্বাভাস হতে পারে। তরবারি এখানে রাজকীয়তা ও কর্তৃত্বের প্রতীক হিসেবে উপস্থিত থাকে। তবে যদি তরবারিটি ভারী মনে হয় এবং আপনি সেটিকে টেনে নিয়ে চলেন, তা হলে এটি নির্দেশ করে যে, আপনি হয়তো অক্ষম হতে পারেন রাজত্ব বা নেতৃত্বের দায়িত্ব পালন করতে।

সন্তানবিষয়ক সংকেত: স্বপ্নে যদি গলায় চারটি তরবারি ঝোলানো দেখেন, তা হলে এটি চারটি সন্তানের জন্ম হতে পারে। এখানে তরবারির ধাতু অনুযায়ী সন্তানের বৈশিষ্ট্যও প্রতিফলিত হয়—লোহার তরবারি বীর সন্তানের, পিতল তরবারি ধনী সন্তানের, সীসার তরবারি নপুংসক সন্তানের এবং কাঠের তরবারি মোনাফিক সন্তানের আলামত। অন্যদিকে, মরিচাযুক্ত তরবারি দেখে কোষ থেকে বের করার স্বপ্ন, দুষ্টু সন্তান বা দুর্ঘটনার আগমনের সংকেত দিতে পারে।

স্বপ্নের প্রেক্ষাপট: স্বপ্নে তরবারি যদি কোষ থেকে বের করার চেষ্টা করেন, তা হলে এর মধ্যে কিছু বিপদের সঙ্কেত থাকতে পারে। যদি তরবারি ভেঙে যায়, তা হলে এটি মৃত্যু বা বড় ধরনের ক্ষতির পূর্বাভাস হতে পারে। কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে, যেমন তরবারিটি যদি ভারী হয়, তবে এটি জড়তা বা সংকোচ বোঝাতে পারে এবং তরবারিতে ছিদ্র থাকলে, এর অর্থ হতে পারে যে সন্তান বোবা হবে।

পারিবারিক জীবন ও বিবাহ: যদি স্বপ্নে তরবারি দেখে আপনি আপনার স্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্কিত কোনো পরিবর্তন দেখতে পান, তা সাধারণত সন্তানের আগমনের প্রতীক। গলায় দুটি বা তিনটি তরবারি ঝোলানো দেখলে, এটি তিন তালাকের পূর্বাভাস হতে পারে। তরবারিকে খাপের মধ্যে দেখতে পেলে, এটা স্ত্রী বা গর্ভাবস্থার প্রভাব বা সম্পর্কের অবনতি নির্দেশ করতে পারে।

সামাজিক প্রেক্ষাপট: স্বপ্নে তরবারি ও বেল্ট দেখলে, এটি প্রমাণ করে যে আপনি নিজের দায়িত্ব পালন করবেন এবং আমানত রক্ষা করবেন। তরবারি যদি পাশের দিকে রাখা থাকে, তা হলে এটি একটি কঠিন সাহসী ব্যক্তি হওয়ার ইঙ্গিত। তরবারিকে যদি বাতাসে দেখা যায়, তবে এটি মহামারি বা বিপদ সংকেত দিতে পারে।

এই ব্যাখ্যাগুলো মূলত মুহাম্মাদ ইবনে সিরিনের 'তাফসিরুল আহলাম' গ্রন্থের ওপর ভিত্তি করে সংকলিত। স্বপ্নের সম্পূর্ণ অর্থ অনুধাবন করার জন্য ব্যক্তিগত প্রেক্ষাপট এবং অনুভূতির সাথে মিলিয়ে দেখা জরুরি।

লেখক : আলেম ও সাংবাদিক

বাজারে যে দোয়া পড়লে ১০ লাখ নেকি পাওয়া যায়

প্রকাশ: ১৫ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:৩০ এএম
আপডেট: ১৫ এপ্রিল ২০২৫, ১০:৩৬ এএম
বাজারে যে দোয়া পড়লে ১০ লাখ নেকি পাওয়া যায়
বাজারে পণ্য বিক্রয়ের ছবি । সংগৃহীত

ইসলামে কিছু সুন্নাহ রয়েছে, যেগুলো পালন করা সহজ হলেও তার পুরস্কার অনন্ত। অনেক সময় আমরা কিছু সহজ কাজের মাধ্যমে অশেষ পুরস্কার লাভ করতে পারি, আর তা যেন চোখ কপালে উঠানোর মতো! তবে, আল্লাহতায়ালা তার রহমত দিয়ে আমাদের জন্য এসব সোনালি সুযোগ রেখেছেন। এর মধ্যে একটি মহৎ ও দারুণ সুযোগ হলো বাজারে দোয়া পড়া, যার প্রতিদান অগণিত নেকি এবং গুনাহ মাফ।


উমর (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি বাজারে প্রবেশ করে এবং এই দোয়া পড়ে, আল্লাহতায়ালা তার জন্য ১০ লাখ নেকি লেখেন, ১০ লাখ গুনাহ মাফ করেন এবং তার ১০ লাখ স্তর উন্নীত করেন।’

দোয়াটি বাংলা উচ্চারণ: লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শরিকা লাহু, লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ইয়ুহয়ি ওয়াহুয়া ইয়ামুতু ওয়াহুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন কাদির।

দোয়াটি অর্থ: ‘আল্লাহতায়ালা ব্যতীত কোনো মাবুদ নেই, তিনি এক, তাঁর কোনো অংশীদার নেই, সব ক্ষমতা তাঁরই, সব প্রশংসা তাঁর জন্য, তিনিই প্রাণ দান করেন ও মৃত্যু দেন, তিনি চিরঞ্জীব, তাঁর কোনো মৃত্যু নেই, তাঁর হাতে কল্যাণ এবং তিনিই সবকিছু করতে সক্ষম।’(সুনানুত তিরমিজি, হাদিস: ৩৪২৮)


ধারণা করুন, আপনি বাজারে প্রবেশ করে এই দোয়া পাঠ করেছেন এবং আল্লাহতায়ালা আপনাকে ১০ লাখ নেকি দিয়েছেন, ১০ লাখ গুনাহ মাফ করেছেন এবং আপনার স্তর ১০ লাখ উন্নীত করেছেন! কী দারুণ সুযোগ, ভাবুন তো! এমন একটি অবস্থা যেখানে আপনার সব পাপকর্ম ক্ষমা হয়ে যাবে এবং সঠিক পথের দিকে আপনার পদক্ষেপ আরও দৃঢ় হবে।


বাজার পৃথিবীর অন্যতম ব্যস্ত ও চ্যালেঞ্জিং স্থান, যেখানে মানুষ তাদের দ্বীন ও ধর্মীয় কর্তব্য ভুলে যেতে পারে। এখানে যেহেতু অর্থ উপার্জন এবং বাণিজ্যিক লাভের প্রতি আকর্ষণ থাকে, তাই অনেক সময় মানুষ নামাজ এবং অন্যান্য নেক কাজ থেকে বিরত থাকে। বাজারের পরিবেশে পরস্পরের মধ্যে প্রতিযোগিতা, মিথ্যা ও প্রতারণা সাধারণ হয়ে দাঁড়ায়, যা মুসলিমদের মধ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।


আল্লাহতায়ালা কোরআনুল কারিমে বলেছেন, ‘তোমরা ধনসম্পদকে প্রাণভরে ভালোবাসো।’ (সুরা ফাজর, আয়াত: ২০) এ আয়াত থেকে বোঝা যায় যে, অর্থের প্রতি মানুষের এই অতিরিক্ত আকর্ষণ তাদের অন্তর থেকে আল্লাহর স্মরণ সরিয়ে নিয়ে যায়। আর এ কারণে বাজারের পরিবেশকে পৃথিবীর সবচেয়ে নিকৃষ্ট স্থান হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে।


আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহর কাছে সবচেয়ে পছন্দের স্থান হলো মসজিদ। আর আল্লাহর কাছে সবচেয়ে অপছন্দের স্থান হলো বাজার।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৬৭১)


এমন এক পরিবেশে, যেখানে আল্লাহর স্মরণে উদাসীনতা থাকে, সেখানে যদি কেউ এই দোয়া পড়ে, সে যেন আল্লাহর তাওহিদ এবং স্মরণকে উচ্চারণ করছে। এর মাধ্যমে তিনি আল্লাহর কাছ থেকে বিরাট পুরস্কার লাভ করেন। তাই, এই সুন্নাহটি আমরা পালন করতে পারি, তেমনি বাজারে যাওয়ার সময় যেন আমাদের সময় নষ্ট না হয় এবং সম্ভব হলে বাজারে কম সময় কাটানোর চেষ্টা করি।


বাজারে দোয়া পড়া একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাহ। আল্লাহতায়ালা আমাদের সবাইকে এই সুন্নাহ অনুসরণের তৌফিক দিন এবং আমাদের প্রতিটি পদক্ষেপকে তাঁর সন্তুষ্টি এবং রহমতের দিকে পরিচালিত করুন। আমিন।

 

লেখক : আলেম ও সাংবাদিক 

স্বপ্নে যুদ্ধ দেখলে কী হয়?

প্রকাশ: ১৩ এপ্রিল ২০২৫, ০৬:৩০ পিএম
আপডেট: ১৩ এপ্রিল ২০২৫, ০৩:২৭ পিএম
স্বপ্নে যুদ্ধ দেখলে কী হয়?
গাজায় বোমার ভয়াবহ আগুনের ছবি । সংগৃহীত

স্বপ্ন আমাদের অবচেতন মনের এক রহস্যময় জগৎ। ঘুমের ঘোরে আমরা কত না বিচিত্র দৃশ্য দেখি। কখনো তা বাস্তব ঘটনার ইঙ্গিত দেয়, আবার কখনো প্রতীকী অর্থ বহন করে। বিশেষ করে স্বপ্নে যুদ্ধ দেখা— এটি নিছক দুঃস্বপ্ন না হয়ে হতে পারে গভীর তাৎপর্যপূর্ণ কোনো বার্তার প্রতিফলন।

ইসলামী ব্যাখ্যা অনুযায়ী, স্বপ্নে যুদ্ধ দেখা বিভিন্ন অর্থ বহন করতে পারে। স্বপ্নদ্রষ্টা ও পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে এই স্বপ্নের ভালো-মন্দ উভয় ধরনের ইঙ্গিত থাকতে পারে। সাধারণভাবে স্বপ্নে তিন ধরনের যুদ্ধ দেখার কথা বলা হয়েছে:

১. রাজা ও রাজার মধ্যে যুদ্ধ: যদি স্বপ্নে দুই রাজার মধ্যে যুদ্ধ দেখেন, তবে এটিকে সমাজে বিশৃঙ্খলা ও মহামারির পূর্বাভাস হিসেবে গণ্য করা হয়। এটি একটি অশুভ লক্ষণ হিসেবে বিবেচিত হয়, যা থেকে আল্লাহতায়ালার কাছে আশ্রয় চাওয়া উচিত।

২. রাজা ও প্রজার মধ্যে যুদ্ধ: স্বপ্নে রাজা ও প্রজার মধ্যে যুদ্ধ দেখলে, এটিকে খাদ্যদ্রব্যের দাম কমার ইঙ্গিত হিসেবে ধরা হয়। এটি একটি ইতিবাচক স্বপ্ন, যা অর্থনৈতিক স্বস্তির বার্তা বয়ে আনতে পারে।

৩. প্রজা ও প্রজার মধ্যে যুদ্ধ: যদি সাধারণ মানুষের মধ্যে যুদ্ধ দেখেন, তবে এটি খাদ্যদ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধির পূর্বাভাস। এটি একটি নেতিবাচক স্বপ্ন, যা অর্থনৈতিক কষ্টের ইঙ্গিত দিতে পারে।

যদি কেউ স্বপ্নে তার শহরে সৈন্যের আগমন দেখে, তবে এটিকে বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস হিসেবে ধরা হয়। অন্যদিকে, দলবদ্ধ সৈন্য দেখলে, এটিকে সত্যের সাহায্য ও মিথ্যার ধ্বংসের আলামত হিসেবে ব্যাখ্যা করা হয়। কারণ, আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে বলেছেন, ‘অবশ্যই এখন আমি তাদের বিরুদ্ধে এক সৈন্যবাহিনী নিয়ে আসব, যার প্রতিরোধের শক্তি তাদের নেই।’ (সুরা নামল,আয়াত: ৩৭)

স্বপ্নে সৈন্যদের সংখ্যা কম দেখলে, এটিকে বিজয়ের নিকটবর্তী হওয়ার লক্ষণ হিসেবে ধরা হয়। কারণ, আল্লাহতায়ালা বলেছেন, ‘কত সামান্য দল বিশাল দলের মোকাবিলায় আল্লাহর ইচ্ছায় বিজয়ী হয়েছে!’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ২৪৯)

কোনো সৈনিক যদি স্বপ্নে তার হাতে তীর বা চাবুক দেখে, তবে স্বপ্নদ্রষ্টার সুন্দর জীবনযাপনের ইঙ্গিত বহন করে। স্বপ্নে ধুলাবালি দেখলে, তা ভ্রমণের পূর্বাভাস হতে পারে। তবে ধুলাবালির সঙ্গে গর্জন ও বিজলী দেখলে, দুর্ভিক্ষ ও অভাবের লক্ষণ হিসেবে ধরা হয়। কিন্তু যদি শুধু ধুলাবালি দেখা যায় এবং গর্জন বা বিজলী না থাকে, তবে এটি যুদ্ধলব্ধ সম্পদ লাভের ইঙ্গিত দিতে পারে। কারণ, মাটি হলো সম্পদের উৎস, আর ধূলি তারই অংশ। কারও মতে, নিজের গায়ে ধুলা দেখলে, তা সফরের আলামত। আবার কারও মতে, এটি যুদ্ধে সম্পদশালী হওয়ার ইঙ্গিত।

স্বপ্নে ঘোড়ায় চড়ে সেটিকে হাঁকাতে দেখলে, স্বপ্নদ্রষ্টা কোনো কাজে সফলতা অর্জন করে অহংকারী হতে পারে এবং ভুল পথে চালিত হতে পারে।
স্বপ্ন এক রহস্যময় জগৎ, যার ব্যাখ্যা ব্যক্তি ও পরিস্থিতির ওপর নির্ভরশীল। যদিও এখানে স্বপ্নের যুদ্ধের কিছু সাধারণ ব্যাখ্যা তুলে ধরা হলো, তবুও এর চূড়ান্ত অর্থ একমাত্র আল্লাহই জানেন। তাই কোনো স্বপ্ন দেখলে দুশ্চিন্তা না করে আল্লাহতায়ালার কাছে কল্যাণ কামনা করা উচিত।

 

লেখক : আলেম ও সাংবাদিক