বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য প্রতিযোগিতামূলক ভর্তিযুদ্ধ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। গুচ্ছভুক্ত ২৪টি সাধারণ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা আগামী ৩ মে অনুষ্ঠিত হবে। গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি কীভাবে নিতে হবে, কোন বিষয় কীভাবে পড়তে হবে এবং কোন কোন টপিকের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে, তা নিয়ে লিখেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী রাসেল হোসেন সাকিব এবং পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ আল মামুন
গুচ্ছভুক্ত ২৪টি সাধারণ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা একসঙ্গে হয়। যার কারণে এখানে আসন সংখ্যাও যেমন বেশি তেমনি প্রতিযোগীর সংখ্যাও বেশি। এত প্রতিযোগীর মধ্যে নিজেকে এগিয়ে রাখতে চাইলে ভালো করে প্রস্তুত হতে হবে। ‘বি’ ইউনিটে ভালো করার জন্য পাঠ্যবইয়ের ওপর ভালো দখল থাকতে হবে। পরীক্ষার হলে প্রশ্নের উত্তর দ্রুত ও নির্ভুলভাবে দিতে পারলে নিজেকে অন্যদের চেয়ে এগিয়ে রাখা যাবে। শর্টকাট পদ্ধতিগুলো আয়ত্তে রাখতে হবে, যাতে দ্রুত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া যায়। বিগত বছরের প্রশ্ন সমাধানের কোনো বিকল্প নেই।
আবেদনকারী, আসনসংখ্যা ও নম্বর বিভাজন
গুচ্ছভুক্ত ২৪টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে মোট ৩ লাখ ৫ হাজার ৩৪৬টি আবেদন জমা পড়েছে। এর মধ্যে বিজ্ঞান অনুষদের ‘ক’ ইউনিটে ১ লাখ ৭০ হাজার ৫৯৯টি, মানবিক অনুষদের ‘বি’ ইউনিটে ৯৪ হাজার ৬৩১টি এবং ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের ‘সি’ ইউনিটে ৪০ হাজার ১১৬টি আবেদন জমা পড়েছে।
গুচ্ছভুক্ত ২৪টি বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট আসন সংখ্যা ২০ হাজার ৬৬৮টি। যার মধ্যে ‘বি’ ইউনিটে আসন সংখ্যা প্রায় ৭ হাজার ৭৪৬টি। এই বছর গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা ৩ মে অনুষ্ঠিত হবে। পরীক্ষা চলবে বেলা ১১ থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত। ১০০ নম্বরের বহুনির্বাচনি পরীক্ষায় পাস নম্বর ৩০। বিগত কয়েক বছরের ভর্তি পরীক্ষা থেকে দেখা যায়, মানবিকের একজন শিক্ষার্থীকে গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ পেতে হলে ৪০ নম্বরের ওপরে পেতে হবে, বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য ৫০-৬০ নম্বর পেতে হবে। ভর্তি পরীক্ষায় প্রতিটি প্রশ্নের মান ১ নম্বর ও প্রতিটি ভুল উত্তরের জন্য ০.২৫ নম্বর কাটা যাবে। ‘বি’ ইউনিটে মোট ১০০ নম্বরের পরীক্ষার মধ্যে বাংলায় ৩৫, ইংরেজিতে ৩৫ ও সাধারণ জ্ঞানে ৩০ নম্বরের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।
বিষয়ভিত্তিক প্রস্তুতি
বাংলা
বাংলা প্রথম পত্রে ভালো ফলাফলের জন্য মূল বইয়ের প্রতি জোর দিতে হবে। বিশেষত গদ্য, কবিতা এবং উপন্যাসের মূল বিষয়, লেখক পরিচিতি, তার সাহিত্যকর্ম, জীবনী পড়তে হবে। প্রথম পত্রে যেসব গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ে রয়েছে তার মধ্যে অপরিচিতা, আমার পথ, বায়ান্নর দিনগুলো, রেইনকোট, নেকলেস, ঐকতান, সাম্যবাদী, তাহারই পড়ে মনে, সেই অস্ত্র, ফেব্রুয়ারি, ১৯৬৯। এই গদ্য ও পদ্যগুলো আয়ত্ত করতে পারলে, প্রথম পত্রে ভালো করা যাবে। এ ছাড়া ব্যাকরণ অংশের জন্য ভাষা, বাংলা ভাষা, ব্যাকরণ, সমার্থক ও বিপরীতার্থক শব্দ, কারক, সমাস, সন্ধি, বিভক্তি, বচন, বাক্য সংকোচন, বাগধারা, উপসর্গ, অনুসর্গ বিষয়গুলো গুরুত্বপূর্ণ। এগুলো ভালো করে অনুশীলন করতে হবে। তাছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘বি’ ইউনিটের প্রশ্নব্যাংক ও গুচ্ছের বিগত সালের প্রশ্নব্যাংকের প্রতি জোর দিতে হবে।
ইংরেজি
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় চান্স হবে কি না, তা মূলত নির্ধারণ করে দেয় ইংরেজি। ইংরেজির ওপর দক্ষতা একদিকে যেমন অন্যের চেয়ে আপনাকে এগিয়ে রাখবে অন্যদিকে নিজের পছন্দের বিষয় পেতে সাহায্য করবে। প্রশ্নব্যাংক বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ইংরেজি প্রথম পত্র থেকে প্রশ্ন কম আসে। কিন্তু অধিকাংশ প্রশ্ন আসে ইংরেজি দ্বিতীয় পত্র থেকে। সেজন্য দ্বিতীয় পত্রের যে বিষয়গুলোর প্রতি জোর দিতে হবে তা হলো- Parts of speech, Article, Tense, Voice, Sentence Correction, Spelling, Right form of verb, Preposition, Translation, Synonyms, Antonyms, Idiom, Joining sentence, Comprehension। ইংরেজিতে ভালো করতে আপনাদের নিয়মিত অনুশীলন করতে হবে। তাছাড়া বিগত বছরের গুচ্ছের প্রশ্ন অবশ্যই সমাধান করতে হবে। সময় থাকলে অন্যান্য সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিগত বছরের প্রশ্ন সমাধান করা উচিত।
সাধারণ জ্ঞান
সাধারণ জ্ঞানের প্রশ্ন বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, বাংলাদেশ বিষয়াবলি থেকে ৬ থেকে ৭টি, আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি থেকে ৫ থেকে ৬টি, সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ থেকে ৪ থেকে ৫টি প্রশ্ন আসে। সে জন্য প্রতিদিন নিয়মিত ২ থেকে ৩ ঘণ্টা পত্রিকা পড়তে হবে। পাশাপাশি সাম্প্রতিক বিষয়ও পড়তে হবে।
অন্যান্য বিষয়ের প্রস্তুতি
সাধারণত ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি থেকে ৪ থেকে ৫টি, যুক্তিবিদ্যা থেকে ২ থেকে ৩টি, পৌরনীতি থেকে ৩ থেকে ৪টি ও অর্থনীতি থেকে ২ থেকে ৩টি প্রশ্ন আসে। তাই ভর্তিচ্ছু পরীক্ষার্থীদের এই বিষয়গুলো একটু গুরুত্ব দিয়ে পড়তে হবে। তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিষয়ে এইচএসসির পাঠ্যবইয়ের প্রথম অধ্যায়ের গ্লোবাল ভিলেজ, ভার্চুয়াল রিয়েলিটি, ক্রায়োসার্জারি, বায়োমেট্রিক্স, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং, ন্যানো টেকনোলজি, ডেটা ট্রান্সমিশন, ওয়াইফাই, ওয়াইম্যাক্স, হাব, সুইচ, নেটওয়ার্ক, ক্লাউড কম্পিউটিং অধ্যায়গুলো গুরুত্বপূর্ণ। সব পরীক্ষাতেই তৃতীয় অধ্যায় থেকে প্রশ্ন তুলনামূলক বেশি আসে। সেজন্য বিভিন্ন প্রকার লজিক গেইট, এনকোডার, ডিকোডার, এডার এগুলো ভালোভাবে পড়তে হবে। একই সঙ্গে সংখ্যাপদ্ধতির রূপান্তর ভালো করে পড়তে হবে। এ ছাড়া ওয়েবসাইট কাঠামো, কম্পাইলার, ইন্ট্রারপোলার, ডেটা টাইপ, কিওয়ার্ড, অ্যালগরিদম, ফ্লোচার্ট, লুপ পড়তে হবে। এ ছাড়া প্রোগ্রামিং ভাষা, সি প্রোগ্রামিংয়ের বেসিক, ফাংশন, ভেরিয়েবল, ডেটাবেইজ ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম ভালো করে পড়তে হবে।
তবে আইসিটির জন্য প্রকৌশলী মুজিবুর রহমান, মাহবুবুর রহমানের বইয়ের অনুশীলনীতে যে প্রশ্নগুলো আছে তা ভালো করে পড়লে অনেক কিছুই কাভার হয়ে যায়। তবে প্রতিটি অধ্যায়ের নির্দিষ্ট কিছু টপিকসের ওপর আলাদা করে গুরুত্ব দিতে হবে।
বিগত সালের প্রশ্ন দেখলে পরীক্ষার্থীরা বুঝতে পারবে কোন বিষয় থেকে কোন ধরনের প্রশ্ন আসে। কাজেই ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন অনুসরণ করে প্রস্তুতি নিলে গুচ্ছের ভর্তি পরীক্ষায় ভালো করা আপনার জন্য সহজ হবে। ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে অযথা কোনো ভয় পাবেন না। আত্মবিশ্বাস নিয়ে পড়ালেখা করে যান, দেখবেন সাফল্য পাবেন।
কলি