ঢাকা ১৩ বৈশাখ ১৪৩২, শনিবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৫
English
শনিবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৫, ১৩ বৈশাখ ১৪৩২

কঠোর হাতে মোকাবিলা করুন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি

প্রকাশ: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০২:৪৩ পিএম
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি

দেশের চলমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে জনমনে উদ্বেগ- উৎকণ্ঠা এখন চরমে। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে খুন, ধর্ষণ, নারী নির্যাতন, ছিনতাই ও চুরির ঘটনা ঘটছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির প্রতিবাদে গত রবিবার ঢাকাসহ দেশের কয়েকটি সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল, মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেন।

এ ছাড়া বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ রাজপথে প্রতিবাদ সমাবেশ করেন। এ সময় তারা নারী, শিশুসহ সবার নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছেন। কোথাও কোথাও সড়ক অবরোধ করতে দেখা গেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের  পাদদেশে ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সচেতন শিক্ষার্থীবৃন্দ’ ব্যানারে প্রতিবাদ সমাবেশ হয়।

সেখানে বক্তারা বলেন, দেশব্যাপী ছিনতাই, হামলা, ধর্ষণের মতো অপরাধ বেড়ে গেছে। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার উদ্দেশে তারা বলেন, দেশের মানুষকে সুরক্ষা দিতে না পারলে পদত্যাগ করুন। এদিকে গত রবিবার দিবাগত রাতে  স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা প্রেস ব্রিফিং  করেন দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে। তিনি বলেন, ‘ডেভিল হান্ট’-এর মাধ্যমে তাদের কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। সন্ত্রাসীদের কোথাও কোনো স্থান হবে না। এমন পরিস্থিতিতে বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকারের ভেতরে ও বাইরে অস্বস্তি দেখা দিয়েছে। সরকারের উপদেষ্টারাও আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার কথা স্বীকার করে পরিস্থিতি উত্তরণে নানা পদক্ষেপের কথা বলছেন। এ বিষয়ে গত সোমবার বিকেলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে সরকারের উপদেষ্টা, সচিব ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতনদের নিয়ে বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।

সাম্প্রতিক সময়ে অপরাধের ঘটনা বিশ্লেষণে দেখা যায়, টাঙ্গাইলে রাজশাহী  রুটের একটি যাত্রীবাহী বাসে ডাকাতি ও নারী যাত্রীদের শ্লীলতাহানি  করার ঘটনা ঘটে। রাজধানীর মোহাম্মদপুরে যৌথ বাহিনীর ওপর সশস্ত্র হামলা চালায় স্থানীয় কিশোর গ্যাংয়ের সন্ত্রাসীরা। এ ছাড়া উত্তরা ও মগবাজারে গত সপ্তাহে প্রকাশ্যে ধারালো অস্ত্র দিয়ে ছিনতাইকারী সন্ত্রাসীরা হামলা চালায়। বনশ্রীর ৭ নম্বর রোডের ডি ব্লকে স্বর্ণ ব্যবসায়ীকে গুলি করে স্বর্ণ লুটের ঘটনা ঘটে। যার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ে। সারা দেশে ঘটে যাওয়া অপরাধের ভিডিও ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এখন শোরগোল ফেলে দিয়েছে। এসব ঘটনা জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় পুলিশের মহাপরিদর্শক বাহারুল আলম জানিয়েছেন, ছিনতাই  প্রতিরোধে শিগগিরই মাঠে নামবে পুলিশের বিশেষায়িত তিনটি ইউনিট। দেশব্যাপী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সমন্বয়ে গঠিত যৌথ বাহিনীর ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ চলমান। ঠিক সেই সময়ে দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য  অপরাধীরা উঠেপড়ে লেগেছে। যা খুবই উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। এ অবস্থায় সাধারণ মানুষের জানমালের নিরাপত্তা এখন হুমকির মুখে। 

মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) তথ্যমতে, গত জানুয়ারিতে সারা দেশে ৩৯ জন নারী-শিশুকে ধর্ষণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ধর্ষণ-পরবর্তী হত্যার শিকার হয়েছেন তিনজন। এ ছাড়া গত বছরে তথা ২০২৪ সালে জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সারা দেশে ৪০১ জন শিশু ধর্ষণের শিকার হয়।

প্রাপ্ত তথ্যমতে, জুলাই আন্দোলনের সময় বিভিন্ন থানা ও ফাঁড়ি থেকে ৫ হাজার ৭৫০টি অস্ত্র লুট হয়। সেই অস্ত্রগুলোর মধ্যে এখনো বেহাত ১৩ শতাধিক অস্ত্র। এসব অস্ত্র এখন পেশাদার অপরাধীদের হাতে রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস সম্প্রতি ডিসি সম্মেলনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের কথা বলেছেন। এরপরও থামছে না অপরাধ প্রবণতা।

অপরাধ নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পাড়া বা মহল্লায় জনসচেতনতামূলক কর্মশালার আয়োজন করতে পারে। অপরাধ বিজ্ঞানীরা বলছেন, মানুষ হঠাৎ করে চরম অসহিষ্ণু হয়ে উঠেছে। রাগ নিয়ন্ত্রণ করার সক্ষমতাও হারিয়ে ফেলছে। গত কয়েক দিনে দেশের উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। যদিও দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে অপরাধের তথ্য উঠে আসছে সংবাদমাধ্যম ও সোশ্যাল মিডিয়ায়। দেশের বিদ্যমান পরিস্থিতি যাতে আরও অসহনীয় না হয়ে উঠতে পারে, সে জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরও কঠোর ভূমিকা পালন করতে হবে। আশা করছি, সরকারও আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঠেকাতে পরিস্থিতি সতর্কতার সঙ্গে মোকাবিলা করতে সক্ষম হবে।

কাশ্মীর ইস্যুতে উত্তেজনা  সন্ত্রাস দমনে দুদেশের সহযোগিতা কাম্য

প্রকাশ: ২৫ এপ্রিল ২০২৫, ১১:৩৪ এএম
কাশ্মীর ইস্যুতে উত্তেজনা 
সন্ত্রাস দমনে দুদেশের সহযোগিতা কাম্য

ভারতশাসিত কাশ্মীরের পাহালগামে হামলার ঘটনায় সেখানে থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে। শ্রীনগর থেকে ৯২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত চারপাশের মনোরম দৃশ্যের পাহালগাম গত মঙ্গলবার বিকেলে নৃশংস হামলায় রক্তাক্ত হয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় ঘটে যাওয়া হামলার মধ্যে এটি সবচেয়ে ভয়াবহ। ৩৫ বছরের মধ্যে এবারই প্রথম কাশ্মীরকে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ ঘোষণা করা হয়। মঙ্গলবার রাতেই হামলার দায় স্বীকার করেছে পাক জঙ্গিগোষ্ঠী লস্কর-ই-তৈয়েবার ছায়া সংগঠন দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট (টিআরএফ)। তাদের মতে, নতুন আবাসিক আইনের বিরুদ্ধে ক্ষোভ থেকেই এ হামলার সূত্রপাত। কাশ্মীর রেজিস্ট্যান্স জানিয়েছে, ৮৫ হাজারের বেশি আবাসিক কার্ড অস্থানীয়দের দেওয়া হয়েছে। যা এখানে জনসংখ্যাগত পরিবর্তনের পথ প্রশস্ত করেছে। এ অস্থানীয়রা পর্যটক হিসেবে আসে, বসবাসের অনুমতি নেয়। তার পর এমন আচরণ শুরু করে যেন তারা জমির মালিক। ফলস্বরূপ যারা অবৈধভাবে বসতি স্থাপনের চেষ্টা করবে, তাদের বিরুদ্ধে হিংসার ঘটনা ঘটবে।

 বন্দুকধারীদের হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার পর পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে ভারত। ইতোমধ্যে পর্যটকদের ওপর হামলার ঘটনায় জড়িত সন্দেহভাজন তিন ব্যক্তির স্কেচ প্রকাশ করেছে নিরাপত্তা সংস্থাগুলো। তিনজনই পাকিস্তানি নাগরিক বলে তথ্য এসেছে। তবে এ হামলা নিয়ে পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম আরওয়াই নিউজের প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, এটি একটি ‘ফলস ফ্ল্যাগ’ বা সাজানো হামলা হতে পারে। 

পাহালগামে হামলা কাশ্মীরের পর্যটন অর্থনীতিতে এক বিরাট আঘাত। অনেকে জম্মু-কাশ্মীরের পর্যটনশিল্পে বিনিয়োগ করেছেন, সেটাও ক্ষতির সম্মুখীন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ঘটনার প্রভাব এ খাতকে একধরনের ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দেবে বলে আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছেন। ভারতের পাকিস্তান হাইকমিশনে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে যারা রয়েছেন তাদের অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে। সিন্ধু নদের চুক্তি বাতিল করা হয়েছে। ভয়াবহ হামলার ঘটনায় শুধু ভারত-পাকিস্তানই নয়, আন্তর্জাতিক পর্যায়ের ঘটনাটি নিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। একই সঙ্গে ভারতীয় গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, হামলার দিন জলপাই রঙের পোশাক পরে ঘোড়ায় চেপে ছয়-সাতজন পাহালগাম রিসোর্টে প্রবেশ করে।

 প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ধর্মীয় পরিচয় যাচাই করে জঙ্গিরা ‘টার্গেট কিলিং’ চালায়। নিহতরা সবাই দেশি-বিদেশি পর্যটক। নিরাপত্তাবাহিনীর সন্দেহ, জঙ্গিরা পাকিস্তানের কিশতওয়ার থেকে সীমান্ত পেরিয়ে কাশ্মীরে ঢুকেছে। জঙ্গিদের ধরতে চিরুনি অভিযান চলছে। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, এ হামলার খবর প্রকাশ্যে আসার পর থেকে পাকিস্তানের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। 

অন্যদিকে পাকিস্তানের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ভারতের অবৈধভাবে অধিকৃত জম্মু ও কাশ্মীরের অনন্তনাগ জেলায় হামলায় পর্যটকদের মৃত্যুতে আমরা গভীরভাবে শোকাহত।
পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, এ হামলার সঙ্গে পাকিস্তানের কোনো সম্পর্ক নেই। পাকিস্তান সব সময় যেকোনো ধরনের সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পসহ বিশ্বনেতারা এ হামলায় নিন্দা জানিয়ে ভারতের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন। ভারতের কাশ্মীরে পর্যটকদের ওপর সন্ত্রাসী হামলায় নিন্দা জানিয়েছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের দৃঢ় অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেছেন তিনি। কাশ্মীর ইস্যুতে উত্তেজনা দিন দিন বাড়ছে।

 ভারত-পাকিস্তান দুই দেশকেই সংকট নিরসনে সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে অগ্রসর হতে হবে। তা না হলে উভয় পক্ষের কাদা-ছোড়াছুড়িতে উত্তেজনা আরও বাড়বে। তাতে উভয় দেশই ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং এর নেতিবাচক প্রভাব দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশেও ছড়িয়ে পড়বে। কূটনৈতিক কলাকৌশল প্রয়োগের মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নিশ্চিত করতে হবে। সন্ত্রাস দমনে উভয় দেশ পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে একটি ঐকমত্যে পৌঁছবে, সেটিই প্রত্যাশা।

বিশ্ব অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি কমবে মন্দা অবস্থা কাটাতে এখনই পদক্ষেপ নিন

প্রকাশ: ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ০১:১৩ পিএম
বিশ্ব অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি কমবে
মন্দা অবস্থা কাটাতে এখনই পদক্ষেপ নিন

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন শুল্কনীতির প্রভাব পড়েছে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে। এর প্রভাবে চলতি বছর বিশ্বে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমতে পারে। মূল্যস্ফীতিও অস্বাভাবিক থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। অর্থাৎ এটি কমতে সময় লাগবে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) গত মঙ্গলবার ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউট লুকের (এপ্রিল ২০২৫) সর্বশেষ সংস্করণের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছর বিশ্বে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি দাঁড়াতে পারে ২ দশমিক ৮ শতাংশে, যা গত বছরের চেয়ে ৫ শতাংশীয় বিন্দু কম। আর এশিয়ার গড় জিডিপি হতে পারে ৪ শতাংশ। 

ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউট লুকের প্রাপ্ত উপাত্ত ধরে দেশভিত্তিক তথ্য হালনাগাদ করেছে আইএমএফ। সেখানে বাংলাদেশের জন্য চলতি অর্থবছরে জিডিপির নতুন পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছর মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৩ দশমিক ৮ শতাংশ হবে। তবে আগামী বছর, অর্থাৎ ২০২৬ সালে প্রবৃদ্ধি বেড়ে সাড়ে ৬ শতাংশ হওয়ার কথা বলা হয়েছে সংস্থাটির পূর্বাভাসে। বাংলাদেশের অর্থ মন্ত্রণালয় কিছুদিন আগে চলতি অর্থবছরের (২০২৪-২৫) জিডিপির প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য সংশোধন করে ৫ দশমিক ২ শতাংশ নির্ধারণ করেছে। আইএমএফ আরও বলছে, চলতি বছরে বাংলাদেশের গড় মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশ হবে। গত দুই বছরের বেশি সময় ধরে উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপে আছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাবে, গত মার্চে বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৯ দশমিক ৩৫ শতাংশ। এক বছর ধরে গড় মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ১০ দশমিক ২৬ শতাংশ।

বিশ্বব্যংক আইএমএফের বসন্তকালীন সভা ২১ এপ্রিল শুরু হয়ে ২৬ এপ্রিল পর্যন্ত চলবে। অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে বাংলাদেশের ১৫ সদস্যের প্রতিনিধিদল এ যৌথ সভায় অংশ নিচ্ছে। সভা চলাকালে বাংলাদেশকে প্রতিশ্রুত আইএমএফের  ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ কর্মসূচির চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির অর্থছাড় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হতে পারে। আইএমএফ মিশন সম্প্রতি বাংলাদেশ সফরেও এসেছিল। 

আইএমএফ বলছে, শুল্কের প্রভাবে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি বড় ধরনের সংকটে পড়তে যাচ্ছে। চীনের ওপর শুল্ক বাড়িয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। পাল্টা পদক্ষেপ চীনও নিয়েছে। এতে আর্থিক বাজারে আরও অস্থিরতা দেখা দেবে। পাল্টাপাল্টি শুল্ক আরোপ বৈশ্বিক বাণিজ্যকে ক্ষতিগ্রস্ত এবং গভীর সংকট তৈরি করতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন অর্থনীতিবিদরা। বিশ্লেষকরা বলছেন, মার্কিন প্রশাসনের শুল্কনীতির কারণে একটি বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু হতে পারে। এমন শঙ্কায় ঝুঁকির  মধ্যে পড়েছে মার্কিন মুদ্রা ডলার। ফলে ডলারের দরপতন অব্যাহত রয়েছে। বাড়তি শুল্ক আরোপের অর্থ হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র যেসব দেশ থেকে পণ্য আমদানি করে তার দাম বেড়ে যাবে। 

আমদানিকারকরা চেষ্টা করবে, যে দেশ থেকে পণ্য আমদানি করা হচ্ছে, বাড়তি শুল্কের চাপ তাদের ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়ার জন্য। যদি তা সম্ভব না হয়, তাহলে শেষ পর্যন্ত বাড়তি শুল্কের চাপ ভোক্তাদের কাঁধে গিয়ে পড়বে। বাজারে কোনো পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পেলে স্বাভাবিকভাবেই সংশ্লিষ্ট পণ্যের চাহিদা কমে যাবে। এতে রপ্তানিকারক দেশের রপ্তানির পরিমাণ কমে যাবে। এক কথায় ট্রাম্পের শুল্কনীতির বিরূপ প্রভাব পড়বে বিশ্ব অর্থনীতিতে। এতে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ আরও বাড়বে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই আইএমএফের পূর্বাভাসকে আমলে নিয়ে সরকারকে অর্থনৈতিক সংকট নিরসনের লক্ষ্যে প্রস্তুতিমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

জাতীয় নির্বাচনের দিনক্ষণ  রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্য প্রয়োজন

প্রকাশ: ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ০২:০৫ পিএম
জাতীয় নির্বাচনের দিনক্ষণ 
রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্য প্রয়োজন

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে অন্তর্বর্তী সরকার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে সরকার চলতি বছরের ডিসেম্বর থেকে আগামী ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছে। একদিকে রাজনৈতিক দলগুলোর দ্রুত সময়ে নির্বাচনের তাগিদ, অন্যদিকে ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে নির্বাচনের ঘোষণা মানতে রাজি নয় দেশের অন্যতম রাজনৈতিক দল বিএনপিসহ কিছু দল। দলটির দাবি, ডিসেম্বরের মধ্যে অনুষ্ঠিত হোক জাতীয় সংসদ নির্বাচন। সে বিষয়ে সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে তারা নানামুখী চাপেও রেখেছে। এদিকে নির্বাচন নিয়ে সরকারের সুস্পষ্ট ঘোষণা না থাকা এবং ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের আগে সংসদ নির্বাচন নিয়ে ইসির তৎপরতায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) নেতারা। 

একই সঙ্গে তারা পুরোনো ব্যবস্থায় নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। প্রয়োজনে নির্বাচন কমিশন সংস্কারের কথাও বলেছেন। গত ২০ এপ্রিল ইসির সঙ্গে বৈঠকে সংস্কার নিয়ে সরকারের সুনির্দিষ্ট নির্দেশনার আগে ইসিকে সব ধরনের নির্বাচনি তৎপরতা বন্ধ রাখার দাবি জানিয়েছে এনসিপি। এমন পরিস্থিতিতে বিশ্লেষকরা বলছেন, নির্বাচনের দিনক্ষণ নিয়ে ইসিকে সরকারি রোডম্যাপের ওপর নির্ভর করতে হবে, এটাই বাস্তবতা। তবে তাদের উচিত নির্বাচন উপলক্ষে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া। এ জন্য সরকার ও ইসির মধ্যে সমন্বয় থাকতে হবে। 

স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ এ প্রসঙ্গে খবরের কাগজকে বলেন, এ প্রেক্ষাপটে ইসির উচিত হবে চলমান ইস্যুতে সরকারের সঙ্গে কথা বলা এবং নির্বাচনের জন্য নিজেদের প্রস্তুতি যতটা সম্ভব এগিয়ে নেওয়া। এ ছাড়া নির্বাচনের আগে আইনি কিছু সংস্কারের সুপারিশ রয়েছে সংস্কার কমিশনের। এ নির্বাচনের আগে সেগুলো বাস্তবায়ন হবে কি না, আর হলেও তা কীভাবে সম্ভব, সেসব বিষয়ে সরকার ও নির্বাচন কমিশনকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কারণ দেশের ভেঙে পড়া নির্বাচনব্যবস্থার উন্নয়ন এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে সংস্কার প্রস্তাবগুলো আসছে। সেসব পরামর্শ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন না করে আগের পদ্ধতিতে নির্বাচন হলে আগামী সংসদ নির্বাচন অগ্রহণযোগ্য ও প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে। কাজেই আমি মনে করি, নির্বাচনব্যবস্থার সংস্কারকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করেই নির্বাচনের সব ধরনের প্রস্তুতি এগিয়ে নিতে হবে।

বর্তমানে রাজনৈতিক অঙ্গনে নির্বাচন নিয়ে নানা ধরনের আলোচনা চলছে। জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে ইসির ওপর রাজনৈতিক দলগুলোর চাপ থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। এ ক্ষেত্রে ইসিকে ঐকমত্য কমিশন থেকে চূড়ান্ত হওয়া সংস্কারের পরামর্শ ও সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে হবে। নির্বাচন প্রশ্নে রাজনৈতিক দল, ইসি ও নীতিনির্ধারকদের মধ্যে একটি ঐকমত্যে পৌঁছানো জরুরি। দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর গুরুত্বপূর্ণ অনেক বিষয়ে সংস্কারের প্রস্তাব এসেছে।

 সেই সঙ্গে সংস্কার বাস্তবায়নের জন্য জনপ্রত্যাশাও বেড়েছে। কিন্তু সব অংশীজনের মধ্যে সমন্বয় সঠিকভাবে না হওয়ার কারণে বারবার আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে। তাই দেশের বৃহত্তর কল্যাণে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ইসি এবং নীতিনির্ধারকদের মধ্যে একটি সুনির্দিষ্ট নির্বাচনি রোডম্যাপ নিয়ে আলোচনার উদ্যোগ নিতে হবে। যাতে নির্বাচনি সময়সীমা নিয়ে জটিলতা অচিরেই কেটে যায়। আশা করছি, অন্তর্বর্তী সরকার দেশের গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখতে সেই প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবে।

 

সংস্কার নিয়ে দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা  রাজনৈতিক ঐকমত্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত দিন

প্রকাশ: ২২ এপ্রিল ২০২৫, ১০:২৫ এএম
সংস্কার নিয়ে দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা 
রাজনৈতিক ঐকমত্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত দিন

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে সংস্কার নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের আলোচনা চলছে। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর জাতির এক ক্রান্তিলগ্নে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করে। এই সরকারের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে দেশের বিভিন্ন খাতে সংস্কার সাধন করা। এ লক্ষ্যে সংস্কার প্রস্তাব তৈরির জন্য গত বছরের অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে সংবিধান, নির্বাচনব্যবস্থা, জনপ্রশাসন, পুলিশ, দুর্নীতি দমন কমিশন ও বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন গঠন করে সরকার। গত ফেব্রুয়ারি মাসে এই ছয় কমিশন তাদের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রকাশ করে। পরে এসব কমিশনের প্রধানদের নিয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন করা হয়। 

জাতীয় ঐকমত্য কমিশন বলেছে, রাজনৈতিক দলগুলো সংস্কার কমিশনের যেসব সুপারিশ সম্পর্কে একমত হবে, সেগুলোর ভিত্তিতে তৈরি হবে ‘জুলাই চার্টার’ বা জুলাই সনদ। এরপর এই ছয় কমিশনের গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশগুলো স্প্রেড শিটে ছকের আকারে ৩৮টি দলের কাছে পাঠিয়ে প্রতিটি সুপারিশের ক্ষেত্রে দুটি বিষয়ে মতামত চাওয়া হয়। প্রথমটি হলো, সংশ্লিষ্ট সুপারিশের বিষয়ে একমত কি না। এতে তিনটি বিকল্প রাখা হয়েছে। সেগুলো হলো ‘একমত’, ‘একমত নই’ এবং ‘আংশিকভাবে একমত’। দ্বিতীয়তটি হলো প্রতিটি সুপারিশের বিষয়ে সংস্কারের সময়কাল ও বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে মতামত চাওয়া হয়। 

ইতোমধ্যে সংস্কার কমিশনগুলোর সুপারিশ নিয়ে ঐকমত্যে পৌঁছাতে বিভিন্ন দলের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন এবং তা চলমান রয়েছে। একে একে রাজনৈতিক দলগুলো এই আলোচনায় অংশগ্রহণ করছে। আলোচনায় উঠে আসছে সংস্কার কমিশনগুলোর সুপারিশের বিষয়ে তাদের মতামত ও সিদ্ধান্ত। মতাদর্শিক বা আদর্শগত দিক থেকে দলগুলোর মধ্যে দৃষ্টিভঙ্গির পার্থক্য থাকায় তারা কিছু সুপারিশের পক্ষে ইতিবাচক, কিছু বিষয়ে নেতিবাচক মতামত দিচ্ছেন। কোনোটির সম্পূর্ণ, কোনোটির আংশিক মেনে নেওয়ার কথা বলছেন। সুপারিশগুলোর পরিসর যেহেতু অনেক বিস্তৃত, সংখ্যা অনেক; ফলে আলোচনায় মতপ্রকাশের জন্য দীর্ঘ সময় লাগছে। লাগারই কথা। রাষ্ট্র সংস্কারের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো সম্পর্কে দলগুলোর গভীরভাবে ভেবে দেখার প্রয়োজন রয়েছে। যেহেতু এই সংস্কারই হবে ভবিষ্যতের বাংলাদেশ রাষ্ট্র পরিচালনার ভিত্তি, ফলে দলগুলোর কাছে সংস্কারের দিকগুলো অনেক গুরুত্ব পাচ্ছে। 

যৌক্তিক দিক থেকে দেখলে সংস্কার আসলে একটা চলমান প্রক্রিয়া। সামগ্রিকভাবে সংস্কারের বিষয়গুলো সম্পর্কে তাই সিদ্ধান্তে পৌঁছানো সহজ নয়। ১১টি সংস্কার কমিশন গঠন করেছে সরকার। এর মধ্যে ৬টি কমিশনের সংস্কার নিয়ে ঐকমত্য কমিশন আলোচনা করছে। কিন্তু এর বাইরেও রয়ে গেছে আরও ৫টি সংস্কার কমিশনের সুপারিশ। সেই সব কমিশনের প্রতিবেদন এখনো সরকারের হাতে আসেনি; এলে সেগুলো আবার দলগুলোর কাছে পাঠানো হবে। কোনো কোনো কমিশনের প্রতিবেদনে এও বলা হয়েছে, কিছু সংস্কার অন্তর্বর্তী সরকার করে যেতে পারে আর কিছু পরবর্তী নির্বাচিত সরকার করবে। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আলোচনার পর দলগুলোর প্রতিনিধিরা যেভাবে বলছেন, তাতে কিছু বিষয়ে ঐকমত্য হবে, কিছু বিষয়ে আংশিক হবে, কিছু বিষয়ে একেবারেই হবে না। তবে এ জন্য আমাদের থেমে থাকার সুযোগ নেই।

এখন রাজনীতির মুখ্য বিষয় হয়ে উঠেছে নির্বাচন। সংস্কার যেমন প্রয়োজন, তেমনি নির্বাচনও হওয়া জরুরি। বাংলাদেশের মানুষ দীর্ঘদিন ভোটাধিকারের মাধ্যমে রাষ্ট্র পরিচালনায় তাদের মতামত জানাতে পারেননি। এবার সেই সুযোগ এসেছে। জনগণই যেখানে শেষ কথা, তাদের মতামতের ভিত্তিতে গঠিত জাতীয় সংসদের হাতেই সংস্কারের ভার ছেড়ে দেওয়াই হবে যুক্তিযুক্ত। ৫ আগস্টের পর একটা উদার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠনের যে স্বপ্ন বাংলাদেশের মানুষ দেখছে, সে জন্য একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচনের বিকল্প নেই।

পুলিশের সন্দেহভাজন গ্রেপ্তার ন্যায়বিচার সুনিশ্চিত করার উদ্যোগ নিন

প্রকাশ: ২১ এপ্রিল ২০২৫, ০৭:২৫ পিএম
পুলিশের সন্দেহভাজন গ্রেপ্তার
ন্যায়বিচার সুনিশ্চিত করার উদ্যোগ নিন

রাজধানীতে প্রায়ই ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। এ নিয়ে পত্রপত্রিকায় যেমন খবর প্রকাশিত হচ্ছে, তেমনি সেসব ছিনতাইয়ের বিরুদ্ধে পুলিশ ব্যবস্থা নিচ্ছে, এমন খবরও মিলছে। যদিও অধিকাংশ ক্ষেত্রে ছিনতাইয়ের তুলনায় ব্যবস্থা গ্রহণের হার কম। ভুক্তভোগীদের অনেকেই থানায় অভিযোগ করার ব্যাপারে উৎসাহী হন না। এর কারণ, পুলিশ কতটা কী  করতে পারবে, তা নিয়ে ভুক্তভোগীরা সন্দিহান থাকেন। খবরের কাগজে প্রকাশিত একটা প্রতিবেদনে কিছুদিন আগে ঘটে যাওয়া এ রকমই একটা সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। ছিনতাইয়ের অভিযোগে রাজধানীর মিরপুর মডেল থানায় করা একটি মামলায় সন্দেহভাজন হিসেবে এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠিয়ে বিপাকে পড়েছে পুলিশ। এতে ঘটনা সম্পর্কে পুলিশের আন্তরিকতা ও সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
 
প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ১৫ এপ্রিল মিরপুর মডেল থানায় দণ্ডবিধির ৩৯২ ধারার অভিযোগে হওয়া মামলায় আকিব নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর ঘটনার সঙ্গে জড়িত বলে চিকিৎসার স্লিপসহ তাকে আদালতে পাঠায় পুলিশ। সংশ্লিষ্ট বিচারক ছিনতাইয়ের ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে আসামি দাবি করেন, যে ছিনতাইয়ের ঘটনায় মামলা হয়েছে, তার সঙ্গে তিনি জড়িত নন। 

বিচারক আসামির বক্তব্যকে স্বেচ্ছায় জবানবন্দি হিসেবে গ্রহণ করেন। জবানবন্দিতে আসামি বলেন, দুজন ছিনতাইকারী একজন নারীর কাছ থেকে মোবাইলটি ছিনিয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় তার কাছে রেখে যান। পরে লোকজন তাকে ধরে পুলিশে সোপর্দ করেন। ভুক্তভোগীকে পুলিশ খুঁজে পায়নি। 

বিচারক জবানবন্দি গ্রহণের পর আদেশে উল্লেখ করেন, থানা থেকে পাঠানো পুলিশি বিবরণে আসামির আহত হওয়ার কোনো উল্লেখ নেই। লক্ষণীয়, পুলিশ যথাযথভাবে ঘটনার বিবরণ না দিয়ে আসামিকে আদালতে পাঠিয়েছেন। তাদের বর্ণনায় চিকিৎসার কথা ছিল। কিন্তু আহত হওয়ার উল্লেখ ছিল না। 
সম্প্রতি ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন (সিএম) আদালতে যেসব পুলিশি বা জিআর মামলা আসছে, সেসব মামলার অধিকাংশ আসামিকে সন্দেহভাজন অজ্ঞাতনামা আসামি হিসেবে পাঠানো হচ্ছে। 

এসব ক্ষেত্রে কীভাবে আসামিরা মামলাগুলোর ঘটনার সঙ্গে জড়িত, সে বিষয়ে তদন্তকারী কর্মকর্তারা বিস্তারিত কোনো বর্ণনা বা ব্যাখ্যা সাধারণত দেন না। এতে খুব সহজেই আসামিদের জামিন পাওয়ার ক্ষেত্রটি তৈরি হয়ে যায়। 

মামলার ওই আদেশে বিচারক মিরপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এবং মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাকে কেন নিয়মিত মামলা রুজু করা হলো না এবং মামলার বর্ণনায় আহত হওয়ার বিষয়ে কেন ব্যাখ্যা নেই, তার লিখিতভাবে জানতে চেয়েছেন। সেই সঙ্গে বিচারক আসামির স্বীকারোক্তি অনুসারে ছিনতাইয়ের ঘটনার বিষয়টি প্রাথমিকভাবে তদন্ত করে নিয়মিত মামলা রুজু করার নির্দেশ দিয়েছেন। 

মামলার বিবরণ এবং বিচারকের উল্লিখিত আদেশ থেকে বোঝা যায়, যে আইনি প্রক্রিয়ায় মামলাটি করা উচিত ছিল, ওসি ও তদন্ত কর্মকর্তা সেটা করেননি। মামলার ঘটনায় ছিনতাইকারীকে সন্দেহভাজন হিসেবে পুলিশ উপস্থাপন করেছে। ভুক্তভোগীরও সন্ধান পায়নি বলে পুলিশ জানিয়েছে আর তাতেই মামলাটি দুর্বল হয়ে গেছে। আসলে পুলিশের বিবরণটি সিএম আদালতে বিচারযোগ্য মামলাই হয়ে ওঠেনি। 

পুলিশের বিরুদ্ধে বিচারপ্রার্থীদের অনেকেই অভিযোগ করে থাকেন, পুলিশ বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ঘটনার যথাযথ তদন্ত করে না। মামলার বিবরণ থাকে এলোমেলো, কার্যকারণহীন। দুটি কারণে এ রকম হতে পারে। প্রথমত, আইনি বিবরণ বা ভাষা সম্পর্কে জানা না থাকা; দ্বিতীয়ত, ইচ্ছাকৃতভাবে মামলার বিবরণকে অবিন্যস্ত করে উপস্থাপন করা। এতে যা ঘটে তা হলো, ন্যায়বিচারের বিষয়টি অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। প্রকৃত অপরাধী ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যায় অথবা নিরপরাধ মানুষের সাজা পাওয়ার আশঙ্কা থাকে। ন্যায়বিচারের জন্য এটা অশনিসংকেত। এই প্রেক্ষাপটে পুলিশের আন্তরিকতা এবং আইনি সক্ষমতা বৃদ্ধির ওপর জোর দিতে হবে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বলব, আন্তরিকতার সঙ্গে অপরাধের বিশ্বাসযোগ্য তদন্ত করুন। পুলিশের আইনি সামর্থ্য বৃদ্ধি করুন। ন্যায়বিচার সুনিশ্চিত করার উদ্যোগ নিন।