বরগুনার নৌপথে রোগী বহনের জন্য ২০০৮ সালে একটি নৌ-অ্যাম্বুলেন্স দিয়েছিল ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়। সিডর-পরবর্তী সময়ে এটি বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে দেওয়া হলেও সেই থেকে এখন পর্যন্ত একজন রোগীও বহন করতে পারেনি সেটি। ফলে সরকারের বিপুল অঙ্কের টাকা গচ্চার সঙ্গে সঙ্গে অযত্ন-অবহেলায় অ্যাম্বুলেন্সটি এখন নিঃশেষের পথে।
জেনারেল হাসপাতাল ও সিভিল সার্জনের কার্যালয়ের সূত্র ও তথ্যমতে, ২০০৭ সালের ঘূর্ণিঝড় সিডরের পর দক্ষিণাঞ্চলের সড়ক যোগাযোগব্যবস্থা ভেঙে পড়লে জেলার নৌপথে রোগী পরিবহনের জন্য ২০০৮ সালের এপ্রিলে একটি নৌ-অ্যাম্বুলেন্স দেয় ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়। এর ব্যয় ধরা হয় ২২ লাখ ৮০ হাজার টাকা। কিন্তু অ্যাম্বুলেন্সটি এখন পর্যন্ত একজন রোগীও বহন করতে পারেনি।
এ ছাড়া দীর্ঘদিন খাকদোন নদীর চরে ফেলে রাখার পর অবকাঠামো ও যন্ত্রপাতি বিকল হয়ে অ্যাম্বুলেন্সটির বর্তমান ঠিকানা হয়েছে বরগুনা জেনারেল হাসপাতলের পুরোনো ভবনের পূর্ব পাশের পরিত্যক্ত স্থানে।
সরেজমিনে দেখা যায়, হাসপাতালের পেছনে ফেলে রাখা হয়েছে নৌ-অ্যাম্বুলেন্সটি। লতা আর আগাছায় ছেয়ে আছে সেটি। শুধু অবকাঠামোই টিকে আছে। তাও প্রায় নিঃশেষের পথে। ভেতরের মেশিনাদি বা যন্ত্রপাতি কিছু নেই।
নৌ-অ্যাম্বুলেন্সটির চালক আবদুর রহমান বলেন, ‘আমি এখন পর্যন্ত এটিতে কোনো রোগী পরিবহন করিনি। নৌপথে বরগুনা থেকে বরিশাল যাওয়া-আসায় জ্বালানিসহ ১০-১৫ হাজার টাকা খরচ ধরা হলেও রোগীদের কেউ এ খরচ বহন করে আসতে চান না। কারণ এই খরচের অর্ধেকেরও কমে সড়কপথে রোগী আনা-নেওয়া করা যায়। সে কারণেই এটি অচল হয়ে পড়ে আছে। এ ছাড়া এর দুটি ইঞ্জিন হাসপাতালের ভাণ্ডারে রাখা হয়েছে।’
হাসপাতালের ভাণ্ডার সংরক্ষক বদরুল আমিন বাদল বলেন, ‘আমি গত ১৮ জুলাই এখানে যোগদান করেছি। তখন দায়িত্বে থাকা ভারপ্রাপ্ত ভাণ্ডার সংরক্ষক আল আমিন আমাকে ভাণ্ডারে সংরক্ষিত শুধু ১৩ প্রকারের ওষুধের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেন। তাই নৌ-অ্যাম্বুলেন্স ও এর কোনো ইঞ্জিন সংরক্ষণের বিষয় আমার জানা নেই।’
হাসপাতালের সাবেক (ভারপ্রাপ্ত) ভাণ্ডার সংরক্ষক ও অফিস সহকারী-কাম-কম্পিউটার অপারেটর মো. আল আমিন বলেন, ‘নৌ-অ্যাম্বুলেন্সটির দুটি ইঞ্জিন হাসপাতালেই সংরক্ষিত আছে।’
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক লোকমান হাকিম বলেন, ‘যতদূর জানি, উপকূলীয় জেলা বিবেচনা করে নৌপথে রোগীদের সেবায় নৌ-অ্যাম্বুলেন্সটি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু খরচের কথা বিবেচনা করে রোগীরা যাতায়াত না করায় এটি অচল হয়ে পড়ে থাকতে থাকতে নষ্ট হয়েছে। কয়েক বছর আগে নদী থেকে তুলে এনে নৌ-অ্যাম্বুলেন্সটিকে জেনারেল হাসপাতালের মধ্যে রাখা হয়েছে।’
বরগুনা জেলা স্বাস্থ্য অধিকার ফোরামের সভাপতি মো. হাসানুর রহমান ঝন্টু বলেন, ‘নৌ-অ্যাম্বুলেন্সটি দেওয়ার আগে খরচ বিবেচনা করা উচিত ছিল। এটি ব্যবহারের জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষেরও উচিত ছিল ব্যাপকভাবে প্রচার-প্রচারণা করাসহ সঠিক ব্যবস্থাপনার। এভাবে অপরিকল্পিত ও অবিবেচনাপ্রসূত সিদ্ধান্তের কারণে রাষ্ট্রের অর্থ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, যা খুবই দুঃখজনক।’
বরগুনার সিভিল সার্জন ডা. মো. ফজলুল হক বলেন, ‘জেনারেল হাসপাতালের কোনো কিছুই আমাদের নিয়ন্ত্রণে না। হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কই এ বিষয় যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষমতা রাখেন।’
এমএ/এআর