ঢাকা ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, সোমবার, ০২ ডিসেম্বর ২০২৪

পাকিস্তানের গণতন্ত্র রক্ষায় নতুন কৌশল জরুরি

প্রকাশ: ২৯ অক্টোবর ২০২৪, ১১:৩৩ এএম
পাকিস্তানের গণতন্ত্র রক্ষায় নতুন কৌশল জরুরি
মোস্তফা নওয়াজ খোখার

পাকিস্তান তার ইতিহাসে বেশির ভাগ সময়ই সামরিক স্বৈরশাসকদের দ্বারা শাসিত হয়েছে। পাকিস্তানে অল্প সময়ের জন্য গণতন্ত্র ছিল। কারণ, সামরিক বাহিনী এতটাই বিতৃষ্ণার বিষয় হয়ে উঠেছিল যে, গণতন্ত্রের কাছে সাময়িকভাবে স্থান ছেড়ে দেওয়া ছাড়া তার আর কোনো উপায় ছিল না। সর্বশেষ সামরিক স্বৈরশাসককে ২০০৮ সালে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়েছিল এবং পাকিস্তান তার ইতিহাসে দীর্ঘদিন পর বেসামরিকদের হাতে নিয়ন্ত্রণ ফিরে পেয়েছিল।

 সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার পরিবর্তে পাকিস্তান পেছনের দিকে পিছলে গেছে। গত বছর পাকিস্তানকে ‘হাইব্রিড’ থেকে ‘স্বৈরাচারী’ শাসনামলে নামিয়ে আনা হয়েছে। নির্বাচনি প্রক্রিয়া এবং এর গণতন্ত্রের বিশ্বাসযোগ্যতাও হারিয়ে গেছে- শুধু সাধারণ পাকিস্তানিদের চোখেই নয়, বিশ্বের চোখেও। 

এই ঘটনা রাতারাতি হয়নি। আর্নেস্ট হেমিংওয়ের ‘দ্য সান অলসো রাইজেস’-এ একটি চরিত্র আরেকজনকে জিজ্ঞেস করে- ‘কীভাবে আপনি দেউলিয়া হয়ে গেলেন?’ এর উত্তর পাওয়া যায় দুই উপায়ে। গত এক দশকে বা তারও বেশি সময় ধরে পাকিস্তানের সব প্রধান রাজনৈতিক দল গণতন্ত্রের পতনের দিকে নিয়ে গেছে। ক্ষমতার লালসায় তারা সামরিক বাহিনীর সঙ্গে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। প্রভাব খাটিয়ে নির্বাচনে কারচুপি ও রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে নিশ্চিহ্ন করতে চেয়েছে। এটা করে তারা আইনের শাসন, গণতান্ত্রিক রীতিনীতি এবং দেশের সংবিধানকে ক্ষুণ্ন করতে সাহায্য করেছে।

গত দুই নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে। রাজনৈতিক বিরোধ মীমাংসার পরিবর্তে তারা সংঘাত বাড়িয়েছে। ২০১৮ সালে যারা বন্দি হয়েছিল, তারা ইমরান খানকে ক্ষমতায় এনেছিল এবং তাতে অনেক বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছিল। ২০১৮ সালে ইমরান খান সামরিক বাহিনীকে মিত্র হিসেবে গণ্য করেছিলেন। ২০২৪ সালের মধ্যে তা শত্রুতে পরিণত হয়েছিল। ইমরান খান এখন জেলে আছেন, তবে খুব শিগগিরই জোয়ার ফিরে আসবে। ইতিহাস কথা বলে। ইমরান খানের অবশ্যই কোনো না কোনো সময়ে জোয়ার ফিরে আসবে। সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হলো- কে বা কারা পাকিস্তান পরিচালনা করবে, এই বিষয়টি কেন সামরিক বাহিনীকে বেছে নেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। রাজনৈতিক নেতা ও দলগুলো এই প্রশ্নটি সমাধান করতে আগ্রহী নয়। বর্তমানে পিক মি, লাভ মি, সিলেক্ট মি- এই ধরনের রাজনীতি কমে গেছে। 

ফলে দেশে উদ্বেগজনক নানা প্রবণতা দেখা দিয়েছে। রাষ্ট্র ভিন্নমতের বিরুদ্ধে দমনপীড়ন করছে। ইমরান খানের দলকে ধ্বংস করার চেষ্টা করা হচ্ছে। বর্তমানে পশতুন তাহাফুজ আন্দোলনকে নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এটি শান্তিপূর্ণ সংগঠন, যেটি দীর্ঘদিন ধরে দেশের জাতিগত পশতুনদের অধিকারের দাবি রেখে আসছে। পুলিশ হেফাজতে সাম্প্রতিক হত্যাকাণ্ডে সরকার নিন্দা করতে ধীরগতি দেখিয়েছে। গত মাসে ধর্মে আঘাত আনার অভিযোগে দুই নাগরিককে পুলিশ হেফাজতে হত্যা করা হয়েছিল। কী কারণে এই হত্যাকাণ্ডের সূত্রপাত হতে পারে তা মানুষ এখনো জানতে পারেনি। ধর্মীয় উগ্রবাদ এখানে কোনো ভূমিকা পালন করেছে কিনা তা নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি।

যখন রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দু নাগরিকদের কল্যাণ থেকে বের হয়ে নেতাদের ক্ষমতার লড়াইয়ে পরিণত হয়, তখন সাধারণ মানুষ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে পাকিস্তানের অর্থনীতি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পাকিস্তানে বর্তমানে প্রায় ১২.৫ মিলিয়ন মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করছে। এখন স্কুলের বাইরে থাকা শিশুদের সংখ্যা মারাত্মকভাবে বেড়ে তা ২৫.৩ মিলিয়ন হয়েছে, যা পাঁচ থেকে ১৬ বছর বয়সী শিশুদের ক্ষেত্রে এক তৃতীয়াংশেরও বেশি। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বাজেট বরাদ্দ খুবই কম। 

গত মাসে দেশটি তার ইতিহাসে ২৫তম আইএমএফের মাধ্যমে অর্থ সহায়তার ‘বেলআউট’ প্রোগ্রামে প্রবেশ করেছে। এই সহায়তা পাকিস্তানকে তার সার্বভৌম ঋণ খেলাপি থেকে অব্যাহতি দিয়েছে। এর জন্য কিছু সংস্কারের প্রয়োজন হয়েছে। লোকসানে থাকা রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো বেসরকারিকরণ ও কর বৃদ্ধি- যা পূর্ববর্তী সরকার জনসাধারণের প্রতিক্রিয়ার ভয়ে এতদিনে কার্যকর করতে সাহস পায়নি। অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার ওপর নির্ভর করে। গত সপ্তাহে এক বিতর্কিত সংশোধনীর মাধ্যমে উচ্চ আদালতে বিচারক নিয়োগের ওপর আরও নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক বিচার কমিশন (ICJ) এবং জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান এটিকে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন করার একটি প্রচেষ্টা হিসেবে দেখছে।  এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছে পাকিস্তান। 

আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পাকিস্তানের পরিস্থিতি একটি অন্ধকার ঘরের মতো। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যাহার এবং তালেবানদের কাবুল দখলে নেওয়ার পর থেকে কট্টরপন্থি তালেবান শাখা তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি) কর্তৃক সন্ত্রাসী হামলায় হাজার হাজার পাকিস্তানি বেসামরিক নাগরিক ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য নিহত হয়েছে। পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যে সম্পর্কে তিক্ত অবস্থা বিরাজ করছে এবং যেকোনো সময় সংঘর্ষে লিপ্ত হতে পারে। বছরের পর বছর ধরে পাকিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনী তালেবানদের মিত্র হিসেবে গ্রহণ করতে সতর্ক করেছিল এবং উপেক্ষা করেছিল। তালেবানরা পাকিস্তানের উপজাতীয় এলাকায় আশ্রম গড়ে তোলার চেষ্টা করছে। তালেবানদের লক্ষ্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পিছু হটলেই তালেবানরা আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নেবে। মিত্র হওয়া থেকে দূরে থেকে তালেবান ইসলামিক আমিরাতকে প্রসারিত করতে চায়। টিটিপির লক্ষ্য হলো পাকিস্তানের সংবিধান ও সরকারকে উৎখাত করা। 

ভুল ও মূর্খতার পরিচয় মানুষ তখনই দেয় যখন খারাপ সময় আসে। বর্তমান অবস্থা থেকে পাকিস্তান দুই পথে এগিয়ে যেতে পারে। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী সরকার গঠন করে কৌশল পরিবর্তন করে দেশ পরিচালনা করতে পারে। অদূর ভবিষ্যতে পাকিস্তানের গণতন্ত্র এবং বাইরের চাপে ভেতরের বিস্ফোরণের মধ্যে ভারসাম্যের ঝুঁকি দেখা দিতে পারে।
 
লেখক: সাবেক সিনেটর, পাকিস্তান এবং পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর সাবেক মানবাধিকারবিষয়ক উপদেষ্টা।
দ্য গার্ডিয়ান থেকে সংক্ষেপিত অনুবাদ: সানজিদ সকাল

একাত্তরের যুদ্ধ ও জাতীয়তাবাদের পরীক্ষা

প্রকাশ: ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:৩৮ পিএম
একাত্তরের যুদ্ধ ও জাতীয়তাবাদের পরীক্ষা
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী

বাঙালি মুসলমানই পাকিস্তান প্রতিষ্ঠায় প্রধান ভূমিকা নিয়েছিল। তারা একই সঙ্গে বাঙালি ও মুসলমান ছিল। বাঙালিত্বটাই ছিল প্রধান, সেটিই ছিল স্বাভাবিক, তারা নিজেদের মুসলমান পরিচয়টিকে সামনে নিয়ে এসেছিল রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার আশায়। কিন্তু নতুন রাষ্ট্রের অভ্যুদয়ের সঙ্গে সঙ্গেই দেখা গেল তাদের স্বপ্ন আক্রান্ত হয়েছে। ওই আক্রমণের মুখেই তারা তাদের বাঙালি পরিচয়ের কাছে ফিরে গেছে, ওই পরিচয়টিকেই প্রধান করে তুলেছে। আক্রমণটি চূড়ান্ত রূপ নিয়েছিল পঁচিশে মার্চের মধ্যরাতে। অখণ্ড পাকিস্তানকে ভেঙে ফেলার কাজটা বাঙালিদের হস্তক্ষেপের জন্য অপেক্ষা করেনি, পাকিস্তানি হানাদাররাই সেটা শুরু ও শেষ করেছে।…

একাত্তরের যুদ্ধকালীন সমষ্টিগত দুঃসময় আমাদের জীবনে আর কখনো আসেনি। যুদ্ধটা ছিল রাজনৈতিক এবং তাতে জাতীয়তাবাদ নানাভাবে ও বিভিন্ন দিক দিয়ে পরীক্ষার সম্মুখীন হয়েছিল। বাঙালি জাতীয়তাবাদের শক্তি সে সময়ে বিশেষভাবে প্রকাশ পায়, তার দুর্বলতাও যে ধরা পড়েনি এমনও নয়। বাঙালির জাতীয়তাবাদের শক্তি ছিল ঐক্যে, দুর্বলতা ছিল নেতৃত্বের পেটি বুর্জোয়া চরিত্রে। বিপরীত পক্ষে পাকিস্তানি জাতীয়তাবাদও পরীক্ষা দিয়েছিল। তার দুর্বলতা ছিল অনৈতিকতায় ও অনৈক্যের। পাকিস্তানি জাতীয়তাবাদের কৃত্রিমতা তখন উন্মোচিত হয়ে যায়। ৫৬ জনের ওপর ৪৪ জন ঝাঁপিয়ে পড়েছিল; আক্রমণের চরিত্রটা ছিল গণহত্যার। পাকিস্তানি জাতীয়তাবাদের রক্ষ করা পরিণত হয়েছিল হানাদার ঘাতক ও দস্যুতে; তাদের অন্য কোনো জোর ছিল না, অস্ত্রের জোর ছাড়া। নৈতিক জোর তো নয়ই। ওই যুদ্ধে ভারত যুক্ত হয়েছিল স্বাভাবিকভাবেই, তাদের তাগিদটাও জাতীয়তাবাদেরই ছিল। আমেরিকা, চীন, রাশিয়া- এদের সংযোগটাও যে জাতীয় স্বার্থের বিবেচনার দ্বারা নির্ধারিত হয়েছিল সে বিষয়েও সন্দেহ নেই।

আসলে বাংলাদেশের মানুষ তো একসময়ে পাকিস্তানি জাতীয়তাবাদকেই নিজেদের মধ্যে ধারণ করত। এমনকি একাত্তরের প্রথম দিকেও। পয়লা মার্চ ঢাকার স্টেডিয়ামে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলা চলছিল পাকিস্তানি টিমের সঙ্গে ইংল্যান্ডের এমসিসি টিমের; পরিবেশটা ছিল রীতিমতো উৎসবমুখর। স্টেডিয়ামভর্তি বাঙালি দর্শকরা সবাই প্রবলভাবে পাকিস্তানি দলকে সমর্থন করছিল। কিন্তু ভরদুপুরে যেই মুহূর্তে শোনা গেল গণপরিষদের অধিবেশন স্থগিত করা হয়েছে, অমনি দৃশ্যপট সম্পূর্ণ বদলে গেল। স্টেডিয়াম মুখরিত হলো ‘জয় বাংলা’ ধ্বনিতে। আসন তছনছ করা, আগুন জ্বালানো, সবকিছু ঘটল। পাকিস্তানি খেলোয়াড়রা আক্রান্ত হলো, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাহারায় তাদের জান বাঁচিয়ে আশ্রয় নিতে হলো এমপি হোস্টেলে, মাস ঘুরতে না ঘুরতেই যে আবাসটি পরিণত হয়েছিল বাঙালি নির্যাতনের কেন্দ্রে। পরিবর্তনটা অবিশ্বাস্য মনে হলেও মোটেই অস্বাভাবিক ছিল না। (পাকিস্তানি প্রথম অধ্যাপক খান সারওয়ার মুরশিদ স্মারক বক্তৃতা ২০১৫) পরিবর্তিত জাতীয়তাবাদের প্রতি অবিশ্বাস গভীর থেকে গভীরতর হচ্ছিল এবং আক্রমণের মুখে তা প্রতিরোধে পরিণত হয়েছিল। আক্রমণটা পাকিস্তানিরাই করেছে এবং কাজটা শুরু হয়ে গিয়েছিল সেই সাতচল্লিশ সালেই। পাকিস্তানের জন্মের পর থেকেই। 

তবু সত্য তো এটাও যে, একদা বাঙালি মুসলমানই পাকিস্তান প্রতিষ্ঠায় প্রধান ভূমিকা নিয়েছিল। তারা একই সঙ্গে বাঙালি ও মুসলমান ছিল। বাঙালিত্বটাই ছিল প্রধান, সেটিই ছিল স্বাভাবিক, তারা নিজেদের মুসলমান পরিচয়টিকে সামনে নিয়ে এসেছিল রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার আশায়। কিন্তু নতুন রাষ্ট্রের অভ্যুদয়ের সঙ্গে সঙ্গেই দেখা গেল তাদের স্বপ্ন আক্রান্ত হয়েছে। ওই আক্রমণের মুখেই তারা তাদের বাঙালি পরিচয়ের কাছে ফিরে গেছে, ওই পরিচয়টিকেই প্রধান করে তুলেছে। আক্রমণটি চূড়ান্ত রূপ নিয়েছিল পঁচিশে মার্চের মধ্যরাতে। অখণ্ড পাকিস্তানকে ভেঙে ফেলার কাজটা বাঙালিদের হস্তক্ষেপের জন্য অপেক্ষা করেনি, পাকিস্তানি হানাদাররাই সেটা শুরু ও শেষ করেছে। 

বাঙালি মুসলমান কেন পাকিস্তানপন্থি হয়েছিল তার ব্যাখ্যা অস্পষ্ট নয়। ড. খান সারওয়ার মুরশিদের পত্রিকা নিউ ভ্যালুজ-এ অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাকের একটি প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছিল, তাতেও ব্যাখ্যাটির দেখা পাওয়া যাবে। রাজ্জাক স্যার লেখার চেয়ে বলতেই পছন্দ করতেন বেশি, ওই প্রবন্ধটি ড. মুরশিদ যে প্রকাশ করতে পেরেছেন তাতে সম্পাদক হিসেবে তার অনেক দক্ষতার একটির পরিচয় পাই। ‘দ্য মাইন্ড অব দ্য এডুকেটেড মিডল ক্লাস ইন দ্য নাইনটিনথ সেঞ্চুরি’ নামের ওই প্রবন্ধটিতে অধ্যাপক রাজ্জাক দেখাচ্ছেন যে, শিক্ষিত হিন্দু মধ্যবিত্ত যেভাবে সাম্প্রদায়িক হয়ে উঠছিল তাতে বিলম্বে উত্থিত শিক্ষিত মুসলিম মধ্যবিত্তের মধ্যে স্বাভাবিকভাবেই বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। সূত্রপাত ওই ঊনবিংশ শতাব্দীতেই, বিংশ শতাব্দীতে এসে দুই পক্ষের দূরত্ব বেড়েছে এবং মুসলিম মধ্যবিত্ত পাকিস্তানপন্থি হওয়া ছাড়া দৃষ্টিগ্রাহ্য গত্যন্তর দেখেনি। 

নিউ ভ্যালুজ থেকে বাছাই করা কিছু প্রবন্ধের একটি সংকলন ড. মুরশিদ তৈরি করেছিলেন, এর ভূমিকায় তিনি তার সহকর্মী ড. সৈয়দ সাজ্জাদ হোসায়েনের উৎসাহদানের কথা উল্লেখ করেছেন। আমার এই দুই শিক্ষক এক সময়ে পরস্পরের খুব কাছাকাছি ছিলেন। শুরুতে উভয়েই পাকিস্তানি জাতীয়তাবাদের বুদ্ধিবৃত্তিক বলয়ের ভেতরেই ছিলেন, যেমন ছিলেন বয়সে তাদের অগ্রবর্তী অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাক; কিন্তু ড. মুরশিদ ও অধ্যাপক রাজ্জাক যা করেছেন ড. হোসায়েন তা করতে পারেননি। তিনি পাকিস্তানিই রয়ে গেছেন এবং ভয়ংকর বিপদ-আপদের মধ্যেও সেই বিশ্বাসেই অবিচল ছিলেন। একাত্তরের পরে তিনি তার আত্মজৈবনিক রচনায় বাঙালি মুসলিম মধ্যবিত্ত পাকিস্তানি জাতীয়তাবাদ ত্যাগ করছে দেখে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। বিস্ময়ের প্রধান কারণ তাদের অকৃতজ্ঞতা। তারা কি ভুলে গেল যে বৈষয়িক ব্যাপারে পাকিস্তান রাষ্ট্র তাদের কতটা সাহায্য করেছিল? বিস্ময়ের সঙ্গে ব্যথা মিশিয়ে তিনি প্রশ্নটি করেছেন। বোঝাই যায় যে সংকীর্ণ শ্রেণি স্বার্থের কথাই ভাবছিলেন এবং বাঙালির জাতীয় মুক্তির প্রশ্নটিকে গুরুত্ব দেননি। দিলে তাকেও বাঙালি জাতীয়তাবাদী হতে হতো। সে ক্ষেত্রে অধ্যাপক রাজ্জাক এবং ড. মুরশিদের মতো তিনিও বিপদে পড়তেন; তবে তাদের সঙ্গে নয়, কয়েক মাস পরে। ওই কৃত্রিম রাষ্ট্র যে কেমন অমানবিক ছিল, কেমনভাবে তছনছ করে দিয়েছিল মানুষের জীবন, সেটা ভুলবার নয়। উল্লেখ্য, অধ্যাপক রাজ্জাক দেশের ভেতরেই আত্মগোপনে ছিলেন, সামরিক আদালত তার চৌদ্দ বছরের কারাদণ্ড ঘোষণা করেছিল; ড. মুর্শিদ সপরিবারে দেশত্যাগ করেছিলেন। 

সত্য এই যে, জাতীয় মুক্তির জরুরি প্রশ্নটিকে সবাই সমান গুরুত্ব দিতে পারেননি। পাকিস্তান রাষ্ট্রে বসবাসকারী বাঙালিদের ওপর পাকিস্তানি জাতীয়তাবাদের প্রভাব ছিল; ছিল আচরণগত অভ্যাস, এমনকি ওই জাতীয়তাবাদে আস্থা যে ছিল না তাও নয়। যে জন্য দেখা যায় একাত্তরের আগে তো বটেই, পরও স্থানে স্থানে পাকিস্তানি জাতীয়তাবাদের চিহ্ন রয়ে গেছে, বন্যার স্রোত নেমে গেলেও যেমন পানি আটকে থাকে, এখানে সেখানে। যেকোনো বিশ্বাসের পক্ষেই মানসিক সম্পত্তি ও আশ্রয়ে পরিণত হওয়াটা কোনো অসম্ভব ঘটনা নয়। দক্ষিণপন্থিরা পাকিস্তানি ভ্রান্তিতে পতিত হয়েছেন, বামপন্থিদের একটি অংশকেও দেখা গেছে শ্রেণি প্রশ্নকে অগ্রাধিকার দিতে গিয়ে জাতি প্রশ্নকে পেছনে ঠেলে দিয়েছেন। ফলে মুক্তিযুদ্ধে তাদের যেভাবে অংশগ্রহণ প্রত্যাশিত ছিল সেভাবে তারা অংশগ্রহণ করতে পারেননি। সেই সঙ্গে এটাও তো আমরা জানি, মার্চ মাসের শেষ দিনগুলোতে বাঙালিদের নেতা শেখ মুজিবুর রহমান এবং পাকিস্তানিদের হর্তাকর্তা ইয়াহিয়া খান যে দর-কষাকষি করছিলেন, সেটা পাকিস্তানকে ভাঙার জন্য ছিল না, ছিল তাকে বাঁচানোর জন্যই। সবকিছু মিলিয়ে মিশিয়ে পাকিস্তানি জাতীয়তাবাদের বলয় থেকে বাঙালির পক্ষে বের হয়ে যাওয়াটা সহজ ছিল না; মতাদর্শিক নিষেধটা নষ্ট হয়ে যায়নি, তার চেয়েও প্রবল ছিল রাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা। মুজিবের পেছনে ছিল জনমতের অকুণ্ঠ সমর্থন, ইয়াহিয়ার হাতে ছিল আগ্নেয়াস্ত্র। জনমতের জন্য জায়গা করে দেওয়াটা হতো ন্যায়সংগত, সেটা ঘটেনি; অস্ত্র দমন করতে চেয়েছে জনমতকে। শেষ রক্ষা অবশ্য হয়নি; জনমতেরই জয় হয়েছে। কিন্তু অল্প সময়ের মধ্যে পাকিস্তানি জাতীয়তাবাদীরা হত্যা, লুণ্ঠন, ধর্ষণের যে মহোৎসব বসিয়েছিল তার তুলনা ইতিহাসে বিরল। 

মানসিক আনুগত্যের ব্যাপারটা সামান্য ছিল না। ১৯৪৮-এর মার্চে জিন্নাহ ঢাকায় এসে উর্দুই একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হবে- এই ঘোষণা দিয়ে বাঙালির ঘৃণার পাত্রে পরিণত হয়েছিলেন। বিশেষ করে ছাত্রদের। তার পরও দেখা যাবে যে, তিনি জাতির পিতা ও কায়েদে আজম রয়ে গেছেন, এমনকি ছাত্রদের একাংশের মধ্যেও। ফারুক আজিজ খান তখন সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের আবাসিক ছাত্র। একাত্তরের অভিজ্ঞতাকে ভিত্তি করে স্প্রিং ১৯৭১ নামে তিনি একটি বই লিখেছেন। তাতে তিনি স্মরণ করেছেন যে, জিন্নাহ মারা গেছেন, বিবিসিতে এই খবর শুনে মুসলিম লীগপন্থি পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগের সদস্যরা বামপন্থি হিসেবে পরিচিত ছাত্রদের ওপর এমনভাবে চড়াও হয় যেন জিন্নাহর মৃত্যুর জন্য বামপন্থিরাই দায়ী। মুনীর চৌধুরী তখন ওই আবাসিক হলে থাকতেন, তিনিও আক্রমণের শিকার হয়েছিলেন। পাকিস্তানপন্থিরা একাত্তরে কী করবে তার পূর্বাভাস ঊনপঞ্চাশেই পাওয়া গিয়েছিল। ফারুক আজিজ লিখেছেন যে, আক্রমণকারীরা এমনকি তার ওপরও ক্রুদ্ধ ছিল, যদিও বামপন্থি বলে তিনি পরিচিত ছিলেন না। কারণ? কারণ তিনি জিন্নাহর মৃত্যুতে যথোপযুক্ত পরিমাণে শোক প্রকাশে ব্যর্থ হয়েছিলেন। পাকিস্তানের আদত শত্রু বামপন্থিরাই, এই রকমের একটা বোধ পাকিস্তানপন্থিদের চেতনায় সানন্দে খেলাধুলা করত- এ ক্ষেত্রে পাকিস্তানি সামরিক এবং বেসামরিকদের ভেতর খুব যে একটা পার্থক্য দেখা গেছে তা নয়। তবে তাদের এই বোধ একেবারে যে অযৌক্তিক ছিল তাও নয়। পাকিস্তানি জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে ছিল ধর্ম, আর বামপন্থিরা ছিলেন ধর্মনিরপেক্ষ, তাদের ‘নাস্তিক’ বলারও রেওয়াজ ছিল। তা ছাড়া স্বাধীন বাংলাদেশের আওয়াজ যে বামপন্থিরাই প্রথমে তোলেন এটাও তো ঐতিহাসিকভাবে সত্য। পাকিস্তানের নিপীড়নকারী ও অবৈজ্ঞানিক সত্তাটি তাদের কাছে স্পষ্ট না হয়ে পারেনি।

লেখক: ইমেরিটাস অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

দেশে স্থিতিশীল পরিবেশ প্রতিষ্ঠায় করণীয় এবং শঙ্কা

প্রকাশ: ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:৩৩ পিএম
দেশে স্থিতিশীল পরিবেশ প্রতিষ্ঠায় করণীয় এবং শঙ্কা
ড. সুলতান মাহমুদ রানা

সড়ক অবরোধ করলেই দাবি আদায় সহজ হবে। আর আন্দোলন ঠেকাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। ৫ আগস্টের পর সারা দেশে বিভিন্ন স্থানে নানা ধরনের সংঘাত এবং সহিংসতা হয়েছে। শুধু তাই নয়, অনেক সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সক্রিয়তার অভাবে সারা দেশে যেভাবে চুরি ও ডাকাতি বেড়েছে তা সত্যিই দেশের জন্য আশঙ্কাজনক ছিল।...

প্রায় প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘাতের খবর পাচ্ছি। বিশেষ করে বিভিন্ন তুচ্ছ ইস্যুতে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ উল্লেখ করার মতো। ইতোমধ্যেই সংঘাতের ফলে বেশ কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকদের বিক্ষোভের খবরটিও এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য। এ ছাড়া রাজধানীতে চাকরি জাতীয়করণ, বেতন বৃদ্ধি, পদোন্নতিসহ নানা দাবিতে আনসার, আউটসোর্সিং কর্মী, শিক্ষক, কর্মচারীসহ বিভিন্ন পেশার চাকরিজীবীরা অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর সড়ক বন্ধ করে আন্দোলন করেছেন। এইচএসসি পরীক্ষায় ফেল করে পাসের দাবিতে সচিবালয়ে ঢুকে পড়া পরীক্ষার্থী এবং আনসার সদস্য ছাড়া আর কারও বিরুদ্ধে কঠোর হয়নি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ব্যবস্থাও নেয়নি। প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনাও ঘেরাও হচ্ছে মাঝেমধ্যে। বাদ যায়নি উচ্চ আদালতও। 

বিভিন্ন দাবিদাওয়া নিয়ে একটার পর একটা আন্দোলন রাজধানীবাসীর স্বাভাবিক জীবনে বাধা তৈরি করছে। গত ২৫ নভেম্বর গোটা রাজধানীতে সংঘাত-সহিংসতা ও নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল। সরকারের পক্ষ থেকে সংঘাতকারীদের প্রতি হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে সরকার বারবার বলেছে, যৌক্তিক দাবিতে আন্দোলনের অধিকার সবার রয়েছে। তবে জনগণকে জিম্মি করে যেন আন্দোলন করা না হয়। তাদের আহ্বানে ভ্রুক্ষেপ করছে না আন্দোলনকারীরা। তারা মনে করছে আন্দোলন না করলে তাদের দাবি কোনোভাবেই মানা হবে না। এমনকি আন্দোলনকারীরা তাদের নিজ নিজ দাবিকে ন্যায্য এবং যৌক্তিক মনে করে মাঠে নামছে। সবার মধ্যে যেন ধারণা গড়ে উঠেছে, সড়ক অবরোধ করলেই দাবি আদায় সহজ হবে। আর আন্দোলন ঠেকাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। 

আমরা লক্ষ করেছি, গত ৫ আগস্টের পর সারা দেশে বিভিন্ন স্থানে নানা ধরনের সংঘাত এবং সহিংসতা হয়েছে। বিশেষ করে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের বাড়িঘর লুটপাটের বেশ কিছু খবর গণমাধ্যম থেকে জেনেছি। শুধু তাই নয়, অনেক সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সক্রিয়তার অভাবে সারা দেশে যেভাবে চুরি ও ডাকাতি বেড়েছে, তা সত্যিই দেশের জন্য আশঙ্কাজনক ছিল। এখন চুরি-ডাকাতি কিংবা লুটপাট কিছুটা কমে এলেও অন্য অনেক ক্ষেত্রে অস্থিতিশীল পরিবেশ চোখে পড়ার মতো। সরকারের পক্ষ থেকে এসব বন্ধে তৎপরতা থাকলেও এখনো পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে নেই। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনরে নেতারা এ বিষয়ে যথেষ্ট সজাগ রয়েছেন, সেটি তাদের বক্তব্য-বিবৃতি দেখলে স্পষ্ট ধারণা করা যায়। আমরা দেখেছিলাম জুলাই-আগস্ট মাসে যেসব ছাত্র আন্দোলন করেছিল, তাদেরই আবার কিছু অংশ এখন বিভিন্ন দাবিতে রাস্তায় নামছে। বিভিন্ন পরিস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সব নৈরাজ্যকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। অনেকেই মন্তব্য করছেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কার্যক্রম এখনো পুরোপুরি সক্রিয় হয়নি। যদিও সব ক্ষেত্রেই সরকার ঢেলে সাজানোর চেষ্টা করেছে। তার পরও কেন হচ্ছে না- সেটি একটি বড় প্রশ্ন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সক্রিয় করার লক্ষ্যে সরকারের পক্ষ থেকে বারবার তাগিদ দেওয়া হচ্ছে। এমনকি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারাও দিয়ে যাচ্ছেন। আবার আমার কাছে মনে হয়েছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও যথেষ্ট তৎপর রয়েছে তাদের দায়িত্বের বিষয়ে। এর পরও পরিস্থিতি কোনো কোনো ক্ষেত্রে সন্তোষজনক না হওয়ায় জনমনে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে।

জুলাই শহিদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলম ফেসবুকে লিখেছেন, ‘সবার আগে দেশ, দেশের মানুষ, জনগণের সম্পদ। যদি কেউ অযৌক্তিক কারণে বিশৃঙ্খলা বা নৈরাজ্য সৃষ্টির চেষ্টা করে, সে যে পরিচয়েরই হোক না কেন; দেশের স্বার্থে তাদের প্রতিহত করে জনমানুষের নিরাপত্তা প্রদান করা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রধান কাজ।’

শিক্ষার্থীরা নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষে জড়ানোয় দেশের বিদ্যমান পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে। এসব সংঘাতে জড়িত শিক্ষার্থীদের বেশির ভাগই ছিলেন জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের আন্দোলনকারী। ফলে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারাও পড়েছেন বিপাকে। পরিস্থিতি সামাল দিতে ২৫ তারিখ রাতে জরুরি সভা করে জাতীয় ছাত্র সংহতি সপ্তাহ পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বৈঠকে গণ-অভ্যুত্থান-পরবর্তী ঐক্য ধরে রাখতে না পারায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিভিন্ন দল ও মতের ছাত্রনেতারা। এমনকি তারা সবাইকে নিয়ে ছাত্র কাউন্সিল গঠনের পরামর্শ দেন। বর্তমান পরিস্থিতিতে সরকারকে আরও বেশি দায়িত্বশীল হতে হবে। পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আরও শক্তিশালী করা না গেলে এমন সংঘাতের ঘটনা আরও বাড়বে। এ ছাড়া ছাত্রনেতাদের কেউ কেউ অভ্যুত্থানের পর নিজেদের মধ্যে ঐক্য ধরে না রাখতে পারাকে দায়ী করছেন। এ প্রসঙ্গে ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা গণমাধ্যমকে বলেন, ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় আমাদের যে ঐক্য ছিল, সেটি এখন নেই। এই ঐক্যটা ধরে রাখার দরকার ছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের। তারা সেটি না করে নিজেরা নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের চেষ্টা করছে। শুধু সংকটের সময় নয়, আমরা চাই আমাদের ঐক্য সর্বদা থাকুক। তাহলে কোনো অপশক্তি মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারবে না।’

আবার অনেকেই দেশের অস্থিতিশীল পরিস্থিতির জন্য আওয়ামী লীগের হাত রয়েছে বলে মতামত দিয়ে যাচ্ছেন। এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর কোনোভাবেই বসে থাকবে না। তারাও চেষ্টা করবে কীভাবে রাজনীতির মাঠে সক্রিয় হওয়া যায়। কারণ আওয়ামী লীগের সব পর্যায়ের অসংখ্য নেতা-কর্মী রয়েছেন, যারা বর্তমান সরকার এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক ধরনের প্রতিপক্ষ হিসেবে কাজ করছে। 

সার্বিক বিশ্লেষণে এক কথায় বলা যায়, বর্তমান ত্রাহি পরিস্থিতি অনুকূলে না এলে এর প্রভাব অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক উভয় দিক থেকেই সমানভাবে সামনে আসার শঙ্কা রয়েছে। দেশে এখন এক ধরনের রাজনৈতিক অস্থিতিশীল অবস্থা বিরাজ করছে। এই রাজনৈতিক নাজুক অবস্থায় সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষগুলো ক্রমেই বিপাকে পড়ছে। এই মুহূর্তে সরকারের উচিত হবে দেশের কথা ভেবে, জনগণের কথা ভেবে পরিস্থিতি কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা। সরকারের প্রতি সাধারণ মানুষ ভরসা করতে চায়। সব মিলিয়ে প্রতিকার-প্রতিবাদ না করতে পারলেও সাধারণ মানুষের ধারণা হবে যে সরষের মধ্যেই রয়েছে ভূত। 

লেখক: অধ্যাপক, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
[email protected]

বিশেষ সাক্ষাৎকারে ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ সিন্ডিকেট ভাঙতে হলে রাজনৈতিক সদিচ্ছা লাগবে

প্রকাশ: ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৪৪ এএম
আপডেট: ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১২:২৬ পিএম
সিন্ডিকেট ভাঙতে হলে রাজনৈতিক সদিচ্ছা লাগবে
ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ

আমরা দেখছি যৌক্তিক দাম আছে কি না, সেটা মনিটর করা হচ্ছে। অযৌক্তিক দাম থাকলে যে দামে কেনা হয়েছে, খুচরা ব্যবসায়ীরা যে দামে বিক্রি করছে, তার যদি রসিদ না দেখাতে পারে, তাহলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে। আমরা সেই চেষ্টা করছি এবং কাজ হচ্ছে। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো, তাদের কারসাজি বা চালাকিটা ভাঙতে হলে রাজনৈতিক সদিচ্ছা লাগবে। রাজনৈতিক যে দলগুলো আছে, তারা যেন কথা বলতে পারে। দোকানদার সমিতি আছে, তাদের যথেষ্ট সহযোগিতামূলক হতে হবে। অনেক সময় তারা তা করে না। তারা নিজেদের লাভ-ক্ষতি নিয়ে ব্যস্ত থাকে। জোর করে দমন করে এটা ভাঙা সম্ভব নয়। এটা স্থায়ী হয় না। কয়দিন ভয় পেল তার পর আবার নিজের খোলসে ফিরে যায়, যা খুবই দুঃখজনক। একটি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাওয়া দরকার এবং আমরা সে ব্যাপারে ইতোমধ্যেই পদক্ষেপ নিয়েছি।...

ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ একজন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর। বর্তমানে তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করছেন। দেশের সামগ্রিক অর্থনীতি, বাজার ব্যবস্থাপনা, ব্যাংকিং খাতসহ বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেছেন খবরের কাগজের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন খবরের কাগজের সম্পাদকীয় বিভাগের সিনিয়র সহসম্পাদক শেহনাজ পূর্ণা

 

আজ শেষ পর্ব

খবরের কাগজ: বর্তমানে অর্থনীতির মূল চ্যালেঞ্জগুলো কী বলে আপনি মনে করেন?
ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ: আমাদের মূল চ্যালেঞ্জগুলো হলো মূল্যস্ফীতি, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সমস্যা, ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগে মন্থর গতি ইত্যাদি। সে ক্ষেত্রে ব্যবসা-বাণিজ্যের গতিপ্রকৃতি বেড়েছে। তবে একটু সময় তো লাগবেই। মূল্যস্ফীতির ব্যাপারে কঠিন চ্যালেঞ্জ ছিল, যা কিছুটা কমিয়ে আনা হয়েছে। বিভিন্ন ইস্যুতে ট্যাক্স কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। পণ্য আমদানির লক্ষ্যে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। আরও কিছু ক্ষেত্রে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে, যার সুফল আমরা দেখব। আমরা সেই আশা করতেই পারি। একটি ভঙ্গুর অর্থনীতি পুনর্গঠনের জন্য আমাদের কিছুটা সময় লাগবে এবং সে জন্য অপেক্ষা করতে হবে।

খবরের কাগজ: সিন্ডিকেট নিয়ে অনেক লেখালেখি, আলোচনা, কথাবার্তা হয়েছে। কিন্তু সিন্ডিকেট ভাঙা যাচ্ছে না। এ ব্যাপারে আপনাদের বিশেষ কোনো পদক্ষেপ আছে কি না?
ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ: সিন্ডিকেট ভাঙা যাচ্ছে না, ভেঙে তো দেওয়াই যায়। এখানে কিছু বিষয় আছে। সয়াবিন যে আমদানি করে, সে ৫০০ কোটি টাকার এলসি খুলবে। সে তো এক এক কনটেইনার সয়াবিন আনবে না। সয়াবিন আনতে হয় ব্রাজিল থেকে। অতএব মৌলভীবাজারের ১০০ লোককে যদি আমি বলি সয়াবিন আনো, জীবনে কেউ ছয় মাস বা এক বছরেও সয়াবিন পাবে না। এটা একটা ‘ন্যাচারাল মনোপলি’। আমদানির পর জাহাজ থেকে ডিস্ট্রিবিউশন যেন তাড়াতাড়ি হয় এবং সাধারণ মানুষের কাছে দ্রুত যায়, সেটা দেখতে হবে। গুদামে কয়েক দিন থাকার পর সেটা খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে যায়। সেখানেও দাম গোনার ব্যাপার থাকে। তারপর যানবাহন খরচটা যেন কমানো যায়, আমরা সেটা দেখছি অর্থাৎ বাধাহীনভাবে যানবাহন যেন চলতে পারে সেটা ভেবে দেখা হচ্ছে। তারপর বাজারে আসবে, সেখানে যেন কেউ বাধা না দিতে পারে। বিষয়গুলো আমরা আমলে নিচ্ছি।

ভোক্তা অধিকার বিভাগ মনিটর করছে। আমি প্রতিটি জেলায় মনিটরিং কমিটি করে দিয়েছি। সেখানে অ্যাডিশনাল এসপি, চেয়ারম্যানসহ ভোক্তা অধিকারের লোকজন আছে। তা ছাড়া ক্যাব আছে, তারাও পর্যবেক্ষণ করছে। ছাত্রদের প্রতিনিধি আছে, তারা মনিটরিং করছে। আসলে মূল্য বেঁধে সবকিছু করা যায় না। এখন যদি বলে দেওয়া হয় যে, এত টাকায় বেগুন বিক্রি করতে হবে, অথবা এত টাকায় চাল বিক্রি করতে হবে- এটাতে কোনো লাভ হবে না। এখানে এক এক জায়গায় এক এক রকম পরিবহন খরচ পড়বে। আমরা দেখছি যৌক্তিক দাম আছে কি না, সেটা মনিটর করা হচ্ছে। অযৌক্তিক দাম থাকলে যে দামে কিনে খুচরা ব্যবসায়ীরা বিক্রয় করছে, তার যদি রসিদ না দেখাতে পারে, তাহলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে। 

আমরা সেই চেষ্টা করছি এবং কাজ হচ্ছে। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো, তাদের কারসাজি বা চালাকিটা ভাঙতে হলে রাজনৈতিক সদিচ্ছা লাগবে। রাজনৈতিক যে দলগুলো আছে, তারা যেন বলতে পারে। দোকানদার সমিতি আছে, তাদের যথেষ্ট সহযোগিতামূলক হতে হবে। অনেক সময় তারা তা করে না। তারা নিজেদের লাভ-ক্ষতি নিয়ে ব্যস্ত থাকে। জোর করে দমন করে এটা ভাঙা সম্ভব নয়। তাহলে স্থায়ী হয় না। কয়দিন ভয় পেল তারপর আবার নিজের খোলসে ফিরে যায়, যা খুবই দুঃখজনক। একটি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাওয়া দরকার এবং আমরা সে ব্যাপারে ইতোমধ্যেই পদক্ষেপ নিয়েছি।

খবরের কাগজ: দেশ থেকে প্রচুর টাকা পাচার হয়ে গেছে। সেগুলো ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে কী পদক্ষেপ নিয়েছেন? 
ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ: দেশ থেকে টাকা কীভাবে চুরি হয়ে গেছে বা পাচার হয়েছে এবং তা কীভাবে ফিরিয়ে আনা যায়, সেটা পর্যবেক্ষণ করছি। ইতোমধ্যেই বাংলাদেশ ব্যাংক এ বিষয়ে কথা বলা শুরু করেছে। সেখানে আইনের পদক্ষেপ নিতে হবে। এগুলো সবই এখন প্রক্রিয়াধীন। আর বিশেষ করে দেশব্যাপী যে ঢালাওভাবে দুর্নীতিগুলো হয়েছে, সেগুলো বন্ধ করার জন্য আমরা আরও বেশি তৎপর হচ্ছি। আমাদের ইলেকট্রনিক টেন্ডার, এগুলো আগেও ছিল, তা এখন আরও বেশি জোরদার করা হচ্ছে। টেন্ডারগুলো যাচাই-বাছাই করা হবে। আর শেয়ারপত্রসহ সরকারি সেবা সবই অনলাইনে হচ্ছে। ১৫-১৬ লাখ সরকারি কর্মীর বেতন এখন অনলাইনে হচ্ছে। এমনকি প্রাইমারি স্কুলের বেতন, এমপিওভুক্ত স্কুল-কলেজের টাকা ইত্যাদি সবকিছুই অনলাইনে করা হচ্ছে। কাজেই এমনিতেই দেশ ও দেশের বাইরে এতদিন যে দুর্নীতিগুলো হয়েছে, এগুলো বন্ধ হয়ে যাবে।

খবরের কাগজ: বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়াতে আপনার পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাই।
ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ: আমাদের রিজার্ভ বাড়াতে হবে। রিজার্ভ বাড়াতে হলে ইনফ্লোটা বাড়াতে হবে। আমাদের রেমিট্যান্স আগের থেকে এখন অপেক্ষাকৃত ভালো হচ্ছে, অর্থাৎ আগের চেয়ে বেশি রেমিট্যান্স আসছে। যে আস্থাটুকু হারিয়ে গিয়েছিল, সেই আস্থাটুকু ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে এবং তা তৈরি হচ্ছে। দ্বিতীয়ত, রিজার্ভ বাড়াতে হলে বিদেশি বিনিয়োগ লাগবে। প্রাইভেট সেক্টরের বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। এমন কিছু করতে হবে যাতে দেশের বাইরের লোক আকৃষ্ট হয়। বিদেশি বিনিয়োগকারীরা আকৃষ্ট হলেই বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়বে।

আমাদের ভালো ভালো কোম্পানির শেয়ার চালু করতে হবে। একই সঙ্গে দেশের পুঁজিবাজারের অবস্থা ভালো করতে হবে। এখন হাতে গোনা কয়েকটা ভালো কোম্পানি আছে। আরেকটা ব্যাপার হলো- আমাদের অলরেডি ইনপুট কন্ট্রোল করা হচ্ছে। তার মধ্যে অত্যাধুনিক মেশিনারিজ র’ মেটারিয়ালস এবং অন্য প্রয়োজনীয় জিনিস আমদানি করা হচ্ছে, একই সঙ্গে আমদানি খরচ যেন সাশ্রয়ী হয় সেটাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এর ফলে রিজার্ভ বাড়বে। এখন বৈদেশিক বিনিময় হার স্থিতিশীল হয়েছে। অর্থাৎ আগের চেয়ে মোটামুটি একটা পর্যায়ে আসছে। রিজার্ভ ওঠানামা তেমন করছে না। বিদেশি বিনিয়োগকারী বা দেশি বিনিয়োগকারী যারা আছেন, যারা আমদানি করেন, এতে তারা স্বস্তি পাবেন। তা ছাড়া আমরা যা করছি, বিভিন্ন ডেটা এনে বাজেট সাপোর্টের দিকেও খেয়াল রাখছি। সার্বিকভাবে আমাদের ব্যালেন্স অব ট্রেড সাপোর্ট পাওয়া গেলে সে ক্ষেত্রে এটা সহজ হবে। আমাদের ট্রেড ব্যালেন্স সব সময়ই নেগেটিভ ছিল। এটা যেন রিকভারি করা যায়, সেটা আমরা দেখছি। একই সঙ্গে আমাদের রপ্তানি বাড়াতে হবে। এতে করে আমাদের রিজার্ভটা বাড়বে। আমাদের মুদ্রানীতি অপেক্ষাকৃত ভালো হবে। আমাদের দেশের বিভিন্ন পণ্য, যেমন- লেদার, সিরামিক, ইলেকট্রিক্যাল সামগ্রী, পাটজাত পণ্যগুলোর রপ্তানি বাড়াতে হবে। বহির্বিশ্বে এসবের গুরুত্ব বাড়লে, সে ক্ষেত্রে রিজার্ভও বাড়বে।

খবরের কাগজ: বেসরকারি বিনিয়োগ অনেক বছর ধরে একই জায়গায় স্থবির হয়ে আছে। বিনিয়োগ বাড়াতে আপনার পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাই।
ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ: দেশে বিনিয়োগ বাড়াতে হলে বিনিয়োগের পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। আমাদের যে আইনকানুনগুলো আছে, একই সঙ্গে বিভিন্ন কার্যক্রম যেগুলো আছে, তা সুন্দরভাবে পরিচালনা করতে হবে। সেখানে অহেতুক বাধা দূর করতে হবে। বিনিয়োগকারীরা স্বচ্ছন্দে বিনিয়োগ করতে চাইলে তাড়াতাড়ি যেন সেই সুযোগটা পায়। দ্বিতীয়ত, আমাদের ভূমি কিছু আছে, তারা যদি সেখানে বিনিয়োগ করতে চায় তাহলে তাদের সার্বিক সহযোগিতা করতে হবে। আমার মতে, ক্ষুদ্রঋণ প্রকল্পগুলো অপেক্ষাকৃত ভালো হয়। কর্মসংস্থানের পাশাপাশি অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক, এনার্জি রেগুলেশন কমিশন- এরা যেন আরও উন্নত হয় এবং প্রাইভেট সেক্টরগুলো যেন ভালো কাজ করতে পারে সেটা দেখতে হবে। এখন যেমন বিডা ভালো কাজ করছে। প্রাইভেট সেক্টরে এরা নেতৃত্বে আছে। আমরা যদি বিনিয়োগ বাড়াই তাহলে বাইরের লোকজন এতে আকৃষ্ট হবে এবং সে ক্ষেত্রে স্বাভাবিকভাবেই আমাদের বিনিয়োগ বাড়বে।

খবরের কাগজ: বাজেট ঘাটতি মেটাতে সদ্য বিদায় নেওয়া হাসিনা সরকার বিদেশ থেকে প্রচুর ঋণ নিয়েছে। সেগুলোর একটা বড় রকম চাপ আছে। বৈদেশিক ঋণের বোঝা সুদাসলে পরিশোধ করতে কী ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছেন? 
ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ: বিভিন্ন ধরনের অপরিকল্পিত প্রকল্প নেওয়ার ফলে এবং তা যথাযথভাবে ব্যবহার না হওয়ায় ঋণের পরিমাণ বেড়েছে। প্রকল্প ব্যবস্থাপনায় দুর্নীতি ও খারাপভাবে নির্বাচিত প্রকল্পগুলোও এই সমস্যা বহুলাংশে বাড়িয়ে দিয়েছে। এ ছাড়া বৈদেশিক ঋণ তহবিলের বিপুল পরিমাণ অর্থ বিদেশে পাচার করা হয়েছে। সে ক্ষেত্রে পরনির্ভরশীলতা কাটিয়ে উঠতে অর্থাৎ ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে অভ্যন্তরীণ আয় বাড়ানোর চেষ্টা করছি। দেশের অভ্যন্তরীণ আয় বাড়লে ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা বাড়বে। একই সঙ্গে রাজস্ব আয় বাড়ানোর পাশাপাশি অপ্রয়োজনীয় প্রকল্পগুলোকে কাটছাঁট করে ব্যয় কমানোরও চেষ্টা করা হচ্ছে। ব্যয় যৌক্তিকীকরণ বা অপচয় কমানোর ওপরও জোর দেওয়া হয়েছে। কোথাও কোনো অযৌক্তিক ব্যয় যেন না হয়, সেটা পর্যালোচনা করে দেখা হচ্ছে। তা ছাড়া সবকিছুই বিচার-বিবেচনায় নিয়ে ঋণ পরিশোধের সময় বাড়ানোর বিষয়টিও বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। বিগত সরকার প্রায় সব ক্ষেত্রেই নিয়মনীতি, শৃঙ্খলার তোয়াক্কা না করে সর্বত্র অনিয়ম, নৈরাজ্য সৃষ্টি করেই মূলত এই সমস্যাগুলো বাড়িয়েছে। 

খবরের কাগজ: বিগত সরকারের সময়ে আর্থিক খাতে বা প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন ভুল পদক্ষেপের কারণে অনেক প্রতিষ্ঠান বিপাকে পড়েছে এবং এসব প্রতিষ্ঠানে লাখ লাখ কর্মী কাজ করছেন। এরা যাতে কর্মসংস্থান না হারায়, সে ব্যাপারে আপনার কোনো উদ্যোগ আছে কি?
ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ: প্রথমত, সরকারি অনেক জায়গায় অনেক রকমের ভুল পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এই কাজে যারা আছেন, এখন যারা প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছেন, সেটা আমরা খতিয়ে দেখছি- ভবিষ্যতে এগুলো যেন না ঘটে। তাদের নতুন করে ভয় দেখানোর জন্য নয়, আমাদের কথা, যারা অন্যায় করেছে, তাদের যথাযথ চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। সবাই তো এগুলো করেনি। দ্বিতীয়ত, যারা করছে, তাদের সাবধান করা যে, তোমরা কাজ করো। এ ব্যাপারে সরকারের হঠাৎ করে কোনো প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া বা কর্মক্ষেত্রে ছাঁটাই করার পরিকল্পনা নেই। অতএব তাদের এতটুকু নিশ্চয়তা দেওয়া যেতে পারে যে, তারা কাজ করুক। হয়তোবা কাজের ক্ষেত্রে অর্থের সংকুলান কম হতে পারে, বাজেট হিসেবে পুরোটা সম্ভব হতে বেগ পেতে হতে পারে। তবে তাদের কাজকর্মগুলো চালিয়ে নেওয়ার মতো অর্থের সংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে। 

প্রয়োজন সাপেক্ষে বাজেটকে ইস্যু করে, অপ্রয়োজনীয় খরচ আমরা কমিয়ে দিয়েছি। উৎসব করা, সরকারিভাবে বাইরে যাওয়া সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করে দিয়েছি, নতুন গাড়ি কেনা- সব বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এদিকে আমরা চেষ্টা করছি। আর্থিক চাপ কমানোর জন্য যারা আছে তাদের কোনো চিন্তা নেই। বরং আমরা চেষ্টা করব কর্মসংস্থান বাড়ানো, ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়ানো, সরকারিভাবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তৈরি করব- এতে কর্মসংস্থান বাড়বে। যেসব প্রতিষ্ঠান আছে সরকারি, আধা সরকারি, বাংলাদেশ বিমান আছে, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড আছে, সুগার করপোরেশন, ফুড ইন্ডাস্ট্রি করপোরেশন- এগুলো যেন কর্মক্ষেত্রে উন্নত করা যায়, সেটা দেখা হচ্ছে। যেসব ক্ষেত্রে বিশাল অঙ্কের অর্থ ব্যয় হচ্ছে। সেগুলোর যেন সঠিক ব্যবহার হয়। জুটমিল করপোরেশনগুলোতে আমরা চেষ্টা করছি। তারা যেন ঠিকভাবে কাজ করতে পারে। অর্থাৎ যেসব টাকা দিচ্ছি, তার যেন সঠিক ব্যবহার হয়। এবং এর মধ্য দিয়ে যেন কর্মসংস্থান হয় ও আয় বাড়ে। 

দেশের অর্থনীতিতে তারা যেন কন্ট্রিবিউট করতে পারে, ‘ইন টার্মস অব প্রোডাক্ট অ্যান্ড ইন টার্মস অব ইমপ্লয়মেন্ট’, সেটাই আমাদের লক্ষ্য। একই সঙ্গে আমি মনে করি, অনেক মেধাবী তরুণ উদ্যোক্তা হতে চায়, চাকরি করতে চায় না। সবার চাকরি করার দরকার আছে বলে মনে হয় না। সে ক্ষেত্রে যারা উদ্যোক্তা হতে চায়, তাদের জন্য ব্যাংকঋণ অথবা স্টার্টআপ ফান্ড দেওয়ার ব্যবস্থা আছে। একজনের টাকা দিয়ে ব্যবসা করা যায় না। তা ছাড়া একজন মেধাবী লোকের টাকা কম থাকে। তার হয়তো আছে ২ কোটি টাকা, অথচ লাগবে ১০ কোটি টাকা। বাকিটা আমরা ইকুইটি ফান্ড থেকে দিতে পারি, সেই চেষ্টাও করা হচ্ছে। এখানে যেটি  প্রয়োজন তা হলো সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্ব, যা মূলত ফলপ্রসূ হয় বেশি। আমরা তরুণদের উৎসাহিত করতে চাই। তারা যেন শুধু চাকরির চিন্তাভাবনা না করে, তারা যেন উদোক্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখে। সে লক্ষ্যেও আমরা আর্থিকভাবে সহায়তা করছি। যাতে আমাদের দেশের তরুণরা গতানুগতিক ধারায় না গিয়ে নিজেরা স্বনির্ভর হয়ে উঠতে পারে।


খবরের কাগজ: সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ: আপনাকেও ধন্যবাদ।

১০০ দিনের মূল্যায়ন কি যথার্থ?

প্রকাশ: ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৪০ এএম
১০০ দিনের মূল্যায়ন কি যথার্থ?
এ কে এম আব্দুল্লাহিল বাকী

৮ আগস্ট যাত্রা শুরু করা অন্তর্বর্তী সরকার তাদের ১০০ দিন পূর্ণ করেছে। পত্রিকা, টেলিভিশন এবং সামাজিক মাধ্যমে এ সরকারের কার্যকারিতা নিয়ে আলোচনা চলছে। প্রশ্ন উঠেছে, এই সরকারকে কি ১০০ দিনের পারফরমেন্সের ভিত্তিতে বিচার করা উচিত? এই প্রশ্নের উত্তর সহজ নয়। বর্তমান সরকারের প্রেক্ষাপট এবং দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে বিষয়টি নিয়ে ভাবা জরুরি।

যুক্তরাষ্ট্রের উদাহরণ থেকে বিষয়টি শুরু করা যাক। সেখানে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় সেপ্টেম্বর মাসে এবং জানুয়ারিতে নতুন প্রশাসন দায়িত্ব গ্রহণ করে। বিজয়ী দল মন্ত্রিসভা গঠন করে এবং পরবর্তী চার বছরের জন্য নীতিমালা বাস্তবায়নের পরিকল্পনা সাজায়। দায়িত্ব গ্রহণের ১০০ দিন পর তাদের কাজের মূল্যায়ন শুরু হয়। এ প্রক্রিয়া সম্ভব হয় সুপরিকল্পিত এবং ধারাবাহিক একটি প্রশাসনিক কাঠামোর কারণে, যেখানে সরকারে রদবদল হলেও প্রশাসনিক কাজ নিরবচ্ছিন্নভাবে চলতে থাকে।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট সম্পূর্ণ ভিন্ন। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার ১৫ বছর ক্ষমতায় ছিল। এই সময়ে তারা নির্বাচনের নামে প্রহসন করেছে, জনগণের ভোটাধিকার পুরোপুরি হরণ করা হয়েছে। বিচার বিভাগ, প্রশাসন এবং সংসদ তার সরকারের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে ছিল। ভিন্নমতাবলম্বীদের দমন করা হতো নির্বিচারে। মামলা দেওয়া এবং দেশদ্রোহী আখ্যা দেওয়াসহ নানা পদ্ধতিতে বিরোধী কণ্ঠস্বর স্তব্ধ করে দেওয়া হতো।

শেখ হাসিনার শাসনামলে দুর্নীতি ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। তার সরকারের সময়ে প্রতিবছর প্রায় ১২ থেকে ১৫ বিলিয়ন ডলার বিদেশে পাচার হয়েছে। কর্ণফুলী টানেল প্রকল্পের খরচ ছিল ৮৭০ মিলিয়ন ডলার, যা উল্লেখযোগ্য আর্থিক ক্ষতির কারণ হয়েছে। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের তথ্য অনুযায়ী, গত ১৫ বছরে ১২-১৫ বিলিয়ন ডলার মানি লন্ডারিং হয়েছে। দেশের ব্যাংকিং খাত একেবারে বিপর্যস্ত। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ২ লাখ ৮৪ হাজার ৯৭৭ কোটি টাকা, যা এক অভূতপূর্ব রেকর্ড। রিজার্ভ নেমে এসেছে ২০ বিলিয়নের নিচে। মুদ্রাস্ফীতি পৌঁছেছে ১১ শতাংশের ওপর। 

জনগণের প্রকৃত ক্রয়ক্ষমতা এতটাই কমে গেছে যে, দৈনন্দিন জীবনযাত্রা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ। ভারত উজানে তাদের পানি ছেড়ে দেওয়ার কারণে দেশের একাধিক অঞ্চলে নজিরবিহীন বন্যা দেখা দিয়েছে। কৃষি খাত ভেঙে পড়েছে, যা দেশের অর্থনীতির ওপর আরও চাপ সৃষ্টি করেছে। এই প্রেক্ষাপটে নতুন সরকারকে মাত্র ১০০ দিনের পারফরমেন্সের ওপর বিচার করা যায়?

শেখ হাসিনার শাসনামলের শেষ দিকে জনগণের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সম্পর্ক একেবারে ভেঙে পড়ে। ২০২৪ সালের ১ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত পুলিশের গুলিতে ১ হাজার ৫০০ জন নিহত হন এবং ২০ হাজার মানুষ আহত হন। এ সময়ে ১ লাখের বেশি পুলিশ সদস্য কর্মস্থল ছেড়ে পালিয়ে যান। এমন পরিস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা একটি চরম চ্যালেঞ্জ। নতুন সরকার এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কাজ শুরু করেছে, কিন্তু বাস্তবতা হলো, এটি সময়সাপেক্ষ প্রক্রিয়া।

সরকারের প্রশাসন যন্ত্র একটি জগদ্দল পাথর। বিভিন্ন দপ্তরে পূর্ববর্তী সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় থাকা কর্মকর্তারা এখনো গুরুত্বপূর্ণ পদে রয়ে গেছে। তারা ইচ্ছাকৃতভাবে কাজের গতি কমিয়ে দিয়ে নতুন সরকারকে ব্যর্থ প্রমাণের চেষ্টা করছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র। আওয়ামী লীগের অনেক নেতা-কর্মী দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেলেও দেশজুড়ে অর্থ বিতরণ করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে। ভারতের কিছু গণমাধ্যমও সংখ্যালঘু নির্যাতন এবং সন্ত্রাসবাদ নিয়ে মিথ্যা প্রচারণা চালিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার চেষ্টা করছে।

 এই সরকার যেভাবে চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করতে শুরু করেছে, তা প্রশংসনীয়। এত প্রতিকূলতার মধ্যেও তারা যে পদক্ষেপগুলো নিয়েছে, তার জন্য তাদের ধন্যবাদ দেওয়া উচিত। এই ধন্যবাদ তাদের আরও অনুপ্রাণিত করবে এবং ভবিষ্যতে আরও কার্যকর ভূমিকা রাখতে সাহায্য করবে। নতুন সরকার একটি তীব্র সংকট থেকে দেশকে পুনর্গঠনের কাজ শুরু করেছে। এটি একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া এবং এটি সম্পন্ন হতে সময় লাগবে।

জনগণেরও উচিত তাদের প্রত্যাশাগুলো বাস্তবতার ভিত্তিতে গঠন করা। ১০০ দিনের ভিত্তিতে নয়, বরং সরকারের দীর্ঘমেয়াদি কর্মপরিকল্পনা এবং অর্জনের ওপর ভিত্তি করে মূল্যায়ন করা উচিত। সমালোচনা থাকা সত্ত্বেও তাদের কাজের প্রশংসা এবং প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি দেশের পুনর্গঠনের যাত্রাকে ত্বরান্বিত করবে এবং একটি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়েতে সহায়ক হবে।

লেখক: অবসরপ্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তা

বিশেষ সাক্ষাৎকারে ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ সরকারের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা

প্রকাশ: ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ১২:১৪ পিএম
আপডেট: ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৫০ পিএম
সরকারের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা
ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ

আমাদের প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশের রাজনৈতিক অস্থিতিশীল পরিবেশ শান্ত করা। বর্তমানে আমাদের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা। একই সঙ্গে মূল্যস্ফীতির অভিঘাত মোকাবিলা করা। বিগত ১৫ বছরে যেসব কাজ হয়েছে বিশেষ করে অর্থনীতির ক্ষেত্রে, ব্যাংক সেক্টরে, পুঁজিবাজারে, ব্যবসা-বাণিজ্যে, সেখানে আমরা দেখেছি অনেক অনিয়ম, অনেক দুর্নীতি, বহু দমন-পীড়ন হয়েছে। আমরা একটা রূপরেখা শুরু করে দিয়ে যাব। সবাইকে এখন ধৈর্য ধরতে হবে। দ্রুত সবকিছু করা সম্ভব নয়।...

ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ একজন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর। বর্তমানে তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করছেন। দেশের সামগ্রিক অর্থনীতি, বাজার ব্যবস্থাপনা, ব্যাংকিং খাতসহ বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেছেন খবরের কাগজের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন খবরের কাগজের সম্পাদকীয় বিভাগের সিনিয়র সহসম্পাদক শেহনাজ পূর্ণা

 

খবরের কাগজ: বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ইতোমধ্যেই ১০০ দিন পার করেছে। সময়টিকে একটি মাইলফলক হিসেবে ধরা হয়। এই সময়ে সরকারের সফলতা-ব্যর্থতা সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন কী?
ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ: বর্তমানে আমাদের সামনে যে কয়টি চ্যালেঞ্জ আছে, অর্থাৎ যে চ্যালেঞ্জগুলো সঙ্গে নিয়ে নতুন সরকারকে দায়িত্ব গ্রহণ করতে হয়েছে, সেগুলোর ব্যাপকতা খুব বেশি। আমাদের প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশের রাজনৈতিক অস্থিতিশীল পরিবেশ শান্ত করা। আমরা প্রথমত সেই চেষ্টা করেছি। বর্তমানে আমাদের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা। একই সঙ্গে মূল্যস্ফীতির অভিঘাত মোকাবিলা করা। এখানে কতগুলো বিষয় উল্লেখযোগ্য, যেমন- ব্যবসা-বাণিজ্য, শেয়ারবাজার, ব্যাংকিং খাত, বিদেশি বিনিয়োগসহ সবকিছু মিলে আমরা মনে করি যে সার্বিকভাবে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি হচ্ছে। কিছু কিছু সমস্যা হয়তো দ্রুতই ঠিক হয়ে যাবে। কিছু সমস্যা সমাধানের জন্য একটা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে আমাদের যেতে হবে। মূল কথা হচ্ছে, আমরা একটি ভিত রচনা করছি ভবিষ্যতের জন্য। একটা টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে আমরা অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন নিয়ে চিন্তাভাবনা ও কাজ করছি। এটাই হলো প্রকৃত সাফল্য। আমরা মনে করি, পরবর্তী রাজনৈতিক সরকার ক্ষমতায় আসার পর সেই ধারাবাহিকতা বয়ে নিয়ে যাবে, অর্থাৎ দীর্ঘমেয়াদি কাজের ধারাবাহিকতা বজায় রাখবে এবং তা বাস্তবায়ন করবে। সুষ্ঠু গঠনমূলক নির্বাচনের ব্যাপারেও কথাবার্তা হয়েছে। সেদিকেও অন্তর্বর্তী সরকার যথাযথভাবে সামনের দিকে এগোচ্ছে। নির্বাচনের যেসব বিষয় আছে, বর্তমান সরকার সে ক্ষেত্রে যা যা ব্যবস্থা নেওয়া দরকার, সেগুলো নেবে। সে ক্ষেত্রে খুঁটিনাটি যেসব বিষয় ছিল তা সার্বিকভাবে দেখা হচ্ছে- এটাই সাফল্য। এর মধ্যে কিছু ভুলত্রুটি ছিল এবং থাকবে। সবকিছুই যে রাতারাতি একেবারে শতভাগ ঠিক হবে তা নয়। আমাদের ভুলত্রুটি অনেকে চিহ্নিত করছেন, বিশেষ করে প্রেস থেকে, বিভিন্ন সংবাদপত্রের মাধ্যমে- সবার কথাই আমরা বিবেচনায় নিচ্ছি এবং সেগুলো সঠিকভাবে ভবিষ্যতের পরিকল্পনায় নিয়ে তাদের সঙ্গে আমরা মতবিনিময় করছি।


খবরের কাগজ: দেশের অর্থনৈতিক খাতের স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে আপনি কী ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছেন? 
ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ: অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে সংস্কার করা হচ্ছে। এনবিআরের রাজস্ব আদায়ের ব্যাপারে কর সংস্কার করা হয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, চলমান প্রকল্পগুলো যা ছিল সেগুলো ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। ব্যাংকিং সেক্টরে ইতিবাচক সংস্কার চলছে। এর ফলে কিছু দুর্বল ব্যাংক ইতোমধ্যেই স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। সরকারি ব্যাংকগুলো ছাড়া বেসরকারি ব্যাংকগুলোতেও অগ্রসরমাণ ব্যবসা-বাণিজ্য মন্থর গতি থেকে ধারাবাহিকতায় ফিরতে শুরু করেছে, অর্থাৎ এক ধরনের গতি সঞ্চার হয়েছে। সবচেয়ে বড় হলো, দেশি-বিদেশি বহুজাতিক সংস্থাসহ দেশের সঙ্গে আর্থিক সহায়তা, কারিগরি সহায়তার জন্য আমরা কথাবার্তা বলছি। তারা সবাই ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করেছেন। সহযোগিতার জন্য আশ্বাস দিয়েছেন। এর ফলে আমাদের উন্নয়ন পরিকল্পনা যেগুলো আছে, সেগুলো আমরা চালু করতে সক্ষম হব। কিছু স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী স্বাভাবিকতা বিনষ্ট করতে অকারণে নানা রকম অনভিপ্রেত পরিস্থিতি সৃষ্টি করে যাচ্ছে। দেশের কল্যাণে এগুলো তাদের বাদ দিতে হবে। সরকারের কাজে তাদের সহযোগিতা করতে হবে। 


খবরের কাগজ: নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়েই চলছে। কিছু পণ্যের আমদানি শুল্ক প্রত্যাহারের পরও সেসব পণ্যের দাম কমছে না। এর পেছনে কী কারণ থাকতে পারে বলে আপনি মনে করেন?
ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ: এর কারণ একাধিক, একই সঙ্গে জটিল। একটি হলো চাহিদাজনিত কারণ এবং অন্যটি সরবরাহজনিত কারণ। চাহিদাজনিত কারণ হলো- মানুষের হাতে যখন টাকা-পয়সা আসে, ইনকাম বেড়ে যায় বা ট্যাক্স কমে গেলে চাহিদা বেড়ে যায়। সরবরাহের দিকটা বলতে নিত্যপণ্য, অর্থাৎ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসগুলো- চাল, ডাল, গম, তেল, পেঁয়াজ, রসুন, আলু, ডিম- এগুলোর সরবরাহ যেন অবিরত থাকে, সেটা আমরা চেষ্টা করছি। মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমে আসছে। প্রথমত, আমরা পলিসিগত ট্যাক্স অনেক কমিয়ে দিয়েছি। সেটা ছাড়াও আমাদের দেশে কয়েক দিন আগে বন্যা হয়েছে- কুমিল্লা, নোয়াখালীসহ বেশির ভাগ জায়গায় বিভিন্ন ধরনের খাদ্যশস্য নষ্ট হয়েছে। তার পরই অতিবৃষ্টির কারণে আবার শেরপুর, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইলে কৃষিপণ্য সরবরাহের ক্ষেত্রে, বিশেষ করে অনেক খামার ভেসে গেছে, ধসে গেছে বন্যা ও বৃষ্টির কারণে। অতএব ডিমের যে চাহিদা তা ৪ থেকে ৫ কোটি, উৎপাদন হয়েছে ৩ কোটি। তার পরও চাহিদার ঘাটতি থাকবেই। সব মিলেই প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে কিছুটা ঘাটতি হয়েছে। বাইরে থেকে আমদানির ক্ষেত্রে বেশির ভাগ পণ্যের আমদানি মূল্য বেড়ে গেছে। সয়াবিনের দাম অনেক বেড়ে গেছে বাইরে। চিনির দামের ক্ষেত্রে আমরা সাশ্রয়ী হচ্ছি। আর চাল আমদানি করার জন্য পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। চালের দাম যে কমছে তা নয়। ওটাও বাড়তি আছে। জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে গেছে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের সময়ে। বর্তমানে পরিবহন খরচ বাড়ার কারণে তা আরও বেড়েছে। যা আমরা বাইরে থেকে আমদানি করি তার দাম বেড়ে যাচ্ছে- এটা একটা কারণ। কৃষি উৎপাদন ঠিকই ছিল, হঠাৎ করে বন্যার কারণে পণ্যের দাম বেড়ে গেল। এখন শীতের মৌসুম, অনেক কিছুই স্বাভাবিক হয়ে যাবে আশা করা যায়। আমরা মূল্য সমন্বয়ের চেষ্টা করছি। সবচেয়ে বড় যে কারণ তা হলো সরকারের পলিসির বাইরে থেকে যারা আমদানি করছে, পাইকারি ব্যবসায়ী, পাইকারি থেকে খুচরা পর্যায়ে, সেখানে কতগুলো মধ্যস্বত্বভোগী আছে। আমি সিন্ডিকেট না বলি, আমি বলি কতগুলো মধ্যস্বত্বভোগী আছে। আমি যদি একটি উদাহরণ দিই, যেমন- মহাস্থানগড় থেকে একটা পণ্য বগুড়া হয়ে ঢাকায় আসবে। এখানে অনেক হাত বদল হয়, অকারণে। এখানে মিডিলম্যানের প্রয়োজন আছে- এখানে লোড করার, ঢাকায় আনার, ঢাকা থেকে গাড়িতে বিভিন্ন জায়গায় যাবে- মাঝে অহেতুক চাঁদা দিতে হয়। যেমন- বগুড়ায় ট্রাকস্ট্যান্ডে চাঁদা নিচ্ছে, যমুনার পাড়ে এসে চাঁদা নিচ্ছে, মিরপুর বা মাওয়া ঘাটে চাঁদা নিচ্ছে, আবার কারওয়ান বাজারে চাঁদা নিচ্ছে। আমি বলি, তাদের কোনো কাজ নেই, বসে বসে এসব কাজ এরা করে থাকে। এসব ক্ষেত্রে যে চক্রগুলো আছে, সেগুলো ভাঙতে হবে। সবচেয়ে বড় কথা, প্রকৃত ব্যবসায়ী যারা আছেন তাদের একত্র হতে হবে। ভোক্তার কাছে সহজ হতে হবে, অর্থাৎ তাদের জন্য পণ্যমূল্য সহজলভ্য করে দিতে হবে। উৎপাদন খরচ, অর্থাৎ চাষিরা যে খরচটা করে শস্য ফলায়, ভোক্তার কাছে এসে দামটা খুব বেশি অধিক হয়ে যায়। সেখানে হয়তোবা ১০-১৫ টাকা বেশি হতে পারে। যদি বেগুনের দাম ১০ টাকা হয়, ঢাকায় এসে সেটা বড়জোর ২০ টাকা হবে। কিন্তু তাই বলে ৬০ টাকা হওয়ার তো কোনো কারণ থাকতে পারে না। আমরা সব হিসাব যোগ করে দেখেছি, অহেতুক দাম বাড়ানো হচ্ছে- সেটাও একটা কারণ। সব মিলিয়ে মূল্যস্ফীতিটা বেড়ে গেছে। এগুলো দূর করতে একটু সময় লাগবে। তবে অকারণে দাম বাড়িয়ে মূলস্ফীতির যে অসাধু অভিপ্রায় সেটা দূর হয়ে যাবে। সরকার কৃষিতেও প্রচুর ভর্তুকি দিয়েছে। কাঁচা তরিতরকারি, ডিম কিনে সরবরাহ করছে এবং এটা চলবে। রোজার সময় খেজুর আমদানি করার জন্য এলসি খোলা হয়েছে। মসুর ডাল, ছোলা- এগুলো আমরা নিশ্চিত করছি। অর্থাৎ মূল্যস্ফীতি রোধে আমরা সব ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছি। এটা আস্তে আস্তে কমে আসবে এবং সব পণ্যের দাম সহনীয় হবে।


খবরের কাগজ: উত্তরাধিকার সূত্রে একটা খারাপ অর্থনীতি পেয়েছেন। এর থেকে উত্তরণ খুব সহজ নয়। লক্ষ্য অর্জনে আপনি কী ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছেন বা নিচ্ছেন?
ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ: বিগত ১৫ বছরে যেসব কাজ হয়েছে বিশেষ করে অর্থনীতির ক্ষেত্রে, ব্যাংক সেক্টরে, পুঁজিবাজারে, ব্যবসা-বাণিজ্যে, সেখানে আমরা দেখেছি অনেক অনিয়ম, অনেক দুর্নীতি, বহু দমন-পীড়ন হয়েছে। কিছুসংখ্যক লোকের হাতে সবকিছু কুক্ষিগত করা হয়েছে। যে আমদানি করে, সে আবার মিলের মালিক, সেই আবার ব্যাংকের মালিক- এগুলো মিলে সবকিছুতেই অনিয়ম-নৈরাজ্য হয়েছে। এগুলো আমরা ঠিক করার জন্য কাজ করছি। ইতোমধ্যে আমরা দেখছি যে, বিভিন্ন জায়গায় যারা মালিক বা ব্যবসায়ী আছেন, তারা ঠিকমতো কর দিচ্ছেন কি না, ঠিকমতো স্টেটমেন্ট দিচ্ছেন কি না, বিশেষ বিশেষ লোকের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করা হয়েছে। তবে একটা বিষয় হচ্ছে, কোনো ব্যবসায়ীর ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করা হয়নি। যাদের সন্দেহ করা হয়েছে, তারাও অর্থাৎ সেই সব ব্যবসায়ী এখনো সক্রিয় আছেন। ব্যাংকের সঙ্গে ট্রানজ্যাকশন অ্যালাউ করা হয়েছে। তাদের কাজ করতে দেওয়া হচ্ছে। সে জন্য একটা নিয়ম বেঁধে দেওয়া হলেও তাদের কর্মকাণ্ড যেন একেবারে ব্যাহত না হয়, সেটাও ভেবে দেখা হচ্ছে।


খবরের কাগজ: দেশের পুঁজিবাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরেনি এখনো। ফলে পতনের ধারা অব্যাহত আছে। পুঁজিবাজারকে চাঙা করতে আপনার পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাই। 
ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ: দেশের পুঁজিবাজার সংস্কার করা হচ্ছে। যে শেয়ারের কোনো অস্তিত্ব নেই সেসব শেয়ারের ব্যাপারে নতুন যে নিয়ন্ত্রক আছে তাদের দেখতে বলা হয়েছে। যারা ছোট শেয়ার কিনে রেখেছে, তার পর দেখা যাচ্ছে কোম্পানিরই কোনো অস্থিত্ব নেই, তাদের পুরো টাকাটাই নষ্ট হচ্ছে। কাজেই ভালো কোম্পানির শেয়ার কিনতে হবে। শেয়ারবাজার জোর করে ওঠানো-নামানোর বিষয় নয়। এখানেও যারা দুর্নীতি করবে অথবা আগে করেছে তাদের জরিমানা করা হচ্ছে। তারাই আবার এখন নানা রকম অপপ্রচার করছে শেয়ারবাজারকে নিয়ে। পৃথিবীর সব দেশেই সবচেয়ে বেশি কেলেঙ্কারি হয়েছে ব্যাংকিং সেক্টর আর শেয়ার মার্কেট নিয়ে। আমরা অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে নিয়মানুযায়ী বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছি। এনবিআরকে আমরা অটোমেটেড করছি। এবার ট্যাক্স রিটার্নের ক্ষেত্রে ঢাকা, গাজীপুরে ই-রিটার্ন দেবে। এখন আর হাতে হাতে নেওয়া হবে না। আমরা এই ব্যাপারগুলো উৎসাহিত করছি। যখন সব জায়গায় এটা অটোমেটেড হবে, তখন এমনিতেই এসব দুর্নীতি কমে যাবে। আমাদের বৈদেশিক বিনিময় স্থিতিশীল হয়েছে। এখানে স্বল্পকালীন, মধ্যমেয়াদি কিছু কাজ থাকবে। ট্যাক্সের বিভিন্ন আইন, ব্যাংকের আইনগুলো ব্যবহারে সময় লাগবে। তবে আমাদের এখন স্বল্পমেয়াদি কাজগুলো কেমন হচ্ছে সেগুলো বেশি দেখা হবে। মধ্যমেয়াদি প্রকল্প শুরু করা বা দীর্ঘমেয়াদি শুরু করলেও রাজনৈতিক দল যারা আছে তারা দেখবে। আমরা একটা রূপরেখা শুরু করে দিয়ে যাব। তারা সে ক্ষেত্রে আরও বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ নিয়ে যেন তা বাস্তবায়ন করতে পারে। অতএব সবাইকে এখন ধৈর্য ধরতে হবে। দ্রুতই সবকিছু করা সম্ভব নয়। মনে রাখতে হবে, ১৫ বছরের এই অনিয়ম, এটা সহজেই অল্প সময়ে সমাধান করা সম্ভব নয়।

 
[শেষ পর্ব আগামীকাল…]