আমরা দেখছি যৌক্তিক দাম আছে কি না, সেটা মনিটর করা হচ্ছে। অযৌক্তিক দাম থাকলে যে দামে কেনা হয়েছে, খুচরা ব্যবসায়ীরা যে দামে বিক্রি করছে, তার যদি রসিদ না দেখাতে পারে, তাহলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে। আমরা সেই চেষ্টা করছি এবং কাজ হচ্ছে। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো, তাদের কারসাজি বা চালাকিটা ভাঙতে হলে রাজনৈতিক সদিচ্ছা লাগবে। রাজনৈতিক যে দলগুলো আছে, তারা যেন কথা বলতে পারে। দোকানদার সমিতি আছে, তাদের যথেষ্ট সহযোগিতামূলক হতে হবে। অনেক সময় তারা তা করে না। তারা নিজেদের লাভ-ক্ষতি নিয়ে ব্যস্ত থাকে। জোর করে দমন করে এটা ভাঙা সম্ভব নয়। এটা স্থায়ী হয় না। কয়দিন ভয় পেল তার পর আবার নিজের খোলসে ফিরে যায়, যা খুবই দুঃখজনক। একটি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাওয়া দরকার এবং আমরা সে ব্যাপারে ইতোমধ্যেই পদক্ষেপ নিয়েছি।...
ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ একজন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর। বর্তমানে তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করছেন। দেশের সামগ্রিক অর্থনীতি, বাজার ব্যবস্থাপনা, ব্যাংকিং খাতসহ বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেছেন খবরের কাগজের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন খবরের কাগজের সম্পাদকীয় বিভাগের সিনিয়র সহসম্পাদক শেহনাজ পূর্ণা
আজ শেষ পর্ব
খবরের কাগজ: বর্তমানে অর্থনীতির মূল চ্যালেঞ্জগুলো কী বলে আপনি মনে করেন?
ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ: আমাদের মূল চ্যালেঞ্জগুলো হলো মূল্যস্ফীতি, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সমস্যা, ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগে মন্থর গতি ইত্যাদি। সে ক্ষেত্রে ব্যবসা-বাণিজ্যের গতিপ্রকৃতি বেড়েছে। তবে একটু সময় তো লাগবেই। মূল্যস্ফীতির ব্যাপারে কঠিন চ্যালেঞ্জ ছিল, যা কিছুটা কমিয়ে আনা হয়েছে। বিভিন্ন ইস্যুতে ট্যাক্স কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। পণ্য আমদানির লক্ষ্যে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। আরও কিছু ক্ষেত্রে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে, যার সুফল আমরা দেখব। আমরা সেই আশা করতেই পারি। একটি ভঙ্গুর অর্থনীতি পুনর্গঠনের জন্য আমাদের কিছুটা সময় লাগবে এবং সে জন্য অপেক্ষা করতে হবে।
খবরের কাগজ: সিন্ডিকেট নিয়ে অনেক লেখালেখি, আলোচনা, কথাবার্তা হয়েছে। কিন্তু সিন্ডিকেট ভাঙা যাচ্ছে না। এ ব্যাপারে আপনাদের বিশেষ কোনো পদক্ষেপ আছে কি না?
ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ: সিন্ডিকেট ভাঙা যাচ্ছে না, ভেঙে তো দেওয়াই যায়। এখানে কিছু বিষয় আছে। সয়াবিন যে আমদানি করে, সে ৫০০ কোটি টাকার এলসি খুলবে। সে তো এক এক কনটেইনার সয়াবিন আনবে না। সয়াবিন আনতে হয় ব্রাজিল থেকে। অতএব মৌলভীবাজারের ১০০ লোককে যদি আমি বলি সয়াবিন আনো, জীবনে কেউ ছয় মাস বা এক বছরেও সয়াবিন পাবে না। এটা একটা ‘ন্যাচারাল মনোপলি’। আমদানির পর জাহাজ থেকে ডিস্ট্রিবিউশন যেন তাড়াতাড়ি হয় এবং সাধারণ মানুষের কাছে দ্রুত যায়, সেটা দেখতে হবে। গুদামে কয়েক দিন থাকার পর সেটা খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে যায়। সেখানেও দাম গোনার ব্যাপার থাকে। তারপর যানবাহন খরচটা যেন কমানো যায়, আমরা সেটা দেখছি অর্থাৎ বাধাহীনভাবে যানবাহন যেন চলতে পারে সেটা ভেবে দেখা হচ্ছে। তারপর বাজারে আসবে, সেখানে যেন কেউ বাধা না দিতে পারে। বিষয়গুলো আমরা আমলে নিচ্ছি।
ভোক্তা অধিকার বিভাগ মনিটর করছে। আমি প্রতিটি জেলায় মনিটরিং কমিটি করে দিয়েছি। সেখানে অ্যাডিশনাল এসপি, চেয়ারম্যানসহ ভোক্তা অধিকারের লোকজন আছে। তা ছাড়া ক্যাব আছে, তারাও পর্যবেক্ষণ করছে। ছাত্রদের প্রতিনিধি আছে, তারা মনিটরিং করছে। আসলে মূল্য বেঁধে সবকিছু করা যায় না। এখন যদি বলে দেওয়া হয় যে, এত টাকায় বেগুন বিক্রি করতে হবে, অথবা এত টাকায় চাল বিক্রি করতে হবে- এটাতে কোনো লাভ হবে না। এখানে এক এক জায়গায় এক এক রকম পরিবহন খরচ পড়বে। আমরা দেখছি যৌক্তিক দাম আছে কি না, সেটা মনিটর করা হচ্ছে। অযৌক্তিক দাম থাকলে যে দামে কিনে খুচরা ব্যবসায়ীরা বিক্রয় করছে, তার যদি রসিদ না দেখাতে পারে, তাহলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে।
আমরা সেই চেষ্টা করছি এবং কাজ হচ্ছে। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো, তাদের কারসাজি বা চালাকিটা ভাঙতে হলে রাজনৈতিক সদিচ্ছা লাগবে। রাজনৈতিক যে দলগুলো আছে, তারা যেন বলতে পারে। দোকানদার সমিতি আছে, তাদের যথেষ্ট সহযোগিতামূলক হতে হবে। অনেক সময় তারা তা করে না। তারা নিজেদের লাভ-ক্ষতি নিয়ে ব্যস্ত থাকে। জোর করে দমন করে এটা ভাঙা সম্ভব নয়। তাহলে স্থায়ী হয় না। কয়দিন ভয় পেল তারপর আবার নিজের খোলসে ফিরে যায়, যা খুবই দুঃখজনক। একটি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাওয়া দরকার এবং আমরা সে ব্যাপারে ইতোমধ্যেই পদক্ষেপ নিয়েছি।
খবরের কাগজ: দেশ থেকে প্রচুর টাকা পাচার হয়ে গেছে। সেগুলো ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে কী পদক্ষেপ নিয়েছেন?
ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ: দেশ থেকে টাকা কীভাবে চুরি হয়ে গেছে বা পাচার হয়েছে এবং তা কীভাবে ফিরিয়ে আনা যায়, সেটা পর্যবেক্ষণ করছি। ইতোমধ্যেই বাংলাদেশ ব্যাংক এ বিষয়ে কথা বলা শুরু করেছে। সেখানে আইনের পদক্ষেপ নিতে হবে। এগুলো সবই এখন প্রক্রিয়াধীন। আর বিশেষ করে দেশব্যাপী যে ঢালাওভাবে দুর্নীতিগুলো হয়েছে, সেগুলো বন্ধ করার জন্য আমরা আরও বেশি তৎপর হচ্ছি। আমাদের ইলেকট্রনিক টেন্ডার, এগুলো আগেও ছিল, তা এখন আরও বেশি জোরদার করা হচ্ছে। টেন্ডারগুলো যাচাই-বাছাই করা হবে। আর শেয়ারপত্রসহ সরকারি সেবা সবই অনলাইনে হচ্ছে। ১৫-১৬ লাখ সরকারি কর্মীর বেতন এখন অনলাইনে হচ্ছে। এমনকি প্রাইমারি স্কুলের বেতন, এমপিওভুক্ত স্কুল-কলেজের টাকা ইত্যাদি সবকিছুই অনলাইনে করা হচ্ছে। কাজেই এমনিতেই দেশ ও দেশের বাইরে এতদিন যে দুর্নীতিগুলো হয়েছে, এগুলো বন্ধ হয়ে যাবে।
খবরের কাগজ: বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়াতে আপনার পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাই।
ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ: আমাদের রিজার্ভ বাড়াতে হবে। রিজার্ভ বাড়াতে হলে ইনফ্লোটা বাড়াতে হবে। আমাদের রেমিট্যান্স আগের থেকে এখন অপেক্ষাকৃত ভালো হচ্ছে, অর্থাৎ আগের চেয়ে বেশি রেমিট্যান্স আসছে। যে আস্থাটুকু হারিয়ে গিয়েছিল, সেই আস্থাটুকু ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে এবং তা তৈরি হচ্ছে। দ্বিতীয়ত, রিজার্ভ বাড়াতে হলে বিদেশি বিনিয়োগ লাগবে। প্রাইভেট সেক্টরের বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। এমন কিছু করতে হবে যাতে দেশের বাইরের লোক আকৃষ্ট হয়। বিদেশি বিনিয়োগকারীরা আকৃষ্ট হলেই বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়বে।
আমাদের ভালো ভালো কোম্পানির শেয়ার চালু করতে হবে। একই সঙ্গে দেশের পুঁজিবাজারের অবস্থা ভালো করতে হবে। এখন হাতে গোনা কয়েকটা ভালো কোম্পানি আছে। আরেকটা ব্যাপার হলো- আমাদের অলরেডি ইনপুট কন্ট্রোল করা হচ্ছে। তার মধ্যে অত্যাধুনিক মেশিনারিজ র’ মেটারিয়ালস এবং অন্য প্রয়োজনীয় জিনিস আমদানি করা হচ্ছে, একই সঙ্গে আমদানি খরচ যেন সাশ্রয়ী হয় সেটাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এর ফলে রিজার্ভ বাড়বে। এখন বৈদেশিক বিনিময় হার স্থিতিশীল হয়েছে। অর্থাৎ আগের চেয়ে মোটামুটি একটা পর্যায়ে আসছে। রিজার্ভ ওঠানামা তেমন করছে না। বিদেশি বিনিয়োগকারী বা দেশি বিনিয়োগকারী যারা আছেন, যারা আমদানি করেন, এতে তারা স্বস্তি পাবেন। তা ছাড়া আমরা যা করছি, বিভিন্ন ডেটা এনে বাজেট সাপোর্টের দিকেও খেয়াল রাখছি। সার্বিকভাবে আমাদের ব্যালেন্স অব ট্রেড সাপোর্ট পাওয়া গেলে সে ক্ষেত্রে এটা সহজ হবে। আমাদের ট্রেড ব্যালেন্স সব সময়ই নেগেটিভ ছিল। এটা যেন রিকভারি করা যায়, সেটা আমরা দেখছি। একই সঙ্গে আমাদের রপ্তানি বাড়াতে হবে। এতে করে আমাদের রিজার্ভটা বাড়বে। আমাদের মুদ্রানীতি অপেক্ষাকৃত ভালো হবে। আমাদের দেশের বিভিন্ন পণ্য, যেমন- লেদার, সিরামিক, ইলেকট্রিক্যাল সামগ্রী, পাটজাত পণ্যগুলোর রপ্তানি বাড়াতে হবে। বহির্বিশ্বে এসবের গুরুত্ব বাড়লে, সে ক্ষেত্রে রিজার্ভও বাড়বে।
খবরের কাগজ: বেসরকারি বিনিয়োগ অনেক বছর ধরে একই জায়গায় স্থবির হয়ে আছে। বিনিয়োগ বাড়াতে আপনার পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাই।
ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ: দেশে বিনিয়োগ বাড়াতে হলে বিনিয়োগের পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। আমাদের যে আইনকানুনগুলো আছে, একই সঙ্গে বিভিন্ন কার্যক্রম যেগুলো আছে, তা সুন্দরভাবে পরিচালনা করতে হবে। সেখানে অহেতুক বাধা দূর করতে হবে। বিনিয়োগকারীরা স্বচ্ছন্দে বিনিয়োগ করতে চাইলে তাড়াতাড়ি যেন সেই সুযোগটা পায়। দ্বিতীয়ত, আমাদের ভূমি কিছু আছে, তারা যদি সেখানে বিনিয়োগ করতে চায় তাহলে তাদের সার্বিক সহযোগিতা করতে হবে। আমার মতে, ক্ষুদ্রঋণ প্রকল্পগুলো অপেক্ষাকৃত ভালো হয়। কর্মসংস্থানের পাশাপাশি অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক, এনার্জি রেগুলেশন কমিশন- এরা যেন আরও উন্নত হয় এবং প্রাইভেট সেক্টরগুলো যেন ভালো কাজ করতে পারে সেটা দেখতে হবে। এখন যেমন বিডা ভালো কাজ করছে। প্রাইভেট সেক্টরে এরা নেতৃত্বে আছে। আমরা যদি বিনিয়োগ বাড়াই তাহলে বাইরের লোকজন এতে আকৃষ্ট হবে এবং সে ক্ষেত্রে স্বাভাবিকভাবেই আমাদের বিনিয়োগ বাড়বে।
খবরের কাগজ: বাজেট ঘাটতি মেটাতে সদ্য বিদায় নেওয়া হাসিনা সরকার বিদেশ থেকে প্রচুর ঋণ নিয়েছে। সেগুলোর একটা বড় রকম চাপ আছে। বৈদেশিক ঋণের বোঝা সুদাসলে পরিশোধ করতে কী ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছেন?
ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ: বিভিন্ন ধরনের অপরিকল্পিত প্রকল্প নেওয়ার ফলে এবং তা যথাযথভাবে ব্যবহার না হওয়ায় ঋণের পরিমাণ বেড়েছে। প্রকল্প ব্যবস্থাপনায় দুর্নীতি ও খারাপভাবে নির্বাচিত প্রকল্পগুলোও এই সমস্যা বহুলাংশে বাড়িয়ে দিয়েছে। এ ছাড়া বৈদেশিক ঋণ তহবিলের বিপুল পরিমাণ অর্থ বিদেশে পাচার করা হয়েছে। সে ক্ষেত্রে পরনির্ভরশীলতা কাটিয়ে উঠতে অর্থাৎ ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে অভ্যন্তরীণ আয় বাড়ানোর চেষ্টা করছি। দেশের অভ্যন্তরীণ আয় বাড়লে ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা বাড়বে। একই সঙ্গে রাজস্ব আয় বাড়ানোর পাশাপাশি অপ্রয়োজনীয় প্রকল্পগুলোকে কাটছাঁট করে ব্যয় কমানোরও চেষ্টা করা হচ্ছে। ব্যয় যৌক্তিকীকরণ বা অপচয় কমানোর ওপরও জোর দেওয়া হয়েছে। কোথাও কোনো অযৌক্তিক ব্যয় যেন না হয়, সেটা পর্যালোচনা করে দেখা হচ্ছে। তা ছাড়া সবকিছুই বিচার-বিবেচনায় নিয়ে ঋণ পরিশোধের সময় বাড়ানোর বিষয়টিও বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। বিগত সরকার প্রায় সব ক্ষেত্রেই নিয়মনীতি, শৃঙ্খলার তোয়াক্কা না করে সর্বত্র অনিয়ম, নৈরাজ্য সৃষ্টি করেই মূলত এই সমস্যাগুলো বাড়িয়েছে।
খবরের কাগজ: বিগত সরকারের সময়ে আর্থিক খাতে বা প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন ভুল পদক্ষেপের কারণে অনেক প্রতিষ্ঠান বিপাকে পড়েছে এবং এসব প্রতিষ্ঠানে লাখ লাখ কর্মী কাজ করছেন। এরা যাতে কর্মসংস্থান না হারায়, সে ব্যাপারে আপনার কোনো উদ্যোগ আছে কি?
ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ: প্রথমত, সরকারি অনেক জায়গায় অনেক রকমের ভুল পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এই কাজে যারা আছেন, এখন যারা প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছেন, সেটা আমরা খতিয়ে দেখছি- ভবিষ্যতে এগুলো যেন না ঘটে। তাদের নতুন করে ভয় দেখানোর জন্য নয়, আমাদের কথা, যারা অন্যায় করেছে, তাদের যথাযথ চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। সবাই তো এগুলো করেনি। দ্বিতীয়ত, যারা করছে, তাদের সাবধান করা যে, তোমরা কাজ করো। এ ব্যাপারে সরকারের হঠাৎ করে কোনো প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া বা কর্মক্ষেত্রে ছাঁটাই করার পরিকল্পনা নেই। অতএব তাদের এতটুকু নিশ্চয়তা দেওয়া যেতে পারে যে, তারা কাজ করুক। হয়তোবা কাজের ক্ষেত্রে অর্থের সংকুলান কম হতে পারে, বাজেট হিসেবে পুরোটা সম্ভব হতে বেগ পেতে হতে পারে। তবে তাদের কাজকর্মগুলো চালিয়ে নেওয়ার মতো অর্থের সংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে।
প্রয়োজন সাপেক্ষে বাজেটকে ইস্যু করে, অপ্রয়োজনীয় খরচ আমরা কমিয়ে দিয়েছি। উৎসব করা, সরকারিভাবে বাইরে যাওয়া সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করে দিয়েছি, নতুন গাড়ি কেনা- সব বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এদিকে আমরা চেষ্টা করছি। আর্থিক চাপ কমানোর জন্য যারা আছে তাদের কোনো চিন্তা নেই। বরং আমরা চেষ্টা করব কর্মসংস্থান বাড়ানো, ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়ানো, সরকারিভাবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তৈরি করব- এতে কর্মসংস্থান বাড়বে। যেসব প্রতিষ্ঠান আছে সরকারি, আধা সরকারি, বাংলাদেশ বিমান আছে, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড আছে, সুগার করপোরেশন, ফুড ইন্ডাস্ট্রি করপোরেশন- এগুলো যেন কর্মক্ষেত্রে উন্নত করা যায়, সেটা দেখা হচ্ছে। যেসব ক্ষেত্রে বিশাল অঙ্কের অর্থ ব্যয় হচ্ছে। সেগুলোর যেন সঠিক ব্যবহার হয়। জুটমিল করপোরেশনগুলোতে আমরা চেষ্টা করছি। তারা যেন ঠিকভাবে কাজ করতে পারে। অর্থাৎ যেসব টাকা দিচ্ছি, তার যেন সঠিক ব্যবহার হয়। এবং এর মধ্য দিয়ে যেন কর্মসংস্থান হয় ও আয় বাড়ে।
দেশের অর্থনীতিতে তারা যেন কন্ট্রিবিউট করতে পারে, ‘ইন টার্মস অব প্রোডাক্ট অ্যান্ড ইন টার্মস অব ইমপ্লয়মেন্ট’, সেটাই আমাদের লক্ষ্য। একই সঙ্গে আমি মনে করি, অনেক মেধাবী তরুণ উদ্যোক্তা হতে চায়, চাকরি করতে চায় না। সবার চাকরি করার দরকার আছে বলে মনে হয় না। সে ক্ষেত্রে যারা উদ্যোক্তা হতে চায়, তাদের জন্য ব্যাংকঋণ অথবা স্টার্টআপ ফান্ড দেওয়ার ব্যবস্থা আছে। একজনের টাকা দিয়ে ব্যবসা করা যায় না। তা ছাড়া একজন মেধাবী লোকের টাকা কম থাকে। তার হয়তো আছে ২ কোটি টাকা, অথচ লাগবে ১০ কোটি টাকা। বাকিটা আমরা ইকুইটি ফান্ড থেকে দিতে পারি, সেই চেষ্টাও করা হচ্ছে। এখানে যেটি প্রয়োজন তা হলো সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্ব, যা মূলত ফলপ্রসূ হয় বেশি। আমরা তরুণদের উৎসাহিত করতে চাই। তারা যেন শুধু চাকরির চিন্তাভাবনা না করে, তারা যেন উদোক্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখে। সে লক্ষ্যেও আমরা আর্থিকভাবে সহায়তা করছি। যাতে আমাদের দেশের তরুণরা গতানুগতিক ধারায় না গিয়ে নিজেরা স্বনির্ভর হয়ে উঠতে পারে।
খবরের কাগজ: সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ: আপনাকেও ধন্যবাদ।